alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

স্যাটেলাইট সোলার প্যানেল : বিদ্যুৎশক্তির ভবিষ্যৎ

শঙ্কর প্রসাদ দে

: বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩
image

উন্নত বিশ্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য স্যাটেলাইট সোলার প্যানেল ব্যবহার করছে

গ্রামে গেলে দেখা যায় দোকান, বাড়ি বা মুরগির ফার্মের ছাদে চকচক করছে সোলার প্যানেল। সিঙ্গাপুর তার সমুদ্রসীমার বিশাল অংশজুড়ে বসিয়ে ফেলেছে সোলার প্যানেল। এর থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে চলছে পানি শোধনাগার প্রকল্পগুলো। সমস্যা হলো পৃথিবীর দিনের প্রায় অর্ধেক সময় যে কোন স্থানে রাতের অন্ধকারে ডুবে যায় বলে ওই সময়টুকুতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয় না। দিনের বেলায় পাওয়া বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করে এই সমস্যার এক ধরনের সমাধান করা হচ্ছে বটে তবে তা অর্জনের অর্ধাংশ মাত্র।

এই সীমাবদ্ধতা কাটানোর জন্য গত একদশক ধরে এনার্জি বিশেষজ্ঞরা উঠেপড়ে লেগেছেন। বিগত দিনগুলোতে উত্তর খোঁজা হয়েছে ২৪ ঘণ্টা ধরে কিভাবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এর দুটো বিকল্পের মধ্যে প্রথমটি মধ্যপ্রাচ্যের ঝকঝকে দিবালোকে বিষুবরেখা বরাবর সৌর প্যানেল স্থাপন। কারণ দিনের বেশির ভাগ সময় সৌর তাপ উচ্চমাত্রায় পেতে পৃথিবীতে মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে জুতসই জায়গা আর নেই। চীন পৃথিবীর সবচে বেশি সোলার প্যানেল উৎপাদনকারী দেশ। এগুলো সবচে বেশি কিনছে আবুধাবীসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এরা বুঝতে শুরু করেছে আগামী ৭০ বছরের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস ফুরিয়ে যাবে।

গত দু’শতকের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর উদ্যোক্তা হয় ব্রিটেন অথবা আমেরিকা। দ্বিতীয় বিকল্প হলো ব্রিটিশ সরকার তাদের এনার্জি কমিশন ও বিজ্ঞানীদের ডেকে বলেছেন, আকাশে সোলার প্যানেল স্থাপনে যত টাকা লাগবে দেয়া হবে। বৃটিশ ও আমেরিকার এনার্জি বিজ্ঞানীরা সরকারকে বলল, মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির সোজা উপরে মহাকাশে “সোলার প্যানেল স্যাটেলাইট” বসালে আকাশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশ সহ বহু দেশের শত শত স্যাটেলাইট মহাকাশে আছে এবং এগুলো মূলত তথ্য আদান প্রদানে ব্যবহৃত হয়। এনার্জি বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হলো ভবিষ্যতে পাঠানো হবে “সোলার স্যাটেলাইট”।

প্রশ্ন হলো স্যাটেলাইট সোলার প্যানেলকে যদি রকেট পৃথিবীর অরবিটে নিয়ে হাজির হয় তবে সেগুলো জোড়া দেবে কে? উত্তর হলো- রোবট। প্রশ্ন হলো খরচ কেমন হবে? উত্তর হলো ১০ কেজির ১টি প্যানেল নিতে খরচ হবে মাত্র ১০ হাজার মার্কিন ডলার। প্রশ্ন হলো, বুঝলাম বিদ্যুৎ না হয় উৎপাদন হলো। এই বিদ্যুৎ পৃথিবীতে পোঁছাবে কী করে? উত্তর আরো সহজ। এখন তারহীন প্রযুক্তিতে মোবাইলে মোবাইলে ওয়াই-ফাই সংযোগ সাগরে নদীতে পাহাড়ে গ্রামে বনে জঙ্গলে বিমানে রকেটে মহাকাশ যানে কোথায় নেই? ‘মাইক্রোওয়েভ বিম’ নামের এই প্রযুক্তি মহাকাশে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেবে পৃথিবীব্যাপী। সুবিধা হলো পৃথিবীর অরবিটে ঘূর্ণনের কারণে দিনরাত্রি বলে কিছু থাকবে না এমন জায়গায় সোলার স্যাটেলাইট বসানো হবে।

ইদানীং ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান ও চীনের এনার্জি কমিশন ও স্পেস এজেন্সিগুলো ঐক্যমতে পৌঁছেছে যে, আকাশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে একে অন্যকে সাহায্য করবে। তথ্য আদান প্রদান করবে। প্রযুক্তি বিনিময় করবে। কিছু কিছু বিজ্ঞানীর সোজা বক্তব্য হলো, মেঘে মেঘে ঘর্ষণে আকাশে এমনিতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। বৃষ্টিস্নাত দিনে ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বহু কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। ভেজা সুতোর মধ্য দিয়ে যদি বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে দাঁড়ানো মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। তবে সুতা বা তার ছাড়া বিদ্যুৎ একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব কোন বিষয় নয়।

কয়েক বছর ধরে শোনা যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত চাঁদে ও মঙ্গলে অরবিটার পাঠানোর কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি চমকে দেবার মতো হলেও অবাস্তব এবং অসম্ভব কোনটিই নয়। মধ্যপ্রাচ্যের ও উত্তর আফ্রিকার অন্য সব মুসলিম দেশের চাইতে আরব আমিরাত অনেক বেশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমুখী। বুর্জ খলিফা ভবনটি’ই দুবাইয়ের একমাত্র স্মারক নয়। আসলে দুবাই শহরটি এবং আরব আমিরাত আধুনিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

স্যাটেলাইটের বাংলা প্রতিশব্দ কৃত্রিম উপগ্রহ। পৃথিবী থেকে গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে শত শত স্যাটেলাইট পৃথিবীর অরবিট বা আকাশে পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হলো পৃথিবীর অরবিটে এখন রীতিমত স্যাটেলাইট জটের সৃষ্টি হয়েছে। স্পেস সেন্টার ও স্যাটেলাইট আবর্জনাগুলো একদিন না একদিন সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। কাজ খুব সহজ নয় এবং ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। ইসরোর বক্তব্য হলো চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপগ্রহ ব্যবহারই টেকসই এবং ঝামেলামুক্ত। চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে পাঠিয়ে ইসরো দেখিয়ে দিল কম খরচে চাঁদে যাওয়া যায়। চাঁদে স্যাটেলাইট পাঠানো যাবে। চাঁদে সোলার স্যাটেলাইটও পাঠানো যাবে। চাঁদে উৎপাদিত বিদ্যুৎ একদিন পৃথবীর মানুষ ব্যবহার করবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি কর্তৃপক্ষ বিশাল বরাদ্দ নিয়ে গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। “নিত্তম প্রকল্পটি” এনার্জি সেক্টরে সৌদি সরকারের গৃহীত সবচে বৃহৎ পদক্ষেপ। ব্রিটেনও সৌদি সরকারের যৌথ অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। কয়েক বছরের ব্যবধানে এটি প্রাথমিক কারিগরি স্তর অতিক্রম করতে পারলে সৌদি রাষ্ট্রকাঠামোতে ঘটবে বিশাল পরিবর্তন। শতভাগ ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে দেশটি দ্রুত বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করছে। এই প্রথম সৌদি সমাজ দেখছে মহাকাশ শুধু ধর্মীয় বিশ^াসের জায়গা নয়। শুধু স্বর্গ নরক নয়। এটি এমন এক জায়গা যাকে শুধু মুক্ত মন, প্রযুক্তি, পদার্থবিদ্যা ও বিজ্ঞান দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায়। জয় করা যায়।

এক হিসেবে পৃথিবীর খনিজ কয়লা বড় জোর একশ বছর। জীবাশ্ম জ্বালানি গ্যাস বড় জোর সত্তর বছর। পেট্রোলিয়াম বড়জোর পঞ্চাশ বছর। ইতোমধ্যে পানি বিদ্যুৎ অর্থাৎ হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্ট একপ্রকার পরিত্যক্ত। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ঝুঁকির কারণে একসময় বন্ধ করে দিতে হবে। ফ্রান্সে ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছিল ১০-১২ বছর আগে। এখন এটিতে যুক্ত হয়েছে আমেরিকা, চীন, ইইউ, জাপান, কোরিয়া ও রাশিয়া।

সমুদ্রের পানি থেকে হাইড্রোজেন পৃথক করে ফিউশন প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। তবে সেটিও যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ। সবদিক ভেবে বলা যায় এতো ঝামেলার দরকার কী? মহাকাশ থেকে কার্বনহীন বিদ্যুৎ আসবে ঘরে ঘরে মোবাইলের মতো ডিভাইসে। এ যে বিজ্ঞানের জয়, প্রযুক্তির বিজয়, সভ্যতার অগ্রাভিযান।

[লেখক: আইনজীবী, আপিল বিভাগ]

ব্যাংকিং খাতে বিষফোঁড়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির ধমনী বিষাক্ত হয়ে উঠছে

ছবি

ঢাকার নদী ও খালের দখল-দূষণ: পুনরুদ্ধার কোন পথে

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি ভোটের পরে এবার নাকি গণভোট!

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

স্যাটেলাইট সোলার প্যানেল : বিদ্যুৎশক্তির ভবিষ্যৎ

শঙ্কর প্রসাদ দে

image

উন্নত বিশ্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য স্যাটেলাইট সোলার প্যানেল ব্যবহার করছে

বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩

গ্রামে গেলে দেখা যায় দোকান, বাড়ি বা মুরগির ফার্মের ছাদে চকচক করছে সোলার প্যানেল। সিঙ্গাপুর তার সমুদ্রসীমার বিশাল অংশজুড়ে বসিয়ে ফেলেছে সোলার প্যানেল। এর থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে চলছে পানি শোধনাগার প্রকল্পগুলো। সমস্যা হলো পৃথিবীর দিনের প্রায় অর্ধেক সময় যে কোন স্থানে রাতের অন্ধকারে ডুবে যায় বলে ওই সময়টুকুতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয় না। দিনের বেলায় পাওয়া বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করে এই সমস্যার এক ধরনের সমাধান করা হচ্ছে বটে তবে তা অর্জনের অর্ধাংশ মাত্র।

এই সীমাবদ্ধতা কাটানোর জন্য গত একদশক ধরে এনার্জি বিশেষজ্ঞরা উঠেপড়ে লেগেছেন। বিগত দিনগুলোতে উত্তর খোঁজা হয়েছে ২৪ ঘণ্টা ধরে কিভাবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এর দুটো বিকল্পের মধ্যে প্রথমটি মধ্যপ্রাচ্যের ঝকঝকে দিবালোকে বিষুবরেখা বরাবর সৌর প্যানেল স্থাপন। কারণ দিনের বেশির ভাগ সময় সৌর তাপ উচ্চমাত্রায় পেতে পৃথিবীতে মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে জুতসই জায়গা আর নেই। চীন পৃথিবীর সবচে বেশি সোলার প্যানেল উৎপাদনকারী দেশ। এগুলো সবচে বেশি কিনছে আবুধাবীসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এরা বুঝতে শুরু করেছে আগামী ৭০ বছরের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস ফুরিয়ে যাবে।

গত দু’শতকের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর উদ্যোক্তা হয় ব্রিটেন অথবা আমেরিকা। দ্বিতীয় বিকল্প হলো ব্রিটিশ সরকার তাদের এনার্জি কমিশন ও বিজ্ঞানীদের ডেকে বলেছেন, আকাশে সোলার প্যানেল স্থাপনে যত টাকা লাগবে দেয়া হবে। বৃটিশ ও আমেরিকার এনার্জি বিজ্ঞানীরা সরকারকে বলল, মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির সোজা উপরে মহাকাশে “সোলার প্যানেল স্যাটেলাইট” বসালে আকাশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশ সহ বহু দেশের শত শত স্যাটেলাইট মহাকাশে আছে এবং এগুলো মূলত তথ্য আদান প্রদানে ব্যবহৃত হয়। এনার্জি বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হলো ভবিষ্যতে পাঠানো হবে “সোলার স্যাটেলাইট”।

প্রশ্ন হলো স্যাটেলাইট সোলার প্যানেলকে যদি রকেট পৃথিবীর অরবিটে নিয়ে হাজির হয় তবে সেগুলো জোড়া দেবে কে? উত্তর হলো- রোবট। প্রশ্ন হলো খরচ কেমন হবে? উত্তর হলো ১০ কেজির ১টি প্যানেল নিতে খরচ হবে মাত্র ১০ হাজার মার্কিন ডলার। প্রশ্ন হলো, বুঝলাম বিদ্যুৎ না হয় উৎপাদন হলো। এই বিদ্যুৎ পৃথিবীতে পোঁছাবে কী করে? উত্তর আরো সহজ। এখন তারহীন প্রযুক্তিতে মোবাইলে মোবাইলে ওয়াই-ফাই সংযোগ সাগরে নদীতে পাহাড়ে গ্রামে বনে জঙ্গলে বিমানে রকেটে মহাকাশ যানে কোথায় নেই? ‘মাইক্রোওয়েভ বিম’ নামের এই প্রযুক্তি মহাকাশে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেবে পৃথিবীব্যাপী। সুবিধা হলো পৃথিবীর অরবিটে ঘূর্ণনের কারণে দিনরাত্রি বলে কিছু থাকবে না এমন জায়গায় সোলার স্যাটেলাইট বসানো হবে।

ইদানীং ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান ও চীনের এনার্জি কমিশন ও স্পেস এজেন্সিগুলো ঐক্যমতে পৌঁছেছে যে, আকাশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে একে অন্যকে সাহায্য করবে। তথ্য আদান প্রদান করবে। প্রযুক্তি বিনিময় করবে। কিছু কিছু বিজ্ঞানীর সোজা বক্তব্য হলো, মেঘে মেঘে ঘর্ষণে আকাশে এমনিতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। বৃষ্টিস্নাত দিনে ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বহু কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। ভেজা সুতোর মধ্য দিয়ে যদি বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে দাঁড়ানো মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। তবে সুতা বা তার ছাড়া বিদ্যুৎ একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব কোন বিষয় নয়।

কয়েক বছর ধরে শোনা যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত চাঁদে ও মঙ্গলে অরবিটার পাঠানোর কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি চমকে দেবার মতো হলেও অবাস্তব এবং অসম্ভব কোনটিই নয়। মধ্যপ্রাচ্যের ও উত্তর আফ্রিকার অন্য সব মুসলিম দেশের চাইতে আরব আমিরাত অনেক বেশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমুখী। বুর্জ খলিফা ভবনটি’ই দুবাইয়ের একমাত্র স্মারক নয়। আসলে দুবাই শহরটি এবং আরব আমিরাত আধুনিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

স্যাটেলাইটের বাংলা প্রতিশব্দ কৃত্রিম উপগ্রহ। পৃথিবী থেকে গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে শত শত স্যাটেলাইট পৃথিবীর অরবিট বা আকাশে পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হলো পৃথিবীর অরবিটে এখন রীতিমত স্যাটেলাইট জটের সৃষ্টি হয়েছে। স্পেস সেন্টার ও স্যাটেলাইট আবর্জনাগুলো একদিন না একদিন সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। কাজ খুব সহজ নয় এবং ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। ইসরোর বক্তব্য হলো চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপগ্রহ ব্যবহারই টেকসই এবং ঝামেলামুক্ত। চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে পাঠিয়ে ইসরো দেখিয়ে দিল কম খরচে চাঁদে যাওয়া যায়। চাঁদে স্যাটেলাইট পাঠানো যাবে। চাঁদে সোলার স্যাটেলাইটও পাঠানো যাবে। চাঁদে উৎপাদিত বিদ্যুৎ একদিন পৃথবীর মানুষ ব্যবহার করবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি কর্তৃপক্ষ বিশাল বরাদ্দ নিয়ে গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। “নিত্তম প্রকল্পটি” এনার্জি সেক্টরে সৌদি সরকারের গৃহীত সবচে বৃহৎ পদক্ষেপ। ব্রিটেনও সৌদি সরকারের যৌথ অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। কয়েক বছরের ব্যবধানে এটি প্রাথমিক কারিগরি স্তর অতিক্রম করতে পারলে সৌদি রাষ্ট্রকাঠামোতে ঘটবে বিশাল পরিবর্তন। শতভাগ ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে দেশটি দ্রুত বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করছে। এই প্রথম সৌদি সমাজ দেখছে মহাকাশ শুধু ধর্মীয় বিশ^াসের জায়গা নয়। শুধু স্বর্গ নরক নয়। এটি এমন এক জায়গা যাকে শুধু মুক্ত মন, প্রযুক্তি, পদার্থবিদ্যা ও বিজ্ঞান দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায়। জয় করা যায়।

এক হিসেবে পৃথিবীর খনিজ কয়লা বড় জোর একশ বছর। জীবাশ্ম জ্বালানি গ্যাস বড় জোর সত্তর বছর। পেট্রোলিয়াম বড়জোর পঞ্চাশ বছর। ইতোমধ্যে পানি বিদ্যুৎ অর্থাৎ হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্ট একপ্রকার পরিত্যক্ত। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ঝুঁকির কারণে একসময় বন্ধ করে দিতে হবে। ফ্রান্সে ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছিল ১০-১২ বছর আগে। এখন এটিতে যুক্ত হয়েছে আমেরিকা, চীন, ইইউ, জাপান, কোরিয়া ও রাশিয়া।

সমুদ্রের পানি থেকে হাইড্রোজেন পৃথক করে ফিউশন প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। তবে সেটিও যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ। সবদিক ভেবে বলা যায় এতো ঝামেলার দরকার কী? মহাকাশ থেকে কার্বনহীন বিদ্যুৎ আসবে ঘরে ঘরে মোবাইলের মতো ডিভাইসে। এ যে বিজ্ঞানের জয়, প্রযুক্তির বিজয়, সভ্যতার অগ্রাভিযান।

[লেখক: আইনজীবী, আপিল বিভাগ]

back to top