৫ আগস্ট-পরবর্তী ভাঙচুরে ‘ধ্বংসস্তূপে’ পরিণত হওয়া রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা জাদুঘর -সংবাদ
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ভাঙচুর আর ‘লুটপাট’ ও ‘ধ্বংসস্তূপে’ পরিণত হওয়া রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সংস্কার কাজ শেষে নতুনভাবে জাদুঘরটির উদ্বোধনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
সোমবার, (১৯ মে ২০২৫) মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে গত রোববার একটি বিশেষ সভার আয়োজন করা হয় জাতীয় জাদুঘরে। সভা শেষে স্বাধীনতা জাদুঘরের সংস্কার কাজের অগ্রগতি দেখতে ফারুকী জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন।
সেখানে জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মেরিনা তাবাসসুমও উপস্থিত ছিলেন। সংস্কার কাজের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে মেরিনা তাবাসসুম সংবাদকে বলেন, ‘আগস্টের ৫ তারিখ থেকে বন্ধ আছে ওটাতে যাওয়া হয় নাই। তাই আমরা মেইনলি আমরা ভিজিট করলাম। অনেকদিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে আমরা দেখলাম। পুরোটাই আবার প্রোপারলি ঠিকঠাক করতে হবে। যেহেতু এই প্রোজেক্টটাতে আমি ডিজাইনার হিসেবে ইনভল্ব ছিলাম, সেই হিসেবে দেখালাম।’
‘সম্ভবত ফোয়ারাটা নষ্ট, ওটা ঠিক করতে হবে। লাইট নেই, সেগুলো লাগাতে হবে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ছিল সেগুলো নষ্ট। সব মিলিয়ে বেশ একটা খারাপ অবস্থা,’ বলেন তিনি।
মেরিনা তাবাসসুম বলেন, ‘প্রথম কাজ হলো এটাকে ক্লিন করা দরকার। ভেতরটা একেবারে নোংরা হয়ে আছে। ধুলা, পানি মিলে একাকার অবস্থা ওটা ক্লিন করতে হবে। গ্লাস ও রেলিংগুলো ভাঙা ওগুলো ঠিক করতে হবে। ওটার জন্য তো একটা পরিকল্পনা নিতে হবে। এই মুহূর্তে ন্যাশনাল মিউজিয়ামের দায়িত্ব হলো ওইটাকে পরিষ্কার করা। সেইটাই আমরা শুরু করবো।’
‘এটা কত টাকা লাগবে সেটা বলতে পারবো না। এই মুহূর্তে প্রায়রোটিতে নাই। আমাদের আরও অনেক কিছুই আছে এখন প্রায়রোটিতে বাট এটা প্রথমে পরিষ্কার করি তারপর বাজেটেরও ব্যাপার থাকে’ বলেন তিনি।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আশা করে, স্বাধীনতা জাদুঘরের সংস্কার ও নতুনভাবে উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে। মুঘল শাসনামল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের বিজয় দিবস পর্যন্ত নানা ঘটনার বর্ণনাখচিত আলোকচিত্র আর নানা নিদর্শন- স্মারক ছিল স্বাধীনতা জাদুঘরে। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শেখ মুজিবুর রহমান এই উদ্যানেই দিয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর এই উদ্যানেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের।
২০১৫ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের ৪৪তম স্বাধীনতা দিবসে এ জাদুঘর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের এখতিয়ারে একটি শাখা জাদুঘর হিসেবে পরিচালিত হয় স্বাধীনতা জাদুঘর।
এ জাদুঘর মূলত সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে একটি বৃহৎ পরিকল্পিত নকশার অংশ। এই নকশায় রয়েছে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, তিনটি জলাধার, ‘শিখা চিরন্তন’, স্বাধীনতা সংগ্রামের চিত্রবিশিষ্ট একটি ম্যুরাল এবং ১৫৫ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটরিয়াম। তবে পুরো নকশার প্রধান বিষয় হলো একটি ৫০ মিটার বিশিষ্ট আলোক স্তম্ভ, যা ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ নামে পরিচিত। স্তম্ভটি কাচের প্যানেল দিয়ে নির্মিত। এই স্তম্ভের নিচেই স্বাধীনতা জাদুঘর। জলাধারের ওপরে একটি ফোয়ারা রয়েছে, যাতে ওপর থেকে পানি পড়ত। এই ফোয়ারার চারপাশের মার্বেল পাথর তুলে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশি স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ও মেরিনা তাবাসসুম ১৯৯৭ সালে একটি জাতীয় স্থাপত্য নকশা প্রতিযোগিতা জয়ের মাধ্যমে এই প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব পান। ৬৭ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত পুরো প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা।
৫ আগস্ট-পরবর্তী ভাঙচুরে ‘ধ্বংসস্তূপে’ পরিণত হওয়া রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা জাদুঘর -সংবাদ
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ভাঙচুর আর ‘লুটপাট’ ও ‘ধ্বংসস্তূপে’ পরিণত হওয়া রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সংস্কার কাজ শেষে নতুনভাবে জাদুঘরটির উদ্বোধনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
সোমবার, (১৯ মে ২০২৫) মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে গত রোববার একটি বিশেষ সভার আয়োজন করা হয় জাতীয় জাদুঘরে। সভা শেষে স্বাধীনতা জাদুঘরের সংস্কার কাজের অগ্রগতি দেখতে ফারুকী জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন।
সেখানে জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মেরিনা তাবাসসুমও উপস্থিত ছিলেন। সংস্কার কাজের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে মেরিনা তাবাসসুম সংবাদকে বলেন, ‘আগস্টের ৫ তারিখ থেকে বন্ধ আছে ওটাতে যাওয়া হয় নাই। তাই আমরা মেইনলি আমরা ভিজিট করলাম। অনেকদিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে আমরা দেখলাম। পুরোটাই আবার প্রোপারলি ঠিকঠাক করতে হবে। যেহেতু এই প্রোজেক্টটাতে আমি ডিজাইনার হিসেবে ইনভল্ব ছিলাম, সেই হিসেবে দেখালাম।’
‘সম্ভবত ফোয়ারাটা নষ্ট, ওটা ঠিক করতে হবে। লাইট নেই, সেগুলো লাগাতে হবে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ছিল সেগুলো নষ্ট। সব মিলিয়ে বেশ একটা খারাপ অবস্থা,’ বলেন তিনি।
মেরিনা তাবাসসুম বলেন, ‘প্রথম কাজ হলো এটাকে ক্লিন করা দরকার। ভেতরটা একেবারে নোংরা হয়ে আছে। ধুলা, পানি মিলে একাকার অবস্থা ওটা ক্লিন করতে হবে। গ্লাস ও রেলিংগুলো ভাঙা ওগুলো ঠিক করতে হবে। ওটার জন্য তো একটা পরিকল্পনা নিতে হবে। এই মুহূর্তে ন্যাশনাল মিউজিয়ামের দায়িত্ব হলো ওইটাকে পরিষ্কার করা। সেইটাই আমরা শুরু করবো।’
‘এটা কত টাকা লাগবে সেটা বলতে পারবো না। এই মুহূর্তে প্রায়রোটিতে নাই। আমাদের আরও অনেক কিছুই আছে এখন প্রায়রোটিতে বাট এটা প্রথমে পরিষ্কার করি তারপর বাজেটেরও ব্যাপার থাকে’ বলেন তিনি।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আশা করে, স্বাধীনতা জাদুঘরের সংস্কার ও নতুনভাবে উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে। মুঘল শাসনামল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের বিজয় দিবস পর্যন্ত নানা ঘটনার বর্ণনাখচিত আলোকচিত্র আর নানা নিদর্শন- স্মারক ছিল স্বাধীনতা জাদুঘরে। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শেখ মুজিবুর রহমান এই উদ্যানেই দিয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর এই উদ্যানেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের।
২০১৫ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের ৪৪তম স্বাধীনতা দিবসে এ জাদুঘর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের এখতিয়ারে একটি শাখা জাদুঘর হিসেবে পরিচালিত হয় স্বাধীনতা জাদুঘর।
এ জাদুঘর মূলত সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে একটি বৃহৎ পরিকল্পিত নকশার অংশ। এই নকশায় রয়েছে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, তিনটি জলাধার, ‘শিখা চিরন্তন’, স্বাধীনতা সংগ্রামের চিত্রবিশিষ্ট একটি ম্যুরাল এবং ১৫৫ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটরিয়াম। তবে পুরো নকশার প্রধান বিষয় হলো একটি ৫০ মিটার বিশিষ্ট আলোক স্তম্ভ, যা ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ নামে পরিচিত। স্তম্ভটি কাচের প্যানেল দিয়ে নির্মিত। এই স্তম্ভের নিচেই স্বাধীনতা জাদুঘর। জলাধারের ওপরে একটি ফোয়ারা রয়েছে, যাতে ওপর থেকে পানি পড়ত। এই ফোয়ারার চারপাশের মার্বেল পাথর তুলে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশি স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ও মেরিনা তাবাসসুম ১৯৯৭ সালে একটি জাতীয় স্থাপত্য নকশা প্রতিযোগিতা জয়ের মাধ্যমে এই প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব পান। ৬৭ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত পুরো প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা।