ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
নিউইয়র্কের নতুন মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন জোহরান মামদানি। বিজয় ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘ডনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার তিনটা শব্দ আছে: আওয়াজটা বাড়িয়ে দিন।’
অল্প সময় পরই ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ প্রতিক্রিয়া দেন, ‘তাহলে শুরু হলো!’
বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্প ৩৪ বছর বয়সী মামদানিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির ‘কমিউনিস্ট’ ভবিষ্যৎ হিসেবে তুলে ধরে তার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
নির্বাচনের আগে তিনি মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে সমর্থন জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, নিউইয়র্কে মামদানি জয়ী হলে তিনি শহরটির ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন। পরের দিন সকালে মামদানি জয়ী হওয়ার পর তিনি সতর্ক করে বলেন, লোকজন নিউইয়র্ক ছেড়ে ‘পালিয়ে’ যাবে।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপে চাপ বাড়িয়েছেন। ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান এবং তহবিল স্থগিত রেখে এসব করেছেন তিনি। সরকারি বাজেট বন্ধ (শাট ডাউন) হয়ে যাওয়ার পর তিনি নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরের অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ১৮ বিলিয়ন ডলার স্থগিত করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প আরও অর্থ কেটে দিলে মামদানির ঘোষিত সামাজিক নীতিগুলো যেমন, বাড়ি ভাড়া স্থগিত, বিনামূল্যের গণপরিবহন, সার্বজনীন শিশুসেবা ও সরকারি মুদি দোকান এসব বাস্তবায়নে বাধা পড়বে।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক জুলিয়ান জেলিজার বলেন, ‘ট্রাম্পের আক্রমণ ঠেকাতেই নতুন মেয়রকে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে। এটি শহরের জন্য একটি সমস্যা হবে এবং নির্বাচিত মেয়রের জন্য মনোযোগ ধরে রাখাও একটি সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ হবে।’ বিবিসি জানিয়েছে, এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য করা তাদের অনুরোধে মামদানি সাড়া দেননি।
ফেডারেল বরাদ্দ কমলে শহরের বাধ্যতামূলক সেবা, বাসস্থান, শিক্ষা, শিশু কল্যাণ বা দুর্যোগ ত্রাণ বিপর্যস্ত হতে পারে। নিউইয়র্ক আইনি বাধ্যবাধকতায় এসব সেবা চালু রাখতেই হবে, তাই বাজেট ঘাটতি হলে অন্য খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
ট্রাম্প এসব তহবিল আটকে রাখলে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন, তবে এতে অর্থপ্রবাহ বিলম্বিত হবে, বলেছেন হার্ভার্ডের জননীতি বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ডি বেনেডিকটিস-কেসনার।
এদিকে ‘ট্রাম্প-প্রুফিং নিউইয়র্ক’ শিরোনামে মামদানির দপ্তর জানিয়েছে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় শহরের আইনি বিভাগে অতিরিক্ত ২০০ আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হবে। ট্রাম্প আরও ফেডারেল তহবিল কাটছাঁট করে মামদানির পরিকল্পনা আরও ছিদ্র তৈরি করতে পারেন। গত বছর যা ছিল প্রায় ৮৫০ কোটি ডলার, যা নিউইয়র্কের মোট বাজেটের ৭ শতাংশ।
মামদানি আরও জানিয়েছেন, নিউইয়র্কের ধনীদের ওপর কর বাড়িয়ে তিনি ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে চান। কিন্তু এর জন্য রাজ্য গভর্নরের অনুমোদন প্রয়োজন।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেট গভর্নর ক্যাথি হোকুল এখন পর্যন্ত মামদানির কর পরিকল্পনায় সমর্থন দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আছেন। হোকুল আগামী বছর কঠিন পুনর্নির্বাচনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। রিপাবলিকান দল থেকে ট্রাম্পপন্থী এলিস স্টেফানিক গভর্নর পদে লড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ট্রাম্প এর আগে ডেমোক্রেট মেয়রদের নেতৃত্বাধীন লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল বাহিনী মোতায়েন করেছেন আর অনেকের আশঙ্কা, সেই সিদ্ধান্ত নিউইয়র্কেও প্রয়োগ হতে পারে। মামদানি বলেছেন, প্রয়োজনে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
অভিবাসন ইস্যুতেও দুই নেতার অবস্থান বিপরীত। ট্রাম্প প্রশাসন যেখানে অভিবাসনবিরোধী ‘আইস’ অভিযান বাড়িয়েছে, সেখানে মামদানি ঘোষণা দিয়েছেন, নিউইয়র্ক অভিবাসীদের শহরই থাকবে।
মামদানি বলেন, ‘নিউইয়র্ক অভিবাসীদের দ্বারা নির্মিত, অভিবাসীদের দিয়ে চালিত এবং আজ রাত থেকে একজন অভিবাসীর নেতৃত্বাধীন একটি শহর।’
মামদানি তার সামনে থাকা চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করলেও ইতোমধ্যেই তিনি লড়াই করার প্রত্যয় জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘তাই আমার কথা শুনুন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যখন আমি এটি বলি: আমাদের কারও কাছে যেতে হলে আপনাকে আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
মামদানি আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দায়িত্ব নেয়ার আগেই তাকে কৌশল ঠিক করতে হবে, কোথায় ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাবেন, আর কোথায় আপস করবেন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক বব শ্যাপিরো বলছেন, ‘মামদানি বুঝে চলবেন, ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাত তখনই করবেন, যখন সেটি রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হবে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
নিউইয়র্কের নতুন মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন জোহরান মামদানি। বিজয় ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘ডনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার তিনটা শব্দ আছে: আওয়াজটা বাড়িয়ে দিন।’
অল্প সময় পরই ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ প্রতিক্রিয়া দেন, ‘তাহলে শুরু হলো!’
বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্প ৩৪ বছর বয়সী মামদানিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির ‘কমিউনিস্ট’ ভবিষ্যৎ হিসেবে তুলে ধরে তার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
নির্বাচনের আগে তিনি মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে সমর্থন জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, নিউইয়র্কে মামদানি জয়ী হলে তিনি শহরটির ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন। পরের দিন সকালে মামদানি জয়ী হওয়ার পর তিনি সতর্ক করে বলেন, লোকজন নিউইয়র্ক ছেড়ে ‘পালিয়ে’ যাবে।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপে চাপ বাড়িয়েছেন। ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান এবং তহবিল স্থগিত রেখে এসব করেছেন তিনি। সরকারি বাজেট বন্ধ (শাট ডাউন) হয়ে যাওয়ার পর তিনি নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরের অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ১৮ বিলিয়ন ডলার স্থগিত করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প আরও অর্থ কেটে দিলে মামদানির ঘোষিত সামাজিক নীতিগুলো যেমন, বাড়ি ভাড়া স্থগিত, বিনামূল্যের গণপরিবহন, সার্বজনীন শিশুসেবা ও সরকারি মুদি দোকান এসব বাস্তবায়নে বাধা পড়বে।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক জুলিয়ান জেলিজার বলেন, ‘ট্রাম্পের আক্রমণ ঠেকাতেই নতুন মেয়রকে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে। এটি শহরের জন্য একটি সমস্যা হবে এবং নির্বাচিত মেয়রের জন্য মনোযোগ ধরে রাখাও একটি সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ হবে।’ বিবিসি জানিয়েছে, এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য করা তাদের অনুরোধে মামদানি সাড়া দেননি।
ফেডারেল বরাদ্দ কমলে শহরের বাধ্যতামূলক সেবা, বাসস্থান, শিক্ষা, শিশু কল্যাণ বা দুর্যোগ ত্রাণ বিপর্যস্ত হতে পারে। নিউইয়র্ক আইনি বাধ্যবাধকতায় এসব সেবা চালু রাখতেই হবে, তাই বাজেট ঘাটতি হলে অন্য খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
ট্রাম্প এসব তহবিল আটকে রাখলে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন, তবে এতে অর্থপ্রবাহ বিলম্বিত হবে, বলেছেন হার্ভার্ডের জননীতি বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ডি বেনেডিকটিস-কেসনার।
এদিকে ‘ট্রাম্প-প্রুফিং নিউইয়র্ক’ শিরোনামে মামদানির দপ্তর জানিয়েছে, ফেডারেল হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় শহরের আইনি বিভাগে অতিরিক্ত ২০০ আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হবে। ট্রাম্প আরও ফেডারেল তহবিল কাটছাঁট করে মামদানির পরিকল্পনা আরও ছিদ্র তৈরি করতে পারেন। গত বছর যা ছিল প্রায় ৮৫০ কোটি ডলার, যা নিউইয়র্কের মোট বাজেটের ৭ শতাংশ।
মামদানি আরও জানিয়েছেন, নিউইয়র্কের ধনীদের ওপর কর বাড়িয়ে তিনি ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে চান। কিন্তু এর জন্য রাজ্য গভর্নরের অনুমোদন প্রয়োজন।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেট গভর্নর ক্যাথি হোকুল এখন পর্যন্ত মামদানির কর পরিকল্পনায় সমর্থন দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আছেন। হোকুল আগামী বছর কঠিন পুনর্নির্বাচনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। রিপাবলিকান দল থেকে ট্রাম্পপন্থী এলিস স্টেফানিক গভর্নর পদে লড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ট্রাম্প এর আগে ডেমোক্রেট মেয়রদের নেতৃত্বাধীন লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল বাহিনী মোতায়েন করেছেন আর অনেকের আশঙ্কা, সেই সিদ্ধান্ত নিউইয়র্কেও প্রয়োগ হতে পারে। মামদানি বলেছেন, প্রয়োজনে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
অভিবাসন ইস্যুতেও দুই নেতার অবস্থান বিপরীত। ট্রাম্প প্রশাসন যেখানে অভিবাসনবিরোধী ‘আইস’ অভিযান বাড়িয়েছে, সেখানে মামদানি ঘোষণা দিয়েছেন, নিউইয়র্ক অভিবাসীদের শহরই থাকবে।
মামদানি বলেন, ‘নিউইয়র্ক অভিবাসীদের দ্বারা নির্মিত, অভিবাসীদের দিয়ে চালিত এবং আজ রাত থেকে একজন অভিবাসীর নেতৃত্বাধীন একটি শহর।’
মামদানি তার সামনে থাকা চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করলেও ইতোমধ্যেই তিনি লড়াই করার প্রত্যয় জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘তাই আমার কথা শুনুন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যখন আমি এটি বলি: আমাদের কারও কাছে যেতে হলে আপনাকে আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
মামদানি আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দায়িত্ব নেয়ার আগেই তাকে কৌশল ঠিক করতে হবে, কোথায় ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাবেন, আর কোথায় আপস করবেন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক বব শ্যাপিরো বলছেন, ‘মামদানি বুঝে চলবেন, ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাত তখনই করবেন, যখন সেটি রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হবে।’