‘শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় শিশু অধিকারবিষয়ক এনজিওদের প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ’ শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, আইনি দিক ও অপরাধের ভয়াবহতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে। ধর্ষণকে শুধু নারী নির্যাতন ও নারী নিপীড়ন বললে এর ভয়াবহতা হালকা হয়ে যায়।
শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেভ দ্য চিলড্রেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, দেশে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এই সংকট শুধু ভুক্তভোগীর জীবন নয়, সমাজের মূল ভিত্তিকেও দুর্বল করে
দিচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন বলতে নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণসহ সব ধরনের নির্যাতনই রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। তিনি বলেন, মাগুরার শিশুটিসহ গত ৬ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ২৫টি ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে মেয়েশিশুদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা এই সহিংসতা জাতিকে হতবাক করেছে এবং সারাদেশে প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। দেশব্যাপী প্রতিবাদে একাত্মতা ঘোষণা করে আজ আমরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ সময় প্রশ্নোত্তর পর্বে ধর্ষণের ভয়াবহতার কথা বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণ বলার আহ্বান জানান বক্তারা।
শনিবার (১৫ মার্চ) গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘হেল্প’ অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএম?পি) ক?মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি দুটো শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ধর্ষণ। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা “নারী নির্যাতন” বা “নিপীড়ন” বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।’
ডিএমপি কমিশনার এমন মন্তব্য করলেও আইনে ধর্ষণের আলাদা সংজ্ঞা রয়েছে। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ ভুক্তভোগীর বয়স ও বৈবাহিক ধর্ষণ ছাড়া ১৮৬০ সালের দ-বিধিতে দেয়া ধর্ষণের সংজ্ঞা অনুসরণ করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় ধর্ষণ, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যা, অপহরণ, যৌন পীড়ন, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, দহনকারী পদার্থ দিয়ে ক্ষতি করা, ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে শিশুর অঙ্গহানিসংক্রান্ত আলাদা আলাদা ধারা রয়েছে, সে অনুযায়ী মামলা পরিচালনা করা হয়।
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত বছর সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুধু ধর্ষণের অভিযোগে দিনে গড়ে ১২টি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুসারে, গত বছর নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ২ হাজার ৫২৫টি খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৫ জন ধর্ষণ, ১৪২ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২৩ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেন ৬ জন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রসঙ্গে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনার ধর্ষণ শব্দটি সংবাদমাধ্যমে ব্যবহার না করতে বলেছেন। কারণ, তার কাছে শব্দটি ভালো লাগে না। এতে খুবই অবাক হয়েছি। কারণ, এ ঘটনাটাই ভালো না লাগার। যৌন নিপীড়ন বা যৌন নির্যাতন বললে অন্যান্য নিপীড়নের কথাও চলে আসে। ধর্ষণের ভয়াবহতা এতে হালকা হয়ে যায়। এটা মানতে পারছি না।’
এ প্রসঙ্গে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক নিশাত সুলতানা বলেন, ধর্ষণের ঘটনাকে ধর্ষণই বলতে হবে। এটাকে নমনীয় করে বলার কোনো সুযোগ নেই।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, সমাজে ধর্ষণ-নির্যাতনের যত ঘটনা ঘটছে, তত প্রকাশ পাচ্ছে না। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে প্রকাশ করতে চান না। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ভুক্তভোগী নারী ও শিশু পরিবার থেকেই সুরক্ষা পাচ্ছে না। ধর্ষককে ঘৃণা করতে হবে, ভুক্তভোগীকে নয়।
রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫
‘শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় শিশু অধিকারবিষয়ক এনজিওদের প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ’ শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, আইনি দিক ও অপরাধের ভয়াবহতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে। ধর্ষণকে শুধু নারী নির্যাতন ও নারী নিপীড়ন বললে এর ভয়াবহতা হালকা হয়ে যায়।
শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেভ দ্য চিলড্রেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, দেশে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এই সংকট শুধু ভুক্তভোগীর জীবন নয়, সমাজের মূল ভিত্তিকেও দুর্বল করে
দিচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন বলতে নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণসহ সব ধরনের নির্যাতনই রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। তিনি বলেন, মাগুরার শিশুটিসহ গত ৬ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ২৫টি ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে মেয়েশিশুদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা এই সহিংসতা জাতিকে হতবাক করেছে এবং সারাদেশে প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। দেশব্যাপী প্রতিবাদে একাত্মতা ঘোষণা করে আজ আমরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ সময় প্রশ্নোত্তর পর্বে ধর্ষণের ভয়াবহতার কথা বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণ বলার আহ্বান জানান বক্তারা।
শনিবার (১৫ মার্চ) গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘হেল্প’ অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএম?পি) ক?মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি দুটো শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ধর্ষণ। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা “নারী নির্যাতন” বা “নিপীড়ন” বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।’
ডিএমপি কমিশনার এমন মন্তব্য করলেও আইনে ধর্ষণের আলাদা সংজ্ঞা রয়েছে। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ ভুক্তভোগীর বয়স ও বৈবাহিক ধর্ষণ ছাড়া ১৮৬০ সালের দ-বিধিতে দেয়া ধর্ষণের সংজ্ঞা অনুসরণ করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় ধর্ষণ, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যা, অপহরণ, যৌন পীড়ন, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, দহনকারী পদার্থ দিয়ে ক্ষতি করা, ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে শিশুর অঙ্গহানিসংক্রান্ত আলাদা আলাদা ধারা রয়েছে, সে অনুযায়ী মামলা পরিচালনা করা হয়।
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত বছর সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুধু ধর্ষণের অভিযোগে দিনে গড়ে ১২টি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুসারে, গত বছর নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ২ হাজার ৫২৫টি খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৫ জন ধর্ষণ, ১৪২ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২৩ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেন ৬ জন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রসঙ্গে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনার ধর্ষণ শব্দটি সংবাদমাধ্যমে ব্যবহার না করতে বলেছেন। কারণ, তার কাছে শব্দটি ভালো লাগে না। এতে খুবই অবাক হয়েছি। কারণ, এ ঘটনাটাই ভালো না লাগার। যৌন নিপীড়ন বা যৌন নির্যাতন বললে অন্যান্য নিপীড়নের কথাও চলে আসে। ধর্ষণের ভয়াবহতা এতে হালকা হয়ে যায়। এটা মানতে পারছি না।’
এ প্রসঙ্গে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক নিশাত সুলতানা বলেন, ধর্ষণের ঘটনাকে ধর্ষণই বলতে হবে। এটাকে নমনীয় করে বলার কোনো সুযোগ নেই।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, সমাজে ধর্ষণ-নির্যাতনের যত ঘটনা ঘটছে, তত প্রকাশ পাচ্ছে না। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে প্রকাশ করতে চান না। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ভুক্তভোগী নারী ও শিশু পরিবার থেকেই সুরক্ষা পাচ্ছে না। ধর্ষককে ঘৃণা করতে হবে, ভুক্তভোগীকে নয়।