গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে বড় দু’টি দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে একটি অগণতান্ত্রিক তৎপরতা রয়েছে। বিবিসি বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দুই দলেরই নেতৃত্ব পরিবর্তনে ‘বিদেশ থেকে একটা খেলা চলছে’।
ঠিক করবে দলই’
‘ক্ষমা চাইলেই কি
তারা সবকিছু ছেড়ে দেবে?’ জুলাই আন্দোলন প্রসঙ্গে জয়
‘দেশের অর্ধেক ভোটারদের বাদ দিয়ে সাজানো নির্বাচন
হতে দেবো না। আন্দোলন করবো’
বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বড় দল বলতে তিনি বিএনপিকে বুঝিয়েছেন। তবে খেলা বলতে আসলে কী বোঝাচ্ছেন এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত সে বিষয়টি পরিষ্কার করেননি।
তার দলের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার পর তাদের পরিবারের কারও সরাসরি হাল ধরার সম্ভাবনাও নাকচ করেছেন সজীব ওয়াজেদ। তিনি দলের নেতৃত্বে আসতে চান কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, দলই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
জয় আরও বলেন, ‘এখন কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে দুই দলেরই নেতৃত্ব পরিবর্তন করার ওপর বিদেশ থেকে একটা খেলা চলছে। এটা গণতান্ত্রিক না।’
‘রিফাইন্ড’ ধারণা নিয়ে সন্দেহ
গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় সংকটের মধ্যে পড়েছে। ৫ আগস্টের পর দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের দায়িত্বশীল অধিকাংশ নেতাই আত্মগোপনে আছেন, অথবা কারাগারে আছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ার পর রাজনীতিতে তার ভবিষ্যৎ ও আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে নতুন কারও নেতৃত্বে একটি ‘রিফাইন্ড বা পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ’কে রাজনীতিতে সক্রিয় করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। একটা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নিয়ে যে আলোচনা আছে, সেটা কীভাবে দেখেন- এ প্রশ্নে সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এই রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই ওয়ান ইলেভেনের সময়ের যে বিষয়টা।’ তখনো রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, বিএনপি আলোচনায় এসেছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে বড় দল উল্লেখ করে জয় বলেন, এই দুই দলেরই কেবল নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক আছে যা দেশের বাকি কোনো দলের নাই। বিএনপি অথবা আওয়ামী লীগ এই দুই দলের একটিই ক্ষমতায় আসবে বলেও তিনি মনে করেন।
এ বাস্তবতায় কাদের ইচ্ছায় রিফাইন্ড- এ প্রশ্ন তুলে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বিদেশি কয়েকটা দেশ, বিদেশি কয়েকটা শক্তি আর আমাদের সুশীল সমাজের কয়েকজন মিলে নির্ধারণ করবে যে কে প্রধানমন্ত্রী হলে রিফাইন্ড হবে, কে নেতা হলে রিফাইন্ড হবে।’
বাংলাদেশের জনগণ এ রকম কিছু চায় কিনা এই প্রশ্ন তোলেন জয়।
জয় বলেন, ‘তো রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, বিএনপি এসবে আমি বিশ্বাস করি না। আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রে, দল নির্ধারণ করবে যে দলের নেতৃত্ব কে দেবে, দেশের মানুষ নির্ধারণ করবে যে, দেশের নেতৃত্ব কে দেবে।’
আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্ব
বর্তমানে ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু এই নেতৃত্ব পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা বা আলোচনাও নেই। দেশের মধ্যে কাউকে দায়িত্ব দেয়ার পরিবেশ নেই বলেও মনে করছে আওয়ামী লীগ।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, দলের নেতৃত্ব তো এখনও আছে। ‘দলের সভাপতি হচ্ছেন আমার মা। উনাকে তো দলের নেতাকর্মীরাই সমর্থন করে রেখেছেন। কেউ উনাকে ছেড়ে যায়নি। হ্যাঁ, তারা বিচ্ছিন্ন আছে, তবে তারা কিন্তু ঐক্যবদ্ধ আছে। তো দলের নেতৃত্ব এখনও ইনট্যাক্ট আছে। আমাদের দল সম্পূর্ণভাবে ইউনাইটেড আছে।’
এখন দেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। নেতাকর্মীরা অধিকাংশই এলাকায় থাকতে পারছে না। মামলা, গ্রেপ্তার এবং মব আতঙ্কে দলের কোথাও কোনো তৎপরতা নেই। এ মুহূর্তে দলের হয়ে বিদেশে সজীব ওয়াজেদ জয় নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
দলের নেতৃত্বে আসবেন কিনা- বিবিসি বাংলার এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটাও তার নিজের সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। তার ভাষায়, ‘আমি আসলে সরাসরি কোনোদিন রাজনীতি করতে চাইনি। বাট এখন যে খেলা চলছে তাতে কী হবে তাতো কেউ বলতে পারে না। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ তার নিজের নির্ধারণ করতে হবে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্ধারণ করতে হবে।’
দলের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংকট স্বীকার করে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তার ইচ্ছা নেতৃত্ব দেয়া নয় বরং দেশে গণতন্ত্র ও শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা। তার অভিযোগ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হুমকির মুখে, সেটি রক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশে এবং আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সংকট কীভাবে পূরণ হবে- সে প্রশ্নে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘নেতৃত্বের সংকট পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। আমাদের যত নেতা আছে তাদের গ্রেপ্তার করে জেলে ভরে রাখা হয়েছে, এখন দেড় বছর ধরে তারা জেলে। বাকিরা জেলের ভয়ে, দেশ ছেড়ে থাকতে হয়েছে।’
তবে তার দাবি, বাংলাদেশে এখনও আওয়ামী লীগের ওপর বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন রয়েছে এবং তারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী।
অতীতে শেখ হাসিনা তাকে নেতৃত্ব গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছেন দাবি কওে জয় বলেন, দলে কেউ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায় না।
‘আমি চাই যে, দল যাকে চাইবে, সে দাঁড়াবে। দলের ভেতর নির্বাচন হবে, যে বেশি ভোট পাবে সে দলের সভাপতি হবে।’
সামপ্রতিককালে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামটিও নেতৃত্বের আলোচনায় আছে তৃণমূলে। শেখ রেহানা ও তার ছেলে-মেয়েরাও দলের নেতাকর্মীদের ভাষায় ‘বঙ্গবন্ধু’র পরিবারের সদস্য।
জয় বলেন, ‘রাজনীতি করতে হলে রাজনীতির একটা ইচ্ছা থাকতে হয়। আমাদের পরিবারের টিউলিপের রাজনীতি করার ইচ্ছা ছিল, সে রাজনীতি করেছে ইংল্যান্ডে, ব্রিটেনে। বাংলাদেশে করেনি কখনো।’
পুতুলের দলের নেতৃত্বে আসা প্রসঙ্গে জয় জানান, এ নিয়ে আলোচনা আছে, তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ‘আমার বোনকে নিয়ে যে চিন্তা করা হয়। আমার বোনের আসলে রাজনীতিতে সে রকম কোনো ইচ্ছা নেই, আমি যতদূর জানি।’
৫ আগস্টের পর পরিবারের মধ্য থেকে দলীয় নেতৃত্বের বিষয়টি নিজেদের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে বলেও জানান সজীব ওয়াজেদ। তার দাবি, পরিবারের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ বলেই সবাইকে মামলা দিয়ে সাজা দেয়া হচ্ছে যাতে নির্বাচনে অযোগ্য করা যায়।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে করা তিন মামলায় শেখ হাসিনাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও সজীব ওয়াজেদ জয়কে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বাইরে রাখার একটা বড় সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সজীব জয় বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এইরকম সাজানো নির্বাচন, দেশের অর্ধেক ভোটারদের বাদ দিয়ে আমরা হতে দেবো না। আমরা আন্দোলন করবো। আমাদের তারা আর কোনো পথ ছাড়ে নাই। আপনি যখন কাউকে সর্বদিক থেকে বেঁধে দেবেন তখন তো তার আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ থাকে না।’
# জুলাই আন্দোলন প্রসঙ্গে
জুলাই আন্দোলনে হতাহত নিয়ে সমালোচনা হয় যে, এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অনুশোচনা নেই। জুলাই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ কি জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে জবাবে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘ক্ষমা চাইলেই কি তারা সবকিছু ছেড়ে দেবে তবে হ্যাঁ, গত জুলাইয়ে আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের সরকারের ভুল হয়েছে। সেটা আমরা সবসময় বলে এসেছি। শুরুর দিকে আন্দোলনে ভুল হয়েছে। পরেও ভুল হয়েছে। সেটার তো স্পষ্ট তদন্ত করতে হবে।’
‘আমার মা তখন প্রধানমন্ত্রী, তিনি ৫ আগস্টের আগে একটা জুডিশিয়াল কমিশন করেছিলেন সব হত্যার তদন্ত করতে। কারণ হত্যা তো শুধু ছাত্র এবং সাধারণ জনতার হয় নাই, পুলিশের হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। সেটার তো স্পষ্ট একটা তদন্ত করতে হবে যে সেটার জন্য কে দায়ী।’
জয়ের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকার জুলাই আন্দোলনের সময় অনেক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল। তিনি বলছেন, ‘হ্যাঁ ভুল হয়েছে। তবে সেখান থেকে যদি বিচার করতে হয়, ক্ষমা চাইতে হয়, ৫ আগস্টের পর থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার জন্য তো ইউনূস সরকার ইনডেমনিটি দিয়েছে। আপনি একদিকে বলছেন আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাইতে হবে, আবার বলছেন- যারা পুলিশ হত্যা করেছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যা করেছে, তাদের খুন সব মাফ। সেটা কীভাবে হয়। সেটাই যদি হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়ার কী আছে?’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে বড় দু’টি দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে একটি অগণতান্ত্রিক তৎপরতা রয়েছে। বিবিসি বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দুই দলেরই নেতৃত্ব পরিবর্তনে ‘বিদেশ থেকে একটা খেলা চলছে’।
ঠিক করবে দলই’
‘ক্ষমা চাইলেই কি
তারা সবকিছু ছেড়ে দেবে?’ জুলাই আন্দোলন প্রসঙ্গে জয়
‘দেশের অর্ধেক ভোটারদের বাদ দিয়ে সাজানো নির্বাচন
হতে দেবো না। আন্দোলন করবো’
বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বড় দল বলতে তিনি বিএনপিকে বুঝিয়েছেন। তবে খেলা বলতে আসলে কী বোঝাচ্ছেন এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত সে বিষয়টি পরিষ্কার করেননি।
তার দলের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার পর তাদের পরিবারের কারও সরাসরি হাল ধরার সম্ভাবনাও নাকচ করেছেন সজীব ওয়াজেদ। তিনি দলের নেতৃত্বে আসতে চান কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, দলই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
জয় আরও বলেন, ‘এখন কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে দুই দলেরই নেতৃত্ব পরিবর্তন করার ওপর বিদেশ থেকে একটা খেলা চলছে। এটা গণতান্ত্রিক না।’
‘রিফাইন্ড’ ধারণা নিয়ে সন্দেহ
গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় সংকটের মধ্যে পড়েছে। ৫ আগস্টের পর দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের দায়িত্বশীল অধিকাংশ নেতাই আত্মগোপনে আছেন, অথবা কারাগারে আছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ার পর রাজনীতিতে তার ভবিষ্যৎ ও আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে নতুন কারও নেতৃত্বে একটি ‘রিফাইন্ড বা পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ’কে রাজনীতিতে সক্রিয় করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। একটা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নিয়ে যে আলোচনা আছে, সেটা কীভাবে দেখেন- এ প্রশ্নে সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এই রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই ওয়ান ইলেভেনের সময়ের যে বিষয়টা।’ তখনো রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, বিএনপি আলোচনায় এসেছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে বড় দল উল্লেখ করে জয় বলেন, এই দুই দলেরই কেবল নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক আছে যা দেশের বাকি কোনো দলের নাই। বিএনপি অথবা আওয়ামী লীগ এই দুই দলের একটিই ক্ষমতায় আসবে বলেও তিনি মনে করেন।
এ বাস্তবতায় কাদের ইচ্ছায় রিফাইন্ড- এ প্রশ্ন তুলে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বিদেশি কয়েকটা দেশ, বিদেশি কয়েকটা শক্তি আর আমাদের সুশীল সমাজের কয়েকজন মিলে নির্ধারণ করবে যে কে প্রধানমন্ত্রী হলে রিফাইন্ড হবে, কে নেতা হলে রিফাইন্ড হবে।’
বাংলাদেশের জনগণ এ রকম কিছু চায় কিনা এই প্রশ্ন তোলেন জয়।
জয় বলেন, ‘তো রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, বিএনপি এসবে আমি বিশ্বাস করি না। আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রে, দল নির্ধারণ করবে যে দলের নেতৃত্ব কে দেবে, দেশের মানুষ নির্ধারণ করবে যে, দেশের নেতৃত্ব কে দেবে।’
আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্ব
বর্তমানে ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু এই নেতৃত্ব পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা বা আলোচনাও নেই। দেশের মধ্যে কাউকে দায়িত্ব দেয়ার পরিবেশ নেই বলেও মনে করছে আওয়ামী লীগ।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, দলের নেতৃত্ব তো এখনও আছে। ‘দলের সভাপতি হচ্ছেন আমার মা। উনাকে তো দলের নেতাকর্মীরাই সমর্থন করে রেখেছেন। কেউ উনাকে ছেড়ে যায়নি। হ্যাঁ, তারা বিচ্ছিন্ন আছে, তবে তারা কিন্তু ঐক্যবদ্ধ আছে। তো দলের নেতৃত্ব এখনও ইনট্যাক্ট আছে। আমাদের দল সম্পূর্ণভাবে ইউনাইটেড আছে।’
এখন দেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। নেতাকর্মীরা অধিকাংশই এলাকায় থাকতে পারছে না। মামলা, গ্রেপ্তার এবং মব আতঙ্কে দলের কোথাও কোনো তৎপরতা নেই। এ মুহূর্তে দলের হয়ে বিদেশে সজীব ওয়াজেদ জয় নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
দলের নেতৃত্বে আসবেন কিনা- বিবিসি বাংলার এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটাও তার নিজের সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। তার ভাষায়, ‘আমি আসলে সরাসরি কোনোদিন রাজনীতি করতে চাইনি। বাট এখন যে খেলা চলছে তাতে কী হবে তাতো কেউ বলতে পারে না। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ তার নিজের নির্ধারণ করতে হবে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্ধারণ করতে হবে।’
দলের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংকট স্বীকার করে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তার ইচ্ছা নেতৃত্ব দেয়া নয় বরং দেশে গণতন্ত্র ও শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা। তার অভিযোগ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হুমকির মুখে, সেটি রক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশে এবং আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সংকট কীভাবে পূরণ হবে- সে প্রশ্নে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘নেতৃত্বের সংকট পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। আমাদের যত নেতা আছে তাদের গ্রেপ্তার করে জেলে ভরে রাখা হয়েছে, এখন দেড় বছর ধরে তারা জেলে। বাকিরা জেলের ভয়ে, দেশ ছেড়ে থাকতে হয়েছে।’
তবে তার দাবি, বাংলাদেশে এখনও আওয়ামী লীগের ওপর বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন রয়েছে এবং তারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী।
অতীতে শেখ হাসিনা তাকে নেতৃত্ব গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছেন দাবি কওে জয় বলেন, দলে কেউ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায় না।
‘আমি চাই যে, দল যাকে চাইবে, সে দাঁড়াবে। দলের ভেতর নির্বাচন হবে, যে বেশি ভোট পাবে সে দলের সভাপতি হবে।’
সামপ্রতিককালে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামটিও নেতৃত্বের আলোচনায় আছে তৃণমূলে। শেখ রেহানা ও তার ছেলে-মেয়েরাও দলের নেতাকর্মীদের ভাষায় ‘বঙ্গবন্ধু’র পরিবারের সদস্য।
জয় বলেন, ‘রাজনীতি করতে হলে রাজনীতির একটা ইচ্ছা থাকতে হয়। আমাদের পরিবারের টিউলিপের রাজনীতি করার ইচ্ছা ছিল, সে রাজনীতি করেছে ইংল্যান্ডে, ব্রিটেনে। বাংলাদেশে করেনি কখনো।’
পুতুলের দলের নেতৃত্বে আসা প্রসঙ্গে জয় জানান, এ নিয়ে আলোচনা আছে, তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ‘আমার বোনকে নিয়ে যে চিন্তা করা হয়। আমার বোনের আসলে রাজনীতিতে সে রকম কোনো ইচ্ছা নেই, আমি যতদূর জানি।’
৫ আগস্টের পর পরিবারের মধ্য থেকে দলীয় নেতৃত্বের বিষয়টি নিজেদের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে বলেও জানান সজীব ওয়াজেদ। তার দাবি, পরিবারের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ বলেই সবাইকে মামলা দিয়ে সাজা দেয়া হচ্ছে যাতে নির্বাচনে অযোগ্য করা যায়।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে করা তিন মামলায় শেখ হাসিনাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও সজীব ওয়াজেদ জয়কে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বাইরে রাখার একটা বড় সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সজীব জয় বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এইরকম সাজানো নির্বাচন, দেশের অর্ধেক ভোটারদের বাদ দিয়ে আমরা হতে দেবো না। আমরা আন্দোলন করবো। আমাদের তারা আর কোনো পথ ছাড়ে নাই। আপনি যখন কাউকে সর্বদিক থেকে বেঁধে দেবেন তখন তো তার আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ থাকে না।’
# জুলাই আন্দোলন প্রসঙ্গে
জুলাই আন্দোলনে হতাহত নিয়ে সমালোচনা হয় যে, এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অনুশোচনা নেই। জুলাই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ কি জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে জবাবে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘ক্ষমা চাইলেই কি তারা সবকিছু ছেড়ে দেবে তবে হ্যাঁ, গত জুলাইয়ে আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের সরকারের ভুল হয়েছে। সেটা আমরা সবসময় বলে এসেছি। শুরুর দিকে আন্দোলনে ভুল হয়েছে। পরেও ভুল হয়েছে। সেটার তো স্পষ্ট তদন্ত করতে হবে।’
‘আমার মা তখন প্রধানমন্ত্রী, তিনি ৫ আগস্টের আগে একটা জুডিশিয়াল কমিশন করেছিলেন সব হত্যার তদন্ত করতে। কারণ হত্যা তো শুধু ছাত্র এবং সাধারণ জনতার হয় নাই, পুলিশের হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। সেটার তো স্পষ্ট একটা তদন্ত করতে হবে যে সেটার জন্য কে দায়ী।’
জয়ের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকার জুলাই আন্দোলনের সময় অনেক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল। তিনি বলছেন, ‘হ্যাঁ ভুল হয়েছে। তবে সেখান থেকে যদি বিচার করতে হয়, ক্ষমা চাইতে হয়, ৫ আগস্টের পর থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার জন্য তো ইউনূস সরকার ইনডেমনিটি দিয়েছে। আপনি একদিকে বলছেন আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাইতে হবে, আবার বলছেন- যারা পুলিশ হত্যা করেছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যা করেছে, তাদের খুন সব মাফ। সেটা কীভাবে হয়। সেটাই যদি হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়ার কী আছে?’