alt

জাতীয়

সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যস্থতা করবে না, তবে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচনে ‘ভূমিকা’ রাখবে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন উজরা জেয়া -সংবাদ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা উজরা জেয়া বলেছেন, ‘তার দেশ বাংলাদেশে বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চায়, কিন্তু এতে তারা মধ্যস্ততা করবে না। তবে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।’ পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটনের পক্ষে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর উপস্থিত ছিলেন। উজরা জেয়া বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে সংলাপে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সম্পৃক্ত হবে না।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যাতে ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে’ হতে পারে, সেজন্য যতটা ভূমিকা রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র তা রাখবে বলেও জানান উজরা জেয়া। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি, সে অনুযায়ী আমরা সবসময় অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। বাংলাদেশেও সেটা যাতে সম্ভব হয়, সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার হিসেবে আমাদের সহায়ক ভূমিকা আমরা রাখতে চাই।

উজরা জেয়া বলেন, বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে সেটা বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে। সংলাপের বিষয়ে বলব, এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যক্ষ কোন সম্পৃক্ততা থাকবে না। বাংলাদেশে সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ বাকিদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। আমরা চাই, সাংবাদিকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অবাধে সংবাদ প্রচার করতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘গত বুধবার বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক দল যে সমাবেশ করেছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এবং সেখানে কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এটা একটা ভালো অনুশীলন এবং আমরা এটার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই।

উজরা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের ভবিষ্যৎ। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের ওপর সেটা নির্ভর করছে।

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে উজরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ বাকিদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং সমাবেশ যেন অবাধে করা যায়, সেটাই আমাদের চাওয়া। সুশীল সমাজ যেন অবাধে কথা বলতে পারে সেটা আমরা চাই।

একজন সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন একটি কথা চাউর হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, ‘আপনি যা বলতে চাইছেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করব না। আমি এখানে এসেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে। অবাধ ও সহনশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কীভাবে আরও সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধশালী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি।’

উজরা জেয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাব। মানবাধিকারসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।’

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায় জানিয়ে উজরা বলেন, গত ৫ দশক ধরে আমাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়। আমাদের সহযোগিতার বিষয়গুলো হচ্ছে জলবায়ু, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা। এর মধ্যে বুঝা যায় আমাদের সম্পর্ক কত মজবুত ও দৃঢ় এবং এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা রয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। তারা এত বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। বৃহস্পতিবার আমি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র হোস্ট কমিউনিটি এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বলে মত প্রকাশ করেন উজরা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন যেন স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ হয়, সেটাকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যাবাসনের মতো পরিস্থিতি নেই।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন উজরা জেয়া। পরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কথা হয়নি। এ বিষয়ে তারাও জিজ্ঞেস করেননি, আমারও বলার প্রয়োজন হয়নি। তবে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আগেও যে কথা বলেছি, আজও তাদের সেসব কথাই বলেছি। আমি আগে যেমন বলেছিলাম ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সেপ্টেম্বরের মধ্য সংশোধন হবে, আজও তাদের সে বিষয়টিই প্রকারান্তরে জানিয়েছি।

আনিসুল হক বলেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এর জন্য যে আইনের অবকাঠামো আছে, তা তাদের অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন যেকোন অপরাধ তদন্ত করে সবকিছুর সুষ্ঠু বিচার হয়। বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নেই। গাজীপুরের শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে তাদের কনসার্ন জানিয়েছে। এ বিষয়টি দেখা হবে।

উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠক করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমাদের খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। গত বুধবার দুই দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ) যে বড় একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল সেটা নিয়েও তারা প্রশংসা করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের ল’ এনফোর্সমেন্ট ফোর্সের সবই তৈরি আছে। এছাড়া ল’ এনফোর্সমেন্ট ফোর্সের স্পেশাল কিছু বাহিনীকে তারা যে সহযোগিতা করেছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে সে বিষয়েও মনে করিয়ে দিয়েছি। এটিই ছিল আজকের আলোচনার মূল সারমর্ম।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তারা বাংলাদেশ সফরে আসেননি বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধিদল। তারা কোন দলকে উৎসাহিত করছেন না বলেও জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যাতে একটি অবাধ সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়- এর বাইরে তারা কিছুই চান না। তারা বারবার বলে গেছেন কোন দল বা ব্যক্তিকে তারা সমর্থন করার জন্য এখানে আসেননি। তারা যে ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়েছেন, সেটা সবার জন্য সেটা কোন দলকে উদ্দেশ্য করে দেয়নি।

মার্কিন প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবারে দু’দলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রশংসা করেছেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা নিয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সমস্যার কত দ্রুত সমাধান হবে সেটা নিয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানব পাচারকারীরা যে খেলাধুলা করছে, সেটা যাতে না করতে পারে তা নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার নয়াদিল্লি হয়ে ঢাকায় আসেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ ঢাকা ছাড়বেন মার্কিন প্রতিনিধিদলটি।

আ’লীগের নিবন্ধন বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত: সিইসি

নতুন সংবিধান প্রণয়নে ‘২ থেকে ৩ বছর সময় লাগতে পারে’: আইন উপদেষ্টা

ভারত-পাকিস্তান ‘যুদ্ধবিরতি’র স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়

ছবি

গেজেট সংশোধন: ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হলে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিধান

ছবি

বিমানবন্দর ত্যাগের প্রক্রিয়া পর্যালোচনায় তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি

সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশ গমন তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন

ছবি

সন্ত্রাসে জড়িত ব্যক্তি ও সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিধান যুক্ত হচ্ছে

ছবি

পুঁজিবাজারে সরকারী মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার কমানোর নির্দেশ

ছবি

৭২ সালের সংবিধানেই চলবে অন্তর্বর্তীকালীন সময়, বললেন আইন উপদেষ্টা

রাজনৈতিক দলের বিচারে ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন, গেজেট প্রকাশ

ছবি

যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ছবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত, বিচার না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ

এখনও কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ, অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা

শ্রীপুরে শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও শেষ হচ্ছে না খুলনার ১৮৩ সড়কের কাজ

ছবি

মরু অঞ্চলের দুম্বার খামার করে স্বাবলম্বী ভৈরবের সবুজ

ছবি

গাজীপুরে বাস থেকে ফেলে ছাত্র হত্যা, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

ছবি

সংগীতজ্ঞ মুস্তাফা জামান আব্বাসীর মৃত্যু

ছবি

শ্রীমঙ্গল, আখাউড়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত

ছবি

৩২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই

ছবি

রংপুরে ৩ জনের হিট স্ট্রোক, গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

টানা তিন দিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

কর-জিডিপি অনুপাতে লক্ষ্যমাত্রা অপর্যাপ্ত মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা

ছবি

এবার ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবরোধ ছাত্র-জনতার

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন না এলে ‘সংকট সৃষ্টি হবে’: ইউপিডিএফ

মাদকের টাকা যুদ্ধে জোগান দিচ্ছে আরাকান আর্মি

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন হবে: আসিফ নজরুল

ছবি

যুদ্ধবিরতিতে ‘সম্মত’ ভারত-পাকিস্তান

ছবি

আ’লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা

ছবি

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন হবে: আসিফ নজরুল

ছবি

ভারতে বন্ধ ছয়টি টিভির ইউটিউব সম্প্রচার: ব্যাখ্যা না পেলে পাল্টা পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি

ছবি

জনদুর্ভোগ কমাতে সড়ক ছাড়ার অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

নিউ মার্কেট এলাকায় দখল, চাঁদাবাজির ঘটনার তদন্ত দাবি

পাকিস্তানের আকাশসীমা পরিহার, বিমানের ৩ ফ্লাইটের সূচি পরিবর্তন

ছবি

তরমুজ চাষে ভাগ্য ফিরেছে রাঙ্গাবালীর কৃষকদের

এপ্রিলে মায়ানমারের ৪৬৪ নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি

tab

জাতীয়

সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যস্থতা করবে না, তবে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচনে ‘ভূমিকা’ রাখবে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন উজরা জেয়া -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা উজরা জেয়া বলেছেন, ‘তার দেশ বাংলাদেশে বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চায়, কিন্তু এতে তারা মধ্যস্ততা করবে না। তবে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।’ পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটনের পক্ষে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর উপস্থিত ছিলেন। উজরা জেয়া বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে সংলাপে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সম্পৃক্ত হবে না।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যাতে ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে’ হতে পারে, সেজন্য যতটা ভূমিকা রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র তা রাখবে বলেও জানান উজরা জেয়া। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি, সে অনুযায়ী আমরা সবসময় অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। বাংলাদেশেও সেটা যাতে সম্ভব হয়, সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার হিসেবে আমাদের সহায়ক ভূমিকা আমরা রাখতে চাই।

উজরা জেয়া বলেন, বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে সেটা বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে। সংলাপের বিষয়ে বলব, এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যক্ষ কোন সম্পৃক্ততা থাকবে না। বাংলাদেশে সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ বাকিদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। আমরা চাই, সাংবাদিকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অবাধে সংবাদ প্রচার করতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘গত বুধবার বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক দল যে সমাবেশ করেছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এবং সেখানে কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এটা একটা ভালো অনুশীলন এবং আমরা এটার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই।

উজরা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের ভবিষ্যৎ। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের ওপর সেটা নির্ভর করছে।

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে উজরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ বাকিদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং সমাবেশ যেন অবাধে করা যায়, সেটাই আমাদের চাওয়া। সুশীল সমাজ যেন অবাধে কথা বলতে পারে সেটা আমরা চাই।

একজন সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন একটি কথা চাউর হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, ‘আপনি যা বলতে চাইছেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করব না। আমি এখানে এসেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে। অবাধ ও সহনশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কীভাবে আরও সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধশালী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি।’

উজরা জেয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাব। মানবাধিকারসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।’

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায় জানিয়ে উজরা বলেন, গত ৫ দশক ধরে আমাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়। আমাদের সহযোগিতার বিষয়গুলো হচ্ছে জলবায়ু, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা। এর মধ্যে বুঝা যায় আমাদের সম্পর্ক কত মজবুত ও দৃঢ় এবং এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা রয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। তারা এত বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। বৃহস্পতিবার আমি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র হোস্ট কমিউনিটি এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বলে মত প্রকাশ করেন উজরা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন যেন স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ হয়, সেটাকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যাবাসনের মতো পরিস্থিতি নেই।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন উজরা জেয়া। পরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কথা হয়নি। এ বিষয়ে তারাও জিজ্ঞেস করেননি, আমারও বলার প্রয়োজন হয়নি। তবে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আগেও যে কথা বলেছি, আজও তাদের সেসব কথাই বলেছি। আমি আগে যেমন বলেছিলাম ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সেপ্টেম্বরের মধ্য সংশোধন হবে, আজও তাদের সে বিষয়টিই প্রকারান্তরে জানিয়েছি।

আনিসুল হক বলেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এর জন্য যে আইনের অবকাঠামো আছে, তা তাদের অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন যেকোন অপরাধ তদন্ত করে সবকিছুর সুষ্ঠু বিচার হয়। বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নেই। গাজীপুরের শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে তাদের কনসার্ন জানিয়েছে। এ বিষয়টি দেখা হবে।

উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠক করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমাদের খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। গত বুধবার দুই দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ) যে বড় একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল সেটা নিয়েও তারা প্রশংসা করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের ল’ এনফোর্সমেন্ট ফোর্সের সবই তৈরি আছে। এছাড়া ল’ এনফোর্সমেন্ট ফোর্সের স্পেশাল কিছু বাহিনীকে তারা যে সহযোগিতা করেছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে সে বিষয়েও মনে করিয়ে দিয়েছি। এটিই ছিল আজকের আলোচনার মূল সারমর্ম।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তারা বাংলাদেশ সফরে আসেননি বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধিদল। তারা কোন দলকে উৎসাহিত করছেন না বলেও জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যাতে একটি অবাধ সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়- এর বাইরে তারা কিছুই চান না। তারা বারবার বলে গেছেন কোন দল বা ব্যক্তিকে তারা সমর্থন করার জন্য এখানে আসেননি। তারা যে ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়েছেন, সেটা সবার জন্য সেটা কোন দলকে উদ্দেশ্য করে দেয়নি।

মার্কিন প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবারে দু’দলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রশংসা করেছেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা নিয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সমস্যার কত দ্রুত সমাধান হবে সেটা নিয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানব পাচারকারীরা যে খেলাধুলা করছে, সেটা যাতে না করতে পারে তা নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার নয়াদিল্লি হয়ে ঢাকায় আসেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ ঢাকা ছাড়বেন মার্কিন প্রতিনিধিদলটি।

back to top