ছাত্র-জনতা নিহতের প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল -সংবাদ
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা নিহতের প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষকদের একাংশ। এ সময় সারাদেশে আহত-নিহতের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবিও জানানো হয়েছে।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সকাল সাড়ে ১১টায় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক সমাবেশ করে।
ঢাবি লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিনের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষকদের এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থীও সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান। এতে ‘উই ওয়ান্ট-জাস্টিস’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন শিক্ষকরা। শহীদ মিনারে গিয়ে আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এর আগে একই দাবিতে সকাল ১০টায় লোক প্রশাসন বিভাগের ও ১১টায় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকরাও সমাবেশ করেন।
এদিকে ‘গণগ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা দায়ের ও শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রতিবাদী গানের মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১২ জন শিক্ষকও অংশ নেন।
এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়।
পরে সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সেখান থেকে পুনরায় মিছিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একই পথে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষে করেন। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে মৌন মিছিল করেছে শিক্ষকরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ‘ছাত্র-জনতার খুনিদের প্রতিহত করুন’ শিরোনামে এই কর্মসূচি আয়োজন করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’।
এদিন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (চুয়েট) মৌন মিছিল করেছে শিক্ষকরা। বেলা ১২টায় উপচার্য অফিসের সামনে থেকে মৌন মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মিছিল শেষে এক আলোচনা সভায় চুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হতাহত শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান শিক্ষকরা।
এদিকে পতাকা স্ট্যান্ডে মৌন মিছিল করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজ। মৌন মিছিল শেষে শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হয়রানির শিকার শেকৃবি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার অনুরোধ করেন।
এসময় অবিলম্বে মামলাসহ সারা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নামে সব মামলা প্রত্যাহার করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এদিন বিক্ষোভ করেন দেশের বিনোদন শিল্পীরা। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
এদিকে কোটা আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতার পর গ্রেপ্তার সবাইকে মুক্ত করে দিতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে ‘দ্রোহ যাত্রা’ নামে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’।
আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকেল ৩টায় এই কর্মসূচি শুরু হবে। বৃহস্পতিবার রমনার মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানিয়ে কর্মসূচির ডাক এসেছে।
‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকার করবে না’
ঢাবি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা চোখের সামনে দেখলাম, পুলিশের ইউনিফর্ম পরে গুলি করা হচ্ছে। চোখের সামনে ভিডিও দেখলাম আবু সাঈদকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে। চোখের সামনে দেখলাম পুলিশের হাতে গুলি, যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতে পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র। একজন ছাত্রের হাতেও আমরা অস্ত্র বা পিস্তল দেখিনি। কোন পত্রিকার ফুটেজে দেখি নাই। তখন আমাদের মনে হয়, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকার করবে না। কারণ এই সরকারই খুনি। ’
সমাবেশে ইন্টারন্যশনাল বিজনেস বিভাগের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, ‘১৯৭১ সালে ঘরে ঘরে গিয়ে দরজায় ঠক ঠক করে জিজ্ঞেস করা হতো মুক্তিবাহিনী আছে কি না! আর এখন ঘরে ঘরে ঠক ঠক করে জিজ্ঞেস করা হয়, ছাত্র আছে কি না, শিক্ষক আছে কি না। আপনি একজনকে মারবেন দশ জন দাড়াবো। দশজনকে মারবেন হাজারজন দাঁড়িয়ে যাবো। শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান, আপনাদের কোন অধিকার নেই তাদের গুলি করার।’
সমাবেশে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজনীন ইসলাম, অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, অধ্যাপক সাদিক হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘সাধারণ মানুষ বিনাবিচারে আটক আছে’
ডিবি কার্যালয়ের সামনে এক মানবন্ধনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা শুনেছি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এতে আমরা খুশি, কিন্তু সন্তুষ্ট নই। কারণ এখনো ঢাকাসহ সারাদেশে আটক ছাত্র শিক্ষক, সাধারণ মানুষ বিনাবিচারে আটক আছে।’
ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের মুক্তির জন্য এখানে এসে শুনলাম তাদের নাকি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি না তারা আসলে নিরাপদে আছে কিনা।’
‘সারাদেশে অজস্র কারাগার গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা আটকের মাধ্যমে। হাজার হাজার ছেলে মেয়েকে ব্লক রেইড দিয়ে দিয়ে কারাগারগুলো ভরে ফেলা হয়েছে। এই অবস্থা আজকেই থামাতে হবে। সমন্বয়কদের যেমন ছেড়ে দিয়েছেন সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের ছেড়ে দিতে হবে।’
এতে ঢাবি আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, জাবি নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মির্জা তাসলিমা সুলতানা, বেসরকারি সংস্থা উবিনীগ এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান, প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরীন হক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ নূর ও সদস্য রুমি প্রভা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘প্রতিবাদ করা উচিত’
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশীদ, মোশাররফ করিম, আজমেরী হক বাঁধনসহ অনেকে।
সমাবেশে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, এর প্রতিবাদ করা উচিত। না করলে কাল যখন আমার মেয়েটা গুলি খেয়ে মরে পড়ে থাকবে, তখন অন্য কেউ আমার পাশে দাঁড়াবে না।’
‘এবং এই গুলি চলতেই থাকবে। সেই বিবেচনায় বলা যায়, আমি আমার স্বার্থেই রাজপথে নেমেছি। এর বিনিময়ে আমাকে যত মূল্য দিতে হয়, দিবো। কিন্তু আমার কণ্ঠ থামাবো না।’
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহতদের প্রতি বড় একটা স্যালুট। যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারের ত্যাগের সঙ্গে আর কারও তুলনায় হয় না।’ বলেন নির্মাতা আশফাক নিপুণ।
অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেছেন, ‘আমরা রক্তপাত চাই না, শান্তি চাই। এসবের বাইরে থাকতে চাই।’
এদিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের সামনে সমাবেশে ঢাকা ১০ আসনের সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল তার পক্ষে আমরা সকলেই ছিলাম। কিন্তু আন্দোলনে এই ছাত্রদেরকে ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের এ দেশটিকে।’
ছাত্র-জনতা নিহতের প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল -সংবাদ
শুক্রবার, ০২ আগস্ট ২০২৪
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা নিহতের প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষকদের একাংশ। এ সময় সারাদেশে আহত-নিহতের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবিও জানানো হয়েছে।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সকাল সাড়ে ১১টায় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক সমাবেশ করে।
ঢাবি লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিনের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষকদের এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থীও সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান। এতে ‘উই ওয়ান্ট-জাস্টিস’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন শিক্ষকরা। শহীদ মিনারে গিয়ে আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এর আগে একই দাবিতে সকাল ১০টায় লোক প্রশাসন বিভাগের ও ১১টায় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকরাও সমাবেশ করেন।
এদিকে ‘গণগ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা দায়ের ও শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রতিবাদী গানের মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১২ জন শিক্ষকও অংশ নেন।
এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়।
পরে সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সেখান থেকে পুনরায় মিছিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একই পথে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষে করেন। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে মৌন মিছিল করেছে শিক্ষকরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ‘ছাত্র-জনতার খুনিদের প্রতিহত করুন’ শিরোনামে এই কর্মসূচি আয়োজন করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’।
এদিন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (চুয়েট) মৌন মিছিল করেছে শিক্ষকরা। বেলা ১২টায় উপচার্য অফিসের সামনে থেকে মৌন মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মিছিল শেষে এক আলোচনা সভায় চুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হতাহত শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান শিক্ষকরা।
এদিকে পতাকা স্ট্যান্ডে মৌন মিছিল করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজ। মৌন মিছিল শেষে শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হয়রানির শিকার শেকৃবি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার অনুরোধ করেন।
এসময় অবিলম্বে মামলাসহ সারা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নামে সব মামলা প্রত্যাহার করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এদিন বিক্ষোভ করেন দেশের বিনোদন শিল্পীরা। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
এদিকে কোটা আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতার পর গ্রেপ্তার সবাইকে মুক্ত করে দিতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে ‘দ্রোহ যাত্রা’ নামে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’।
আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকেল ৩টায় এই কর্মসূচি শুরু হবে। বৃহস্পতিবার রমনার মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানিয়ে কর্মসূচির ডাক এসেছে।
‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকার করবে না’
ঢাবি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা চোখের সামনে দেখলাম, পুলিশের ইউনিফর্ম পরে গুলি করা হচ্ছে। চোখের সামনে ভিডিও দেখলাম আবু সাঈদকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে। চোখের সামনে দেখলাম পুলিশের হাতে গুলি, যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতে পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র। একজন ছাত্রের হাতেও আমরা অস্ত্র বা পিস্তল দেখিনি। কোন পত্রিকার ফুটেজে দেখি নাই। তখন আমাদের মনে হয়, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকার করবে না। কারণ এই সরকারই খুনি। ’
সমাবেশে ইন্টারন্যশনাল বিজনেস বিভাগের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, ‘১৯৭১ সালে ঘরে ঘরে গিয়ে দরজায় ঠক ঠক করে জিজ্ঞেস করা হতো মুক্তিবাহিনী আছে কি না! আর এখন ঘরে ঘরে ঠক ঠক করে জিজ্ঞেস করা হয়, ছাত্র আছে কি না, শিক্ষক আছে কি না। আপনি একজনকে মারবেন দশ জন দাড়াবো। দশজনকে মারবেন হাজারজন দাঁড়িয়ে যাবো। শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান, আপনাদের কোন অধিকার নেই তাদের গুলি করার।’
সমাবেশে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজনীন ইসলাম, অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, অধ্যাপক সাদিক হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘সাধারণ মানুষ বিনাবিচারে আটক আছে’
ডিবি কার্যালয়ের সামনে এক মানবন্ধনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা শুনেছি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এতে আমরা খুশি, কিন্তু সন্তুষ্ট নই। কারণ এখনো ঢাকাসহ সারাদেশে আটক ছাত্র শিক্ষক, সাধারণ মানুষ বিনাবিচারে আটক আছে।’
ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের মুক্তির জন্য এখানে এসে শুনলাম তাদের নাকি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি না তারা আসলে নিরাপদে আছে কিনা।’
‘সারাদেশে অজস্র কারাগার গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা আটকের মাধ্যমে। হাজার হাজার ছেলে মেয়েকে ব্লক রেইড দিয়ে দিয়ে কারাগারগুলো ভরে ফেলা হয়েছে। এই অবস্থা আজকেই থামাতে হবে। সমন্বয়কদের যেমন ছেড়ে দিয়েছেন সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের ছেড়ে দিতে হবে।’
এতে ঢাবি আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, জাবি নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মির্জা তাসলিমা সুলতানা, বেসরকারি সংস্থা উবিনীগ এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান, প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরীন হক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ নূর ও সদস্য রুমি প্রভা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘প্রতিবাদ করা উচিত’
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশীদ, মোশাররফ করিম, আজমেরী হক বাঁধনসহ অনেকে।
সমাবেশে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, এর প্রতিবাদ করা উচিত। না করলে কাল যখন আমার মেয়েটা গুলি খেয়ে মরে পড়ে থাকবে, তখন অন্য কেউ আমার পাশে দাঁড়াবে না।’
‘এবং এই গুলি চলতেই থাকবে। সেই বিবেচনায় বলা যায়, আমি আমার স্বার্থেই রাজপথে নেমেছি। এর বিনিময়ে আমাকে যত মূল্য দিতে হয়, দিবো। কিন্তু আমার কণ্ঠ থামাবো না।’
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহতদের প্রতি বড় একটা স্যালুট। যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারের ত্যাগের সঙ্গে আর কারও তুলনায় হয় না।’ বলেন নির্মাতা আশফাক নিপুণ।
অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেছেন, ‘আমরা রক্তপাত চাই না, শান্তি চাই। এসবের বাইরে থাকতে চাই।’
এদিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের সামনে সমাবেশে ঢাকা ১০ আসনের সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল তার পক্ষে আমরা সকলেই ছিলাম। কিন্তু আন্দোলনে এই ছাত্রদেরকে ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের এ দেশটিকে।’