অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যক্তির জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ‘বন্ধ করবে না’ জানিয়ে বাংলাদেশ বাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এলসি (ঋণপত্র) খুলতে দিয়ে এস আলম ও সামিটের কারখানাগুলোকে ‘সচল’ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা যেটা করেছি, ধরুন বেক্সিমকো টেক্সটাইল ছাড়া আর প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকেই কিন্তু ‘আমরা সচল রেখেছি’। এসএস পাওয়ারও সচল আছে, কারণ এটা ‘দেশের সম্পদ’।”

বৃহস্পতিবার, (০৪ ডিসেম্বর ২০২৫) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত বিনিয়োগ সংলাপে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তোলেন, যারা অর্থপাচার করেছে তারা বহাল তবিয়তে আছেন। এর জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘এস আলম দেশে না থাকতে পারে, তাকে থাকতে দেয়া হোক না হোক, সেটা পরবর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। আমাদের সামিট, তারা দেশে নাই কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠান প্রত্যেকটাই চলছে। বেক্সিমকো, শুধু বেক্সিমকো টেক্সটাইল ছাড়া প্রতিটা প্রতিষ্ঠান চলছে। আমরা চাচ্ছি না যে কোথাও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাক। ব্যক্তির জন্য আমরা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেবো না।’

আহসান মনসুর বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান তো জাতীয় সম্পদ। জাতীয় সম্পদ। কর্মসংস্থান হচ্ছে, আমাদের সাধারণ মানুষের জীবিকার অর্জনের জায়গা। এখানে আমাদের আইনগতভাবে একই সময় কারখানাগুলোকে চালু রেখে, তাদের এলসি খুলতে দিয়ে আমরা তাদের চালু রেখেছি। কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয় নাই।’

গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেক্সিমকো, সামিট, এস আলমসহ দেশের কয়েকটি শিল্পগ্রুপের বিরুদ্ধে আর্থিক খাতে ঋণ জালিয়াতি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। অভ্যুত্থানের পর বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হন। এস আলম গ্রুপের কর্ণধার এস আলম বিদেশে চলে গেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তাদের পরিবারের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ, মালিকানা হস্তান্তর বন্ধ রাখার মতো পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ ঠেকতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা অর্থ ঋণ আদালতের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তালিকা করছেন। আদালতের রায়ের পর আইনি বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য টাকা খরচের দিকও তুলে ধরেন আহসান মনসুর। এই পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে তারা চেষ্টা করবেন যাতে টাকা নিয়ে ফেরত না দেয়ার প্রবণতা ঠেকিয়ে দেয়া যায়।

আহসান মনসুর বলেন, ‘যে আমি টাকা নিলাম, তারপরে একটা আইনজীবী তো আছে আমার সঙ্গে, তাকে দিয়েই আমি ‘ম্যানিপুলেট’ করে এটাকে ২০ বছর বিনা সুদে চালিয়ে নিলাম। এই প্রবণতা তো আছে এবং ব্যবসায়ীদের একটা অংশের মধ্যেই আছে। এবং তারা, কিন্তু তাদের নিয়ে আমাদের চলতে হবে।’

গভর্নরের ভাষ্যমতে, এস আলমের প্রতিষ্ঠান চালু রাখার জন্য তিনি নিজে ব্যাংকারদের সঙ্গে বসেছেন। তিনি বলেন, ‘এসএস পাওয়ারের জন্য আমি বিশেষ করে, তিনবার আমি বসেছি তাদের সঙ্গে এবং ব্যাংকারদের সঙ্গে। যাতে এসএস পাওয়ারের ওই প্রোডাকশন যেখানে আড়াই বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করা হয়েছে, এটা তো আমাদের জাতীয় সম্পদ সেটা যেন বন্ধ না হয়ে যায়। এবং বিদেশি বিনিয়োগকারী সেখানে আছে। “৭৫-৮০ শতাংশ মালিকানা হচ্ছে চীনাদের, ২৫ শতাংশ এস আলমের। আর এই ২৫ শতাংশ এস আলমেরটা তো আমরা ব্লক করেই রাখছি। তা আমাদের হাতেই আছে, এটা তো ‘অলরেডি কনফিসকেটেড’। আমি কী, এসএস পাওয়ার কি বন্ধ করে দেবো? অবশ্যই নয়।”

তিনি বলেন, ‘আমাদের কৌশলটা হচ্ছে যে আইনের প্রয়োগ হবে, আইনকে আমরা কঠোরভাবেই নেব, ব্যক্তিকে আমরা ছাড়বো না, কিন্তু প্রতিষ্ঠানকে আমরা বন্ধ করতে দেবো না এবং একটা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয় নাই, এই বেক্সিমকো টেক্সটাইল ছাড়া, যেটা টেকসই ছিল না।’ বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফায়জুল কবির খান। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী সভাপতিত্বে সংলাপে বিশেষ অতিথিদের মধ্যে আহসান এইচ মনসুর ছাড়াও ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী, এনবিআর চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমান।