জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জাতীয় পার্টির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ ছিল। তিনি বলেন, ‘ওয়ান পার্টি রুল’ চলছে। এতে রাজনৈতিক শূন্যতা ও চরমপন্থার সৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় এসব কথা বলেন জিএম কাদের।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘দ্বাদশ নির্বাচনে যাবার জন্য বিভিন্ন চাপ এসেছিল। ১৭ ডিসেম্বর (২০২৩) আমি নির্বাচন থেকে সরে আসার সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তারপর চাপ আসলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ চাপের কথা আমি বিস্তারিত বলবো না আপনারা বুঝে নেবেন। পরোক্ষ চাপ হলোÑ যদি আমি নির্বাচনে না যাই, তাহলেও নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যাওয়া হবে। আমার এবং আমার সঙ্গে যারা থাকবেন তাদের নেতৃত্বে নয়, অন্যদের দিয়ে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এবং তাতে বুঝলাম, জাতীয় পার্টি গৃহপালিত দল হিসেবে নির্বাচন করে রাজনৈতিক মাঠ থেকে হারিয়ে যাবে। আমরা রাজনৈতিক মঞ্চ হারাবো তাতে ভবিষ্যতে আমরা দেশ ও জাতির জন্য কিছু করতে পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, আমাদের নিশ্চিত করুন নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ। প্রশাসন দলীয় কর্মীদের মতো আচরণ করবে না। তারা কথা দিলেন তারা সেটা করবেন। এটা করতে গিয়ে তারা আমার স্ত্রীর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সরিয়ে নিয়ে বললেন, বাকিগুলো প্রসেসে আছে। বাইরে প্রচার করলেন, আমি স্ত্রীর মনোনয়নের জন্য দলকে বিক্রি করে নির্বাচনে এসেছি।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা না গেলেও নির্বাচন হতো, জাতীয় পার্টি সেখানে যেত। সরকারের সেরকম প্রস্তুতি নেয়া ছিল।’
জি এম কাদের বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য জীবনমরণ সংগ্রাম ছিল। যেকোনা মূল্যে তাদের নির্বাচনে যেতেই হবে, তা না-হলে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আমাদের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো কিছু না কিছু বলেছিল। তা থেকে আমি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি— অন্তত তিনটি বড় পরশক্তি এই নির্বাচনকে সফল করার জন্য সমর্থন জানিয়েছে। পরবর্তীকালে সরকারকেও তারা চালিয়ে নিয়ে যেতে চান। এছাড়া আরও কয়েকটি দেশ এই নির্বাচনে সরকারকে সমর্থন দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল বিএনপি, আমরা ও আওয়ামীলীগ একসঙ্গে নির্বাচন করলে দর কষাকষির সুযোগ হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই পক্ষই চাইবে, আমাদের সরিয়ে নিয়ে আসতে। ফলে আমরা সেখানে একটা রাজনৈতিক মূল্য পাবো। কিন্তু আমি যখন দেখলাম, বিএনপি আন্দোলনের কয়েকটি ফাঁদে পড়ে গেলো। এটা তাদের দোষ দিচ্ছি না। আন্দোলন করলে কিছু সহিংসতা হয়, বাইরে থেকে এসব সহিংসতা তৈরি করা হয়। কাজেই এই সহিংসতার নাম করে তাদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার করা হলো। তাদের সাজা দেয়া হলো পুরনো মামলায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা হলো। ফলে মাঠে থাকলাম আমরা। তখন মাঠে থাকলাম আমরা আর আওয়ামী লীগ।’
তিনি বলেন, ‘বুঝলাম, আমরা না থাকলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। এটা নিয়ে আমরা উৎফুল্ল ছিলাম, যদি নির্বাচনে যাই হয়তো ভালো কিছু সুফল পেতে পারি। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরেও আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন আমাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে আসেনি। একটা পরিষ্কার বিষয় বোঝা গেলো তারা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার জন্য এতটা লালায়িত ছিল না। তাদের এমন ভাব ছিল আমাদের প্রতি যে, নিলে নেও না নিলে নাই। ’
জি এম কাদের বলেন, ‘গেলো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা গেলে যা হয়েছে, না গেলেও তাই হতো। আমরা না গেলেও নির্বাচন হতো, জাতীয় পার্টি হয়তো যেতো। সরকারের এমন প্রস্তুতি ছিল। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলেও বর্তমান অবস্থা এমনই হতো। বিএনপি আন্দোলনে পরাস্ত হয়েছে। আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না। দেশের স্বার্থে তারা কাজ করছে, কিন্তু তারা সফল হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘তাদের দোষটা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা বলছেÑ আমি একটা বিশাল নেতা, আমি নির্বাচনে না গেলে নাকি দেশের ভবিষ্যতই চেঞ্জ হয়ে যেতো। আমি নিজেকে এত বড় নেতা মনে করি না। আমি নির্বাচনে যেতাম আর না যেতাম, দেশ এভাবেই চলতো। এমন পরিস্থিতিই থাকতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে দোষ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি বলছে, আমি নির্বাচনে না গেলেই নাকি নির্বাচন বানচাল হতো, আর তারা ক্ষমতায় আসতে পারতো। এগুলো হচ্ছে নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার ঘাড়ে দোষ দেয়া।’
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, দলের উপদেষ্টা আশরাফুজ্জামান আশু এমপি প্রমুখ।
রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জাতীয় পার্টির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ ছিল। তিনি বলেন, ‘ওয়ান পার্টি রুল’ চলছে। এতে রাজনৈতিক শূন্যতা ও চরমপন্থার সৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় এসব কথা বলেন জিএম কাদের।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘দ্বাদশ নির্বাচনে যাবার জন্য বিভিন্ন চাপ এসেছিল। ১৭ ডিসেম্বর (২০২৩) আমি নির্বাচন থেকে সরে আসার সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তারপর চাপ আসলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ চাপের কথা আমি বিস্তারিত বলবো না আপনারা বুঝে নেবেন। পরোক্ষ চাপ হলোÑ যদি আমি নির্বাচনে না যাই, তাহলেও নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যাওয়া হবে। আমার এবং আমার সঙ্গে যারা থাকবেন তাদের নেতৃত্বে নয়, অন্যদের দিয়ে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এবং তাতে বুঝলাম, জাতীয় পার্টি গৃহপালিত দল হিসেবে নির্বাচন করে রাজনৈতিক মাঠ থেকে হারিয়ে যাবে। আমরা রাজনৈতিক মঞ্চ হারাবো তাতে ভবিষ্যতে আমরা দেশ ও জাতির জন্য কিছু করতে পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, আমাদের নিশ্চিত করুন নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ। প্রশাসন দলীয় কর্মীদের মতো আচরণ করবে না। তারা কথা দিলেন তারা সেটা করবেন। এটা করতে গিয়ে তারা আমার স্ত্রীর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সরিয়ে নিয়ে বললেন, বাকিগুলো প্রসেসে আছে। বাইরে প্রচার করলেন, আমি স্ত্রীর মনোনয়নের জন্য দলকে বিক্রি করে নির্বাচনে এসেছি।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা না গেলেও নির্বাচন হতো, জাতীয় পার্টি সেখানে যেত। সরকারের সেরকম প্রস্তুতি নেয়া ছিল।’
জি এম কাদের বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য জীবনমরণ সংগ্রাম ছিল। যেকোনা মূল্যে তাদের নির্বাচনে যেতেই হবে, তা না-হলে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আমাদের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো কিছু না কিছু বলেছিল। তা থেকে আমি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি— অন্তত তিনটি বড় পরশক্তি এই নির্বাচনকে সফল করার জন্য সমর্থন জানিয়েছে। পরবর্তীকালে সরকারকেও তারা চালিয়ে নিয়ে যেতে চান। এছাড়া আরও কয়েকটি দেশ এই নির্বাচনে সরকারকে সমর্থন দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল বিএনপি, আমরা ও আওয়ামীলীগ একসঙ্গে নির্বাচন করলে দর কষাকষির সুযোগ হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই পক্ষই চাইবে, আমাদের সরিয়ে নিয়ে আসতে। ফলে আমরা সেখানে একটা রাজনৈতিক মূল্য পাবো। কিন্তু আমি যখন দেখলাম, বিএনপি আন্দোলনের কয়েকটি ফাঁদে পড়ে গেলো। এটা তাদের দোষ দিচ্ছি না। আন্দোলন করলে কিছু সহিংসতা হয়, বাইরে থেকে এসব সহিংসতা তৈরি করা হয়। কাজেই এই সহিংসতার নাম করে তাদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার করা হলো। তাদের সাজা দেয়া হলো পুরনো মামলায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা হলো। ফলে মাঠে থাকলাম আমরা। তখন মাঠে থাকলাম আমরা আর আওয়ামী লীগ।’
তিনি বলেন, ‘বুঝলাম, আমরা না থাকলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। এটা নিয়ে আমরা উৎফুল্ল ছিলাম, যদি নির্বাচনে যাই হয়তো ভালো কিছু সুফল পেতে পারি। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরেও আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন আমাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে আসেনি। একটা পরিষ্কার বিষয় বোঝা গেলো তারা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার জন্য এতটা লালায়িত ছিল না। তাদের এমন ভাব ছিল আমাদের প্রতি যে, নিলে নেও না নিলে নাই। ’
জি এম কাদের বলেন, ‘গেলো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা গেলে যা হয়েছে, না গেলেও তাই হতো। আমরা না গেলেও নির্বাচন হতো, জাতীয় পার্টি হয়তো যেতো। সরকারের এমন প্রস্তুতি ছিল। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলেও বর্তমান অবস্থা এমনই হতো। বিএনপি আন্দোলনে পরাস্ত হয়েছে। আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না। দেশের স্বার্থে তারা কাজ করছে, কিন্তু তারা সফল হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘তাদের দোষটা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা বলছেÑ আমি একটা বিশাল নেতা, আমি নির্বাচনে না গেলে নাকি দেশের ভবিষ্যতই চেঞ্জ হয়ে যেতো। আমি নিজেকে এত বড় নেতা মনে করি না। আমি নির্বাচনে যেতাম আর না যেতাম, দেশ এভাবেই চলতো। এমন পরিস্থিতিই থাকতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে দোষ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি বলছে, আমি নির্বাচনে না গেলেই নাকি নির্বাচন বানচাল হতো, আর তারা ক্ষমতায় আসতে পারতো। এগুলো হচ্ছে নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার ঘাড়ে দোষ দেয়া।’
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, দলের উপদেষ্টা আশরাফুজ্জামান আশু এমপি প্রমুখ।