ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবারও সাংবাদিকদের মধ্যে দলীয় ভাগাভাগী ও রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে সাংবাদিকদের সমস্যার সমাধান আসবে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সাংবাদিকদের বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দেশে ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে শত্রু মনে করা হয়।
শুক্রবার, (২৮ নভেম্বর ২০২৫) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। এর আগেও গত সোমবার বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংবাদমাধ্যম সংস্কার নিয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক দল না চাইলেও সাংবাদিকরা দলগুলোর ‘পকেটে ঢুকে যায়।’ জনগনের কাছে অঙ্গীকার করে স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে সংবাদকর্মীদের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি অভিযোগের সুরে আরও বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকদের তো অনেকগুলো ইউনিয়ন আছে, বিএফইউজে, ডিইউজি। আবার দুই দলের মধ্যেও দুই ভাগ, তিন ভাগ আছে। নিজেরাইতো আপনারা দলীয় হয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের পকেটে ঢুকতে দিতে না চাইলেও আপনারা পকেটে ঢুকে যাচ্ছেন। দ্যাট বিকামস্ অ্যা প্রবলেম।’
বিএনপি মহাসচিব বিগত সরকারের সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদ অর্থাৎ শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমের এই জায়গাটাকে একদম ধ্বংস করে দিয়েছে।’ তিনি সাংবাদিকদের নেতৃত্বের প্রতি অনুরোধ করেন এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করার জন্য।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি না করে তাদের (সাংবাদিকদের) নিজস্ব দাবি-দাওয়া নিয়ে মালিক পক্ষ অথবা সরকারের সঙ্গে কাজ করা উচিত। সেইদিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।’ তিনি তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘চাকরির ক্ষেত্রে বা অন্য ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে ইউনিয়নকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’ তিনি সাংবাদিকদেরকে জোর দিয়ে বলেন, ‘কোন দলের লেজুড়বৃত্তি না করে আপনাদেরকে দাঁড়াতে হবে, তাহলেই আপনি আপনার অধিকার আদায় করতে পারবেন।’
মির্জা ফখরুল আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দেশে ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে শত্রু মনে করা হয়। তার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়।’ তিনি গণতন্ত্রের মূলকথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে ফিরে যেতে চাইলে অন্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আমাদের একই সঙ্গে মূল্য দিতে হবে। গণতন্ত্রে হয়তো সব বিষয়ে ঐক্য হবে না, কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করতে হবে।’
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা খুশি লিখে এক ধরনের ‘নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো দায়বদ্ধতা না থাকায় রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিত্ব, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী সবার সম্পর্কে নেগেটিভ প্রচারণা চালানো হয়, যাতে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না।’ এর মধ্য দিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য আর ‘মব ভায়োলেন্স’ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বিএনপির শাসন আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরে এসেছিলেন এবং বন্ধ করে দেয়া সমস্ত পত্রিকাগুলোকে খুলে দিয়েছিলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। পরবর্তীকালে বেগম খালেদা জিয়াও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যা কিছু করা দরকার তা করার চেষ্টা করেছেন।’ তিনি নিশ্চিত করেন যে, বিএনপির ৩১ দফায় খুব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, তারা পুরোপুরি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও স্বাধীন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের ঐক্যের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের আজকের দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়াবার বড় শক্তি হচ্ছে আপনাদের ঐক্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি থাকুক, সাংবাদিকদের ঐক্য যদি আমরা ধরে রাখতে পারি তাহলে আমরা জাতি গঠনে গোটা জাতিকে ঐক্যের ক্ষেত্রে আমরাও ভূমিকা রাখতে পারব।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সারাদেশের ১৮ অঙ্গ ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিনের সভাপতিত্বে এবং অন্য কেন্দ্রীয় ও শাখা ইউনিয়েনের নেতাদের সঞ্চালনায় ও উপস্থিতিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবারও সাংবাদিকদের মধ্যে দলীয় ভাগাভাগী ও রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে সাংবাদিকদের সমস্যার সমাধান আসবে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সাংবাদিকদের বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দেশে ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে শত্রু মনে করা হয়।
শুক্রবার, (২৮ নভেম্বর ২০২৫) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। এর আগেও গত সোমবার বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংবাদমাধ্যম সংস্কার নিয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক দল না চাইলেও সাংবাদিকরা দলগুলোর ‘পকেটে ঢুকে যায়।’ জনগনের কাছে অঙ্গীকার করে স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে সংবাদকর্মীদের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি অভিযোগের সুরে আরও বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকদের তো অনেকগুলো ইউনিয়ন আছে, বিএফইউজে, ডিইউজি। আবার দুই দলের মধ্যেও দুই ভাগ, তিন ভাগ আছে। নিজেরাইতো আপনারা দলীয় হয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের পকেটে ঢুকতে দিতে না চাইলেও আপনারা পকেটে ঢুকে যাচ্ছেন। দ্যাট বিকামস্ অ্যা প্রবলেম।’
বিএনপি মহাসচিব বিগত সরকারের সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদ অর্থাৎ শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমের এই জায়গাটাকে একদম ধ্বংস করে দিয়েছে।’ তিনি সাংবাদিকদের নেতৃত্বের প্রতি অনুরোধ করেন এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করার জন্য।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি না করে তাদের (সাংবাদিকদের) নিজস্ব দাবি-দাওয়া নিয়ে মালিক পক্ষ অথবা সরকারের সঙ্গে কাজ করা উচিত। সেইদিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।’ তিনি তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘চাকরির ক্ষেত্রে বা অন্য ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে ইউনিয়নকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’ তিনি সাংবাদিকদেরকে জোর দিয়ে বলেন, ‘কোন দলের লেজুড়বৃত্তি না করে আপনাদেরকে দাঁড়াতে হবে, তাহলেই আপনি আপনার অধিকার আদায় করতে পারবেন।’
মির্জা ফখরুল আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দেশে ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে শত্রু মনে করা হয়। তার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়।’ তিনি গণতন্ত্রের মূলকথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে ফিরে যেতে চাইলে অন্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আমাদের একই সঙ্গে মূল্য দিতে হবে। গণতন্ত্রে হয়তো সব বিষয়ে ঐক্য হবে না, কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করতে হবে।’
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা খুশি লিখে এক ধরনের ‘নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো দায়বদ্ধতা না থাকায় রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিত্ব, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী সবার সম্পর্কে নেগেটিভ প্রচারণা চালানো হয়, যাতে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না।’ এর মধ্য দিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য আর ‘মব ভায়োলেন্স’ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বিএনপির শাসন আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরে এসেছিলেন এবং বন্ধ করে দেয়া সমস্ত পত্রিকাগুলোকে খুলে দিয়েছিলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। পরবর্তীকালে বেগম খালেদা জিয়াও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যা কিছু করা দরকার তা করার চেষ্টা করেছেন।’ তিনি নিশ্চিত করেন যে, বিএনপির ৩১ দফায় খুব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, তারা পুরোপুরি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও স্বাধীন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের ঐক্যের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের আজকের দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়াবার বড় শক্তি হচ্ছে আপনাদের ঐক্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি থাকুক, সাংবাদিকদের ঐক্য যদি আমরা ধরে রাখতে পারি তাহলে আমরা জাতি গঠনে গোটা জাতিকে ঐক্যের ক্ষেত্রে আমরাও ভূমিকা রাখতে পারব।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সারাদেশের ১৮ অঙ্গ ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিনের সভাপতিত্বে এবং অন্য কেন্দ্রীয় ও শাখা ইউনিয়েনের নেতাদের সঞ্চালনায় ও উপস্থিতিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।