বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মেডিকেল বোর্ড। গত ১২ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে দেশবাসীর মাঝে যখন উদ্বেগ বিরাজ করছে, তখনই এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি এলো। কাতারের আমিরের দেয়া একটি অত্যাধুনিক রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে একটি নির্ধারিত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, (০৪ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি জানান, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুসারেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা গতকাল বুধবার তিনবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন এবং যুক্তরাজ্য ও চীনের ডাক্তাররা তাকে স্বশরীরে দেখেছেন বলেও জানান ডা. জাহিদ।
ডা. জাহিদ আরও জানান, যাত্রাপথে যে কোনো ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে সুস্থভাবে বিমানে চিকিৎসা দেয়ার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। যাত্রাপথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক এবং বাইরের দুইজন চিকিৎসক তার সঙ্গে থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারকি করছিলেন। চিকিৎসা সহায়তার জন্য চীন থেকে ৪ জন এবং যুক্তরাজ্য থেকে ১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সম্প্রতি দেশে এসেছেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা আশাবাদী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রতিকূলতার মাঝেও বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এবারও ইনশাআল্লাহ ফিরবেন।’ জাহিদ হোসেন দেশবাসীসহ দেশের বাইরে থাকা হাজার-লাখ মানুষের কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, ‘আপনাদের এই দোয়া ইনশাআল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে তুলবে।’ তিনি জানান, পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যদিও ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট জটিলতা কিছুটা উন্নতির দিকে, তবে তার হৃদযন্ত্রে এখনও জটিলতা রয়েছে। বাকি সমস্যাগুলো প্রায় অপরিবর্তিত।
বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘কাতারের আমিরের দেয়া উন্নতমানের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি বৃহস্পতিবার (বৃহস্পতিবার,) রাতের মধ্যেই ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। এটি অত্যন্ত আধুনিক এবং এর মধ্যে অপারেশন থিয়েটারসহ সব ব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সব ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার, রাতে (মধ্যরাতের পর) অথবা আজ খুব ভোরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি খালেদা জিয়াকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করবে।’
তবে বৃহস্পতিবার, রাত ৯টার পরে দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শয়িরুল কবির খান জানিয়েছেন, ‘চেয়ারপারসনকে বহন করায় জন্য কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি সমস্যার কারণে যাত্রা বিলম্ব হবে।’ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাতার থেকে উড্ডয়ন হবার পর সংবাদিকদের জানানো হবে বলে জানান তিনি। সে হিসেবে খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঠিক কখন রওনা হতে পারে সে সম্পর্কে নিদৃষ্ট করে সময়ের কথা বলা যাচ্ছে না।
গত ১ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি)’ ঘোষণা করেছে। এর ফলে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে (এসএসএফ) দেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গত শুক্রবার বাদ জুমা দেশের সব মসজিদে তার আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়েও প্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডা. জাহিদ হোসেন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উভয়ই দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা, সেনাবাহিনীসহ তিন বাহিনী প্রধান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক-নার্স এবং চীন, রাশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান দূতাবাসের সব ধরনের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে মোট ১৫ জন সদস্য যাচ্ছেন। এই দলে রয়েছেন- তার পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানও (যিনি গত শুক্রবার বাংলাদেশে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন যাবেন বলে জানা গেছে)। বিএনপির ভেরিফায়েড ফেইসবুকের এক পোস্টে বলা হয়, খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য ডা. জুবাইদা রহমান আগামীকাল (আজ) বাংলাদেশে আসছেন।
এছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছয়জন চিকিৎসক, এসএসএফের সদস্য, সহকারী ও গৃহকর্মীসহ অন্যরা থাকছেন। এরা হলেন- চিকিৎসক আবু জাফর মো. জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকি, চিকিৎসক মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, চিকিৎসক নূরউদ্দিন আহমদ, চিকিৎসক মো. জাফর ইকবাল, চিকিৎসক মোহাম্মদ আল মামুন, চিকিৎসক রিচার্ড জন বিল ও জিয়াউল হক।
সফর সঙ্গী হিসেবে আরও থাকছেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সৈয়দ সামিন মাহফুজ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহকারী মো. আবদুল হাই মল্লিক, সহকারী ব্যক্তিগত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও গৃহকর্মী রূপা শিকদার।
চলতি বছরে ৭ জানুয়ারিও উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেয়া হয়। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকসহ তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস চিকিৎসার পর ৫ মে একই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি দেশে ফেরেন।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেয়া হয়। তিনি গত ১২ দিন ধরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ হোসেন জানান, পরিস্থিতি আগের থেকে উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করছি না। মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার, (গতকাল বুধবার) তিনবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন। উনাকে ফিজিক্যালি দেখেছেন যুক্তরাজ্য ও চীনের ডাক্তাররা।’ তিনি আরও জানান, ‘এই মুহূর্তেও যুক্তরাজ্যের ডাক্তার ও চীনের ডাক্তারদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমরা আল্লাহর রহমতে আশাবাদী ইনশাল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আল্লাহর অশেষ রহমতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, এবারও ইনশাল্লাহ উনি আবারও আমাদের মাঝে ফেরত আসবেন।’
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ২০২০ সালে কারাগার থেকে মুক্তির পর দলের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি সরাসরি অংশ নেননি।
তবে এবার লন্ডনে চিকিৎসা করিয়ে আসার পর তাকে ঘিরে বিএনপিতে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসনে ভোট করবেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মেডিকেল বোর্ড। গত ১২ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে দেশবাসীর মাঝে যখন উদ্বেগ বিরাজ করছে, তখনই এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি এলো। কাতারের আমিরের দেয়া একটি অত্যাধুনিক রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে একটি নির্ধারিত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, (০৪ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি জানান, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুসারেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা গতকাল বুধবার তিনবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন এবং যুক্তরাজ্য ও চীনের ডাক্তাররা তাকে স্বশরীরে দেখেছেন বলেও জানান ডা. জাহিদ।
ডা. জাহিদ আরও জানান, যাত্রাপথে যে কোনো ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে সুস্থভাবে বিমানে চিকিৎসা দেয়ার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। যাত্রাপথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক এবং বাইরের দুইজন চিকিৎসক তার সঙ্গে থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারকি করছিলেন। চিকিৎসা সহায়তার জন্য চীন থেকে ৪ জন এবং যুক্তরাজ্য থেকে ১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সম্প্রতি দেশে এসেছেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা আশাবাদী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রতিকূলতার মাঝেও বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এবারও ইনশাআল্লাহ ফিরবেন।’ জাহিদ হোসেন দেশবাসীসহ দেশের বাইরে থাকা হাজার-লাখ মানুষের কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, ‘আপনাদের এই দোয়া ইনশাআল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে তুলবে।’ তিনি জানান, পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যদিও ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট জটিলতা কিছুটা উন্নতির দিকে, তবে তার হৃদযন্ত্রে এখনও জটিলতা রয়েছে। বাকি সমস্যাগুলো প্রায় অপরিবর্তিত।
বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘কাতারের আমিরের দেয়া উন্নতমানের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি বৃহস্পতিবার (বৃহস্পতিবার,) রাতের মধ্যেই ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। এটি অত্যন্ত আধুনিক এবং এর মধ্যে অপারেশন থিয়েটারসহ সব ব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সব ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার, রাতে (মধ্যরাতের পর) অথবা আজ খুব ভোরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি খালেদা জিয়াকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করবে।’
তবে বৃহস্পতিবার, রাত ৯টার পরে দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শয়িরুল কবির খান জানিয়েছেন, ‘চেয়ারপারসনকে বহন করায় জন্য কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি সমস্যার কারণে যাত্রা বিলম্ব হবে।’ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাতার থেকে উড্ডয়ন হবার পর সংবাদিকদের জানানো হবে বলে জানান তিনি। সে হিসেবে খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঠিক কখন রওনা হতে পারে সে সম্পর্কে নিদৃষ্ট করে সময়ের কথা বলা যাচ্ছে না।
গত ১ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি)’ ঘোষণা করেছে। এর ফলে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে (এসএসএফ) দেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গত শুক্রবার বাদ জুমা দেশের সব মসজিদে তার আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়েও প্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডা. জাহিদ হোসেন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উভয়ই দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা, সেনাবাহিনীসহ তিন বাহিনী প্রধান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক-নার্স এবং চীন, রাশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান দূতাবাসের সব ধরনের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে মোট ১৫ জন সদস্য যাচ্ছেন। এই দলে রয়েছেন- তার পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানও (যিনি গত শুক্রবার বাংলাদেশে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন যাবেন বলে জানা গেছে)। বিএনপির ভেরিফায়েড ফেইসবুকের এক পোস্টে বলা হয়, খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য ডা. জুবাইদা রহমান আগামীকাল (আজ) বাংলাদেশে আসছেন।
এছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছয়জন চিকিৎসক, এসএসএফের সদস্য, সহকারী ও গৃহকর্মীসহ অন্যরা থাকছেন। এরা হলেন- চিকিৎসক আবু জাফর মো. জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকি, চিকিৎসক মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, চিকিৎসক নূরউদ্দিন আহমদ, চিকিৎসক মো. জাফর ইকবাল, চিকিৎসক মোহাম্মদ আল মামুন, চিকিৎসক রিচার্ড জন বিল ও জিয়াউল হক।
সফর সঙ্গী হিসেবে আরও থাকছেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সৈয়দ সামিন মাহফুজ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহকারী মো. আবদুল হাই মল্লিক, সহকারী ব্যক্তিগত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও গৃহকর্মী রূপা শিকদার।
চলতি বছরে ৭ জানুয়ারিও উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেয়া হয়। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকসহ তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস চিকিৎসার পর ৫ মে একই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি দেশে ফেরেন।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেয়া হয়। তিনি গত ১২ দিন ধরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ হোসেন জানান, পরিস্থিতি আগের থেকে উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করছি না। মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার, (গতকাল বুধবার) তিনবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন। উনাকে ফিজিক্যালি দেখেছেন যুক্তরাজ্য ও চীনের ডাক্তাররা।’ তিনি আরও জানান, ‘এই মুহূর্তেও যুক্তরাজ্যের ডাক্তার ও চীনের ডাক্তারদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমরা আল্লাহর রহমতে আশাবাদী ইনশাল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আল্লাহর অশেষ রহমতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, এবারও ইনশাল্লাহ উনি আবারও আমাদের মাঝে ফেরত আসবেন।’
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ২০২০ সালে কারাগার থেকে মুক্তির পর দলের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি সরাসরি অংশ নেননি।
তবে এবার লন্ডনে চিকিৎসা করিয়ে আসার পর তাকে ঘিরে বিএনপিতে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসনে ভোট করবেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়।