এতদিন ধরে ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা একই সুরে বলে আসছিলেন- কোনো অবস্থাতেই তারা বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত বাণিজ্য শুল্কের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন না। এমনকি গত মঙ্গলবার যখন শোনা গেল, ট্রাম্প ৯০ দিনের মতো শুল্ক স্থগিত করার কথা ভাবছেন, তখনও তাদের অনেকেই সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সত্যি সত্যিই শুল্ক স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যে ঝাঁকুনি ট্রাম্প দিয়েছিলেন, তা আপাতত থেমে গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে যে ট্রাম্প আমেরিকার শিল্প খাতে ‘স্বর্ণযুগ’-এর ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার কী হবে? সেটি কি আরও বিলম্বিত হবে?
তবে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে যা হয়েছে, তা পরিকল্পনামাফিকই হয়েছে।
প্রথমে বড় আকারের শুল্ক আরোপ, তারপর স্থগিত, এবং এরপর সমঝোতা এটাই নাকি কৌশল।
শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ার খবর প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘ইতোমধ্যেই সমঝোতার জন্য ৭৫টি দেশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আশা করি, আরও অনেক দেশই করবে।’
তবে হোয়াইট হাউজের এই প্রতিক্রিয়া অবাক হওয়ার মতো কিছু না। বিনিয়োগকারীরা যেমন আতঙ্কের মধ্যে কাটাচ্ছিলেন, শেয়ারবাজারের যেভাবে পতন হচ্ছিল, রিপাবলিকান পার্টির ভেতর থেকেই যেভাবে সমালোচনা হচ্ছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবং তার জনপ্রিয়তা যেভাবে নিম্নমুখী হচ্ছিল এসব উপেক্ষা করার আর কোনো উপায় ছিল না।তাহলে, এই যে কিছু দেশের জন্য শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা এলো তা কি অভাবিত প্রতিরোধের মুখে পড়ে একরকম পশ্চাৎপসরণ?
নাকি এটি এক কৌশলী ব্যবসায়িক চুক্তিতে সবাইকে টেনে আনার প্রচেষ্টা?
যাই হোক না কেন, ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের অনেক অনুগামী তার নতুন অবস্থানের প্রশংসায় মেতে উঠেছেন।
ট্রাম্পের উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন, “ট্যারিফ নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, একদম সেভাবেই হয়েছে।”
তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লীভিট সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা বুঝতে পারছেন না, ট্রাম্প কী করছেন। এখন সারা দুনিয়া ট্রাম্পের কাছে ধরনা দিচ্ছে।’
তবে ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টে ‘শুল্ক স্থগিত’ বলতে ট্রাম্প আসলে কী বোঝাচ্ছেন, তা নিয়ে এখনও অনেক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
এই সিদ্ধান্ত কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য প্রযোজ্য?
মেক্সিকো ও কানাডার ক্ষেত্রে কি এর কোনো প্রভাব পড়বে?
কোনো নির্দিষ্ট শিল্প খাতের ওপর কি এটি প্রযোজ্য হবে?
এই প্রশ্নগুলোর এখনও পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে সর্বশেষ পর্যন্ত সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দিতে তারা সমর্থ হয়েছেন।
এছাড়া যেহেতু শুল্ক স্থগিতের পুরো রূপরেখা এখনও পরিষ্কার নয়, তাই অনেক দেশই সংশয়ে রয়েছে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় তারা।
শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যেও একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়।
গত বুধবার বিকেলে ট্রাম্প নিজেও এই অস্থিরতার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
এই স্বীকারোক্তি থেকেই হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তাই গতকাল দিনের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তিনি সমর্থকদের বলেছিলেন তার ওপর আস্থা রাখতে। বলেছিলেন, ‘মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
তবে এর আগে কিছু মানুষকে ভর্ৎসনা করতেও দেখা গেছে তাকে। বলেছিলেন, ‘কিছু মানুষ ভীতু ও বোকা। তাদের ধৈর্য নেই।’
যাই হোক, পরিশেষে ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। যদিও ট্রাম্প জোর দিয়ে এটাও বলেছেন- শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত তাকে নিতেই হতো।
এদিকে তার এই অবস্থান পরিবর্তনের পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা।
দলের জ্যেষ্ঠ নেতা চাক শুমার বলেন, ‘ট্রাম্প গ-গোল পাকিয়ে দেশ চালাচ্ছেন।’
তাদের মতে, ট্রাম্পের অবস্থান বদলের মধ্যে কোনো কৌশল নেই; বরং এটি একটি স্পষ্ট পশ্চাৎপসরণ।
‘ট্রাম্পের মাথায় কী চলছে তা মুখ্য নয়,’বলছেন অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা। তবুও, যেসব দেশের বা খাতের ওপর শুল্ক বসানো হয়েছিল, তাদের জন্য এই শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সুখবর হিসেবেই এসেছে।
তবে এখনও কিছু শুল্ক বহাল রয়েছে
* ১০ শতাংশ ভিত্তিগত শুল্ক ট্রাম্প এখনও প্রত্যাহার করেননি।
* চীনের ওপর আরোপিত সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ শুল্কও এখনও বহাল রয়েছে। তবে এই শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণার পর আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে পুঁজিবাজার আবার চাঙা হয়েছে।
শেয়ারের দরপতনের সময় যারা শেয়ার কিনেছেন, তাদের যেন পোয়াবারো।
বাজারে অস্থিরতা যখন তুঙ্গে, তখন যারা ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন, এখন তাদেরই লাভ ঘরে তোলার সময়।
তবে প্রশ্ন থেকে যায় কে বা কারা সেই লাভ ঘরে তুলেছে?
এই অদৃশ্য বিজয়ীদের তালিকা জানা গেলে হয়তো আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলে যেত।
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
এতদিন ধরে ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা একই সুরে বলে আসছিলেন- কোনো অবস্থাতেই তারা বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত বাণিজ্য শুল্কের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন না। এমনকি গত মঙ্গলবার যখন শোনা গেল, ট্রাম্প ৯০ দিনের মতো শুল্ক স্থগিত করার কথা ভাবছেন, তখনও তাদের অনেকেই সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সত্যি সত্যিই শুল্ক স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যে ঝাঁকুনি ট্রাম্প দিয়েছিলেন, তা আপাতত থেমে গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে যে ট্রাম্প আমেরিকার শিল্প খাতে ‘স্বর্ণযুগ’-এর ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার কী হবে? সেটি কি আরও বিলম্বিত হবে?
তবে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে যা হয়েছে, তা পরিকল্পনামাফিকই হয়েছে।
প্রথমে বড় আকারের শুল্ক আরোপ, তারপর স্থগিত, এবং এরপর সমঝোতা এটাই নাকি কৌশল।
শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ার খবর প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘ইতোমধ্যেই সমঝোতার জন্য ৭৫টি দেশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আশা করি, আরও অনেক দেশই করবে।’
তবে হোয়াইট হাউজের এই প্রতিক্রিয়া অবাক হওয়ার মতো কিছু না। বিনিয়োগকারীরা যেমন আতঙ্কের মধ্যে কাটাচ্ছিলেন, শেয়ারবাজারের যেভাবে পতন হচ্ছিল, রিপাবলিকান পার্টির ভেতর থেকেই যেভাবে সমালোচনা হচ্ছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবং তার জনপ্রিয়তা যেভাবে নিম্নমুখী হচ্ছিল এসব উপেক্ষা করার আর কোনো উপায় ছিল না।তাহলে, এই যে কিছু দেশের জন্য শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা এলো তা কি অভাবিত প্রতিরোধের মুখে পড়ে একরকম পশ্চাৎপসরণ?
নাকি এটি এক কৌশলী ব্যবসায়িক চুক্তিতে সবাইকে টেনে আনার প্রচেষ্টা?
যাই হোক না কেন, ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের অনেক অনুগামী তার নতুন অবস্থানের প্রশংসায় মেতে উঠেছেন।
ট্রাম্পের উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন, “ট্যারিফ নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, একদম সেভাবেই হয়েছে।”
তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লীভিট সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা বুঝতে পারছেন না, ট্রাম্প কী করছেন। এখন সারা দুনিয়া ট্রাম্পের কাছে ধরনা দিচ্ছে।’
তবে ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টে ‘শুল্ক স্থগিত’ বলতে ট্রাম্প আসলে কী বোঝাচ্ছেন, তা নিয়ে এখনও অনেক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
এই সিদ্ধান্ত কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য প্রযোজ্য?
মেক্সিকো ও কানাডার ক্ষেত্রে কি এর কোনো প্রভাব পড়বে?
কোনো নির্দিষ্ট শিল্প খাতের ওপর কি এটি প্রযোজ্য হবে?
এই প্রশ্নগুলোর এখনও পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে সর্বশেষ পর্যন্ত সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দিতে তারা সমর্থ হয়েছেন।
এছাড়া যেহেতু শুল্ক স্থগিতের পুরো রূপরেখা এখনও পরিষ্কার নয়, তাই অনেক দেশই সংশয়ে রয়েছে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় তারা।
শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যেও একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়।
গত বুধবার বিকেলে ট্রাম্প নিজেও এই অস্থিরতার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
এই স্বীকারোক্তি থেকেই হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তাই গতকাল দিনের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তিনি সমর্থকদের বলেছিলেন তার ওপর আস্থা রাখতে। বলেছিলেন, ‘মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
তবে এর আগে কিছু মানুষকে ভর্ৎসনা করতেও দেখা গেছে তাকে। বলেছিলেন, ‘কিছু মানুষ ভীতু ও বোকা। তাদের ধৈর্য নেই।’
যাই হোক, পরিশেষে ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। যদিও ট্রাম্প জোর দিয়ে এটাও বলেছেন- শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত তাকে নিতেই হতো।
এদিকে তার এই অবস্থান পরিবর্তনের পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা।
দলের জ্যেষ্ঠ নেতা চাক শুমার বলেন, ‘ট্রাম্প গ-গোল পাকিয়ে দেশ চালাচ্ছেন।’
তাদের মতে, ট্রাম্পের অবস্থান বদলের মধ্যে কোনো কৌশল নেই; বরং এটি একটি স্পষ্ট পশ্চাৎপসরণ।
‘ট্রাম্পের মাথায় কী চলছে তা মুখ্য নয়,’বলছেন অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা। তবুও, যেসব দেশের বা খাতের ওপর শুল্ক বসানো হয়েছিল, তাদের জন্য এই শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সুখবর হিসেবেই এসেছে।
তবে এখনও কিছু শুল্ক বহাল রয়েছে
* ১০ শতাংশ ভিত্তিগত শুল্ক ট্রাম্প এখনও প্রত্যাহার করেননি।
* চীনের ওপর আরোপিত সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ শুল্কও এখনও বহাল রয়েছে। তবে এই শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণার পর আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে পুঁজিবাজার আবার চাঙা হয়েছে।
শেয়ারের দরপতনের সময় যারা শেয়ার কিনেছেন, তাদের যেন পোয়াবারো।
বাজারে অস্থিরতা যখন তুঙ্গে, তখন যারা ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন, এখন তাদেরই লাভ ঘরে তোলার সময়।
তবে প্রশ্ন থেকে যায় কে বা কারা সেই লাভ ঘরে তুলেছে?
এই অদৃশ্য বিজয়ীদের তালিকা জানা গেলে হয়তো আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলে যেত।