alt

জাতীয়

বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য সেরা জায়গা, বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশিদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা

সংবাদ রিপোর্ট : বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫

বুধবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশকে ব্যবসার জন্য সেরা জায়গা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসুন এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব বদলে দিতে ভূমিকা রাখুন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে দুনিয়া পরিবর্তনের পাগলাটে ধারণাগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, তাই আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই, যেন আপনারা শুধু বাংলাদেশকে নয়, পুরো বিশ্বকেই বদলে দেয়ার যাত্রায় যুক্ত হন।’

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কাজ করে দেখায়, আর একবার কেউ শুরু করলে অন্যরাও তার অনুসরণ করে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি আপনি বাংলাদেশে ব্যবসা করেন, তাহলে আপনি সুখ এবং অতিরিক্ত আনন্দ দুটিই পাবেন। কোনো খরচ ছাড়াই এই অতিরিক্ত আনন্দ আপনি লাভ করতে পারেন এবং এটি করে আপনি গর্বিত হবেন।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো এই অঞ্চলকেই দেখেন যেখানে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বিশ্ব বদলে দেয়ার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার এবং এর মাধ্যমে নতুন সভ্যতা গঠনের ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।

তিনি বলেন, ‘আমি বলছি, আমরা ‘তিন শূন্য’র একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারি। এটা সরকার দিয়ে নয়, ব্যবসার মাধ্যমে করা সম্ভব। কারণ এটা সরকারের কাজ নয়, বরং ব্যক্তিমাত্র, মানুষ হিসেবে আমাদের কাজ।’

তিনি বলেন, নতুন সভ্যতা হবে এমন একটি সভ্যতা যেখানে কার্বন নির্গমন থাকবে না। ‘আমরা তা করতে পারি। এটি হওয়া উচিত ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে।’

তিনি বলেন, অর্থ উপার্জন আনন্দের হলেও, সম্পদের কেন্দ্রীকরণ মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। ‘এটি পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে ফেলবে।’

শোনান গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণফোনের শুরুর গল্প

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘’৭৪ সাল সেই বছর, যা আমরা ভুলতে পারব না। মানুষ ক্ষুধার কারণে মৃত্যুবরণ করে। দেশজুড়ে দুর্ভিক্ষ বয়ে যায়। দেড় মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। ওটাই ছিল সেই দেশ, যেখান থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল।’

‘আমরা এক ফসলই ফলাতাম। আর কোনো উপায় আমাদের জানা ছিল না। আমাদের জনসংখ্যা ছিল কৃষক হিসেবেই পরিচিত, কারণ তাদের আর কোনো পেশা ছিল না। তাদের মধ্যে ছিল ভূমিহীন কৃষক। তাদের নিজের কোনো জমি ছিল না। যারা অল্প জমির মালিক ছিল, তাদের কাছ থেকে সামান্য জমি লিজ নিয়ে এক ফসল ফলিয়ে জীবিকা চলত। আপনি যদি ‘চরম দারিদ্র্য’ শব্দটা শুনে থাকেন সেটাই ছিল বাংলাদেশ। জীবনটা ছিল খুব কঠিন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করি ১৯৭৪ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত এটা এক অসাধারণ ভ্রমণ। এখানে আমরা সব বড় শিল্প নিয়ে কথা বলি। অনেক দেশকে আমন্ত্রণ জানাই আরও শিল্প স্থাপনের জন্য। আমরা একটি বিশাল বাজার নিয়ে কথা বলি।

গ্রামীণ ব্যাংক শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সেই দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশে একটি ছোট উদ্যোগ এসেছে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে। মানুষকে ২ বা ৩ ডলারের মতো ছোট ঋণ দেয়া হতো, যেন তারা ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারে বিশেষভাবে নারীদের ওপর গুরুত্ব দিয়ে। কারণ নারীরাই ছিল সবচেয়ে অসহায়। এই ধারণা ‘মাইক্রো ক্রেডিট’ নামে পরিচিত হয়। আমরা একটি ব্যাংক তৈরি করি, যার নাম গ্রামীণ ব্যাংক।

‘কেউ জানত না শেষ পর্যন্ত এটি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে। কিন্তু এটা হয়ে উঠল একটি বৈশ্বিক নাম। কারণ আপনি যেই দেশেই থাকুন না কেন, আপনার ভেতরে একটু হলেও ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ লুকিয়ে আছে। আপনি তা হয়তো চিনতে পারেন না, কিংবা লুকিয়ে রাখেন। আপনি জনগণের টাকা তাদের (দরিদ্রদের) দিয়ে দেন, ভাবেন এটাই সমাধান। কিন্তু গরিব মানুষকে শুধু সরকারি টাকা দেয়াটা কোনো সমাধান নয়। আসল সমাধান হলো একটি কাঠামো তৈরি করা, এমন একটি ব্যবস্থা, যা মানুষের শক্তিকে মুক্ত করে দেয়। মাইক্রোক্রেডিট ছিল সেই উদ্যোগের একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ।’ ১৯৮৩ সালে

সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২৮ বছর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস।

ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।

গ্রামীণফোনের লাইসেন্স নেবার সময়ের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এক পাগলাটে চিন্তা এলো সরকার ফোন ব্যবহারের লাইসেন্স দেবে। তখন আমাদের কোনো ফোনই ছিল না, টেলিফোন বলতে দেশে কিছুই ছিল না।

‘শহরে হাতে গোনা কয়েকটা টেলিফোন ছিল, তার বেশিরভাগই কাজ করত না। তখন ভাবলাম, কেন আমরা একটা টেলিফোন কোম্পানির লাইসেন্সের জন্য আবেদন করি না? একেবারে পাগলাটে একটা ভাবনা ছিল। সরকার জিজ্ঞাসা করল এই টেলিফোন লাইসেন্স দিয়ে কী করবে? কী ব্যবসা করবে? আমি বললাম আমি এটা গরিব মহিলাদের হাতে তুলে দেব। ওরা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করল।

‘আমরা শেষমেশ লাইসেন্স পেয়ে যাই। নাম দিই ‘গ্রামীণফোন’ কারণ আমাদের ছিল গ্রামীণ ব্যাংক, তাই গ্রামীণফোন। কেউ আমাদের সঙ্গে অংশীদার হতে চাইল না, কারণ আমাদের কোনো জ্ঞান ছিল না, কিছুই জানতাম না। তখন সবাই বলত, বাংলাদেশ মোবাইল ফোনের জন্য উপযুক্ত জায়গা না। এখানে মোবাইল ফোনের কোনো বাজারই নেই।’

শেষ পর্যন্ত নরওয়ের টেলিনর কোম্পানি অংশীদার হতে রাজি হয়। সে কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি তাদের বোঝাই কেন আমরা এই ফোন নারীদের জন্য আনতে চাই। তারা বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। তবে শুরুতে তাদের বোর্ড রাজি হয়নি, পরে তারা সম্মত হয়। এরপর তো এটি দেশের সর্ববৃহৎ টেলিফোন কোম্পানিতে রূপ নেয়।’

১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে যাত্রা শুরু করে গ্রামীণফোন। বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে গ্রামীণফোনের।

কিহাক সাংকে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদানের’ স্বীকৃতিতে এই অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ইয়ংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয়।

এছাড়া বিনিয়োগে বিশেষ অবদানের জন্য ‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয় চার কোম্পানিকে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে ৭ এপ্রিল শুরু হয়েছে এই বিনিয়োগ সম্মেলন। এই সম্মেলনে দেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ সুযোগ এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংস্কার তুলে ধরা হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে।

স্পেন থেকে অস্কার গার্সিয়া, যুক্তরাজ্য থেকে রোজি উইন্টারটন এবং বাংলাদেশ থেকে নাসিম মঞ্জুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশের ব্যবসা এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।

শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গৃহীত অর্থনৈতিক সংস্কার এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ পাইপলাইন গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নির্বাহী এবং নীতিনির্ধারকেরা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

বাংলাদেশের ‘কিছু ঘটনার’ ইঙ্গিত দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কারণ ব্যাখ্যা ভারতের

ছবি

বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

কবে কমবে ঝড়-বৃষ্টি, যা জানালো আবহাওয়া অফিস

কবে কমবে ঝড়-বৃষ্টি, যা জানালো আবহাওয়া অফিস

পুলিশ হত্যা মামলা: আরাভ খানসহ ৮ জনের যাবজ্জীবন

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

‘মে মাস থেকে ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা’

ছবি

পুলিশের সঙ্গে বিরোধ: গাবতলীতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

ছবি

হঠাৎ ঝাঁজ উঠলো পেঁয়াজের

১০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অনুমোদন অভিযোজন তহবিল বোর্ডের

ছবি

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক: দেওয়ানি কার্যবিধি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত

ছবি

কানাডার কাছ থেকে আসলে কী চাইছেন ট্রাম্প

ছয় মাসে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দেবপ্রিয়

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ: আলোচনা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ও রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের সুপারিশ সিপিডির

ছবি

‘কেবল সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল’, আদালতে বললেন মেঘনা আলম

ছবি

সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একমত বাংলাদেশ-পাকিস্তান

আইএমএফের ৪র্থ ও ৫ম কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জুনে

ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলোচনায় ‘সন্তুষ্ট’ নন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে ‘বিভ্রান্ত’ বিএনপি, রোববার ফের বৈঠক

ছবি

মৎস্য রপ্তানির হার এবং গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে: মৎস্য উপদেষ্টা

ছবি

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

ছবি

দীর্ঘ ১৫ বছর পর ঢাকায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক

ছবি

ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন, অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা

তরুণীকে লাঠিপেটা: ‘আপন কফির’ কর্মীর স্বীকারোক্তি

ছবি

হঠাৎ বৃষ্টিতে ঢাকার জনজীবনে স্বস্তি

আরাকান আর্মি ফেরত দিলো ৫৫ জেলেকে, রেখে দিয়েছে কোটি টাকার ট্রলার ও জাল

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ইউনূস

শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিডার উদ্বেগ

রায় শুনে ‘জ্ঞান হারালেন’ স্বাস্থ্যের মালেকের স্ত্রী

ছবি

যশোরে সাব-রেজিস্ট্রার এবং চট্টগ্রামে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুদকের অভিযান

ছবি

কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা অনড়

ছবি

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে জনদুর্ভোগ

ছবি

আইএফআইসি আমার বন্ড ‘প্রতারণা’: আসামি হচ্ছেন সালমান, শায়ান ও শিবলী

উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে গণতন্ত্রকে পিছিয়ে রাখার তত্ত্ব একটি ভ্রান্ত ধারণা

ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব, বৃহস্পতিবার বৈঠক

tab

জাতীয়

বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য সেরা জায়গা, বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশিদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা

সংবাদ রিপোর্ট

বুধবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান উপদেষ্টা

বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশকে ব্যবসার জন্য সেরা জায়গা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসুন এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব বদলে দিতে ভূমিকা রাখুন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে দুনিয়া পরিবর্তনের পাগলাটে ধারণাগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, তাই আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই, যেন আপনারা শুধু বাংলাদেশকে নয়, পুরো বিশ্বকেই বদলে দেয়ার যাত্রায় যুক্ত হন।’

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কাজ করে দেখায়, আর একবার কেউ শুরু করলে অন্যরাও তার অনুসরণ করে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি আপনি বাংলাদেশে ব্যবসা করেন, তাহলে আপনি সুখ এবং অতিরিক্ত আনন্দ দুটিই পাবেন। কোনো খরচ ছাড়াই এই অতিরিক্ত আনন্দ আপনি লাভ করতে পারেন এবং এটি করে আপনি গর্বিত হবেন।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো এই অঞ্চলকেই দেখেন যেখানে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বিশ্ব বদলে দেয়ার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার এবং এর মাধ্যমে নতুন সভ্যতা গঠনের ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।

তিনি বলেন, ‘আমি বলছি, আমরা ‘তিন শূন্য’র একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারি। এটা সরকার দিয়ে নয়, ব্যবসার মাধ্যমে করা সম্ভব। কারণ এটা সরকারের কাজ নয়, বরং ব্যক্তিমাত্র, মানুষ হিসেবে আমাদের কাজ।’

তিনি বলেন, নতুন সভ্যতা হবে এমন একটি সভ্যতা যেখানে কার্বন নির্গমন থাকবে না। ‘আমরা তা করতে পারি। এটি হওয়া উচিত ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে।’

তিনি বলেন, অর্থ উপার্জন আনন্দের হলেও, সম্পদের কেন্দ্রীকরণ মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। ‘এটি পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে ফেলবে।’

শোনান গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণফোনের শুরুর গল্প

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘’৭৪ সাল সেই বছর, যা আমরা ভুলতে পারব না। মানুষ ক্ষুধার কারণে মৃত্যুবরণ করে। দেশজুড়ে দুর্ভিক্ষ বয়ে যায়। দেড় মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। ওটাই ছিল সেই দেশ, যেখান থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল।’

‘আমরা এক ফসলই ফলাতাম। আর কোনো উপায় আমাদের জানা ছিল না। আমাদের জনসংখ্যা ছিল কৃষক হিসেবেই পরিচিত, কারণ তাদের আর কোনো পেশা ছিল না। তাদের মধ্যে ছিল ভূমিহীন কৃষক। তাদের নিজের কোনো জমি ছিল না। যারা অল্প জমির মালিক ছিল, তাদের কাছ থেকে সামান্য জমি লিজ নিয়ে এক ফসল ফলিয়ে জীবিকা চলত। আপনি যদি ‘চরম দারিদ্র্য’ শব্দটা শুনে থাকেন সেটাই ছিল বাংলাদেশ। জীবনটা ছিল খুব কঠিন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করি ১৯৭৪ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত এটা এক অসাধারণ ভ্রমণ। এখানে আমরা সব বড় শিল্প নিয়ে কথা বলি। অনেক দেশকে আমন্ত্রণ জানাই আরও শিল্প স্থাপনের জন্য। আমরা একটি বিশাল বাজার নিয়ে কথা বলি।

গ্রামীণ ব্যাংক শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সেই দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশে একটি ছোট উদ্যোগ এসেছে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে। মানুষকে ২ বা ৩ ডলারের মতো ছোট ঋণ দেয়া হতো, যেন তারা ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারে বিশেষভাবে নারীদের ওপর গুরুত্ব দিয়ে। কারণ নারীরাই ছিল সবচেয়ে অসহায়। এই ধারণা ‘মাইক্রো ক্রেডিট’ নামে পরিচিত হয়। আমরা একটি ব্যাংক তৈরি করি, যার নাম গ্রামীণ ব্যাংক।

‘কেউ জানত না শেষ পর্যন্ত এটি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে। কিন্তু এটা হয়ে উঠল একটি বৈশ্বিক নাম। কারণ আপনি যেই দেশেই থাকুন না কেন, আপনার ভেতরে একটু হলেও ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ লুকিয়ে আছে। আপনি তা হয়তো চিনতে পারেন না, কিংবা লুকিয়ে রাখেন। আপনি জনগণের টাকা তাদের (দরিদ্রদের) দিয়ে দেন, ভাবেন এটাই সমাধান। কিন্তু গরিব মানুষকে শুধু সরকারি টাকা দেয়াটা কোনো সমাধান নয়। আসল সমাধান হলো একটি কাঠামো তৈরি করা, এমন একটি ব্যবস্থা, যা মানুষের শক্তিকে মুক্ত করে দেয়। মাইক্রোক্রেডিট ছিল সেই উদ্যোগের একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ।’ ১৯৮৩ সালে

সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২৮ বছর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস।

ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।

গ্রামীণফোনের লাইসেন্স নেবার সময়ের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এক পাগলাটে চিন্তা এলো সরকার ফোন ব্যবহারের লাইসেন্স দেবে। তখন আমাদের কোনো ফোনই ছিল না, টেলিফোন বলতে দেশে কিছুই ছিল না।

‘শহরে হাতে গোনা কয়েকটা টেলিফোন ছিল, তার বেশিরভাগই কাজ করত না। তখন ভাবলাম, কেন আমরা একটা টেলিফোন কোম্পানির লাইসেন্সের জন্য আবেদন করি না? একেবারে পাগলাটে একটা ভাবনা ছিল। সরকার জিজ্ঞাসা করল এই টেলিফোন লাইসেন্স দিয়ে কী করবে? কী ব্যবসা করবে? আমি বললাম আমি এটা গরিব মহিলাদের হাতে তুলে দেব। ওরা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করল।

‘আমরা শেষমেশ লাইসেন্স পেয়ে যাই। নাম দিই ‘গ্রামীণফোন’ কারণ আমাদের ছিল গ্রামীণ ব্যাংক, তাই গ্রামীণফোন। কেউ আমাদের সঙ্গে অংশীদার হতে চাইল না, কারণ আমাদের কোনো জ্ঞান ছিল না, কিছুই জানতাম না। তখন সবাই বলত, বাংলাদেশ মোবাইল ফোনের জন্য উপযুক্ত জায়গা না। এখানে মোবাইল ফোনের কোনো বাজারই নেই।’

শেষ পর্যন্ত নরওয়ের টেলিনর কোম্পানি অংশীদার হতে রাজি হয়। সে কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি তাদের বোঝাই কেন আমরা এই ফোন নারীদের জন্য আনতে চাই। তারা বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। তবে শুরুতে তাদের বোর্ড রাজি হয়নি, পরে তারা সম্মত হয়। এরপর তো এটি দেশের সর্ববৃহৎ টেলিফোন কোম্পানিতে রূপ নেয়।’

১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে যাত্রা শুরু করে গ্রামীণফোন। বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে গ্রামীণফোনের।

কিহাক সাংকে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদানের’ স্বীকৃতিতে এই অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ইয়ংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয়।

এছাড়া বিনিয়োগে বিশেষ অবদানের জন্য ‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয় চার কোম্পানিকে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে ৭ এপ্রিল শুরু হয়েছে এই বিনিয়োগ সম্মেলন। এই সম্মেলনে দেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ সুযোগ এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংস্কার তুলে ধরা হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে।

স্পেন থেকে অস্কার গার্সিয়া, যুক্তরাজ্য থেকে রোজি উইন্টারটন এবং বাংলাদেশ থেকে নাসিম মঞ্জুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশের ব্যবসা এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।

শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গৃহীত অর্থনৈতিক সংস্কার এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ পাইপলাইন গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নির্বাহী এবং নীতিনির্ধারকেরা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

back to top