দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা সরকারের পতনের পর জনপ্রিয় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার উচ্ছাস
থাকবে, পথে পথে ঢল নামবে সেটা স্বাভাবিক। তবে সরকারের পতনের পর যে অরাজকতা দেশজুড়ে শুরু
হয়েছে সেটা শান্তিকামী কোনো মানুষের কাম্য হতে পারে না। জাতীয় সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়, গণভবন, প্রধানবিচারপতির বাসভবন, বিভিন্ন থানাসহ বহু স্থাপনায় হামলা হয়েছে, আগুন
দেওয়া হয়েছে, লুঠতরাজ হয়েছে। ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে চারটি দগ্ধ মৃতদেহও পাওয়া
গেছে। কারা এসব অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত হয়েছে? এটা কোন ধরনের মানসিকতা?
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা সরকারের বিদায়ের পর দেশে যে একটা শূন্যতা তৈরি হবে সেটা বোঝা
যাচ্ছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের
ওপর হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঘরবসতি, দোকানপাটে হামলা হয়েছে, আগুন
দেওয়া হয়েছে, লুটপাট হয়েছে। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত রেষারেষিতে অনেক হামলা হচ্ছে। কারও কারও
লক্ষ্যই হচ্ছে লুটপাট করা। কোনো কোনো গোষ্ঠী প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে। দেশের অনেক
গণমাধ্যম কর্মী ও প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।
তাণ্ডব চলেছে দেশজুড়েই। দেশের অনেক থানায় হামলা হয়েছে। অনেক স্থানে পুলিশকে হত্যা করা
হয়েছে। দেশের পুলিশ বাহিনি নানান কারণেই বিপর্যস্ত, পর্যদুস্ত হয়ে পড়েছে। তারা আগের
সরকারের পেটোয়া বাহিনি হিসেবে কাজ করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের বাড়াবাড়ি ছিল। পুলিশ
বাহিনীর একশ্রেণির সদস্য অন্যায়-অপরাধ করেছে। তাদের বিচার করা জরুরি। কিন্তু পুলিশ হত্যা করা,
থানায় হামলা চালানো, অস্ত্র বা প্রয়োজনীয় নথিপত্র লুঠ করা চলতে দেওয়া যায় না। কেউই আইন
নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না।
এমন অরাজক ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য নিশ্চয়ই আগের সরকারকে বিদায় করা হয়নি। এমন দেশ নিশ্চয়ই
গণতন্ত্রকামী কেউ চান না, যেখান আইনের শাসন অনুপস্থিত। সেটা না হয়ে থাকলে অরাজকতা
নিয়ন্ত্রণে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে।
আন্দোলনকারীরা অরাজকতা বন্ধে বার্তা দিয়েছেন। বিভিন্ন দল ও সংগঠন অরাজকতা বন্ধের আহ্বান
জানিয়েছে। আমরা বলতে চাই, কেবল আহ্বান জানানোই যথেষ্ট ছিল না।
দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনী নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। গত দুদিন
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির কোথাও কোনো অবস্থান দেখা যায়নি। বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতির অবনতিই ঘটিয়েছে। নয় দফা দাবি জানিয়ে পুলিশ কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে। যতদিন
পর্যন্ত তারা দায়িত্বে ফিরতে না পারছে ততদিন দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ কঠিন হবে।
দেশে পালাবদলের এই সময়ে পুলিশ বাহিনীর সেই মানসিক শক্তি নেই যে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ
করবে। তাই বলে দেশের মানুষের জানমাল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, ব্যক্তি সম্পদ অরক্ষিত থাকতে পারে না। এখন যারা
দায়িত্বে আছেন তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মনোযোগী হতে হবে। গতকাল আনসার এবং গ্রাম
প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সারাদেশে আইন-শৃংখলা এবং থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করতে চাই
এতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
তবে মনে রাখতে হবে, দেশের প্রতিটি বাহিনীর নিজ নিজ কিছু দায়িত্ব আছে। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার
কাজ পুলিশ বাহিনীর। তাদেরকে সেই কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে দ্রুত।
আমরা বলতে চাই, দেশে এই অরাজকতা চলতে পারে না। অনতিবিলম্বে এর অবসান ঘটাতে হবে। কাউকে
না কাউকে দায়ীত্ব নিতে হবে। অতিসত্তর হত্যা, হামলা, আগুন, লুঠতরাজ কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে।
যারাই এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা আন্দোলন করেছেন, যারা
আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরকে সারা দেশে শক্ত বার্তা পাঠাতে হবে। এই প্রতিশোধের ঘৃণ্য
খেলা যেন অবিলম্বে বন্ধ হয় সেটা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। সব পক্ষকে সংযত থাকতে
হবে। সবাই সহনশীল আচরণ করবে সেটা আমরা আশা করব।
বুধবার, ০৭ আগস্ট ২০২৪
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা সরকারের পতনের পর জনপ্রিয় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার উচ্ছাস
থাকবে, পথে পথে ঢল নামবে সেটা স্বাভাবিক। তবে সরকারের পতনের পর যে অরাজকতা দেশজুড়ে শুরু
হয়েছে সেটা শান্তিকামী কোনো মানুষের কাম্য হতে পারে না। জাতীয় সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়, গণভবন, প্রধানবিচারপতির বাসভবন, বিভিন্ন থানাসহ বহু স্থাপনায় হামলা হয়েছে, আগুন
দেওয়া হয়েছে, লুঠতরাজ হয়েছে। ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে চারটি দগ্ধ মৃতদেহও পাওয়া
গেছে। কারা এসব অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত হয়েছে? এটা কোন ধরনের মানসিকতা?
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা সরকারের বিদায়ের পর দেশে যে একটা শূন্যতা তৈরি হবে সেটা বোঝা
যাচ্ছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের
ওপর হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঘরবসতি, দোকানপাটে হামলা হয়েছে, আগুন
দেওয়া হয়েছে, লুটপাট হয়েছে। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত রেষারেষিতে অনেক হামলা হচ্ছে। কারও কারও
লক্ষ্যই হচ্ছে লুটপাট করা। কোনো কোনো গোষ্ঠী প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে। দেশের অনেক
গণমাধ্যম কর্মী ও প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।
তাণ্ডব চলেছে দেশজুড়েই। দেশের অনেক থানায় হামলা হয়েছে। অনেক স্থানে পুলিশকে হত্যা করা
হয়েছে। দেশের পুলিশ বাহিনি নানান কারণেই বিপর্যস্ত, পর্যদুস্ত হয়ে পড়েছে। তারা আগের
সরকারের পেটোয়া বাহিনি হিসেবে কাজ করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের বাড়াবাড়ি ছিল। পুলিশ
বাহিনীর একশ্রেণির সদস্য অন্যায়-অপরাধ করেছে। তাদের বিচার করা জরুরি। কিন্তু পুলিশ হত্যা করা,
থানায় হামলা চালানো, অস্ত্র বা প্রয়োজনীয় নথিপত্র লুঠ করা চলতে দেওয়া যায় না। কেউই আইন
নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না।
এমন অরাজক ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য নিশ্চয়ই আগের সরকারকে বিদায় করা হয়নি। এমন দেশ নিশ্চয়ই
গণতন্ত্রকামী কেউ চান না, যেখান আইনের শাসন অনুপস্থিত। সেটা না হয়ে থাকলে অরাজকতা
নিয়ন্ত্রণে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে।
আন্দোলনকারীরা অরাজকতা বন্ধে বার্তা দিয়েছেন। বিভিন্ন দল ও সংগঠন অরাজকতা বন্ধের আহ্বান
জানিয়েছে। আমরা বলতে চাই, কেবল আহ্বান জানানোই যথেষ্ট ছিল না।
দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনী নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। গত দুদিন
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির কোথাও কোনো অবস্থান দেখা যায়নি। বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতির অবনতিই ঘটিয়েছে। নয় দফা দাবি জানিয়ে পুলিশ কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে। যতদিন
পর্যন্ত তারা দায়িত্বে ফিরতে না পারছে ততদিন দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ কঠিন হবে।
দেশে পালাবদলের এই সময়ে পুলিশ বাহিনীর সেই মানসিক শক্তি নেই যে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ
করবে। তাই বলে দেশের মানুষের জানমাল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, ব্যক্তি সম্পদ অরক্ষিত থাকতে পারে না। এখন যারা
দায়িত্বে আছেন তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মনোযোগী হতে হবে। গতকাল আনসার এবং গ্রাম
প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সারাদেশে আইন-শৃংখলা এবং থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করতে চাই
এতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
তবে মনে রাখতে হবে, দেশের প্রতিটি বাহিনীর নিজ নিজ কিছু দায়িত্ব আছে। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার
কাজ পুলিশ বাহিনীর। তাদেরকে সেই কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে দ্রুত।
আমরা বলতে চাই, দেশে এই অরাজকতা চলতে পারে না। অনতিবিলম্বে এর অবসান ঘটাতে হবে। কাউকে
না কাউকে দায়ীত্ব নিতে হবে। অতিসত্তর হত্যা, হামলা, আগুন, লুঠতরাজ কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে।
যারাই এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা আন্দোলন করেছেন, যারা
আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরকে সারা দেশে শক্ত বার্তা পাঠাতে হবে। এই প্রতিশোধের ঘৃণ্য
খেলা যেন অবিলম্বে বন্ধ হয় সেটা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। সব পক্ষকে সংযত থাকতে
হবে। সবাই সহনশীল আচরণ করবে সেটা আমরা আশা করব।