বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে রেকর্ড রান তাড়ার চ্যালেঞ্জে এভাবে ব্যাটিংয়ে নামা আদর্শ কিছু ছিল না অবশ্যই। তবে এই দিনটিকেই জেমিমা করে নিলেন ক্যারিয়ারের সেরা দিন, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা দিনগুলোর একটি। তার হৃদয়ে ছিল দলকে জেতানো প্রতিজ্ঞা, তাকে শক্তি জুগিয়েছে বাইবেলের বাক্য। জীবন পেয়েছেন অবিশ্বাস্যভাবে, ক্লান্তিতে নুইয়ে পড়েছেন, তবে হার মানেননি শেষ পর্যন্ত। এক ইনিংসেই এক জীবনের মহাকাব্য লিখে তার উপলব্ধি, সবকিছুই লিখেছেন আসলে ঈশ্বর। ভারতের সেই জয়ের নায়ক জেমিমা। শেফালি ভার্মার বিদায়ে তিনি ক্রিজে যান দ্বিতীয় ওভারেই। সেখান থেকেই দলকে টেনে নেন শেষ পর্যন্ত। সোয়া তিন ঘণ্টার অসাধারণ লড়াইয়ে ১২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনি ফেরেন দলের জয়কে সঙ্গী করে।
জেতার পর নাভি মুম্বাইয়ের ২২ গজ সিক্ত হয়েছে জেমিমার চোখের জলে। তার মাঠময় উদযাপন, ডাগআউটে ফেরার পর সতীর্থদের আলিঙ্গন, সবকিছুতেই ছিল কান্নাভেজা সুখ। সেই আনন্দাশ্রুর পেছনের গল্পও তিনি শুনিয়েছেন।
‘আমার ফিফটি বা সেঞ্চুরির ব্যাপার আজকে ছিল না, আজকে ছিল স্রেফ ভারতকে জেতানোর ব্যাপার। জানি, কয়েক দফায় জীবন পেয়েছি। তবে মনে হয়েছে, সবকিছুই ঈশ্বরের চিত্রনাট্য। আমি বিশ্বাস করি, সঠিক তাড়না নিয়ে কেউ সঠিক কাজ করলে, তিনি (ঈশ্বর) সবসময়ই সহায় হন। আমার মনে হয়েছে, যা কিছু হয়েছে, সবকিছুই আসলে এসবকে ফুটিয়ে তোলার জন্যই।
এই মাসটি খুব কঠিন ছিল আমার জন্য। এখন সবকিছু মনে হচ্ছে স্বপ্নের মতো, সয়ে উঠতে সময় লাগবে।’
‘গতবার বিশ্বকাপ থেকে আমি বাদ পড়েছিলাম। এবার বিশ্বকাপ এলো, ভাবলাম, ‘ঠিক আছে, চেষ্টা করবো কিছু দেখানোর।’ কিন্তু একের পর এক কিছু হতেই থাকলো এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। তবে আমার পাশে অসাধারণ সব মানুষ ছিল, যারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে।’
‘এই টুর্নামেন্টের প্রায় প্রতিটি দিন আমি কান্না করেছি। মানসিকভাবে ভালো ছিলাম না, অনেক উদ্বেগের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। একাদশ থেকে বাদ পড়াটাও আমার জন্য ছিল আরেকটা চ্যালেঞ্জে। এরপর আমি স্রেফ চেয়েছিলাম নিজেকে মেলে ধরতে, বাকিটা ঈশ্বর সব সামলে নিয়েছেন।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ বাদ পড়ার পর তাকে আবার একাদশে ফেরানো জয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে তাকে নামানো হয় তিন নম্বরে।
‘আমি ভেবেছিলাম পাঁচ নম্বরে ব্যাট করবো। আলোচনা যখন চলছি, আমি শাওয়ার নিতে চলে যাই। তখন বলে গিয়েছিলাম, ‘আমাকে জানিয়ো।’ মাঠে নামার মিনিট পাঁচেক আগে জানতে পারি, আমাকে তিন নম্বরে খেলতে হবে।’
‘তবে নিজের কথা ভাবিনি আমি। নিজেকে প্রমাণ করার ব্যাপার আমার কাছে ছিল না। ভাবনায় কেবল ছিল ভারতকে ম্যাচ জেতানো, কারণ গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে আমরা বারবার হেরেছি। আমি তাই চেয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে দলকে বৈতরণী পার করাতে।’
‘একটা পর্যায় পর্যন্ত আমি স্রেফ খেলছিলাম, নিজের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তবে শেষদিকে বাইবেলের বাক্য পড়ছিলাম, কারণ শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিলাম প্রায়। তবে সেই স্তবকে বলা হয়েছে, ‘স্রেফ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো, ঈশ্বরই তোমার হয়ে লড়াই করবেন।’ আজকে সেটিই হয়েছে, তিনিই লড়াই করেছেন আমার হয়ে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে রেকর্ড রান তাড়ার চ্যালেঞ্জে এভাবে ব্যাটিংয়ে নামা আদর্শ কিছু ছিল না অবশ্যই। তবে এই দিনটিকেই জেমিমা করে নিলেন ক্যারিয়ারের সেরা দিন, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা দিনগুলোর একটি। তার হৃদয়ে ছিল দলকে জেতানো প্রতিজ্ঞা, তাকে শক্তি জুগিয়েছে বাইবেলের বাক্য। জীবন পেয়েছেন অবিশ্বাস্যভাবে, ক্লান্তিতে নুইয়ে পড়েছেন, তবে হার মানেননি শেষ পর্যন্ত। এক ইনিংসেই এক জীবনের মহাকাব্য লিখে তার উপলব্ধি, সবকিছুই লিখেছেন আসলে ঈশ্বর। ভারতের সেই জয়ের নায়ক জেমিমা। শেফালি ভার্মার বিদায়ে তিনি ক্রিজে যান দ্বিতীয় ওভারেই। সেখান থেকেই দলকে টেনে নেন শেষ পর্যন্ত। সোয়া তিন ঘণ্টার অসাধারণ লড়াইয়ে ১২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনি ফেরেন দলের জয়কে সঙ্গী করে।
জেতার পর নাভি মুম্বাইয়ের ২২ গজ সিক্ত হয়েছে জেমিমার চোখের জলে। তার মাঠময় উদযাপন, ডাগআউটে ফেরার পর সতীর্থদের আলিঙ্গন, সবকিছুতেই ছিল কান্নাভেজা সুখ। সেই আনন্দাশ্রুর পেছনের গল্পও তিনি শুনিয়েছেন।
‘আমার ফিফটি বা সেঞ্চুরির ব্যাপার আজকে ছিল না, আজকে ছিল স্রেফ ভারতকে জেতানোর ব্যাপার। জানি, কয়েক দফায় জীবন পেয়েছি। তবে মনে হয়েছে, সবকিছুই ঈশ্বরের চিত্রনাট্য। আমি বিশ্বাস করি, সঠিক তাড়না নিয়ে কেউ সঠিক কাজ করলে, তিনি (ঈশ্বর) সবসময়ই সহায় হন। আমার মনে হয়েছে, যা কিছু হয়েছে, সবকিছুই আসলে এসবকে ফুটিয়ে তোলার জন্যই।
এই মাসটি খুব কঠিন ছিল আমার জন্য। এখন সবকিছু মনে হচ্ছে স্বপ্নের মতো, সয়ে উঠতে সময় লাগবে।’
‘গতবার বিশ্বকাপ থেকে আমি বাদ পড়েছিলাম। এবার বিশ্বকাপ এলো, ভাবলাম, ‘ঠিক আছে, চেষ্টা করবো কিছু দেখানোর।’ কিন্তু একের পর এক কিছু হতেই থাকলো এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। তবে আমার পাশে অসাধারণ সব মানুষ ছিল, যারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে।’
‘এই টুর্নামেন্টের প্রায় প্রতিটি দিন আমি কান্না করেছি। মানসিকভাবে ভালো ছিলাম না, অনেক উদ্বেগের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। একাদশ থেকে বাদ পড়াটাও আমার জন্য ছিল আরেকটা চ্যালেঞ্জে। এরপর আমি স্রেফ চেয়েছিলাম নিজেকে মেলে ধরতে, বাকিটা ঈশ্বর সব সামলে নিয়েছেন।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ বাদ পড়ার পর তাকে আবার একাদশে ফেরানো জয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে তাকে নামানো হয় তিন নম্বরে।
‘আমি ভেবেছিলাম পাঁচ নম্বরে ব্যাট করবো। আলোচনা যখন চলছি, আমি শাওয়ার নিতে চলে যাই। তখন বলে গিয়েছিলাম, ‘আমাকে জানিয়ো।’ মাঠে নামার মিনিট পাঁচেক আগে জানতে পারি, আমাকে তিন নম্বরে খেলতে হবে।’
‘তবে নিজের কথা ভাবিনি আমি। নিজেকে প্রমাণ করার ব্যাপার আমার কাছে ছিল না। ভাবনায় কেবল ছিল ভারতকে ম্যাচ জেতানো, কারণ গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে আমরা বারবার হেরেছি। আমি তাই চেয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে দলকে বৈতরণী পার করাতে।’
‘একটা পর্যায় পর্যন্ত আমি স্রেফ খেলছিলাম, নিজের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তবে শেষদিকে বাইবেলের বাক্য পড়ছিলাম, কারণ শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিলাম প্রায়। তবে সেই স্তবকে বলা হয়েছে, ‘স্রেফ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো, ঈশ্বরই তোমার হয়ে লড়াই করবেন।’ আজকে সেটিই হয়েছে, তিনিই লড়াই করেছেন আমার হয়ে।’