সরকার যাই কিছু করতে চায়, পুলিশের হাতেই বাস্তবায়ন করতে হয় পুলিশকে অবহেলা করে বা পাশ কাটিয়ে গিয়ে দেশ গড়তে পারব না
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার তেজগাঁও কার্যালয়ে সারাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন
অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই উল্লেখ করে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে প্রত্যাশিত সংস্কারগুলো করে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, কারও জন্য অপেক্ষা করে লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকেই এই কাজ করতে হবে এবং তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
সোমবার তেজগাঁওয়ে নিজের কার্যালয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশকে উপেক্ষা করে সরকারের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন যে কঠিন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে তাও উঠে আসে। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সরকার যাই কিছু করতে চায় না কেন, যে ভঙ্গিতেই করতে চায় না কেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতেই বাস্তবায়ন করতে হয়। তারা করে দেবে না, তারা পরিবেশটা সৃষ্টি করে। ওই পরিবেশ না থাকলে তাহলে কোনো কাজই হয় না।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশকে অবহেলা করে বা পাশ কাটিয়ে গিয়ে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই তখন বাকি জিনিসগুলো হয়।’
জাতীয় নির্বাচন
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই
করে ফেলতে হবে। আপনারাও সংস্কারের কথা বলেছেন। কারও জন্য অপেক্ষা করে কোনো ফায়দা হবে না। কাজটা করতে হবে এবং সেটা আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন দেশজুড়ে থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আক্রমণের শিকার হতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। আগুন দেয়া হয় থানা ও পুলিশের স্থাপনায়। লুট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। কয়েকদিন পর পুলিশ কাজে ফিরলেও হারানো সেই মনোবল ফেরেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশের কথা প্রসঙ্গে দুটি শব্দ বারবারই আমরা বলেছি, তা হলো আইন ও শৃঙ্খলা। এটিই হলো পুলিশ। আইন যদি না থাকে তাহলে সরকার কী, গণতন্ত্র কী, অধিকার কী, মানুষ-নাগরিক কী কিছুই থাকে না। আইনশৃঙ্খলা ঠিক না থাকলে যত বড় চিন্তা থাকুক, যত টাকা ঢালুক, কোনো কাজে আসবে না।’
পুলিশ সদস্যরা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন, সেসব নিয়ে বৈঠক করবেন জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সমাধান করতে পারব কিনা- জানি না। কিছু কিছু জিনিস সমাধান করা অনেক কঠিন হয়ে যায়, কিন্তু চেষ্টা করব যে- কী করা যায়। যদি ব্যর্থ হই, তবে মনে করবে- আমি চেষ্টা করেছিলাম, ব্যর্থ হয়েছি। চেষ্টার অভাবে ব্যর্থ হইনি।’
তিনি বলেন, ‘যাদের হাতে পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব, দেশকে তৈরি করার দায়িত্ব, তাদের তৈরি করতে না পারলে বাকি কাজ হলো না। সেই জন্য আমরা অগ্রাধিকার দিতে চাই, যেটা আমরা পারি।’
সম্ভাবনার বাংলাদেশ
বাংলাদেশ একটা মস্তবড় সম্ভাবনার দেশ মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যক্তি হিসেবে এটা অনুভব করি। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে আনতে পারছি না, ঠেকে যাচ্ছে। আজকে আমরা সুযোগ পেয়েছি, মস্তবড় সুযোগ সেই সম্ভাবনাকে কাজে পরিণত করা।’
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ে অভ্যুত্থানের ফলে সেই সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্ভাবনার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। যেটুকু সময় আমাদের আছে, চেষ্টা করি। ভবিষ্যতেও যারা আসবে তারা চেষ্টা করবে, পথটা যেন আমরা সৃষ্টি করে দিই। এই পথে আমরা এগোলে সম্ভাবনাগুলো বাস্তবে পরিণত হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর যে সমস্ত অগ্রগামী দেশ, যারা পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেয়- তাদের মধ্যে একটি হতে পারে। সেরকম সম্ভাবনা আছে। এটা কোনো আত্মতুষ্টির জন্য না। একটু বিচার করলেই মনে হয়, হ্যাঁ, এ রকম সম্ভাবনা আছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান হলো, বিরাট একটা কা-। ইতিহাসের বিরাট একটা পরিবর্তন সূচিত হলো। ল-ভ- অবস্থার মধ্যে আমরা এই যাত্রা শুরু করলাম। সারা দুনিয়ার যত দেশ আছে, সবাই আমাদের সমর্থন করলো। শুধু মিনমিনে সমর্থন না, উৎসাহসহকারে এগিয়ে এলো। তারা মনে করেছে, এই দেশ যদি উঠে দাঁড়াতে পারে, সেটা সবার ভালো সঙ্গী হবে। তারা আমাদের ওপর যে রকম ভরসা করেছে, আমরা আমাদের ওপর সে রকম ভরসা আনতে চাই। নতুন করে যে যাত্রা শুরু হলো, এটা মস্তবড় সুযোগ। এই সুযোগটা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি।’
নতুন বাংলাদেশ
পুলিশ বাহিনী দেশে ‘মস্তব্য’ ভূমিকা রাখে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আইন যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারি, শৃঙ্খলা যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে যে কোনো যুদ্ধ জয় সম্ভব। এগিয়ে যাওয়ার যে যুদ্ধ-লড়াই, এটা আনন্দের লড়াই, কষ্টের কোনো লড়াই না। যতই এগিয়ে যায়, তত ফুর্তি লাগে। নিজের কাছেও ফুর্তি লাগে। নিজের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে ফুর্তি লাগে। আমরা একটা কাজ করছি, তারা দেখছে, তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। নিজের তৃপ্তি হচ্ছে, আমি এমন একটা ভূমিকায় আছি- যে ভূমিকায় দেশের একটা পরিবর্তন হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশ বলি, এটা কথার কথা না; নতুন বাংলাদেশ বলি এই কারণে যে, পুরনো বাংলাদেশ অন্ধকার যুগ আমাদের। ভয়ংকর। সেই ভয়ংকর দিনগুলো থেকে আমরা সুন্দর, ঝলমলে দিনে আসতে চাই। সেটাই নতুন বাংলাদেশ।’
ভয়ংকর কর্মকা-ের সঙ্গে পুলিশের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ টেনে বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পুলিশ বাহিনীর মুশকিল হলো, ওই অন্ধকার যুগের তারা একটিভ পার্টিসিপ্যান্ট ছিল। নিজের ইচ্ছায় না, সরকারি কাজ করতে হয়। কাজেই ‘আমরা কাজ করেছি, আমরা হুকুম পেয়েছি, করেছি; করতে করতে আমরাও ওরকম চিন্তার ওপর গেছি’। কাজেই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করার জন্য তোমাদের ওই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে যে, আমরা নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করব।”
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের অনেক দোষ দেয়। আমরা দেখিয়ে দেব, আমরা মানুষ খারাপ না। আমরা খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম। আমরা সেই খারাপ মানুষ থেকে বেরিয়ে এসেছি। ভালো মানুষ আমরা। আমরা দেখব, কী করতে পারি। সেই দৃঢ় চিন্তা মাথার ভেতরে রাখতে হবে। আমরা দেখিয়ে ছাড়ব আমরা কী করতে পারি। আমাদের গালাগাল করে, মন্দ বলে। আমাদের কাজের মাধ্যমে দেখাব আমাদের হাত দিয়েই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে।’
পুলিশ হবে বন্ধু মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন পুলিশ দেখলেই মানুষ ভয় পায়, কী সিস্টেমের মধ্যে আটকে ফেলে, একটা ভয়ংকর ক্যারেক্টার। আইন হলো আমাদের সবার আশ্রয়। পুলিশ হলো সেই আশ্রয়দাতা।’
পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আইন আপনাকে সুরক্ষা দেবে। এই ইমেজ যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, অতীতের সব কথা মানুষ ভুলে যাবে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) ফারজানা ইসলাম। সভায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন ১২৭ কর্মকর্তা যোগ দেন।
সরকার যাই কিছু করতে চায়, পুলিশের হাতেই বাস্তবায়ন করতে হয় পুলিশকে অবহেলা করে বা পাশ কাটিয়ে গিয়ে দেশ গড়তে পারব না
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার তেজগাঁও কার্যালয়ে সারাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন
সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই উল্লেখ করে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে প্রত্যাশিত সংস্কারগুলো করে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, কারও জন্য অপেক্ষা করে লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকেই এই কাজ করতে হবে এবং তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
সোমবার তেজগাঁওয়ে নিজের কার্যালয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশকে উপেক্ষা করে সরকারের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন যে কঠিন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে তাও উঠে আসে। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সরকার যাই কিছু করতে চায় না কেন, যে ভঙ্গিতেই করতে চায় না কেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতেই বাস্তবায়ন করতে হয়। তারা করে দেবে না, তারা পরিবেশটা সৃষ্টি করে। ওই পরিবেশ না থাকলে তাহলে কোনো কাজই হয় না।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশকে অবহেলা করে বা পাশ কাটিয়ে গিয়ে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই তখন বাকি জিনিসগুলো হয়।’
জাতীয় নির্বাচন
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই
করে ফেলতে হবে। আপনারাও সংস্কারের কথা বলেছেন। কারও জন্য অপেক্ষা করে কোনো ফায়দা হবে না। কাজটা করতে হবে এবং সেটা আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন দেশজুড়ে থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আক্রমণের শিকার হতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। আগুন দেয়া হয় থানা ও পুলিশের স্থাপনায়। লুট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। কয়েকদিন পর পুলিশ কাজে ফিরলেও হারানো সেই মনোবল ফেরেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশের কথা প্রসঙ্গে দুটি শব্দ বারবারই আমরা বলেছি, তা হলো আইন ও শৃঙ্খলা। এটিই হলো পুলিশ। আইন যদি না থাকে তাহলে সরকার কী, গণতন্ত্র কী, অধিকার কী, মানুষ-নাগরিক কী কিছুই থাকে না। আইনশৃঙ্খলা ঠিক না থাকলে যত বড় চিন্তা থাকুক, যত টাকা ঢালুক, কোনো কাজে আসবে না।’
পুলিশ সদস্যরা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন, সেসব নিয়ে বৈঠক করবেন জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সমাধান করতে পারব কিনা- জানি না। কিছু কিছু জিনিস সমাধান করা অনেক কঠিন হয়ে যায়, কিন্তু চেষ্টা করব যে- কী করা যায়। যদি ব্যর্থ হই, তবে মনে করবে- আমি চেষ্টা করেছিলাম, ব্যর্থ হয়েছি। চেষ্টার অভাবে ব্যর্থ হইনি।’
তিনি বলেন, ‘যাদের হাতে পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব, দেশকে তৈরি করার দায়িত্ব, তাদের তৈরি করতে না পারলে বাকি কাজ হলো না। সেই জন্য আমরা অগ্রাধিকার দিতে চাই, যেটা আমরা পারি।’
সম্ভাবনার বাংলাদেশ
বাংলাদেশ একটা মস্তবড় সম্ভাবনার দেশ মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যক্তি হিসেবে এটা অনুভব করি। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে আনতে পারছি না, ঠেকে যাচ্ছে। আজকে আমরা সুযোগ পেয়েছি, মস্তবড় সুযোগ সেই সম্ভাবনাকে কাজে পরিণত করা।’
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ে অভ্যুত্থানের ফলে সেই সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্ভাবনার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। যেটুকু সময় আমাদের আছে, চেষ্টা করি। ভবিষ্যতেও যারা আসবে তারা চেষ্টা করবে, পথটা যেন আমরা সৃষ্টি করে দিই। এই পথে আমরা এগোলে সম্ভাবনাগুলো বাস্তবে পরিণত হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর যে সমস্ত অগ্রগামী দেশ, যারা পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেয়- তাদের মধ্যে একটি হতে পারে। সেরকম সম্ভাবনা আছে। এটা কোনো আত্মতুষ্টির জন্য না। একটু বিচার করলেই মনে হয়, হ্যাঁ, এ রকম সম্ভাবনা আছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান হলো, বিরাট একটা কা-। ইতিহাসের বিরাট একটা পরিবর্তন সূচিত হলো। ল-ভ- অবস্থার মধ্যে আমরা এই যাত্রা শুরু করলাম। সারা দুনিয়ার যত দেশ আছে, সবাই আমাদের সমর্থন করলো। শুধু মিনমিনে সমর্থন না, উৎসাহসহকারে এগিয়ে এলো। তারা মনে করেছে, এই দেশ যদি উঠে দাঁড়াতে পারে, সেটা সবার ভালো সঙ্গী হবে। তারা আমাদের ওপর যে রকম ভরসা করেছে, আমরা আমাদের ওপর সে রকম ভরসা আনতে চাই। নতুন করে যে যাত্রা শুরু হলো, এটা মস্তবড় সুযোগ। এই সুযোগটা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি।’
নতুন বাংলাদেশ
পুলিশ বাহিনী দেশে ‘মস্তব্য’ ভূমিকা রাখে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আইন যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারি, শৃঙ্খলা যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে যে কোনো যুদ্ধ জয় সম্ভব। এগিয়ে যাওয়ার যে যুদ্ধ-লড়াই, এটা আনন্দের লড়াই, কষ্টের কোনো লড়াই না। যতই এগিয়ে যায়, তত ফুর্তি লাগে। নিজের কাছেও ফুর্তি লাগে। নিজের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে ফুর্তি লাগে। আমরা একটা কাজ করছি, তারা দেখছে, তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। নিজের তৃপ্তি হচ্ছে, আমি এমন একটা ভূমিকায় আছি- যে ভূমিকায় দেশের একটা পরিবর্তন হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশ বলি, এটা কথার কথা না; নতুন বাংলাদেশ বলি এই কারণে যে, পুরনো বাংলাদেশ অন্ধকার যুগ আমাদের। ভয়ংকর। সেই ভয়ংকর দিনগুলো থেকে আমরা সুন্দর, ঝলমলে দিনে আসতে চাই। সেটাই নতুন বাংলাদেশ।’
ভয়ংকর কর্মকা-ের সঙ্গে পুলিশের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ টেনে বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পুলিশ বাহিনীর মুশকিল হলো, ওই অন্ধকার যুগের তারা একটিভ পার্টিসিপ্যান্ট ছিল। নিজের ইচ্ছায় না, সরকারি কাজ করতে হয়। কাজেই ‘আমরা কাজ করেছি, আমরা হুকুম পেয়েছি, করেছি; করতে করতে আমরাও ওরকম চিন্তার ওপর গেছি’। কাজেই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করার জন্য তোমাদের ওই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে যে, আমরা নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করব।”
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের অনেক দোষ দেয়। আমরা দেখিয়ে দেব, আমরা মানুষ খারাপ না। আমরা খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম। আমরা সেই খারাপ মানুষ থেকে বেরিয়ে এসেছি। ভালো মানুষ আমরা। আমরা দেখব, কী করতে পারি। সেই দৃঢ় চিন্তা মাথার ভেতরে রাখতে হবে। আমরা দেখিয়ে ছাড়ব আমরা কী করতে পারি। আমাদের গালাগাল করে, মন্দ বলে। আমাদের কাজের মাধ্যমে দেখাব আমাদের হাত দিয়েই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে।’
পুলিশ হবে বন্ধু মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন পুলিশ দেখলেই মানুষ ভয় পায়, কী সিস্টেমের মধ্যে আটকে ফেলে, একটা ভয়ংকর ক্যারেক্টার। আইন হলো আমাদের সবার আশ্রয়। পুলিশ হলো সেই আশ্রয়দাতা।’
পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আইন আপনাকে সুরক্ষা দেবে। এই ইমেজ যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, অতীতের সব কথা মানুষ ভুলে যাবে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) ফারজানা ইসলাম। সভায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন ১২৭ কর্মকর্তা যোগ দেন।