ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের অনুকূল পরিবেশ এখনও ‘তৈরি না হওয়ায়’ দ্রুত উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশনকে তাগিদ দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সেই সঙ্গে নির্বাচনী আইনে এখনও কিছু সংস্কার চায় কয়েকটি দল। দলের সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব কমানোরও সুপারিশ এসেছে দুইটি দলের তরফ থেকে।
যার যার অবস্থান থেকে ইসিকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়। আচরণবিধি প্রতিপালনে দলগুলোর সহায়তা চেয়ে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি চায় না; বরং সহায়তা প্রত্যাশা করছে।
বৃহস্পতিবার,(১৩ নভেম্বর ২০২৫) সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রথম দিনে প্রথম পর্বে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। প্রথম পর্বে ছয়টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে ভোটের প্রাক-পরিবেশ, শঙ্কা, ইসির আন্তরিকতা, আইন সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-এর চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যথেষ্ট নিরাপত্তা সংকট বিরাজ করছে। গত দুই-তিন দিনের ঘটনা অবশ্যই বিবেচনায় নেব।’ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কমিশন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে যে উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিল সেটা শুরু হয়নি।’ জোটে ভোট করলে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান করায় ‘এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কালো টাকা রোধ, প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, ‘সঠিক সময়ে নির্বাচন চাই। নির্বাচনী পরিবেশের যেন উন্নতি হয় সে ব্যবস্থা নিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর মহিলা প্রতিনিধি কমিয়ে দিলে ভালো হয়, পুরুষ বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। এত মহিলা প্রতিনিধির প্রয়োজন নেই বলে মনে হয়।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, ‘জামানতের টাকার পরিমাণ কমাতে হবে। নিবন্ধন দেয়ার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ইসি নিবন্ধন না দিলেও আদালত থেকে নিবন্ধন নিয়ে আসছে। তাহলে ইসি কাগজপত্র ঠিকমতো দেখছে না? এ বিষয়টি কমিশনের ভালোভাবে দেখতে হবে।’
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধি বলেন, ‘সবাই এসে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার কথা বলে। কিন্তু সব নির্বাচনেই নিরপেক্ষতা হারোনো হয়, এটা প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। এটা খুব কঠিন ব্যাপার। ইসি আন্তরিক থাকলে কিছুটা হলেও পারবেন আশা করি। জীবন সায়াহ্নে এসে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জামানাতের টাকা ২০ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
দলের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে কমিশন দেখবে বলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ৩১ অক্টোবর (গত) পর্যন্ত যারা ১৮ বছর বয়সী তাদের অর্ন্তভুক্তের সময়সীমা রাখা হয়েছে। এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসে যারা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন তাদের বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, ভোটার হালনাগাদ কার্যত্রম উন্মুক্ত রয়েছে। দেশের ভেতরে বাদ পড়া ভোটারদের তফসিল ঘোষণার আগেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে সবার সহযোগিতা দরকার। সবাই মানলে নির্বাচনী পরিবেশ ভালো হতে বাধ্য। তিনি বলেন, ‘এবার কিন্তু একটা সুযোগ। এবারের নির্বাচন ভালো করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা নদীর মাঝখানে। নৌকাটা এমন নড়াচড়া করলেই ডুবে যাবে সোজা কথা। দেশটাতো চালাবেন আপনারা, রাজনীতিবিদরা। সঠিকভাবে নির্বাচনটা না হলে কি অবস্থা দাঁড়াতে পারে ভেবে দেখেন। যার অবস্থান থেকে সহায়তা করুন।’
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেছেন, ইসি ভোটে রেফারির ভূমিকায় থাকবে। ‘দলগুলো মাঠে থাকলে, সবার সহযোগিতা পেলে রেফারিগিরি সম্ভব।’
সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, আচরণবিধি প্রতিপালনে সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি সবার কাছে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। আচরণবিধি মানতে ও মানাতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
আচরণবিধি প্রচারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে দলগুলোর প্রতি সিইসি বলেন, ‘আপনারা কেউ গোঁ ধরে বসে থেকে আরণবিধি মানবোই না, তাহলে তো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমরা সাংঘর্ষ চাই না। কাউকে মোকাবেলা করতে চাই না; সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনে এগিয়ে নিতে চাই।’
এরপর বিকেলে আরও ছয় দলের সঙ্গে সংলাপ হয় ইসির। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সঙ্গে সংলাপ করে ইসি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের অনুকূল পরিবেশ এখনও ‘তৈরি না হওয়ায়’ দ্রুত উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশনকে তাগিদ দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সেই সঙ্গে নির্বাচনী আইনে এখনও কিছু সংস্কার চায় কয়েকটি দল। দলের সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব কমানোরও সুপারিশ এসেছে দুইটি দলের তরফ থেকে।
যার যার অবস্থান থেকে ইসিকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়। আচরণবিধি প্রতিপালনে দলগুলোর সহায়তা চেয়ে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি চায় না; বরং সহায়তা প্রত্যাশা করছে।
বৃহস্পতিবার,(১৩ নভেম্বর ২০২৫) সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রথম দিনে প্রথম পর্বে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। প্রথম পর্বে ছয়টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে ভোটের প্রাক-পরিবেশ, শঙ্কা, ইসির আন্তরিকতা, আইন সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-এর চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যথেষ্ট নিরাপত্তা সংকট বিরাজ করছে। গত দুই-তিন দিনের ঘটনা অবশ্যই বিবেচনায় নেব।’ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কমিশন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে যে উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিল সেটা শুরু হয়নি।’ জোটে ভোট করলে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান করায় ‘এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কালো টাকা রোধ, প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, ‘সঠিক সময়ে নির্বাচন চাই। নির্বাচনী পরিবেশের যেন উন্নতি হয় সে ব্যবস্থা নিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর মহিলা প্রতিনিধি কমিয়ে দিলে ভালো হয়, পুরুষ বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। এত মহিলা প্রতিনিধির প্রয়োজন নেই বলে মনে হয়।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, ‘জামানতের টাকার পরিমাণ কমাতে হবে। নিবন্ধন দেয়ার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ইসি নিবন্ধন না দিলেও আদালত থেকে নিবন্ধন নিয়ে আসছে। তাহলে ইসি কাগজপত্র ঠিকমতো দেখছে না? এ বিষয়টি কমিশনের ভালোভাবে দেখতে হবে।’
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধি বলেন, ‘সবাই এসে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার কথা বলে। কিন্তু সব নির্বাচনেই নিরপেক্ষতা হারোনো হয়, এটা প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। এটা খুব কঠিন ব্যাপার। ইসি আন্তরিক থাকলে কিছুটা হলেও পারবেন আশা করি। জীবন সায়াহ্নে এসে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জামানাতের টাকা ২০ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
দলের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে কমিশন দেখবে বলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ৩১ অক্টোবর (গত) পর্যন্ত যারা ১৮ বছর বয়সী তাদের অর্ন্তভুক্তের সময়সীমা রাখা হয়েছে। এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসে যারা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন তাদের বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, ভোটার হালনাগাদ কার্যত্রম উন্মুক্ত রয়েছে। দেশের ভেতরে বাদ পড়া ভোটারদের তফসিল ঘোষণার আগেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে সবার সহযোগিতা দরকার। সবাই মানলে নির্বাচনী পরিবেশ ভালো হতে বাধ্য। তিনি বলেন, ‘এবার কিন্তু একটা সুযোগ। এবারের নির্বাচন ভালো করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা নদীর মাঝখানে। নৌকাটা এমন নড়াচড়া করলেই ডুবে যাবে সোজা কথা। দেশটাতো চালাবেন আপনারা, রাজনীতিবিদরা। সঠিকভাবে নির্বাচনটা না হলে কি অবস্থা দাঁড়াতে পারে ভেবে দেখেন। যার অবস্থান থেকে সহায়তা করুন।’
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেছেন, ইসি ভোটে রেফারির ভূমিকায় থাকবে। ‘দলগুলো মাঠে থাকলে, সবার সহযোগিতা পেলে রেফারিগিরি সম্ভব।’
সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, আচরণবিধি প্রতিপালনে সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি সবার কাছে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। আচরণবিধি মানতে ও মানাতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
আচরণবিধি প্রচারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে দলগুলোর প্রতি সিইসি বলেন, ‘আপনারা কেউ গোঁ ধরে বসে থেকে আরণবিধি মানবোই না, তাহলে তো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমরা সাংঘর্ষ চাই না। কাউকে মোকাবেলা করতে চাই না; সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনে এগিয়ে নিতে চাই।’
এরপর বিকেলে আরও ছয় দলের সঙ্গে সংলাপ হয় ইসির। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সঙ্গে সংলাপ করে ইসি।