বাবুল রবিদাস
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার “পুনশ্চ” কাব্যগ্রন্থে লিখেছেন, “মৃত্যুর ধর্মই এক, প্রাণ ধর্ম নানা, দেবতা মরিলে ধর্ম একখানা।” কিন্তু মৃত্যুর প্রকৃতি বা প্রাণের ধর্ম কী, এ বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার ধারণা আছে কি? জীবন ও মৃত্যু নিয়ে কৌতূহল যুগান্তব্যাপী। তবে আমরা সবাই সুনিশ্চিত যে, সকল প্রাণীর সজীব দেহ একদিন নির্জীব হয়ে যাবে। জন্মিলেই মরতে হবে, “অমর” কে কোথায় বা কবে। পৃথিবীতে এ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের আয়ু বৃদ্ধি ও মৃত্যুর নিয়ন্ত্রণের উপায় অনুসন্ধান করছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক দাবি করেছেন যে, তারা এমন একটি ঔষধ আবিষ্কার করেছেন, যা মানুষের আয়ু বাড়াতে সক্ষম। গবেষকরা ১৩টি দেশের ১০৫ এবং ১১০ বছরের বেশি বয়সি এক হাজারের অধিক পুরুষ ও নারীসহ নানা বয়সের গত ৬০ বছরের আয়ু সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখেছেন। গবেষণাপত্রে দুইটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলা হয়েছে। প্রথমটি মানবেতিহাসে দীর্ঘতম আয়ু সম্পন্ন ফরাসি নারী জেন কামেন্তের ঘটনা, যিনি ১৯৯৭ সালে ১২২ বছর বয়সে প্রয়াত হন। দ্বিতীয়টি জাপানের কানেতানাকা, যিনি বর্তমানে ১১৮ বছর বয়সেও সুস্থ্য ও সক্রিয়। ২০২৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জাপানে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী তাকামারো কুকোকা ৮৭ হাজার ৭৮৪ জন নারী ও ১১ হাজার ৯৭৯ জন পুরুষকে অভিনন্দন জানান এবং সমাজে তাদের দীর্ঘদিনের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এদিন নতুন শতবর্ষীদের প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দনপত্র ও রৌপ্যকাপ প্রদান করে সম্মানিত করা হয়।
বিজ্ঞানীরা আরও এক গবেষণায় দাবি করেছেন, ভিন্নঘাত প্রতিঘাত তান্ডব স্বত্বেও বিশেষ প্রোটিনের সাহায্যে ইঁদুরের আয়ু ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। তারা বলেন, একই পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষের আয়ু ১২০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। এমন উদাহরণ হিসেবে জানা যায়, মধ্যসাগরের পূর্ব দিকে গ্রীক দ্বীপ ইকরিয়ায় মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। এই দ্বীপের শতবর্ষীরাও সুস্থ ও যৌন জীবনে সক্ষম। মালদ্বীপের গড় আয়ু ৭৮ বছর, শ্রীলঙ্কার ৭৬ বছর, বাংলাদেশের ৭৩ বছর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৪৫ বছর। স্বাস্থ্য, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং প্রজনন হার উন্নতির কারণে এই বৃদ্ধি এসেছে।
সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আলোচনায় অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও অমরত্ব বিষয়ক কথোপকথন প্রকাশ পায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন, কৃত্রিম হৃৎপি- স্থাপনা এবং অন্যান্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘায়ু অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের তাসনোভা মোস্তাফিজ নোভা কৃত্রিম হৃৎপি- স্থাপনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফিরেছেন। এছাড়া বিশ্বের প্রথমবারের মতো মানুষের শরীরে শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, ২০২৯ সালের মধ্যে মানুষের অমরত্ব অর্জন সম্ভব হতে পারে। তবে পত্রপত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, গরিবের গড় আয়ু কম এবং ধনীদের বেশি। মানুষের শরীরকে ইঞ্জিনের সঙ্গে তুলনা করা যায়; যতœ নিলে দীর্ঘায়ু ও সুস্থ্য জীবন সম্ভব। তবে বায়ু দূষণ, খাদ্যের বিষ, জলাতঙ্ক, কম ঘুম, তামাক সেবন, কীটনাশক, ক্যান্সার, ফুসফুস, হৃৎপি- ও কিডনি রোগের কারণে বহু মানুষ অকাল মৃত্যুর সম্মুখীন হচ্ছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি মানুষের জীবন দীর্ঘায়িত করছে, অদূর ভবিষ্যতে আরও উন্নতির ফলে অমরত্বও সম্ভব হতে পারে। তবে সমাজে স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের সমতা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
[লেখক: আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]
বাবুল রবিদাস
বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার “পুনশ্চ” কাব্যগ্রন্থে লিখেছেন, “মৃত্যুর ধর্মই এক, প্রাণ ধর্ম নানা, দেবতা মরিলে ধর্ম একখানা।” কিন্তু মৃত্যুর প্রকৃতি বা প্রাণের ধর্ম কী, এ বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার ধারণা আছে কি? জীবন ও মৃত্যু নিয়ে কৌতূহল যুগান্তব্যাপী। তবে আমরা সবাই সুনিশ্চিত যে, সকল প্রাণীর সজীব দেহ একদিন নির্জীব হয়ে যাবে। জন্মিলেই মরতে হবে, “অমর” কে কোথায় বা কবে। পৃথিবীতে এ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের আয়ু বৃদ্ধি ও মৃত্যুর নিয়ন্ত্রণের উপায় অনুসন্ধান করছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক দাবি করেছেন যে, তারা এমন একটি ঔষধ আবিষ্কার করেছেন, যা মানুষের আয়ু বাড়াতে সক্ষম। গবেষকরা ১৩টি দেশের ১০৫ এবং ১১০ বছরের বেশি বয়সি এক হাজারের অধিক পুরুষ ও নারীসহ নানা বয়সের গত ৬০ বছরের আয়ু সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখেছেন। গবেষণাপত্রে দুইটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলা হয়েছে। প্রথমটি মানবেতিহাসে দীর্ঘতম আয়ু সম্পন্ন ফরাসি নারী জেন কামেন্তের ঘটনা, যিনি ১৯৯৭ সালে ১২২ বছর বয়সে প্রয়াত হন। দ্বিতীয়টি জাপানের কানেতানাকা, যিনি বর্তমানে ১১৮ বছর বয়সেও সুস্থ্য ও সক্রিয়। ২০২৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জাপানে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী তাকামারো কুকোকা ৮৭ হাজার ৭৮৪ জন নারী ও ১১ হাজার ৯৭৯ জন পুরুষকে অভিনন্দন জানান এবং সমাজে তাদের দীর্ঘদিনের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এদিন নতুন শতবর্ষীদের প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দনপত্র ও রৌপ্যকাপ প্রদান করে সম্মানিত করা হয়।
বিজ্ঞানীরা আরও এক গবেষণায় দাবি করেছেন, ভিন্নঘাত প্রতিঘাত তান্ডব স্বত্বেও বিশেষ প্রোটিনের সাহায্যে ইঁদুরের আয়ু ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। তারা বলেন, একই পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষের আয়ু ১২০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। এমন উদাহরণ হিসেবে জানা যায়, মধ্যসাগরের পূর্ব দিকে গ্রীক দ্বীপ ইকরিয়ায় মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। এই দ্বীপের শতবর্ষীরাও সুস্থ ও যৌন জীবনে সক্ষম। মালদ্বীপের গড় আয়ু ৭৮ বছর, শ্রীলঙ্কার ৭৬ বছর, বাংলাদেশের ৭৩ বছর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৪৫ বছর। স্বাস্থ্য, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং প্রজনন হার উন্নতির কারণে এই বৃদ্ধি এসেছে।
সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আলোচনায় অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও অমরত্ব বিষয়ক কথোপকথন প্রকাশ পায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন, কৃত্রিম হৃৎপি- স্থাপনা এবং অন্যান্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘায়ু অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের তাসনোভা মোস্তাফিজ নোভা কৃত্রিম হৃৎপি- স্থাপনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফিরেছেন। এছাড়া বিশ্বের প্রথমবারের মতো মানুষের শরীরে শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, ২০২৯ সালের মধ্যে মানুষের অমরত্ব অর্জন সম্ভব হতে পারে। তবে পত্রপত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, গরিবের গড় আয়ু কম এবং ধনীদের বেশি। মানুষের শরীরকে ইঞ্জিনের সঙ্গে তুলনা করা যায়; যতœ নিলে দীর্ঘায়ু ও সুস্থ্য জীবন সম্ভব। তবে বায়ু দূষণ, খাদ্যের বিষ, জলাতঙ্ক, কম ঘুম, তামাক সেবন, কীটনাশক, ক্যান্সার, ফুসফুস, হৃৎপি- ও কিডনি রোগের কারণে বহু মানুষ অকাল মৃত্যুর সম্মুখীন হচ্ছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি মানুষের জীবন দীর্ঘায়িত করছে, অদূর ভবিষ্যতে আরও উন্নতির ফলে অমরত্বও সম্ভব হতে পারে। তবে সমাজে স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের সমতা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
[লেখক: আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]