বাবুল রবিদাস
ভীমরাও আম্বেদকর, শৈশবে ভীম নামে পরিচিত। ১৮৯১ সালের ১৪ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের মোউতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সুবেদার রামজী শকপাল এবং মা ভীমাবাঈ। মাহার জাতির এই পরিবার বোম্বাই প্রদেশের আম্বাবাদে গ্রামে বাস করত। হিন্দু সমাজে অস্পৃশ্য গণ্য হলেও তারা কবীরপন্থি ছিলেন। ভীম ছয় বছর বয়সে মাতৃহারা হন। তার পিসি মীরাবাঈ তাকে স্নেহে লালন করেন।
শিক্ষা ও অস্পৃশ্যতার অভিজ্ঞতা
সাতারার স্কুলে ভীম অস্পৃশ্যতার কঠোর বাস্তবতা অনুভব করেন। তাকে আলাদা বসতে হতো, শিক্ষক তার খাতা স্পর্শ করতেন না। জল চাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। একজন ব্রাহ্মণ শিক্ষক তার পদবী আম্বাবাদেকর থেকে আম্বেদকর করে দেন। বোম্বাইয়ের মারাঠা হাই স্কুলে পড়াশোনা চললেও লাঞ্ছনা অব্যাহত থাকে। ১৯০৭ সালে তিনি এলফিনস্টোন হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন।
উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবন
১৯১৩ সালে বরোদার মহারাজার বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। ১৯১৫ সালে এমএ এবং ১৯১৬ সালে ডক্টরেট লাভ করেন। দেশে ফিরে বরোদায় চাকরিতে অপমানিত হয়ে বোম্বাই ফিরে কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। লন্ডনে ১৯২১ সালে এমএসসি, ১৯২৩ সালে ডিএসসি এবং ব্যারিস্টারি পাস করেন। বোম্বাই হাইকোর্টে ব্যারিস্টারি এবং ১৯৩৪ সালে আইন কলেজে অধ্যাপক ও ১৯৩৫ সালে অধ্যক্ষ হন।
সামাজিক আন্দোলন
অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য ১৯২০ সালে ‘মূকনায়ক’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯২৪ সালে ‘বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা’ গঠন করে অস্পৃশ্যদের শিক্ষার জন্য কাজ করেন। ১৯২৭ সালে মাহাদের চওদার পুকুরে অস্পৃশ্যদের জলের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বহিষ্কৃত ভারত’, ‘সমতা’ ও ‘জনতা’ পত্রিকা প্রকাশ করেন।
শিক্ষা ও সংবিধান
১৯২৮ সালে ‘ডিপ্রেসড ক্লাসেস এডুকেশন সোসাইটি’ এবং ১৯৪৫ সালে ‘পিপলস এডুকেশন সোসাইটি’ গঠন করে সিদ্ধার্থ ও মিলিন্দ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী এবং সংবিধান খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান হন। ১৯৪৯ সালে সংবিধান পাস হয়, যা ১৯৫০ সালে কার্যকর হয়।
বৌদ্ধধর্ম ও মৃত্যু
১৯৫৬ সালে নাগপুরে ৫ লাখ অনুগামীসহ বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। প্রজ্ঞা, করুণা ও সমতার নীতির জন্য তিনি বৌদ্ধধর্ম বেছে নেন। ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে তার মৃত্যু হয়। ৭ ডিসেম্বর বোম্বাইয়ে শেষকৃত্যে ১ লাখ মানুষ বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে।
ভারতরতœ
অসংখ্য বই লিখে তিনি হিন্দু সমাজের জাতিভেদ ও শোষণ তুলে ধরেন। ১৯৯০ সালে তাকে মরণোত্তর ‘ভারতরতœ’ প্রদান করা হয়। তার অবদান ভারত কখনো ভুলবে না।
[লেখক : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]
বাবুল রবিদাস
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
ভীমরাও আম্বেদকর, শৈশবে ভীম নামে পরিচিত। ১৮৯১ সালের ১৪ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের মোউতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সুবেদার রামজী শকপাল এবং মা ভীমাবাঈ। মাহার জাতির এই পরিবার বোম্বাই প্রদেশের আম্বাবাদে গ্রামে বাস করত। হিন্দু সমাজে অস্পৃশ্য গণ্য হলেও তারা কবীরপন্থি ছিলেন। ভীম ছয় বছর বয়সে মাতৃহারা হন। তার পিসি মীরাবাঈ তাকে স্নেহে লালন করেন।
শিক্ষা ও অস্পৃশ্যতার অভিজ্ঞতা
সাতারার স্কুলে ভীম অস্পৃশ্যতার কঠোর বাস্তবতা অনুভব করেন। তাকে আলাদা বসতে হতো, শিক্ষক তার খাতা স্পর্শ করতেন না। জল চাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। একজন ব্রাহ্মণ শিক্ষক তার পদবী আম্বাবাদেকর থেকে আম্বেদকর করে দেন। বোম্বাইয়ের মারাঠা হাই স্কুলে পড়াশোনা চললেও লাঞ্ছনা অব্যাহত থাকে। ১৯০৭ সালে তিনি এলফিনস্টোন হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন।
উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবন
১৯১৩ সালে বরোদার মহারাজার বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। ১৯১৫ সালে এমএ এবং ১৯১৬ সালে ডক্টরেট লাভ করেন। দেশে ফিরে বরোদায় চাকরিতে অপমানিত হয়ে বোম্বাই ফিরে কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। লন্ডনে ১৯২১ সালে এমএসসি, ১৯২৩ সালে ডিএসসি এবং ব্যারিস্টারি পাস করেন। বোম্বাই হাইকোর্টে ব্যারিস্টারি এবং ১৯৩৪ সালে আইন কলেজে অধ্যাপক ও ১৯৩৫ সালে অধ্যক্ষ হন।
সামাজিক আন্দোলন
অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য ১৯২০ সালে ‘মূকনায়ক’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯২৪ সালে ‘বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা’ গঠন করে অস্পৃশ্যদের শিক্ষার জন্য কাজ করেন। ১৯২৭ সালে মাহাদের চওদার পুকুরে অস্পৃশ্যদের জলের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বহিষ্কৃত ভারত’, ‘সমতা’ ও ‘জনতা’ পত্রিকা প্রকাশ করেন।
শিক্ষা ও সংবিধান
১৯২৮ সালে ‘ডিপ্রেসড ক্লাসেস এডুকেশন সোসাইটি’ এবং ১৯৪৫ সালে ‘পিপলস এডুকেশন সোসাইটি’ গঠন করে সিদ্ধার্থ ও মিলিন্দ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী এবং সংবিধান খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান হন। ১৯৪৯ সালে সংবিধান পাস হয়, যা ১৯৫০ সালে কার্যকর হয়।
বৌদ্ধধর্ম ও মৃত্যু
১৯৫৬ সালে নাগপুরে ৫ লাখ অনুগামীসহ বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। প্রজ্ঞা, করুণা ও সমতার নীতির জন্য তিনি বৌদ্ধধর্ম বেছে নেন। ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে তার মৃত্যু হয়। ৭ ডিসেম্বর বোম্বাইয়ে শেষকৃত্যে ১ লাখ মানুষ বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে।
ভারতরতœ
অসংখ্য বই লিখে তিনি হিন্দু সমাজের জাতিভেদ ও শোষণ তুলে ধরেন। ১৯৯০ সালে তাকে মরণোত্তর ‘ভারতরতœ’ প্রদান করা হয়। তার অবদান ভারত কখনো ভুলবে না।
[লেখক : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]