পরিবেশ অধিদপ্তর ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত, দু’একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়ে দায় সারেন তারা
যশোরে একটি জলাশয় ভরাটের কাজ চলছে -সংবাদ
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী, যশোর পৌরসভা এলাকায় পৌরসভার নামীয়, জেলা প্রশাসকের নামীয় ও বেসরকারি মিলে ৩২০টি জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভার ৬টি, জেলা প্রশাসকের ৪০টি এবং বেসরকারি ২৭৪টি পুকুর রয়েছে। অথচ ১০/১২ বছর আগে পুকুরের সংখ্যা আরও বেশি ছিল। এমনই তথ্য উঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে।
যশোর পৌরসভা এলাকায় শহরের ঐতিহ্যবাহী প্রায় সব পুকুর তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। বিগত এক থেকে দেড়যুগে ভরাট হয়ে গেছে শতাধিক পুকুর। শ্রীধর পুকুরপাড়, চোরমারা দীঘির পাড়সহ অনেক এলাকার ঠিকানায় পুকুরপাড় আছে কিন্তু পুকুর নেই। ভূমিদস্যুরা তা হজম করে ফেলেছেন। সাম্প্রতিক সময়েও শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ভরাটের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনে সম্পৃক্তরা জানান, শুধু জলাধার নয়, যশোরের হরিণার বিলসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে একের পর কৃষি জমি গ্রাস করা হচ্ছে। বিশেষ করে হরিণার বিল মূলত ধান আবাদী এলাকা। এটি যশোরের শস্য ভাণ্ডার। এই বিলের আয়তন ৫০৭ হেক্টর। আবাদি জমি প্রায় ৪৮৫ হেক্টর। সদরের চাঁচড়া ও রামনগর ইউনিয়ন জুড়ে বিলটির অবস্থান। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়- বর্ষা মৌসুমে বিল জুড়ে থৈ থৈ করে পানি। এ সময় বিলে দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় প্রচুর ও ধানের আবাদও হয়। ধান ছাড়াও বিলের জমিতে বিভিন্ন ধরনের তরকারি ও ফলের আবাদ হয়। বিলে যখন পানি থাকে স্থানীয় মানুষজন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব ছাড়াও যশোর শহরের বেশিরভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় এই বিলটিতে।
এই বিলের ভাতুড়িয়া সড়ক, মাহিদিয়া সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ্যে বিল উজাড় করছে। বিলভরাট, কৃষিজমির শ্রেণী পরিবর্তনসহ ভরাটের কাজে মাটি বহনের সময় সড়ক বিনষ্ট করলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রকৃতির বিনাশ ছাড়াও প্রতিটি পদে পদে আইন ভাঙছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইন ভেঙে বিল ভরাট করে অনেকে আবসন প্রকল্প গড়ে তোলায় বিলটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। আবাসন গড়ে তোলায় বিলের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে বছরের বেশির ভাগ সময় বিলটি জলাবদ্ধ থাকছে। এতে যশোর শহরের পানি নিষ্কাসন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পৌর এলাকা বর্ষাকালে তলিয়ে যাচ্ছে।
যদিও আইনে বিলকে প্রাকৃতিক জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের সংজ্ঞায় এমনটি উল্লেখ রয়েছে। এই আইনের বিধিনিষেধ সংক্রান্ত অংশে বলা হচ্ছে- প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন ও অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না। আইনটির শাস্তি বিধান সংক্রান্ত অংশে বলা হয়েছে, এই আইন ভাঙলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হবে। অন্যদিকে- কৃষিজমির শ্রেণী পরিবর্তনেও বিধিনিষেধ আছে। ২০১৬ সালের কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের (খসড়া আইন)-৪ ধারায় বলা রয়েছে, কৃষিজমি ভরাট করতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিলটি প্রাকৃতিক জলাশয়ের পাশাপাশি ধান আবাদি এলাকা। বিলের জমি ধানী শ্রেণীর। ফলে মাটি ফেলে বিল ভরাটের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জলাধার ধ্বংসের পাশাপাশি কৃষিজমির শ্রেণীও বদলে যাচ্ছে। তবে, এসব বন্ধে আইন প্রয়োগে উদাসীন সংশ্লিষ্টরা।
এটি চলতে থাকলে হারিয়ে যাবে শস্যভা-ার ও মাছে প্রাচুর্যপূর্ণ হরিণার বিল। আর এমনটি হলে প্রকৃতির বিনাশ ছাড়াও পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যশোর শহরসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
এ দিকে, অভিযোগ রয়েছে, পুকুর-বিল ভরাট ও কৃষিজমি গ্রাস রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা খুব একটা দৃশ্যমান নয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। কোথাও পুকুর ভরাট কিম্বা কৃষি জমি বিনষ্টের অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং তা নিয়ে খুব তোড়জোড় পরিলক্ষিত হলে, পরিবেশ অধিদপ্তর আইন লঙ্ঘনকারীদের হাতে একটি নোটিশ ধরিয়ে দেয়। কিন্তু এরপর আর তাদের কর্মকা- চোখে পড়ে না। অভিযোগকারীদের মতে, পরিবেশ অধিদপ্তর এখন ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। পুকুর ভরাট, কিম্বা বিলের জমিতে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলেছেন, এখনই এই অপতৎপরতা বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে যশোরবাসীকে অন্তহীন দুর্ভোগে পড়তে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত, দু’একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়ে দায় সারেন তারা
যশোরে একটি জলাশয় ভরাটের কাজ চলছে -সংবাদ
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী, যশোর পৌরসভা এলাকায় পৌরসভার নামীয়, জেলা প্রশাসকের নামীয় ও বেসরকারি মিলে ৩২০টি জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভার ৬টি, জেলা প্রশাসকের ৪০টি এবং বেসরকারি ২৭৪টি পুকুর রয়েছে। অথচ ১০/১২ বছর আগে পুকুরের সংখ্যা আরও বেশি ছিল। এমনই তথ্য উঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে।
যশোর পৌরসভা এলাকায় শহরের ঐতিহ্যবাহী প্রায় সব পুকুর তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। বিগত এক থেকে দেড়যুগে ভরাট হয়ে গেছে শতাধিক পুকুর। শ্রীধর পুকুরপাড়, চোরমারা দীঘির পাড়সহ অনেক এলাকার ঠিকানায় পুকুরপাড় আছে কিন্তু পুকুর নেই। ভূমিদস্যুরা তা হজম করে ফেলেছেন। সাম্প্রতিক সময়েও শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ভরাটের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনে সম্পৃক্তরা জানান, শুধু জলাধার নয়, যশোরের হরিণার বিলসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে একের পর কৃষি জমি গ্রাস করা হচ্ছে। বিশেষ করে হরিণার বিল মূলত ধান আবাদী এলাকা। এটি যশোরের শস্য ভাণ্ডার। এই বিলের আয়তন ৫০৭ হেক্টর। আবাদি জমি প্রায় ৪৮৫ হেক্টর। সদরের চাঁচড়া ও রামনগর ইউনিয়ন জুড়ে বিলটির অবস্থান। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়- বর্ষা মৌসুমে বিল জুড়ে থৈ থৈ করে পানি। এ সময় বিলে দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় প্রচুর ও ধানের আবাদও হয়। ধান ছাড়াও বিলের জমিতে বিভিন্ন ধরনের তরকারি ও ফলের আবাদ হয়। বিলে যখন পানি থাকে স্থানীয় মানুষজন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব ছাড়াও যশোর শহরের বেশিরভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় এই বিলটিতে।
এই বিলের ভাতুড়িয়া সড়ক, মাহিদিয়া সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ্যে বিল উজাড় করছে। বিলভরাট, কৃষিজমির শ্রেণী পরিবর্তনসহ ভরাটের কাজে মাটি বহনের সময় সড়ক বিনষ্ট করলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রকৃতির বিনাশ ছাড়াও প্রতিটি পদে পদে আইন ভাঙছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইন ভেঙে বিল ভরাট করে অনেকে আবসন প্রকল্প গড়ে তোলায় বিলটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। আবাসন গড়ে তোলায় বিলের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে বছরের বেশির ভাগ সময় বিলটি জলাবদ্ধ থাকছে। এতে যশোর শহরের পানি নিষ্কাসন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পৌর এলাকা বর্ষাকালে তলিয়ে যাচ্ছে।
যদিও আইনে বিলকে প্রাকৃতিক জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের সংজ্ঞায় এমনটি উল্লেখ রয়েছে। এই আইনের বিধিনিষেধ সংক্রান্ত অংশে বলা হচ্ছে- প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন ও অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না। আইনটির শাস্তি বিধান সংক্রান্ত অংশে বলা হয়েছে, এই আইন ভাঙলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হবে। অন্যদিকে- কৃষিজমির শ্রেণী পরিবর্তনেও বিধিনিষেধ আছে। ২০১৬ সালের কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের (খসড়া আইন)-৪ ধারায় বলা রয়েছে, কৃষিজমি ভরাট করতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিলটি প্রাকৃতিক জলাশয়ের পাশাপাশি ধান আবাদি এলাকা। বিলের জমি ধানী শ্রেণীর। ফলে মাটি ফেলে বিল ভরাটের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জলাধার ধ্বংসের পাশাপাশি কৃষিজমির শ্রেণীও বদলে যাচ্ছে। তবে, এসব বন্ধে আইন প্রয়োগে উদাসীন সংশ্লিষ্টরা।
এটি চলতে থাকলে হারিয়ে যাবে শস্যভা-ার ও মাছে প্রাচুর্যপূর্ণ হরিণার বিল। আর এমনটি হলে প্রকৃতির বিনাশ ছাড়াও পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যশোর শহরসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
এ দিকে, অভিযোগ রয়েছে, পুকুর-বিল ভরাট ও কৃষিজমি গ্রাস রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা খুব একটা দৃশ্যমান নয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। কোথাও পুকুর ভরাট কিম্বা কৃষি জমি বিনষ্টের অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং তা নিয়ে খুব তোড়জোড় পরিলক্ষিত হলে, পরিবেশ অধিদপ্তর আইন লঙ্ঘনকারীদের হাতে একটি নোটিশ ধরিয়ে দেয়। কিন্তু এরপর আর তাদের কর্মকা- চোখে পড়ে না। অভিযোগকারীদের মতে, পরিবেশ অধিদপ্তর এখন ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। পুকুর ভরাট, কিম্বা বিলের জমিতে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলেছেন, এখনই এই অপতৎপরতা বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে যশোরবাসীকে অন্তহীন দুর্ভোগে পড়তে হবে।