গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন, প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা দলটি প্রধানতম রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে। এনসিপির মতে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের প্রথম ধাপ হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন।
এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার, (১৯ মে ২০২৫) দলীয় ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে এ কথা লিখেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
‘কয়েকটি বিষয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি’ শিরোনামে এ লেখায় সাতটি পয়েন্টে রাষ্ট্র সংস্কার, নারীর অধিকার, ধর্মীয় মূল্যবোধ, জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক রাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ
প্রথম পয়েন্টে এনসিপির আহ্বায়ক লেখেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার আদর্শ এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আকাক্সক্ষা ধারণ করেই এনসিপির পথচলা। এছাড়া আমরা বাংলার হিন্দু-মুসলমান-দলিতের উপনিবেশবিরোধী ও ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ধারাবাহিকতাকে রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করি।’
বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম
দ্বিতীয় পয়েন্টে তিনি লেখেন, ‘এনসিপি নাগরিকের ধর্মবিশ্বাস ও আত্মিক অনুভবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলাম- তার নৈতিকতা ও মানবিকতা এবং বাঙালি মুসলমানের ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনচর্চাকে এনসিপি মূল্যায়ন করে। সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এনসিপি। এনসিপি মনে করে, রাষ্ট্রের উচিত প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অখ-তা রক্ষা করা। এনসিপি ইসলামবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে এবং ধর্মীয় উগ্রতা বা চরমপন্থা সমর্থন করে না। এনসিপি সেকুলারিস্ট বা ধর্মতান্ত্রিকÑ কোনো মতবাদকেই আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে না; বরং ধর্মীয় সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও দায়-দরদ অনুশীলনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়াই এনসিপির লক্ষ্য।’
সংস্কৃত, নারী অধিকার
এনসিপি কেমন ‘জাতীয় সংস্কৃতি’ চায়, সেটি নাহিদ লিখেছেন পোস্টের তৃতীয় পয়েন্টে। এখানে তিনি লেখেন, ‘এনসিপি জাতি, ধর্ম বা গোত্রভিত্তিক পরিচয়ের পরিবর্তে সভ্যতাগত জাতীয় পরিচয় ধারণ করে। বহু ভাষা ও সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র বঙ্গীয় বদ্বীপের সভ্যতাগত পরিচয়কে ধারণ করে জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তুলবে এনসিপি।’
নারী অধিকার বিষয়ে তিনি এনসিপির অবস্থান তুলে ধরেন চতুর্থ পয়েন্টে। নাহিদ লেখেন, ‘নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন এনসিপির অন্যতম মূলনীতি। নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নেতৃত্ব ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতে এনসিপি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পারিবারিক আইনের আওতায় সম্পত্তিতে নারীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে এনসিপি কাজ করবে।’
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে
আঞ্চলিক রাজনীতি
আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে পঞ্চম পয়েন্টে এনসিপির আহ্বায়ক পোস্টে লিখেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদ বাংলাদেশের জন্য একটি সাংস্কৃতিক ও ভূরাজনৈতিক হুমকি। এনসিপি এই আধিপত্যবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে। এনসিপি মনে করে বাংলাদেশের উচিত ন্যায্যতা, মর্যাদা, সভ্যতা ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।’
ষষ্ঠ পয়েন্টে তিনি লেখেন, ‘এনসিপি বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক দুর্নীতিমুক্ত একটি আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, যা একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অনুরূপ হবে। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু, নগর ব্যবস্থাপনা, শ্রম অধিকার ও কর্মসংস্থান হবে এনসিপির প্রধান নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে একটি নতুন অর্থনৈতিক জোন তৈরির ভিশন আছে এনসিপির।’
*প্রধান লক্ষ্য*
সপ্তম ও শেষ পয়েন্টে এনসিপির প্রধান রাজনৈতিক কাজ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম লেখেন, ‘এনসিপি বিশ্বাস করে, একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন, প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন জরুরি। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা এনসিপির প্রধানতম রাজনৈতিক কর্তব্য। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের জন্য প্রথম ধাপটি হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন।’
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন, প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা দলটি প্রধানতম রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে। এনসিপির মতে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের প্রথম ধাপ হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন।
এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার, (১৯ মে ২০২৫) দলীয় ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে এ কথা লিখেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
‘কয়েকটি বিষয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি’ শিরোনামে এ লেখায় সাতটি পয়েন্টে রাষ্ট্র সংস্কার, নারীর অধিকার, ধর্মীয় মূল্যবোধ, জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক রাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ
প্রথম পয়েন্টে এনসিপির আহ্বায়ক লেখেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার আদর্শ এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আকাক্সক্ষা ধারণ করেই এনসিপির পথচলা। এছাড়া আমরা বাংলার হিন্দু-মুসলমান-দলিতের উপনিবেশবিরোধী ও ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ধারাবাহিকতাকে রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করি।’
বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম
দ্বিতীয় পয়েন্টে তিনি লেখেন, ‘এনসিপি নাগরিকের ধর্মবিশ্বাস ও আত্মিক অনুভবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলাম- তার নৈতিকতা ও মানবিকতা এবং বাঙালি মুসলমানের ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনচর্চাকে এনসিপি মূল্যায়ন করে। সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এনসিপি। এনসিপি মনে করে, রাষ্ট্রের উচিত প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অখ-তা রক্ষা করা। এনসিপি ইসলামবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে এবং ধর্মীয় উগ্রতা বা চরমপন্থা সমর্থন করে না। এনসিপি সেকুলারিস্ট বা ধর্মতান্ত্রিকÑ কোনো মতবাদকেই আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে না; বরং ধর্মীয় সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও দায়-দরদ অনুশীলনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়াই এনসিপির লক্ষ্য।’
সংস্কৃত, নারী অধিকার
এনসিপি কেমন ‘জাতীয় সংস্কৃতি’ চায়, সেটি নাহিদ লিখেছেন পোস্টের তৃতীয় পয়েন্টে। এখানে তিনি লেখেন, ‘এনসিপি জাতি, ধর্ম বা গোত্রভিত্তিক পরিচয়ের পরিবর্তে সভ্যতাগত জাতীয় পরিচয় ধারণ করে। বহু ভাষা ও সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র বঙ্গীয় বদ্বীপের সভ্যতাগত পরিচয়কে ধারণ করে জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তুলবে এনসিপি।’
নারী অধিকার বিষয়ে তিনি এনসিপির অবস্থান তুলে ধরেন চতুর্থ পয়েন্টে। নাহিদ লেখেন, ‘নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন এনসিপির অন্যতম মূলনীতি। নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নেতৃত্ব ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতে এনসিপি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পারিবারিক আইনের আওতায় সম্পত্তিতে নারীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে এনসিপি কাজ করবে।’
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে
আঞ্চলিক রাজনীতি
আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে পঞ্চম পয়েন্টে এনসিপির আহ্বায়ক পোস্টে লিখেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদ বাংলাদেশের জন্য একটি সাংস্কৃতিক ও ভূরাজনৈতিক হুমকি। এনসিপি এই আধিপত্যবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে। এনসিপি মনে করে বাংলাদেশের উচিত ন্যায্যতা, মর্যাদা, সভ্যতা ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।’
ষষ্ঠ পয়েন্টে তিনি লেখেন, ‘এনসিপি বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক দুর্নীতিমুক্ত একটি আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, যা একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অনুরূপ হবে। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু, নগর ব্যবস্থাপনা, শ্রম অধিকার ও কর্মসংস্থান হবে এনসিপির প্রধান নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে একটি নতুন অর্থনৈতিক জোন তৈরির ভিশন আছে এনসিপির।’
*প্রধান লক্ষ্য*
সপ্তম ও শেষ পয়েন্টে এনসিপির প্রধান রাজনৈতিক কাজ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম লেখেন, ‘এনসিপি বিশ্বাস করে, একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন, প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন জরুরি। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা এনসিপির প্রধানতম রাজনৈতিক কর্তব্য। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের জন্য প্রথম ধাপটি হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন।’