বিটিআরসির সাবেক তিন চেয়ারম্যান
ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরগুলোকে আর্থিক সুবিধা দিতে কলহার ‘বেআইনিভাবে’ পরিবর্তন করে রাষ্ট্রের প্রায় ৯ হাজার ১০৭ কোটি টাকা ক্ষতি করার অভিযোগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাবেক তিন চেয়ারম্যানসহ ৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার, (০৩ ডিসেম্বর ২০২৫) সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করার তথ্য দেন সংস্থার উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সংস্থার পরিচালক মো. জালাল উদ্দীন আহমেদ মামলাটি দায়ের করেন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই তিন চেয়ারম্যান হলেন- সুনীল কান্তি বোস, শাহজাহান মাহমুদ ও মো. জহুরুল হক। তাদের মধ্যে জহুরুল হক প্রথমে বিটিআরসির কমিশনার ছিলেন পরে চেয়ারম্যান হন। তিনি দুদকের কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যিনি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে পদত্যাগ করেন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং মো. রেজাউল কাদের ও মো. আমিনুল হাসান সাবেক কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা বিটিআরসির শীর্ষস্থানীয় এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলায় আইজিডব্লিউ অপারেটরগুলোকে ‘আর্থিক সুবিধা দিতে’ কল টার্মিনেশন রেট ও রাজস্ব ভাগাভাগির হার বেআইনিভাবে পরিবর্তন করে রাষ্ট্রের বড় অঙ্কের ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে বিটিআরসির সাবেক কমিশনাররা সরকারের অনুমোদন ছাড়াই আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট এবং রাজস্ব ভাগাভাগির কাঠামো পরিবর্তন করে আইজিডব্লিউ অপারেটরদের আর্থিক সুবিধা দিয়েছেন।
এ পরিবর্তনের কারণে সরকারের রাজস্ব আয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে টার্মিনেশন রেট শূন্য দশমিক ০৩ ডলার, বিটিআরসির শেয়ার ৫১ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং আইজিডব্লিউ শেয়ার ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এই পরীক্ষামূলক সময় শেষ হওয়ার পরও সাবেক কমিশনাররা পরবর্তী ২৮ মাস ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বেআইনিভাবে কম হারই বহাল রাখেন, যেখানে টার্মিনেশন রেট করা হয় শূন্য দশমিক ০১৫ ডলার, সরকারের শেয়ার ৪০ শতাংশ এবং আইজিডব্লিউ শেয়ার ২০ শতাংশ।
অনুসন্ধানের বরাতে দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, পরীক্ষামূলক হার বেআইনিভাবে অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য ছিল ‘আইজিডব্লিউ অপারেটরদের আর্থিকভাবে উপকৃত করা’। এতে ক্ষমতার ‘অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ’ সংঘটিত হয়েছে।
এজাহারে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির বিস্তারিত হিসাবও তুলে ধরা হয়। বলা হয়- এর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব ভাগাভাগির হার কমানোর কারণে ৩৮৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৬ টাকা, কল রেটের হার কমানোর কারণে ২ হাজার ৯৪১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৪ টাকা এবং বিদেশি মুদ্রা দেশে না আনায় ৭ কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৭৫ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ১০৭ কোটি টাকা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বিটিআরসির সাবেক তিন চেয়ারম্যান
বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরগুলোকে আর্থিক সুবিধা দিতে কলহার ‘বেআইনিভাবে’ পরিবর্তন করে রাষ্ট্রের প্রায় ৯ হাজার ১০৭ কোটি টাকা ক্ষতি করার অভিযোগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাবেক তিন চেয়ারম্যানসহ ৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার, (০৩ ডিসেম্বর ২০২৫) সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করার তথ্য দেন সংস্থার উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সংস্থার পরিচালক মো. জালাল উদ্দীন আহমেদ মামলাটি দায়ের করেন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই তিন চেয়ারম্যান হলেন- সুনীল কান্তি বোস, শাহজাহান মাহমুদ ও মো. জহুরুল হক। তাদের মধ্যে জহুরুল হক প্রথমে বিটিআরসির কমিশনার ছিলেন পরে চেয়ারম্যান হন। তিনি দুদকের কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যিনি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে পদত্যাগ করেন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং মো. রেজাউল কাদের ও মো. আমিনুল হাসান সাবেক কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা বিটিআরসির শীর্ষস্থানীয় এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলায় আইজিডব্লিউ অপারেটরগুলোকে ‘আর্থিক সুবিধা দিতে’ কল টার্মিনেশন রেট ও রাজস্ব ভাগাভাগির হার বেআইনিভাবে পরিবর্তন করে রাষ্ট্রের বড় অঙ্কের ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে বিটিআরসির সাবেক কমিশনাররা সরকারের অনুমোদন ছাড়াই আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট এবং রাজস্ব ভাগাভাগির কাঠামো পরিবর্তন করে আইজিডব্লিউ অপারেটরদের আর্থিক সুবিধা দিয়েছেন।
এ পরিবর্তনের কারণে সরকারের রাজস্ব আয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে টার্মিনেশন রেট শূন্য দশমিক ০৩ ডলার, বিটিআরসির শেয়ার ৫১ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং আইজিডব্লিউ শেয়ার ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এই পরীক্ষামূলক সময় শেষ হওয়ার পরও সাবেক কমিশনাররা পরবর্তী ২৮ মাস ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বেআইনিভাবে কম হারই বহাল রাখেন, যেখানে টার্মিনেশন রেট করা হয় শূন্য দশমিক ০১৫ ডলার, সরকারের শেয়ার ৪০ শতাংশ এবং আইজিডব্লিউ শেয়ার ২০ শতাংশ।
অনুসন্ধানের বরাতে দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, পরীক্ষামূলক হার বেআইনিভাবে অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য ছিল ‘আইজিডব্লিউ অপারেটরদের আর্থিকভাবে উপকৃত করা’। এতে ক্ষমতার ‘অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ’ সংঘটিত হয়েছে।
এজাহারে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির বিস্তারিত হিসাবও তুলে ধরা হয়। বলা হয়- এর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব ভাগাভাগির হার কমানোর কারণে ৩৮৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৬ টাকা, কল রেটের হার কমানোর কারণে ২ হাজার ৯৪১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৪ টাকা এবং বিদেশি মুদ্রা দেশে না আনায় ৭ কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৭৫ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ১০৭ কোটি টাকা।