alt

ইসির সংলাপ: জামানত কমানো, ব্যয় মনিটরিং ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ দলগুলোর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের ডাকা সংলাপে অংশ নিয়ে প্রার্থী হওয়ার জামানত কমানো, নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং এবং প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।

নির্বাচনে পোস্টার বাতিলের সিদ্ধান্তটি ভুল: সাইফুল হক

কিছু দল কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রচারণা চালাচ্ছে: সাজ্জাদ জহির চন্দন

আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই: সিইসি

বৃহস্পতিবার,(১৩ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতারা এসব সুপারিশ করেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সংলাপে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অব.), তাহমিদা আহমেদ ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম ধাপে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ করে কমিশন।

সূচনা বক্তব্যে সিইসি জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করার আশা ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে তিনি প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে নির্বাচনি আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলারও আহ্বান জানান।

উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি আসন্ন নির্বাচন যেন সার্বিকভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সে বিষয়ে তাদের নিজ নিজ দলের মতামত তুলে ধরেন। এ সময় বক্তারা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত ও প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

এছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া, সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, নির্বাচনী ব্যয় কমানো, নির্বাচনকে অর্থ ও পেশি শক্তির প্রভাব

থেকে মুক্ত রাখা এবং ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান।

সকালে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণা বা নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ থাকবে, তবে কেউ যদি মনে করে যে ‘আমি (বিধি) মানবোই না’, তাহলে তো একটা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আমরা কোনো সংঘর্ষ চাই না, আমরা কাউকে মোকাবিলা করতে চাই না। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। এখানে আপনাদের (রাজনৈতিক দলগুলোর) একটা মুখ্য ভূমিকা থাকবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করতে আমরা আপনাদের সঙ্গে পেতে চাই। এবারের নির্বাচনটি অন্যান্য নির্বাচনের থেকে একেবারেই ভিন্ন, এক্ষেত্রে আপনাদের একান্ত সহযোগিতা আমাদের আরও বেশি প্রয়োজন।’

দ্বিতীয় ধাপে দুপুর ২টা থেকে আরও ৬টি দলের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি।

সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা দেখছি, কিছু রাজনৈতিক দল কোটি কোটি টাকা খরচ করে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে, যা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো- এই অতিরিক্ত ব্যয় কমিশন কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে? যদি বলা হয় তফসিল ঘোষণার পর হিসাব নেয়া হবে, তাহলে নির্বাচনের আগেই যে শত শত কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে সেটি তো গণতন্ত্রের ন্যায়সঙ্গত প্রতিযোগিতাকে বিকৃত করছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখনই কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে এবং নেয়া উচিত।’ এ সময় তিনি জামানত কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করার দাবি তোলেন।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ কাফি রতন বলেন, ‘এক উপজেলার ভোটে অন্য উপজেলা থেকে ভোট কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া, নির্বাচনে কালো টাকার খেলা, পেশি শক্তির খেলা, ধর্মের অপব্যবহার এবং প্রশাসনিক কারসাজি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘টাকার শক্তি, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সবার ভোট দেয়া ও প্রার্থী হওয়ার সমান অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু এগুলো নিয়ে আলোচনা, মতামত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কী হয়েছে, তা এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। জামানত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জাতীয় সংসদকে অতীতের মতোই কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত করবে। এছাড়া না বিধান সব আসনেই থাকা জরুরি।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব বলেন, ‘বলা হয়, নির্বাচনকালে প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। ফলস্বরূপ, নির্বাচনের দিন প্রার্থী এবং প্রার্থীর কর্মীরা প্রায়ই হয়রানির শিকার হন। কোনো সমস্যা বা দুর্ঘটনা ঘটলে বলা হয়, ‘ম্যাজিস্ট্রেটকে বলুন’ বা ‘অমুক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন’। কিন্তু তখন মাঠপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খুঁজে পাওয়া যায় না।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোনো অযৌক্তিক চাপের কাছে আপনারা নতি স্বীকার করবেন না। দৃঢ়চিত্ত, বলিষ্ঠ ভূমিকা নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে আমরা দেখতে চাই। জামানত পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে রাখা উচিত। প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা প্রায় দ্বিগুণ (৫০ লক্ষ টাকার বেশি) করার প্রস্তাব এসেছে। আমরা মনে করি, এটি সংসদকে ধনী, বিত্তবান, লুটেরা ও মাফিয়াগোষ্ঠীর ক্লাবে পরিণত করবে।’

তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে আনতে হবে। কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। এটা আপনাদের জুরিসডিকশনের মধ্যেই পড়ে। প্রয়োজনে আলোচনার মাধ্যমে আরও বিষয় বিবেচনায় নেয়া দরকার। অন্যথায় আস্থা তৈরি হবে না। নির্বাচনে পোস্টার দেয়ার বিষয়টি আকস্মিকভাবে বাতিল করা হয়েছে- এটি ভুল সিদ্ধান্ত।’

সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি ৩০০ আসনেই ‘না ভোট’ রাখার বিধান থাকা দরকার। কারণ ভোটাররা পাঁচজন প্রার্থীর কাউকেই পছন্দ নাও করতে পারেন। ‘না ভোট’ সবচেয়ে গণতান্ত্রিক বিকল্প।’

ছবি

জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট: ‘আলোচনা করে’ মত জানাবে ইসি

ইসির সংলাপ: আগামী রোববার ডাক পেয়েছে আরও ১২ দল

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা সোমবার

আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, পেলেন উপদেষ্টার মর্যাদা

ছবি

নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে: ইউনূস

ইসির সংলাপে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ

ছবি

‘নতুন কুঁড়ির’ মূল উদ্দেশ্য নিজেকে আবিষ্কার করা: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী পদে নিযুক্ত

ছবি

নির্বাচনের দিনই গণভোট,   জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি 

ছবি

নিজেদের স্বার্থে ভারতীয় গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার উপস্থিতি বন্ধের অনুরোধ ঢাকার

ছবি

আত্মসমর্পণ, পরে জামিন সাবেক বিচারপতিসহ তিনজনের

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন

ছবি

বারোটি রাজনৈতিক দল নিয়ে ইসির সংলাপ শুরু বৃহস্পতিবার

ছবি

ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার অংশ: প্রসিকিউটর

ছবি

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, জোরদার নিরাপত্তা

ছবি

ভারতীয় দূতকে তলব, গণমাধ্যমের সঙ্গে হাসিনার কথা বলা বন্ধের আহ্বান

ছবি

কানাডীয় পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সাক্ষাৎ

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, কোনো শক্তিই ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব

ছবি

ট্রাইব্যুনাল ফেইস না করে যানবাহনে আগুন মানুষ ‘ভালোভাবে নিচ্ছে না’: প্রসিকিউটর

কিউকম সিইও রিপন কারাগারে, রিমান্ড শুনানি বুধবার

বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান হান্নানের সহযোগীর দুই ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

ছবি

১ ফেব্রুয়ারি থেকে একুশে বইমেলার দাবি, প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি

ছবি

পাচারের শিকার শান্তনা দীর্ঘ ১১ বছর পর দেশে ফিরলো

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো: আরও ৪ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করছে দুদক

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের রায় ২০ নভেম্বর

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৯১২ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৩ জনের

ইসির সংলাপ শুরু কাল থেকে, ধাপে ধাপে ডাকা হবে দলগুলোকে

ছবি

জুলাই সনদ নিয়ে ‘৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে’ সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

ছবি

তৌহিদ হোসেন বললেন, দিল্লির বিস্ফোরণে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ ভিত্তিহীন

ছবি

বিমানবন্দরগুলোকে নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়াতে কয়েকটি নির্দেশ : বেবিচক

ছবি

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিচার প্রস্তুত, আদালত বদল

সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদিরকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, রায়ের অপেক্ষা, হাসিনার বিরুদ্ধে ‘প্লট দুর্নীতি’ মামলা

tab

ইসির সংলাপ: জামানত কমানো, ব্যয় মনিটরিং ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ দলগুলোর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের ডাকা সংলাপে অংশ নিয়ে প্রার্থী হওয়ার জামানত কমানো, নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং এবং প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।

নির্বাচনে পোস্টার বাতিলের সিদ্ধান্তটি ভুল: সাইফুল হক

কিছু দল কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রচারণা চালাচ্ছে: সাজ্জাদ জহির চন্দন

আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই: সিইসি

বৃহস্পতিবার,(১৩ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতারা এসব সুপারিশ করেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সংলাপে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অব.), তাহমিদা আহমেদ ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম ধাপে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ করে কমিশন।

সূচনা বক্তব্যে সিইসি জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করার আশা ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে তিনি প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে নির্বাচনি আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলারও আহ্বান জানান।

উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি আসন্ন নির্বাচন যেন সার্বিকভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সে বিষয়ে তাদের নিজ নিজ দলের মতামত তুলে ধরেন। এ সময় বক্তারা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত ও প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

এছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া, সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, নির্বাচনী ব্যয় কমানো, নির্বাচনকে অর্থ ও পেশি শক্তির প্রভাব

থেকে মুক্ত রাখা এবং ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান।

সকালে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণা বা নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ থাকবে, তবে কেউ যদি মনে করে যে ‘আমি (বিধি) মানবোই না’, তাহলে তো একটা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আমরা কোনো সংঘর্ষ চাই না, আমরা কাউকে মোকাবিলা করতে চাই না। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। এখানে আপনাদের (রাজনৈতিক দলগুলোর) একটা মুখ্য ভূমিকা থাকবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করতে আমরা আপনাদের সঙ্গে পেতে চাই। এবারের নির্বাচনটি অন্যান্য নির্বাচনের থেকে একেবারেই ভিন্ন, এক্ষেত্রে আপনাদের একান্ত সহযোগিতা আমাদের আরও বেশি প্রয়োজন।’

দ্বিতীয় ধাপে দুপুর ২টা থেকে আরও ৬টি দলের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি।

সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা দেখছি, কিছু রাজনৈতিক দল কোটি কোটি টাকা খরচ করে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে, যা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো- এই অতিরিক্ত ব্যয় কমিশন কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে? যদি বলা হয় তফসিল ঘোষণার পর হিসাব নেয়া হবে, তাহলে নির্বাচনের আগেই যে শত শত কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে সেটি তো গণতন্ত্রের ন্যায়সঙ্গত প্রতিযোগিতাকে বিকৃত করছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখনই কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে এবং নেয়া উচিত।’ এ সময় তিনি জামানত কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করার দাবি তোলেন।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ কাফি রতন বলেন, ‘এক উপজেলার ভোটে অন্য উপজেলা থেকে ভোট কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া, নির্বাচনে কালো টাকার খেলা, পেশি শক্তির খেলা, ধর্মের অপব্যবহার এবং প্রশাসনিক কারসাজি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘টাকার শক্তি, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সবার ভোট দেয়া ও প্রার্থী হওয়ার সমান অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু এগুলো নিয়ে আলোচনা, মতামত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কী হয়েছে, তা এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। জামানত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জাতীয় সংসদকে অতীতের মতোই কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত করবে। এছাড়া না বিধান সব আসনেই থাকা জরুরি।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব বলেন, ‘বলা হয়, নির্বাচনকালে প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। ফলস্বরূপ, নির্বাচনের দিন প্রার্থী এবং প্রার্থীর কর্মীরা প্রায়ই হয়রানির শিকার হন। কোনো সমস্যা বা দুর্ঘটনা ঘটলে বলা হয়, ‘ম্যাজিস্ট্রেটকে বলুন’ বা ‘অমুক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন’। কিন্তু তখন মাঠপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খুঁজে পাওয়া যায় না।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোনো অযৌক্তিক চাপের কাছে আপনারা নতি স্বীকার করবেন না। দৃঢ়চিত্ত, বলিষ্ঠ ভূমিকা নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে আমরা দেখতে চাই। জামানত পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে রাখা উচিত। প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা প্রায় দ্বিগুণ (৫০ লক্ষ টাকার বেশি) করার প্রস্তাব এসেছে। আমরা মনে করি, এটি সংসদকে ধনী, বিত্তবান, লুটেরা ও মাফিয়াগোষ্ঠীর ক্লাবে পরিণত করবে।’

তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে আনতে হবে। কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। এটা আপনাদের জুরিসডিকশনের মধ্যেই পড়ে। প্রয়োজনে আলোচনার মাধ্যমে আরও বিষয় বিবেচনায় নেয়া দরকার। অন্যথায় আস্থা তৈরি হবে না। নির্বাচনে পোস্টার দেয়ার বিষয়টি আকস্মিকভাবে বাতিল করা হয়েছে- এটি ভুল সিদ্ধান্ত।’

সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি ৩০০ আসনেই ‘না ভোট’ রাখার বিধান থাকা দরকার। কারণ ভোটাররা পাঁচজন প্রার্থীর কাউকেই পছন্দ নাও করতে পারেন। ‘না ভোট’ সবচেয়ে গণতান্ত্রিক বিকল্প।’

back to top