তিন দফা দাবিতে পূর্ণ কর্মবিরতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ঢাকার একটি বিদ্যালয়ে দাবির পক্ষে প্ল্যাকার্ড ধরে বসে আছেন কয়েকজন শিক্ষক -সংবাদ
দেশব্যাপী শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি ঘিরে প্রাথমিক শিক্ষায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায়ে শিক্ষকরা অনড় থাকলেও কোথাও কোথাও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ব্যবহার করে স্কুলের পরীক্ষা নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রধান শিক্ষকরা। দু-একটি জায়গায় অভিভাবকদের বিরূপ আচরণের মুখে পড়ছেন শিক্ষকরা।
বন্ধ বার্ষিক পরীক্ষা
অভিভাবকদের বিরূপ আচরণের মুখে শিক্ষকরা
তালা ভেঙে পরীক্ষার ব্যবস্থা করলেন দুই ইউএনও
সরকারের আহ্বান উপেক্ষা করে তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলনে অনড় রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এর ফলে সারাদেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘তালাবদ্ধ’ রাখার কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
কর্মসূচির কারণে শোকজ পাওয়া ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক’ খায়রুন নাহার লিপি বৃহস্পতিবার, (০৪ ডিসেম্বর ২০২৫) সাংবাদিকদের বলেন, তাদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। দাবি বাস্তবায়নে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, কর্মসূচি থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই তাদের।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের তিন দফা দাবি হলো- সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে নির্ধারণ; ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
সহকারী শিক্ষকদের ‘সর্বাত্মক’ কর্মবিরতি:
বিদ্যালয়ে তালা ঝুঁলিয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষকদের অবিলম্বে পরীক্ষায় ফেরার চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে কর্মবিরতি বা শাটডাউন অব্যাহত থাকলে সরকারি চাকরি আইন, আচরণবিধি ও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়ার সতর্কবার্তাও দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১১তম গ্রেড প্রদান, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির দাবি উঠেছে। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় চিঠি ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পে-কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বেতন স্কেল উন্নীতকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
তিন দফা দাবি আদায়ে সহকারী শিক্ষকরা গতকাল বুধবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেছেন। অসংখ্য বিদ্যালয়ে তালা ঝুঁলিয়ে দেয়া হয়েছে; ফলে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষকরা নিজ নিজ উপজেলা বা থানা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিইও) কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন। তবে ঢাকাসহ কিছু বিভাগীয় শহরে সীমিত আকারে পরীক্ষা নেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে জানা যায়, দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোতে কর্মরত ৩ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষকের বেশিরভাগই সহকারী শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন, যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক আনোয়ার উল্যাহ বলেন, তারা ২২ দিন অপেক্ষা করেছেন। কোনো বাস্তব অগ্রগতি না দেখেই বাধ্য হয়ে ‘শাটডাউনে’ যেতে হয়েছে।
দাবি আদায় আন্দোলনের সমন্বয়ক ও আহ্বায়কদের কয়েকজনকে ডিপিই’র নির্দেশে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার শোকজ নোটিশ দেয়ায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। আর অভিভাবকরা বলছেন, হঠাৎ পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় শিশুরা মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে।
শিক্ষক নেতা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়মনসিংহের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন হচ্ছে। বার্ষিক পরীক্ষা দিতে এসে শ্রেণীকক্ষে তালা দেখে ফিরে গেছে শিক্ষার্থীরা।
লাগাতার কর্মবিরতি ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের পর বরগুনার আমতলী উপজেলার ১৫২টি বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন পালিত হয়েছে। তবে বিকেলে প্রধান শিক্ষক, নৈশপ্রহরী ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় সব স্কুলে পরীক্ষা হয়েছে।
পরীক্ষা বর্জন করে পাবনার চাটমোহরে শিক্ষকরা মানববন্ধন করেছেন। কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।
তালা ভেঙে পরীক্ষা নিল ইউএনও’রা:
শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি বিদ্যালয় গেটের তালা ভেঙে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
বৃহস্পতিবার, সকালে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারি মঙ্গলসুখ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান গেট তালাবদ্ধ রেখে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখেন শিক্ষকরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হাতুড়ি ও ইলেকট্রিক মেশিনের সাহায্যে তালা ভেঙে বিদ্যালয়ে ঢোকেন ইউএনও কাউসার হামিদ। পরে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় বিদ্যালয়টিতে।
তবে দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষিকা ছাড়া অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকেন।
ইউএনও কাউসার হামিদ বলেন, দাবি-দাওয়ার বিষয়টি সরকারের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু শিশুদের পরীক্ষা বন্ধ রাখা যাবে না। এরপরও কোনো প্রতিষ্ঠানে শিশুদের পরীক্ষা বন্ধ রাখার চেষ্টা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে শেরপুরের শ্রীবরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন স্থানীয় ইউএনও মনীষা আহমেদ। এ সময় উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন নবী উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও মনীষা আহমেদ বলেন, শিক্ষকরা পরীক্ষা না নিয়ে আন্দোলন করছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে শ্রীবরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের মারামারি:
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুরের নেছারাবাদে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে বৃহস্পতিবার, সকালে উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে শিক্ষকরা আন্দোলন করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক আদনান হোসেন বলেন, সারাদেশে সহকারী শিক্ষকদের শাটডাউন কর্মসূচি চলছে। কিন্তু নেছারাবাদে সহকারী শিক্ষক ছাড়াই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছিল। তারা কোনো বাধা দেননি। তারপরও উপজেলার কোথাও কোথাও কয়েকজন ব্যক্তি শিক্ষকদের হুমকি দিচ্ছিলো। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তারা উপজেলা পরিষদে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলো। এমন সময় রুহুল আমীন নামের একজন এসে গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ করতেই তিনি অতর্কিত হামলা চালান বলে ওই শিক্ষক অভিযোগ করেন।
এদিকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে পাবনায় এক সহকারী শিক্ষকের মাথা ফাটানোর ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ইটের আঘাতে তার মাথা ফেটে গেছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
আহত শিক্ষকের নাম রাজিব সরকার। তিনি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারিনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মাহবুবর রহমান গণমাধ্যমককে এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘যৌক্তিক’ দাবিতে চলমান আন্দোলনে পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন রাজিব ও তার সহকর্মীরা। অভিভাবক পরিচয়ের কিছু ব্যক্তি সেখানে গিয়ে শিক্ষকদের মারধর করেন। এতে সহকারী শিক্ষক রাজিবের মাথা ফেটে গেছে। তার মাথায় চারটি সেলাই দেয়া হয়েছে।
তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
তিন দফা দাবিতে পূর্ণ কর্মবিরতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ঢাকার একটি বিদ্যালয়ে দাবির পক্ষে প্ল্যাকার্ড ধরে বসে আছেন কয়েকজন শিক্ষক -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
দেশব্যাপী শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি ঘিরে প্রাথমিক শিক্ষায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায়ে শিক্ষকরা অনড় থাকলেও কোথাও কোথাও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ব্যবহার করে স্কুলের পরীক্ষা নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রধান শিক্ষকরা। দু-একটি জায়গায় অভিভাবকদের বিরূপ আচরণের মুখে পড়ছেন শিক্ষকরা।
বন্ধ বার্ষিক পরীক্ষা
অভিভাবকদের বিরূপ আচরণের মুখে শিক্ষকরা
তালা ভেঙে পরীক্ষার ব্যবস্থা করলেন দুই ইউএনও
সরকারের আহ্বান উপেক্ষা করে তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলনে অনড় রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এর ফলে সারাদেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘তালাবদ্ধ’ রাখার কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
কর্মসূচির কারণে শোকজ পাওয়া ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক’ খায়রুন নাহার লিপি বৃহস্পতিবার, (০৪ ডিসেম্বর ২০২৫) সাংবাদিকদের বলেন, তাদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। দাবি বাস্তবায়নে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, কর্মসূচি থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই তাদের।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের তিন দফা দাবি হলো- সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে নির্ধারণ; ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
সহকারী শিক্ষকদের ‘সর্বাত্মক’ কর্মবিরতি:
বিদ্যালয়ে তালা ঝুঁলিয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষকদের অবিলম্বে পরীক্ষায় ফেরার চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে কর্মবিরতি বা শাটডাউন অব্যাহত থাকলে সরকারি চাকরি আইন, আচরণবিধি ও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়ার সতর্কবার্তাও দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১১তম গ্রেড প্রদান, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির দাবি উঠেছে। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় চিঠি ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পে-কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বেতন স্কেল উন্নীতকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
তিন দফা দাবি আদায়ে সহকারী শিক্ষকরা গতকাল বুধবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেছেন। অসংখ্য বিদ্যালয়ে তালা ঝুঁলিয়ে দেয়া হয়েছে; ফলে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষকরা নিজ নিজ উপজেলা বা থানা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিইও) কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন। তবে ঢাকাসহ কিছু বিভাগীয় শহরে সীমিত আকারে পরীক্ষা নেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে জানা যায়, দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোতে কর্মরত ৩ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষকের বেশিরভাগই সহকারী শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন, যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক আনোয়ার উল্যাহ বলেন, তারা ২২ দিন অপেক্ষা করেছেন। কোনো বাস্তব অগ্রগতি না দেখেই বাধ্য হয়ে ‘শাটডাউনে’ যেতে হয়েছে।
দাবি আদায় আন্দোলনের সমন্বয়ক ও আহ্বায়কদের কয়েকজনকে ডিপিই’র নির্দেশে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার শোকজ নোটিশ দেয়ায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। আর অভিভাবকরা বলছেন, হঠাৎ পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় শিশুরা মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে।
শিক্ষক নেতা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়মনসিংহের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন হচ্ছে। বার্ষিক পরীক্ষা দিতে এসে শ্রেণীকক্ষে তালা দেখে ফিরে গেছে শিক্ষার্থীরা।
লাগাতার কর্মবিরতি ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের পর বরগুনার আমতলী উপজেলার ১৫২টি বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন পালিত হয়েছে। তবে বিকেলে প্রধান শিক্ষক, নৈশপ্রহরী ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় সব স্কুলে পরীক্ষা হয়েছে।
পরীক্ষা বর্জন করে পাবনার চাটমোহরে শিক্ষকরা মানববন্ধন করেছেন। কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।
তালা ভেঙে পরীক্ষা নিল ইউএনও’রা:
শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি বিদ্যালয় গেটের তালা ভেঙে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
বৃহস্পতিবার, সকালে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারি মঙ্গলসুখ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান গেট তালাবদ্ধ রেখে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখেন শিক্ষকরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হাতুড়ি ও ইলেকট্রিক মেশিনের সাহায্যে তালা ভেঙে বিদ্যালয়ে ঢোকেন ইউএনও কাউসার হামিদ। পরে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় বিদ্যালয়টিতে।
তবে দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষিকা ছাড়া অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকেন।
ইউএনও কাউসার হামিদ বলেন, দাবি-দাওয়ার বিষয়টি সরকারের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু শিশুদের পরীক্ষা বন্ধ রাখা যাবে না। এরপরও কোনো প্রতিষ্ঠানে শিশুদের পরীক্ষা বন্ধ রাখার চেষ্টা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে শেরপুরের শ্রীবরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন স্থানীয় ইউএনও মনীষা আহমেদ। এ সময় উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন নবী উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও মনীষা আহমেদ বলেন, শিক্ষকরা পরীক্ষা না নিয়ে আন্দোলন করছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে শ্রীবরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের মারামারি:
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুরের নেছারাবাদে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে বৃহস্পতিবার, সকালে উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে শিক্ষকরা আন্দোলন করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক আদনান হোসেন বলেন, সারাদেশে সহকারী শিক্ষকদের শাটডাউন কর্মসূচি চলছে। কিন্তু নেছারাবাদে সহকারী শিক্ষক ছাড়াই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছিল। তারা কোনো বাধা দেননি। তারপরও উপজেলার কোথাও কোথাও কয়েকজন ব্যক্তি শিক্ষকদের হুমকি দিচ্ছিলো। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তারা উপজেলা পরিষদে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলো। এমন সময় রুহুল আমীন নামের একজন এসে গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ করতেই তিনি অতর্কিত হামলা চালান বলে ওই শিক্ষক অভিযোগ করেন।
এদিকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে পাবনায় এক সহকারী শিক্ষকের মাথা ফাটানোর ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ইটের আঘাতে তার মাথা ফেটে গেছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
আহত শিক্ষকের নাম রাজিব সরকার। তিনি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারিনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মাহবুবর রহমান গণমাধ্যমককে এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘যৌক্তিক’ দাবিতে চলমান আন্দোলনে পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন রাজিব ও তার সহকর্মীরা। অভিভাবক পরিচয়ের কিছু ব্যক্তি সেখানে গিয়ে শিক্ষকদের মারধর করেন। এতে সহকারী শিক্ষক রাজিবের মাথা ফেটে গেছে। তার মাথায় চারটি সেলাই দেয়া হয়েছে।
তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।