alt

জাতীয়

বাংলাদেশের ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করলো ভারত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ভারতের একটি শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে অন্য কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর ব্যবহার করা বা ট্রানশিপমেন্টের সুযোগ বাতিল করেছে ভারত। মঙ্গলবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস এই সুবিধা বাতিল করে আদেশ জারি করে। তবে নেপাল বা ভুটানগামী পণ্য চালানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার তা নিশ্চিত করে।

তবে নেপাল বা ভুটানগামী পণ্য চালানের ক্ষেত্রে বাতিলের এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না, স্পষ্ট করেছে ভারত

বাংলাদেশকে ট্রানশিপমেন্টের সুবিধা দেয়া হয়েছিল ২০২০ সালের ২৯ জুনে। তা বাতিলের ঘোষণা সংবলিত আদেশে আরও বলা হয়েছে, যেসব পণ্যবোঝাই যানবাহন ইতোমধ্যে ভারতের ভূখণ্ডে আছে, সেগুলো দ্রুত ভারতের ভূখ- ত্যাগ করতে পারবে। তবে নতুনভাবে কোনো পণ্যের চালান ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা পাবে না।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ কয়েকটি ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহার করা হতো। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে তা ব্যাহত হতে পারে।

ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা এতদিন পণ্য পরিবহনের সময় ও খরচ কমাতে সাহায্য করেছে।

ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি (এইপিসি) দীর্ঘদিন ধরেই এই ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। এইপিসির চেয়ারম্যান সুধীর সেখড়ির মতে, টেক্সটাইল রপ্তানিতে বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলাদেশের ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় এখন ভারতীয় বিমানবন্দরগুলোতে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের জন্য বেশি জায়গা তৈরি হবে।

নয়াদিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রধান অজয় শ্রীবাস্তব জানান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৯৯৪ সালের সাধারণ শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে পণ্যের অবাধ ট্রানজিটের সুযোগ নিশ্চিত করতে বাধ্য সব সদস্য রাষ্ট্র।

আকস্মিকভাবে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কোনো কারণ ভারত সরকার দেখায়নি। সিবিআইসির সার্কুলারেও কিছু বলা হয়নি। ২৮ মার্চ বাংলাদেশের বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভারতের সাত রাজ্য, ভারতের পূর্বাঞ্চলে, যেগুলোকে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়ে থাকে ভারতের ভূবেষ্টিত অঞ্চল। সমুদ্রে যাওয়ার কোনো উপায় তাদের নেই। এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক আমরা। ফলে, এটা বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। এটা চীনের অর্থনৈতিক বর্ধিতাংশ হতে পারে। বিভিন্ন জিনিস নির্মাণ, উৎপাদন করুন, বাজারজাত করুন; জিনিসপত্র চীন নিয়ে আসুন কিংবা সারাবিশ্বে পাঠিয়ে দিন।’

তার ওই বক্তব্য ঘিরে রীতিমতো হৈ চৈ শুরু হয় ভারতে। বাংলাদেশ-চীনের আলোচনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোকে টেনে আনায় ইউনূসের সমালোচনামুখর হন ভারতের রাজনীতিক, সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ইউনূসের ওই বক্তব্যকে ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৌশলগত সুবিধাজনক অবস্থান তুলে ধরার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের অবস্থা যখন নাজুক, তখন চীনকে ‘নতুন কৌশলগত অংশীদার; হিসেবে চিত্রিত করাও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। ইনডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্প্রসারণে বাংলাদেশের সমর্থনের অভিপ্রায়’ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত এই সিদ্ধান্ত নিলো।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ভারত গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশকে ‘একতরফাভাবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার’ দিয়ে সহায়তা করে এসেছে। তবে বাংলাদেশের লালমনিরহাটে একটি বিমান ঘাঁটি চীনের সহায়তায় সচল করার উদ্যোগ ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের কাছাকাছি হওয়ায় ভারত এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।

লালমনিরহাটের বিমান ঘাঁটিটি ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর বা ‘চিকেনস নেক’-এর খুব কাছে, যা ভারতের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে সংযোগের একমাত্র পথ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে ‘কৌশলগত সহযোগিতা’ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে এমন প্রতিবেদনে নয়াদিল্লির উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মানুযায়ী, সদস্য দেশগুলোকে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর জন্য অবাধ ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়। ১৯৯৪ সালে সংস্থাটির জারি করা জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেড (জিএটিটি) এর পঞ্চম অনুচ্ছেদ অনুসারে, সব সদস্যকে স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট দিতে হবে এবং এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সীমা দেয়া যাবে না। তাছাড়া এই পণ্য পরিবহনকে শুল্কের আওতায় ফেলা যাবে না।

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এমন এক সময়ে ভারতীয় ভূখ- ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে দেয়া সুবিধা বাতিল করল, যার কয়েক দিন আগে ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েক ডজন দেশ ও অঞ্চলের বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রার শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশের ‘কিছু ঘটনার’ ইঙ্গিত দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কারণ ব্যাখ্যা ভারতের

ছবি

বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

কবে কমবে ঝড়-বৃষ্টি, যা জানালো আবহাওয়া অফিস

কবে কমবে ঝড়-বৃষ্টি, যা জানালো আবহাওয়া অফিস

পুলিশ হত্যা মামলা: আরাভ খানসহ ৮ জনের যাবজ্জীবন

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

‘মে মাস থেকে ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা’

ছবি

পুলিশের সঙ্গে বিরোধ: গাবতলীতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

ছবি

হঠাৎ ঝাঁজ উঠলো পেঁয়াজের

১০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অনুমোদন অভিযোজন তহবিল বোর্ডের

ছবি

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক: দেওয়ানি কার্যবিধি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত

ছবি

কানাডার কাছ থেকে আসলে কী চাইছেন ট্রাম্প

ছয় মাসে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দেবপ্রিয়

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ: আলোচনা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ও রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের সুপারিশ সিপিডির

ছবি

‘কেবল সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল’, আদালতে বললেন মেঘনা আলম

ছবি

সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একমত বাংলাদেশ-পাকিস্তান

আইএমএফের ৪র্থ ও ৫ম কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জুনে

ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলোচনায় ‘সন্তুষ্ট’ নন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে ‘বিভ্রান্ত’ বিএনপি, রোববার ফের বৈঠক

ছবি

মৎস্য রপ্তানির হার এবং গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে: মৎস্য উপদেষ্টা

ছবি

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

ছবি

দীর্ঘ ১৫ বছর পর ঢাকায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক

ছবি

ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন, অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা

তরুণীকে লাঠিপেটা: ‘আপন কফির’ কর্মীর স্বীকারোক্তি

ছবি

হঠাৎ বৃষ্টিতে ঢাকার জনজীবনে স্বস্তি

আরাকান আর্মি ফেরত দিলো ৫৫ জেলেকে, রেখে দিয়েছে কোটি টাকার ট্রলার ও জাল

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ইউনূস

শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিডার উদ্বেগ

রায় শুনে ‘জ্ঞান হারালেন’ স্বাস্থ্যের মালেকের স্ত্রী

ছবি

যশোরে সাব-রেজিস্ট্রার এবং চট্টগ্রামে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুদকের অভিযান

ছবি

কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা অনড়

ছবি

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে জনদুর্ভোগ

ছবি

আইএফআইসি আমার বন্ড ‘প্রতারণা’: আসামি হচ্ছেন সালমান, শায়ান ও শিবলী

উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে গণতন্ত্রকে পিছিয়ে রাখার তত্ত্ব একটি ভ্রান্ত ধারণা

ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব, বৃহস্পতিবার বৈঠক

tab

জাতীয়

বাংলাদেশের ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করলো ভারত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ভারতের একটি শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে অন্য কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর ব্যবহার করা বা ট্রানশিপমেন্টের সুযোগ বাতিল করেছে ভারত। মঙ্গলবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস এই সুবিধা বাতিল করে আদেশ জারি করে। তবে নেপাল বা ভুটানগামী পণ্য চালানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার তা নিশ্চিত করে।

তবে নেপাল বা ভুটানগামী পণ্য চালানের ক্ষেত্রে বাতিলের এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না, স্পষ্ট করেছে ভারত

বাংলাদেশকে ট্রানশিপমেন্টের সুবিধা দেয়া হয়েছিল ২০২০ সালের ২৯ জুনে। তা বাতিলের ঘোষণা সংবলিত আদেশে আরও বলা হয়েছে, যেসব পণ্যবোঝাই যানবাহন ইতোমধ্যে ভারতের ভূখণ্ডে আছে, সেগুলো দ্রুত ভারতের ভূখ- ত্যাগ করতে পারবে। তবে নতুনভাবে কোনো পণ্যের চালান ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা পাবে না।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ কয়েকটি ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহার করা হতো। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে তা ব্যাহত হতে পারে।

ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা এতদিন পণ্য পরিবহনের সময় ও খরচ কমাতে সাহায্য করেছে।

ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি (এইপিসি) দীর্ঘদিন ধরেই এই ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। এইপিসির চেয়ারম্যান সুধীর সেখড়ির মতে, টেক্সটাইল রপ্তানিতে বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলাদেশের ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় এখন ভারতীয় বিমানবন্দরগুলোতে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের জন্য বেশি জায়গা তৈরি হবে।

নয়াদিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রধান অজয় শ্রীবাস্তব জানান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৯৯৪ সালের সাধারণ শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে পণ্যের অবাধ ট্রানজিটের সুযোগ নিশ্চিত করতে বাধ্য সব সদস্য রাষ্ট্র।

আকস্মিকভাবে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কোনো কারণ ভারত সরকার দেখায়নি। সিবিআইসির সার্কুলারেও কিছু বলা হয়নি। ২৮ মার্চ বাংলাদেশের বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভারতের সাত রাজ্য, ভারতের পূর্বাঞ্চলে, যেগুলোকে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়ে থাকে ভারতের ভূবেষ্টিত অঞ্চল। সমুদ্রে যাওয়ার কোনো উপায় তাদের নেই। এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক আমরা। ফলে, এটা বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। এটা চীনের অর্থনৈতিক বর্ধিতাংশ হতে পারে। বিভিন্ন জিনিস নির্মাণ, উৎপাদন করুন, বাজারজাত করুন; জিনিসপত্র চীন নিয়ে আসুন কিংবা সারাবিশ্বে পাঠিয়ে দিন।’

তার ওই বক্তব্য ঘিরে রীতিমতো হৈ চৈ শুরু হয় ভারতে। বাংলাদেশ-চীনের আলোচনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোকে টেনে আনায় ইউনূসের সমালোচনামুখর হন ভারতের রাজনীতিক, সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ইউনূসের ওই বক্তব্যকে ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৌশলগত সুবিধাজনক অবস্থান তুলে ধরার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের অবস্থা যখন নাজুক, তখন চীনকে ‘নতুন কৌশলগত অংশীদার; হিসেবে চিত্রিত করাও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। ইনডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্প্রসারণে বাংলাদেশের সমর্থনের অভিপ্রায়’ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত এই সিদ্ধান্ত নিলো।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ভারত গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশকে ‘একতরফাভাবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার’ দিয়ে সহায়তা করে এসেছে। তবে বাংলাদেশের লালমনিরহাটে একটি বিমান ঘাঁটি চীনের সহায়তায় সচল করার উদ্যোগ ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের কাছাকাছি হওয়ায় ভারত এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।

লালমনিরহাটের বিমান ঘাঁটিটি ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর বা ‘চিকেনস নেক’-এর খুব কাছে, যা ভারতের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে সংযোগের একমাত্র পথ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে ‘কৌশলগত সহযোগিতা’ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে এমন প্রতিবেদনে নয়াদিল্লির উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মানুযায়ী, সদস্য দেশগুলোকে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর জন্য অবাধ ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়। ১৯৯৪ সালে সংস্থাটির জারি করা জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেড (জিএটিটি) এর পঞ্চম অনুচ্ছেদ অনুসারে, সব সদস্যকে স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট দিতে হবে এবং এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সীমা দেয়া যাবে না। তাছাড়া এই পণ্য পরিবহনকে শুল্কের আওতায় ফেলা যাবে না।

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এমন এক সময়ে ভারতীয় ভূখ- ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে দেয়া সুবিধা বাতিল করল, যার কয়েক দিন আগে ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েক ডজন দেশ ও অঞ্চলের বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রার শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

back to top