স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’কে বড় করে দেখানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে’ তিনি বলেন, “একটি শক্তি চেষ্টা করছে—যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন সেই ইতিহাসকে নিচে নামিয়ে দিতে চায়। তারা ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলনকে বড় করে তুলে ধরছে।”
ফখরুলের দাবি, বিএনপির গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলমান রয়েছে টানা ১৫ বছর ধরে। “আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য লড়ছি। কিন্তু কিছু মহল বিভক্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে,” বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “১৯৭১ সাল আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক। এটা আমাদের জন্মের ঠিকানা, স্বাতন্ত্র্যের প্রতিচ্ছবি। যেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছিল, সেটি ছিল নতুন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের মুহূর্ত।”
তিনি আরও বলেন, “যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে ‘গোলমাল’ বলেছিল, তারা আজও সেই মানসিকতা বহন করছে। সেদিন যারা আমাদের হত্যা করেছিল, বুদ্ধিজীবীদের বধ্যভূমিতে ফেলে দিয়েছিল, তাদের আমরা ভুলিনি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক সংস্কার আনেন। তিনি একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনেন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।”
তার ভাষায়, “শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সব পত্রিকা বন্ধ করে চারটি রাখেন, যেগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে ছিল। জিয়াউর রহমান সেই পরিস্থিতি বদলে দেন। পরে বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেন।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীকে আক্রমণ করে ফখরুল বলেন, “তারা মিথ্যা কথা বলে জনগণকে প্রতারণা করছে। বিএনপি নাকি নির্বাচন পেছাতে চায়—এমন অভিযোগ সত্য নয়। আমরা বরাবরই দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে। নির্বাচন বিলম্বিত করার কথা আমরা কখনও বলিনি।”
তিনি জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “তাহের সাহেব আমাদের ওপর দোষ চাপিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে আপনারাই নির্বাচনের পথে বাধা তৈরি করেছেন। পিআর পদ্ধতির দাবি তুলে আন্দোলনে নেমেছেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।”
সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তিনি বলেছেন, নির্বাচন বানচালে দেশি-বিদেশি শক্তি কাজ করবে। কিন্তু তিনি স্পষ্ট করে বলেননি, কারা হামলা চালাতে পারে।”
ফখরুল বলেন, “এই দেশের মানুষ ভয় পায় না। হামলা বা ভয় দেখিয়ে তাদের পরাজিত করা যায় না। জনগণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই চায়।”
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, “সনদে আমরা যেসব বিষয়ে একমত হয়েছিলাম, সেখানে আমাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ লিপিবদ্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে সেই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”
তিনি বলেন, “আমরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিবাদ না করে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু অন্যরা জোট বেঁধে রাস্তায় নেমেছে, সরকারকে চাপ দিচ্ছে। আমরা বলেছি, যেটায় সই করেছি তার দায় নেব, কিন্তু যেটায় সই করিনি, সেটা আমাদের নয়। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান দরকার।”
ফখরুল জানান, “প্রধান উপদেষ্টা যে প্রস্তাব দিয়েছেন—২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। পিআর থাকবে কি না, তা পরবর্তী সংসদ নির্ধারণ করবে।”
গণভোট প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “আমরা গণভোটের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছি, যদিও প্রয়োজন ছিল না। তবে আমরা বলেছি, নির্বাচনের দিনই গণভোট করতে হবে। কারণ আলাদাভাবে করলে হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। এখন তারা বলছেন, আগে গণভোট পরে নির্বাচন—এই কথা তারাই বলছেন, বিএনপি নয়।”
সভায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারাই স্বাধীনতার যোদ্ধা, এই দেশের ভিত্তি আপনাদের লড়াই। এখনো দেশের শত্রুরা চক্রান্ত করছে—আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করব, ইনশাআল্লাহ।”
ফখরুল বলেন, “শেখ হাসিনা ভারতে বসে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, অথচ একবারও অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিল—তিনি কি ক্ষমা চাইবেন? তিনি বলেছেন ‘না’। সেই ব্যক্তি আজও অপপ্রচার চালাচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “ভারত সরকারকে আমরা বলতে চাই—হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিন। তাকে আইনের মুখোমুখি করুন। বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতা করবেন না; মানুষ তা মেনে নেবে না।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নজমুল হক নান্নু, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’কে বড় করে দেখানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে’ তিনি বলেন, “একটি শক্তি চেষ্টা করছে—যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন সেই ইতিহাসকে নিচে নামিয়ে দিতে চায়। তারা ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলনকে বড় করে তুলে ধরছে।”
ফখরুলের দাবি, বিএনপির গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলমান রয়েছে টানা ১৫ বছর ধরে। “আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য লড়ছি। কিন্তু কিছু মহল বিভক্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে,” বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “১৯৭১ সাল আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক। এটা আমাদের জন্মের ঠিকানা, স্বাতন্ত্র্যের প্রতিচ্ছবি। যেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছিল, সেটি ছিল নতুন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের মুহূর্ত।”
তিনি আরও বলেন, “যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে ‘গোলমাল’ বলেছিল, তারা আজও সেই মানসিকতা বহন করছে। সেদিন যারা আমাদের হত্যা করেছিল, বুদ্ধিজীবীদের বধ্যভূমিতে ফেলে দিয়েছিল, তাদের আমরা ভুলিনি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক সংস্কার আনেন। তিনি একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনেন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।”
তার ভাষায়, “শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সব পত্রিকা বন্ধ করে চারটি রাখেন, যেগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে ছিল। জিয়াউর রহমান সেই পরিস্থিতি বদলে দেন। পরে বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেন।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীকে আক্রমণ করে ফখরুল বলেন, “তারা মিথ্যা কথা বলে জনগণকে প্রতারণা করছে। বিএনপি নাকি নির্বাচন পেছাতে চায়—এমন অভিযোগ সত্য নয়। আমরা বরাবরই দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে। নির্বাচন বিলম্বিত করার কথা আমরা কখনও বলিনি।”
তিনি জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “তাহের সাহেব আমাদের ওপর দোষ চাপিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে আপনারাই নির্বাচনের পথে বাধা তৈরি করেছেন। পিআর পদ্ধতির দাবি তুলে আন্দোলনে নেমেছেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।”
সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তিনি বলেছেন, নির্বাচন বানচালে দেশি-বিদেশি শক্তি কাজ করবে। কিন্তু তিনি স্পষ্ট করে বলেননি, কারা হামলা চালাতে পারে।”
ফখরুল বলেন, “এই দেশের মানুষ ভয় পায় না। হামলা বা ভয় দেখিয়ে তাদের পরাজিত করা যায় না। জনগণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই চায়।”
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, “সনদে আমরা যেসব বিষয়ে একমত হয়েছিলাম, সেখানে আমাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ লিপিবদ্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে সেই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”
তিনি বলেন, “আমরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিবাদ না করে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু অন্যরা জোট বেঁধে রাস্তায় নেমেছে, সরকারকে চাপ দিচ্ছে। আমরা বলেছি, যেটায় সই করেছি তার দায় নেব, কিন্তু যেটায় সই করিনি, সেটা আমাদের নয়। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান দরকার।”
ফখরুল জানান, “প্রধান উপদেষ্টা যে প্রস্তাব দিয়েছেন—২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। পিআর থাকবে কি না, তা পরবর্তী সংসদ নির্ধারণ করবে।”
গণভোট প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “আমরা গণভোটের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছি, যদিও প্রয়োজন ছিল না। তবে আমরা বলেছি, নির্বাচনের দিনই গণভোট করতে হবে। কারণ আলাদাভাবে করলে হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। এখন তারা বলছেন, আগে গণভোট পরে নির্বাচন—এই কথা তারাই বলছেন, বিএনপি নয়।”
সভায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারাই স্বাধীনতার যোদ্ধা, এই দেশের ভিত্তি আপনাদের লড়াই। এখনো দেশের শত্রুরা চক্রান্ত করছে—আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করব, ইনশাআল্লাহ।”
ফখরুল বলেন, “শেখ হাসিনা ভারতে বসে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, অথচ একবারও অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিল—তিনি কি ক্ষমা চাইবেন? তিনি বলেছেন ‘না’। সেই ব্যক্তি আজও অপপ্রচার চালাচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “ভারত সরকারকে আমরা বলতে চাই—হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিন। তাকে আইনের মুখোমুখি করুন। বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতা করবেন না; মানুষ তা মেনে নেবে না।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নজমুল হক নান্নু, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান।