মোস্তাফা জব্বার
জারি-সারি, ভাটিয়ালি, পুঁথি-পালাগানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তেমনি এক গৌরবগাথা সংকলন মৈমনসিংহ গীতিকা। এবার ২০২৩ সালে মৈমনসিংহ গীতিকার শতবর্ষ পূর্ণ হলো। এই গীতিকার সম্পাদক দীনেশ চন্দ্র সেন ১৯২৩ সালের ২৪ নভেম্বর এই গীতিকার সম্পাদকীয় লিখেন বলে সেই দিনটিকে প্রকাশের শতবর্ষ এবার এই দিনে উদযাপিত হলো।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা বিশেষ করে গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রবাহিত হাওরাঞ্চলের জীবনের ১০টি পালা দিয়ে সাজানো হয়েছে এ গীতিকা। দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় চন্দ্রকুমার দে সংগৃহিত সংকলনে মৈমনসিংহ গীতিকার জন্ম। যার মাধ্যমে বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারলো বাংলার লোকজ সংস্কৃতির গৌরবময় ইতিহাস। দীনেশ চন্দ্র সেনের পূর্ববঙ্গ গীতিকার চারটি খ-ের প্রথম খ-টি মৈমনসিংহ গীতিকা। ১৯২৩ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দীনেশ সেন সম্পাদিত এই গীতিকাটি প্রকাশ করে। এরপর এই গীতিকাটি পূর্ববঙ্গ গীতিকাতেও সংযুক্ত হয়।
নেত্রকোনা, দুর্গাপুর, গারো পাহাড়, কিশোরগঞ্জ, বাজিতপুর, খালিয়াজুরি ও কেন্দুয়ার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে চন্দ্রকুমার দে পালাকার, বয়াতি, মাঝিমাল্লার কাছ থেকে ঘটনা সম্বলিত পালাগুলো সংগ্রহ করেন। মানুষের মুখে মুখে রচিত এসব কাব্যপালাগুলো সংগ্রহ করে সম্মুখে তুলে ধরার মৌলিক কৃতিত্বটাও চন্দ্রকুমার দে’র। আর সেটি দীনেশ চন্দ্রের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন ‘সৌরভ’ পত্রিকার সম্পাদক কেদারনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ অব্দে ময়মনসিংহের পত্রিকা সৌরভ এ চন্দ্রাবতী (প্রাচীন মহিলা কবি) সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ লেখেন চন্দ্রকুমার দে। আর সেটি পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি দীনেশ চন্দ্র সেন। সেই সূত্র ধরে তিনি খুঁজতে থাকেন চন্দ্র কুমাকে। পুরনো বন্ধু কেদারনাথের সহযোগিতায় একসময় তাকে পেয়েও যান। অসুস্থ চন্দ্রকুমারের চিকিৎসার ভার নিজেই বহন করলেন। সুস্থ হয়ে উঠলে কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে লাগিয়ে দেন গাথা সংগ্রহের কাজে।
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ার চন্দ্রকুমারের অবদানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন মৈমনসিংহ গীতিকার ভূমিকায় বলেন, ‘কি কষ্টে যে এই সবাই পল্লীগাথা তিনি সংগ্রহ করিয়াছেন তাহা তিনি ও তাহার ভগবানই জানেন এবং কতক আমি জানিয়াছি। এই সব গান অধিকাংশ চাষাদের রচনা। এইগুলোর অনেক পালা কখনই লিপিবদ্ধ হয় নাই। পূর্বে যেমন প্রতি বঙ্গপল্লীতে কুন্দ ও গন্ধরাজ ফুটিত, বিল ও পুষ্করিণীতে পদ্ম ও কুমুদের কুঁড়ি বায়ুর সঙ্গে তাল রাখিয়া দুলিত- এই সবাই গানও তেমনই লোকের ঘরে ঘরে নিরবধি শোনা যাইত ও তাহদের তানে সরল কৃষকপ্রাণ তন্ময় হইয়া যাইত।’
ধারণা করা হয় চন্দ্রকুমারের সহযোগিতা না থাকলে হয়তো গাথাগুলো সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়তো। দুঃখ, কষ্ট, নানা দৈন্য দশার সঙ্গে লড়াই করে তিনি সাহিত্যচর্চা করে গেছেন। যার সহযোগিতা না থাকলে কালের আবর্তে হয়তো গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পালাগানগুলো অনেক আগেই হারিয়ে যেত।
অনেকে পালাগুলোকে পূর্ববাংলার অশিক্ষিত চাষা-ভুষাদের মাথামুণ্ডু বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন; কিন্তু দীনেশচন্দ্র সেন হাল ছেড়ে দেননি। তিনি চাষা-ভুষাদের রচিত এসব কাব্যকথার মাঝেই সাহিত্যের আসল সৌন্দর্য উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন। যে কথা উঠে উঠেছে তার নিজ মুখে, ‘কেহ কেহ ইংরেজি শিক্ষার দর্পে উপেক্ষা করিয়া বলিলেন, ‘ছোটলোকেরা, বিশেষত, মুসলমানেরা, ওই সবাই মাথামু-ু গাহিয়া যায়, আর শত শত চাষা লাঙ্গলের উপর বাহুভর করিয়া দাঁড়াইয়া শোনে। ওই গানগুলোর মধ্যে এমন কি থাকিতে পারে যে শিক্ষিত সমাজ তৎপ্রতি আকৃষ্ট হইতে পারেন? আপনি এই ছেঁড়া পুঁথি ঘাঁটা দিন কয়েকের জন্য ছাড়িয়া দিন।’
ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত এসব বুদ্ধিজীবীদের আহবানে দীনেশচন্দ্র সেন বরং সাড়া দেননি। তিনি বরাবরই ছিলেন উপনিবেশবাদী চিন্তাধারার বিপক্ষে।
গীতিকাটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে দীনেশচন্দ্র সেন আরো বলেন, ‘পালাগানের অধিকাংশই পূর্ব-মৈমনসিংহের কোন কোন যথার্থ ঘটনা অবলম্বন করিয়া রচিত হইয়াছে। যে সবাই ঘটনা অশ্রুসিক্ত হইয়া লোকেরা শুনিয়াছে, যে সবাই অবাধ ও অপ্রতিহত অত্যাচার যমের দুর্জয় চক্রের ন্যায় সরল নিরীহ প্রাণকে পিষিয়া চলিয়া গিয়াছে- সেই সবাই অপরুপ করুণ কথা গ্রাম্য কবিরা পয়ারে গাঁথিয়া রাখিয়াছেন। তাহারা ছন্দের- শব্দৈশ^র্যের কাঙাল হইতে পারেন, তাহারা হয়ত বড় বড় তালমানের সন্ধান জানিতেন না, কিন্তু তাহাদের হৃদয় অফুরন্ত কারুণ্য ও কবিত্বের উৎসস্বরূপ ছিল। যাহারা লিখিয়াছিলেন, তাহাদের অশ্রু ফুরাইয়া গিয়াছে, কিন্তু এই সবাই কাহিনীর শ্রোতাদের অশ্রু কখনও ফুরাইবে বলিয়া মনে হয় না।’
ড. দীনেশচন্দ্র সেন বাংলা লোকসাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় নাম। ১৮৬৬ সালে ৩ নভেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তার পৈতৃক নিবাস ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর গ্রামে। সিলেটের হবিগঞ্জের এক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে প্রাচীন বাংলার পুঁথি সংগ্রহ করেন এবং সেসব উপকরণের সাহায্যে ১৮৯৬ এ ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ শিরোনামে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করেন। ১৯১১ সালে তার সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘হিস্ট্রি অব বেঙ্গলি লিটারেচার’ প্রকাশিত হলে তা সর্বমহলের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ^বিদ্যালয় তাকে ‘রামতনু লাহিড়ী রিসার্চ ফেলোশিপ’ প্রদান করে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা সম্পাদনা করেন।
১৯২৩ সালে দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন মৈমনসিংহ গীতকা বইটি প্রকাশিত হয়, এ গীতিকার পালাগুলো ইউরোপ, আমেরিকাসহ ভারতবর্ষের সাহিত্য সুধীজনের মাঝে ব্যাপক সমাদৃত হতে থাকে। অজোপাড়া গায়ের মানুষরা যে এত সুন্দর শিল্প সৃষ্টি করতে পারে অনেকে তা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
কোন কোন পালাকে তো ইউরোপের জ্ঞানী গুণীরা জনপ্রিয় সাহিত্যগুলোর সঙ্গে তুলনা করেন। গীতিকার মূল্যায়নে ড. আশরাফ সিদ্দিকীর বর্ণনায় উঠে এসেছে সে কথা, ‘ইউরোপের মধ্যযুগীয় রোমান্স ‘ট্রিস্টান ও ইসল্ট’ এবং ‘অকাসিন ও নিকোলেটের’ অমর প্রেমের কাহিনী আজ পৃথিবীর সবাই সাহিত্য-রসিকের কাছেই সুপরিচিত। তাদের অবিস্মরণীয় প্রেমের উৎস থেকে, যুগে যুগে সাহিত্যকগণ পেয়েছেন প্রেরণা-প্রেমিক পেয়েছেন শান্তি।
আমাদের মৈমনসিংহ গীতিকার ‘মহুয়া’ পালাটির ইংরেজি অনুবাদ পড়ে ইউরোপের বহু জ্ঞানী-গুণী প-িতও পালাটির সঙ্গে উপরে বর্ণিত ইউরোপীয় কাহিনী দুটির তুলনা করেছেন।’
১৯২৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার মৈমনসিংহে গিয়েছিলেন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমার গান দিয়ে শুরু করতে হবে তা কেন, দীনেশচন্দ্রের পালাগান অপূর্ব। মৈমনসিংহ থেকে যে সবাই পালাগান সংগ্রহ হয়েছে তাতে সহজেই বেজে উঠছে বিশ^ সাহিত্যের সুর, মানুষের চিরকালের সুখ-দুঃখের প্রেরণায় লেখা সেই গাথা। মৈমনসিংহ গীতিকার কাল নির্ণয় চলে না। ওটা আবহমান কালের- যার মধ্যে একটা আশ্চর্য কবিত্ব আছে। আমি এসেছি সেই গান শুনতে, সেই দৃশ্য অবলোকন করতে। মৈমনসিংহ গীতিকার মহুয়া পালা আমার খুব প্রিয়।’
রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ^সাহিত্যের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের প্রশংসা পেয়েছে এ গীতিকা। একশো বছর পরেও শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে গীতিকাটি।
অনেকে পালাগুলোকে পূর্ববাংলার অশিক্ষিত চাষা-ভুষাদের মাথামুণ্ডু বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন; কিন্তু দীনেশচন্দ্র সেন হাল ছেড়ে দেননি। তিনি চাষা-ভুষাদের রচিত এসব কাব্যকথার মাঝেই সাহিত্যের আসল সৌন্দর্য উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন
নায়িকা প্রধান এসব উপাখ্যানের প্রতিটি পালাতেই ফুটে উঠেছে চিরন্তন প্রেমের রোমান্টিকতা। মহুয়া, চন্দ্রাবতী, মলুয়া, কাজল রেখাসহ প্রত্যেকটি গীতিকায় জীবন স্পর্শ করা অমর প্রেম ও আত্মত্যাগ হৃদয় ছুঁয়ে যাবে সবাইর। আশরাফ সিদ্দিকীর ভাষায়, ‘সমগ্র পালাগুলোর মধ্যেই দেখা যাবে নারীদের অপূর্ব সতীত্বের চিত্র। বনের পুষ্পের মতোই বিভিন্ন বিপর্যয় ও ঝড়ের মধ্যেও তারা যেন আপন সৌন্দর্যে বারবার মূর্ত হয়ে উঠেছে- কোনো প্রলোভনই তাদের বিপথগামী করতে পারে না। লোক-সাহিত্যের চিরাচরিত নিয়ম অনুসারে বহু ছড়াও পালাগুলোতে অনুপ্রবেশ করেছেÑ মেওয়া মিশ্রি সবাই মিঠা, মিঠা গঙ্গার জল/তার থাক্যা মিঠা দেখ শীতল ডাবের জল/অথবাÑ আমার বাড়ি যাইওরে বন্ধু বইতে দিয়াম পিড়া/জল পান করিতে দিয়াম শালি ধানের চিড়া/শালি ধানের চিড়া দিয়াম আরও শবরী কালা/ঘরে আছে মইষের দই রে, বন্ধু খাইবা তিনো বেলা- ইত্যাদি ইত্যাদি। একইভাবে ‘মলুয়া’ ‘চন্দ্রাবতী’, ‘রুপবতী’, ‘লীলা ও কঙ্ক’ প্রভৃতি পালাগুলোতেও নারী চরিত্রগুলোই প্রধান। মনে হয় সমগ্র কাহিনীর যেন কেন্দ্রবিন্দু-তাদের অবলম্বন করেই যেন সবকিছু আবর্তিত হচ্ছে।
সাহিত্যে নারীর অবস্থান সেই সুদূর প্রাচীনকাল থেকে। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় নারীর সরব উপস্থিতিও যেন চোখে পড়ার মতো। আশরাফ সিদ্দিকীর কথায় বরং সেটি আরো স্পষ্ট, ‘আমাদের পূর্ব ময়মনসিংহ গীতিকার কাহিনীগুলোর প্রতœতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলে তাদের মধ্যে এসব প্রাচীন সমাজের বহু বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যাবে। ইচ্ছামতো বর গ্রহণ, বয়সকালে বিবাহ, স্বাধীন প্রেম-ইত্যাদি সবই মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য। এই সঙ্গে মনে রাখতে হবে ময়মনসিংহের পূর্বাঞ্চল কামরুপ কামাখ্যার-প্রাগজ্যেতিষপুরেরও অংশ ছিল- যেখানে মাতৃতান্ত্রিকতাই ছিল সামাজিক রীতি। স্বাধীন প্রেম অর্থ যে উচ্ছৃঙ্খলতা নয়, তা বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন। মাতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রেম অরণ্য-পুষ্পের মতোই পবিত্র। নাগরিক সভ্যতার কোনো ধুলি-বালি এই পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে না। সেখানে বিবাহের চেয়ে বড় হল প্রেম বা ‘সিলেকশন অব পার্টনার’। তাই দেখতে পাই মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রবতী, লীলা এই প্রেমের কাছে সবকিছু সমর্পণ করে দিয়েছে।’
হিন্দু মুসলমানের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মিলনের এক অকৃত্রিম রূপও ফুটে উঠেছে এ গীতিকায়। হিন্দু মুসলমান যে বহুকাল ধরে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চলছিল তারই অকাট্য প্রমাণ রেখে যান দীনেশবাবু, ‘মৈমনসিংহ গীতিকায় আমরা বাঙ্গালা ভাষার স্বরূপটি পাইতেছি। বহুশতাব্দীকাল পাশাপাশি বাস করার ফলে হিন্দু ও মুসলমানের ভাষা এক সাধারণ সম্পত্তি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইহা সমস্ত বঙ্গবাসীর ভাষা। এক্ষেত্রে জাতিভেদ নাই। এই মৈমনসিংহ গীতিকায় উর্দু উপাদান ততটা ঢুকিয়াছে, যতটা প্রকৃতপক্ষে এ দেশে আসিয়া বাঙ্গালা হইয়া গিয়াছে।’
[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক]
মোস্তাফা জব্বার
সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩
জারি-সারি, ভাটিয়ালি, পুঁথি-পালাগানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তেমনি এক গৌরবগাথা সংকলন মৈমনসিংহ গীতিকা। এবার ২০২৩ সালে মৈমনসিংহ গীতিকার শতবর্ষ পূর্ণ হলো। এই গীতিকার সম্পাদক দীনেশ চন্দ্র সেন ১৯২৩ সালের ২৪ নভেম্বর এই গীতিকার সম্পাদকীয় লিখেন বলে সেই দিনটিকে প্রকাশের শতবর্ষ এবার এই দিনে উদযাপিত হলো।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা বিশেষ করে গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রবাহিত হাওরাঞ্চলের জীবনের ১০টি পালা দিয়ে সাজানো হয়েছে এ গীতিকা। দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় চন্দ্রকুমার দে সংগৃহিত সংকলনে মৈমনসিংহ গীতিকার জন্ম। যার মাধ্যমে বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারলো বাংলার লোকজ সংস্কৃতির গৌরবময় ইতিহাস। দীনেশ চন্দ্র সেনের পূর্ববঙ্গ গীতিকার চারটি খ-ের প্রথম খ-টি মৈমনসিংহ গীতিকা। ১৯২৩ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দীনেশ সেন সম্পাদিত এই গীতিকাটি প্রকাশ করে। এরপর এই গীতিকাটি পূর্ববঙ্গ গীতিকাতেও সংযুক্ত হয়।
নেত্রকোনা, দুর্গাপুর, গারো পাহাড়, কিশোরগঞ্জ, বাজিতপুর, খালিয়াজুরি ও কেন্দুয়ার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে চন্দ্রকুমার দে পালাকার, বয়াতি, মাঝিমাল্লার কাছ থেকে ঘটনা সম্বলিত পালাগুলো সংগ্রহ করেন। মানুষের মুখে মুখে রচিত এসব কাব্যপালাগুলো সংগ্রহ করে সম্মুখে তুলে ধরার মৌলিক কৃতিত্বটাও চন্দ্রকুমার দে’র। আর সেটি দীনেশ চন্দ্রের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন ‘সৌরভ’ পত্রিকার সম্পাদক কেদারনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ অব্দে ময়মনসিংহের পত্রিকা সৌরভ এ চন্দ্রাবতী (প্রাচীন মহিলা কবি) সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ লেখেন চন্দ্রকুমার দে। আর সেটি পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি দীনেশ চন্দ্র সেন। সেই সূত্র ধরে তিনি খুঁজতে থাকেন চন্দ্র কুমাকে। পুরনো বন্ধু কেদারনাথের সহযোগিতায় একসময় তাকে পেয়েও যান। অসুস্থ চন্দ্রকুমারের চিকিৎসার ভার নিজেই বহন করলেন। সুস্থ হয়ে উঠলে কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে লাগিয়ে দেন গাথা সংগ্রহের কাজে।
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ার চন্দ্রকুমারের অবদানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন মৈমনসিংহ গীতিকার ভূমিকায় বলেন, ‘কি কষ্টে যে এই সবাই পল্লীগাথা তিনি সংগ্রহ করিয়াছেন তাহা তিনি ও তাহার ভগবানই জানেন এবং কতক আমি জানিয়াছি। এই সব গান অধিকাংশ চাষাদের রচনা। এইগুলোর অনেক পালা কখনই লিপিবদ্ধ হয় নাই। পূর্বে যেমন প্রতি বঙ্গপল্লীতে কুন্দ ও গন্ধরাজ ফুটিত, বিল ও পুষ্করিণীতে পদ্ম ও কুমুদের কুঁড়ি বায়ুর সঙ্গে তাল রাখিয়া দুলিত- এই সবাই গানও তেমনই লোকের ঘরে ঘরে নিরবধি শোনা যাইত ও তাহদের তানে সরল কৃষকপ্রাণ তন্ময় হইয়া যাইত।’
ধারণা করা হয় চন্দ্রকুমারের সহযোগিতা না থাকলে হয়তো গাথাগুলো সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়তো। দুঃখ, কষ্ট, নানা দৈন্য দশার সঙ্গে লড়াই করে তিনি সাহিত্যচর্চা করে গেছেন। যার সহযোগিতা না থাকলে কালের আবর্তে হয়তো গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পালাগানগুলো অনেক আগেই হারিয়ে যেত।
অনেকে পালাগুলোকে পূর্ববাংলার অশিক্ষিত চাষা-ভুষাদের মাথামুণ্ডু বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন; কিন্তু দীনেশচন্দ্র সেন হাল ছেড়ে দেননি। তিনি চাষা-ভুষাদের রচিত এসব কাব্যকথার মাঝেই সাহিত্যের আসল সৌন্দর্য উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন। যে কথা উঠে উঠেছে তার নিজ মুখে, ‘কেহ কেহ ইংরেজি শিক্ষার দর্পে উপেক্ষা করিয়া বলিলেন, ‘ছোটলোকেরা, বিশেষত, মুসলমানেরা, ওই সবাই মাথামু-ু গাহিয়া যায়, আর শত শত চাষা লাঙ্গলের উপর বাহুভর করিয়া দাঁড়াইয়া শোনে। ওই গানগুলোর মধ্যে এমন কি থাকিতে পারে যে শিক্ষিত সমাজ তৎপ্রতি আকৃষ্ট হইতে পারেন? আপনি এই ছেঁড়া পুঁথি ঘাঁটা দিন কয়েকের জন্য ছাড়িয়া দিন।’
ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত এসব বুদ্ধিজীবীদের আহবানে দীনেশচন্দ্র সেন বরং সাড়া দেননি। তিনি বরাবরই ছিলেন উপনিবেশবাদী চিন্তাধারার বিপক্ষে।
গীতিকাটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে দীনেশচন্দ্র সেন আরো বলেন, ‘পালাগানের অধিকাংশই পূর্ব-মৈমনসিংহের কোন কোন যথার্থ ঘটনা অবলম্বন করিয়া রচিত হইয়াছে। যে সবাই ঘটনা অশ্রুসিক্ত হইয়া লোকেরা শুনিয়াছে, যে সবাই অবাধ ও অপ্রতিহত অত্যাচার যমের দুর্জয় চক্রের ন্যায় সরল নিরীহ প্রাণকে পিষিয়া চলিয়া গিয়াছে- সেই সবাই অপরুপ করুণ কথা গ্রাম্য কবিরা পয়ারে গাঁথিয়া রাখিয়াছেন। তাহারা ছন্দের- শব্দৈশ^র্যের কাঙাল হইতে পারেন, তাহারা হয়ত বড় বড় তালমানের সন্ধান জানিতেন না, কিন্তু তাহাদের হৃদয় অফুরন্ত কারুণ্য ও কবিত্বের উৎসস্বরূপ ছিল। যাহারা লিখিয়াছিলেন, তাহাদের অশ্রু ফুরাইয়া গিয়াছে, কিন্তু এই সবাই কাহিনীর শ্রোতাদের অশ্রু কখনও ফুরাইবে বলিয়া মনে হয় না।’
ড. দীনেশচন্দ্র সেন বাংলা লোকসাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় নাম। ১৮৬৬ সালে ৩ নভেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তার পৈতৃক নিবাস ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর গ্রামে। সিলেটের হবিগঞ্জের এক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে প্রাচীন বাংলার পুঁথি সংগ্রহ করেন এবং সেসব উপকরণের সাহায্যে ১৮৯৬ এ ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ শিরোনামে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করেন। ১৯১১ সালে তার সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘হিস্ট্রি অব বেঙ্গলি লিটারেচার’ প্রকাশিত হলে তা সর্বমহলের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ^বিদ্যালয় তাকে ‘রামতনু লাহিড়ী রিসার্চ ফেলোশিপ’ প্রদান করে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা সম্পাদনা করেন।
১৯২৩ সালে দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন মৈমনসিংহ গীতকা বইটি প্রকাশিত হয়, এ গীতিকার পালাগুলো ইউরোপ, আমেরিকাসহ ভারতবর্ষের সাহিত্য সুধীজনের মাঝে ব্যাপক সমাদৃত হতে থাকে। অজোপাড়া গায়ের মানুষরা যে এত সুন্দর শিল্প সৃষ্টি করতে পারে অনেকে তা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
কোন কোন পালাকে তো ইউরোপের জ্ঞানী গুণীরা জনপ্রিয় সাহিত্যগুলোর সঙ্গে তুলনা করেন। গীতিকার মূল্যায়নে ড. আশরাফ সিদ্দিকীর বর্ণনায় উঠে এসেছে সে কথা, ‘ইউরোপের মধ্যযুগীয় রোমান্স ‘ট্রিস্টান ও ইসল্ট’ এবং ‘অকাসিন ও নিকোলেটের’ অমর প্রেমের কাহিনী আজ পৃথিবীর সবাই সাহিত্য-রসিকের কাছেই সুপরিচিত। তাদের অবিস্মরণীয় প্রেমের উৎস থেকে, যুগে যুগে সাহিত্যকগণ পেয়েছেন প্রেরণা-প্রেমিক পেয়েছেন শান্তি।
আমাদের মৈমনসিংহ গীতিকার ‘মহুয়া’ পালাটির ইংরেজি অনুবাদ পড়ে ইউরোপের বহু জ্ঞানী-গুণী প-িতও পালাটির সঙ্গে উপরে বর্ণিত ইউরোপীয় কাহিনী দুটির তুলনা করেছেন।’
১৯২৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার মৈমনসিংহে গিয়েছিলেন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমার গান দিয়ে শুরু করতে হবে তা কেন, দীনেশচন্দ্রের পালাগান অপূর্ব। মৈমনসিংহ থেকে যে সবাই পালাগান সংগ্রহ হয়েছে তাতে সহজেই বেজে উঠছে বিশ^ সাহিত্যের সুর, মানুষের চিরকালের সুখ-দুঃখের প্রেরণায় লেখা সেই গাথা। মৈমনসিংহ গীতিকার কাল নির্ণয় চলে না। ওটা আবহমান কালের- যার মধ্যে একটা আশ্চর্য কবিত্ব আছে। আমি এসেছি সেই গান শুনতে, সেই দৃশ্য অবলোকন করতে। মৈমনসিংহ গীতিকার মহুয়া পালা আমার খুব প্রিয়।’
রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ^সাহিত্যের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের প্রশংসা পেয়েছে এ গীতিকা। একশো বছর পরেও শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে গীতিকাটি।
অনেকে পালাগুলোকে পূর্ববাংলার অশিক্ষিত চাষা-ভুষাদের মাথামুণ্ডু বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন; কিন্তু দীনেশচন্দ্র সেন হাল ছেড়ে দেননি। তিনি চাষা-ভুষাদের রচিত এসব কাব্যকথার মাঝেই সাহিত্যের আসল সৌন্দর্য উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন
নায়িকা প্রধান এসব উপাখ্যানের প্রতিটি পালাতেই ফুটে উঠেছে চিরন্তন প্রেমের রোমান্টিকতা। মহুয়া, চন্দ্রাবতী, মলুয়া, কাজল রেখাসহ প্রত্যেকটি গীতিকায় জীবন স্পর্শ করা অমর প্রেম ও আত্মত্যাগ হৃদয় ছুঁয়ে যাবে সবাইর। আশরাফ সিদ্দিকীর ভাষায়, ‘সমগ্র পালাগুলোর মধ্যেই দেখা যাবে নারীদের অপূর্ব সতীত্বের চিত্র। বনের পুষ্পের মতোই বিভিন্ন বিপর্যয় ও ঝড়ের মধ্যেও তারা যেন আপন সৌন্দর্যে বারবার মূর্ত হয়ে উঠেছে- কোনো প্রলোভনই তাদের বিপথগামী করতে পারে না। লোক-সাহিত্যের চিরাচরিত নিয়ম অনুসারে বহু ছড়াও পালাগুলোতে অনুপ্রবেশ করেছেÑ মেওয়া মিশ্রি সবাই মিঠা, মিঠা গঙ্গার জল/তার থাক্যা মিঠা দেখ শীতল ডাবের জল/অথবাÑ আমার বাড়ি যাইওরে বন্ধু বইতে দিয়াম পিড়া/জল পান করিতে দিয়াম শালি ধানের চিড়া/শালি ধানের চিড়া দিয়াম আরও শবরী কালা/ঘরে আছে মইষের দই রে, বন্ধু খাইবা তিনো বেলা- ইত্যাদি ইত্যাদি। একইভাবে ‘মলুয়া’ ‘চন্দ্রাবতী’, ‘রুপবতী’, ‘লীলা ও কঙ্ক’ প্রভৃতি পালাগুলোতেও নারী চরিত্রগুলোই প্রধান। মনে হয় সমগ্র কাহিনীর যেন কেন্দ্রবিন্দু-তাদের অবলম্বন করেই যেন সবকিছু আবর্তিত হচ্ছে।
সাহিত্যে নারীর অবস্থান সেই সুদূর প্রাচীনকাল থেকে। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় নারীর সরব উপস্থিতিও যেন চোখে পড়ার মতো। আশরাফ সিদ্দিকীর কথায় বরং সেটি আরো স্পষ্ট, ‘আমাদের পূর্ব ময়মনসিংহ গীতিকার কাহিনীগুলোর প্রতœতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলে তাদের মধ্যে এসব প্রাচীন সমাজের বহু বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যাবে। ইচ্ছামতো বর গ্রহণ, বয়সকালে বিবাহ, স্বাধীন প্রেম-ইত্যাদি সবই মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য। এই সঙ্গে মনে রাখতে হবে ময়মনসিংহের পূর্বাঞ্চল কামরুপ কামাখ্যার-প্রাগজ্যেতিষপুরেরও অংশ ছিল- যেখানে মাতৃতান্ত্রিকতাই ছিল সামাজিক রীতি। স্বাধীন প্রেম অর্থ যে উচ্ছৃঙ্খলতা নয়, তা বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন। মাতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রেম অরণ্য-পুষ্পের মতোই পবিত্র। নাগরিক সভ্যতার কোনো ধুলি-বালি এই পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে না। সেখানে বিবাহের চেয়ে বড় হল প্রেম বা ‘সিলেকশন অব পার্টনার’। তাই দেখতে পাই মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রবতী, লীলা এই প্রেমের কাছে সবকিছু সমর্পণ করে দিয়েছে।’
হিন্দু মুসলমানের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মিলনের এক অকৃত্রিম রূপও ফুটে উঠেছে এ গীতিকায়। হিন্দু মুসলমান যে বহুকাল ধরে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চলছিল তারই অকাট্য প্রমাণ রেখে যান দীনেশবাবু, ‘মৈমনসিংহ গীতিকায় আমরা বাঙ্গালা ভাষার স্বরূপটি পাইতেছি। বহুশতাব্দীকাল পাশাপাশি বাস করার ফলে হিন্দু ও মুসলমানের ভাষা এক সাধারণ সম্পত্তি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইহা সমস্ত বঙ্গবাসীর ভাষা। এক্ষেত্রে জাতিভেদ নাই। এই মৈমনসিংহ গীতিকায় উর্দু উপাদান ততটা ঢুকিয়াছে, যতটা প্রকৃতপক্ষে এ দেশে আসিয়া বাঙ্গালা হইয়া গিয়াছে।’
[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক]