alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

দীপংকর মজুমদার

: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
image

কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কুন্ডুপাড়া গ্রামে বিখ্যাত মজুমদার পরিবারে অত্রষি বংশে মাতা কমলিনির কোলজুড়ে আর হলধর মজুমদারের পুত্র হয়ে ১৮৩৩ সালের ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার জন্মগ্রহণ করেন শ্রী হরিনাথ মজুমদার ওরফে কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার। তার জীবনকাল ছিল মাত্র ৬৩ বছর। এই অল্প সময়ে ৭২টি গ্রন্থ রচনা করেছেন; যার মধ্যে ৪২টি প্রকাশিত আর ৩০টি অপ্রকাশিত। ব্যবসা পরিচালনার জন্য স্থাপন করেছেন ছাপাখানা এম-এন প্রেস। সমাজ সংস্কার কল্পে ১১টি দল ও ৮টি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। ডাকঘরে মানি অর্ডার প্রচলনের প্রস্তাব নিজ সম্পাদিত গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা পত্রিকায় ছেপেছেন। ক্ষুধা ও লজ্জা নিবারণের জন্য অন্যের দোকানে কাজ করতেও দ্বিধা করেননি। তিনি নিজে লেখাপড়া না জানলেও স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নারী শিক্ষার দীপ জ্বালাতে ১৮৫৭ সালের ১৩ জানুয়ারি নিজ চন্ডিম-পে প্রতিষ্ঠা করলেন কুমারখালী বালিকা বিদ্যালয়; যা আজও কুমারখালীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

স্ব-শিক্ষিত কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ছোটবেলা থেকে প্রবল ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেখার; কিন্তু অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ও পিতৃ-মাতৃহীন থাকায় তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন হয়ে ওঠেনি। তবুও তিনি নিজ চেষ্টায় বই-পুস্তক ভিক্ষা করে কখনো-কখনো সতীর্থদের কাছ থেকে বই ধার করে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের অভাব মেটাতেন। কাঙ্গাল হরিনাথের ভাষা শিক্ষার জন্য কবি ঈশ্বর গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ (১৮১২-১৮৫৯) পত্রের ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজ চেষ্টায় কুমারখালীতে ১৮৫৪ সালে বাংলা পাঠশালা স্থাপন করে। পরে ১৮৫৭ সালে নারী শিক্ষায় নিজ চন্ডিম-পে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করে। প্রথমে তার কোন বেতন ছিলনা, বিদ্যালয়ের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পরলে উড্ডো মাটিন প্রমুখ বিদ্যালয় পরিদর্শকের বিশেষ সুপারিশের কারণে হরিনাথ বেতন গ্রহণ করেন।

সেই সময় জমিদার মহাজন, নীলকর, গোড়াপল্টন আমলাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ, তখন কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার নিঃস্ব-নিরক্ষর গ্রামবাসীদের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-দুর্দশা নিরসন এবং আমলাদের বর্বরোচিত নির্যাতনের কাহিনীর সংবাদ ও প্রতিকার করবার জন্য ১৮৬৩ সালে গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করে। সেই সময় অখ্যাত মফস্বল পল্লী কুমারখালী থেকে পত্রিকা প্রকাশ একটি অসাধারণ ঘটনা। শিলাইদহ, শাহাজাদপুর এস্টেটে ঠাকুর জমিদারদের প্রজাপীড়ন ও শোষণ এবং প্রজাপালনের ব্যর্থতার কাহিনী গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকায় বহুবার প্রকাশ হলেও অজানা কারণে সেই সব ছাপানো পত্রিকা ওই সময়ই হারিয়ে যেত। তখনকার পায়ে হাঁটার যুগে তিনি সংবাদ সংগ্রহের জন্য গ্রমের পর গ্রাম ঘুরতেন, তাই তিনি গ্রামীণ সাংবাদিকতার জনক হিসেবে খ্যাত।

কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যায়Ñ তিনি অসংখ্য কাহিনী, উপন্যাস এবং ধর্মতত্ত্বসহ বহুবিধ বিষয়াদি নিয়ে লেখালেখি করেছেন। বাংলার প্রথম উপন্যাস বলে পরিচিত ‘আলালের ঘরের দুলাল’ যখন রচিত হয়, তার অনেক আগেই কাঙ্গাল হরিনাথের ‘বিজয় বসন্ত’ লেখা হয় সুদূর মফস্বল শহর থেকে; যার ফলে বাংলার প্রথম উপন্যাস নিয়ে সঠিক তথ্যটি আজও অসংখ্য মানুষের অজানা রয়ে গেছে। শিবনাথশাস্ত্রী (১৮৪৭-১৯১৯) মন্তব্য করেছেন, কুমারখালীর হরিনাথ মজুমদারের প্রণীত ‘বিজয় বসন্ত’ ও টেকচাঁদ ঠাকুরের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ বাংলার প্রথম উপন্যাস। এর মধ্যে ‘বিজয় বসন্ত’ তৎকালে প্রচলিত বিশুদ্ধ সংস্কৃতবহুল বাংলাতে লিখিত। কাঙ্গাল হরিনাথের ভাগ্য এমন হওয়া উচিত ছিল যে, বাংলার আরও অনেক সাহিত্যিক যেমনভাবে বাংলার সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খচিত হয়ে আছেন, তেমনিভাবে তার জীবনটা এমন প্রাপ্ততাই পরিপূর্ণ হওয়া।

কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার ১৩০৩ সনের ৫ বৈশাখ (১৮৯৬ সালের ১৮ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন।

[লেখক : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের পঞ্চম বংশধর, কাঙ্গাল কুটির, কুমারখালী, কুষ্টিয়া]

অনিয়ন্ত্রিত অটোরিকশা ও সড়ক দুর্ঘটনা

অপরিকল্পিত ভ্যাট ও কর বৃদ্ধি

ছবি

‘বেগমপাড়া’ হইতে খোলা চিঠি

সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানবে কে

মকর সংক্রান্তি : বাঙালির উৎসব ও ঐতিহ্যের ধারক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : অপসংস্কৃতি ও নৈতিক প্রশ্ন

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কূটতর্ক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

রজিনাদের বেঁচে থাকার লড়াই

মানব পাচার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা

সংবিধান সংশোধন : আমাদের বলার আছে

চিন্তা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা

গ্রাম উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা

‘দেশজ নাট্যশৈলী’র কেন্দ্রীয় নাট্যআঙ্গিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ও কিছু প্রশ্ন

রাখাইন পরিস্থিতি : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বড় পরীক্ষা

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব

রম্যগদ্য : নিশুতিরাতের আগন্তুক

গুরু রবিদাস জির কথা

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জন্য অশনিসংকেত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

কোথায় নাই কোটা?

ছবি

ও আমার স্বপ্ন ঝরা আকুল করা জন্মভূমি

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

দীপংকর মজুমদার

image

কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কুন্ডুপাড়া গ্রামে বিখ্যাত মজুমদার পরিবারে অত্রষি বংশে মাতা কমলিনির কোলজুড়ে আর হলধর মজুমদারের পুত্র হয়ে ১৮৩৩ সালের ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার জন্মগ্রহণ করেন শ্রী হরিনাথ মজুমদার ওরফে কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার। তার জীবনকাল ছিল মাত্র ৬৩ বছর। এই অল্প সময়ে ৭২টি গ্রন্থ রচনা করেছেন; যার মধ্যে ৪২টি প্রকাশিত আর ৩০টি অপ্রকাশিত। ব্যবসা পরিচালনার জন্য স্থাপন করেছেন ছাপাখানা এম-এন প্রেস। সমাজ সংস্কার কল্পে ১১টি দল ও ৮টি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। ডাকঘরে মানি অর্ডার প্রচলনের প্রস্তাব নিজ সম্পাদিত গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা পত্রিকায় ছেপেছেন। ক্ষুধা ও লজ্জা নিবারণের জন্য অন্যের দোকানে কাজ করতেও দ্বিধা করেননি। তিনি নিজে লেখাপড়া না জানলেও স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নারী শিক্ষার দীপ জ্বালাতে ১৮৫৭ সালের ১৩ জানুয়ারি নিজ চন্ডিম-পে প্রতিষ্ঠা করলেন কুমারখালী বালিকা বিদ্যালয়; যা আজও কুমারখালীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

স্ব-শিক্ষিত কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ছোটবেলা থেকে প্রবল ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেখার; কিন্তু অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ও পিতৃ-মাতৃহীন থাকায় তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন হয়ে ওঠেনি। তবুও তিনি নিজ চেষ্টায় বই-পুস্তক ভিক্ষা করে কখনো-কখনো সতীর্থদের কাছ থেকে বই ধার করে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের অভাব মেটাতেন। কাঙ্গাল হরিনাথের ভাষা শিক্ষার জন্য কবি ঈশ্বর গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ (১৮১২-১৮৫৯) পত্রের ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজ চেষ্টায় কুমারখালীতে ১৮৫৪ সালে বাংলা পাঠশালা স্থাপন করে। পরে ১৮৫৭ সালে নারী শিক্ষায় নিজ চন্ডিম-পে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করে। প্রথমে তার কোন বেতন ছিলনা, বিদ্যালয়ের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পরলে উড্ডো মাটিন প্রমুখ বিদ্যালয় পরিদর্শকের বিশেষ সুপারিশের কারণে হরিনাথ বেতন গ্রহণ করেন।

সেই সময় জমিদার মহাজন, নীলকর, গোড়াপল্টন আমলাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ, তখন কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার নিঃস্ব-নিরক্ষর গ্রামবাসীদের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-দুর্দশা নিরসন এবং আমলাদের বর্বরোচিত নির্যাতনের কাহিনীর সংবাদ ও প্রতিকার করবার জন্য ১৮৬৩ সালে গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করে। সেই সময় অখ্যাত মফস্বল পল্লী কুমারখালী থেকে পত্রিকা প্রকাশ একটি অসাধারণ ঘটনা। শিলাইদহ, শাহাজাদপুর এস্টেটে ঠাকুর জমিদারদের প্রজাপীড়ন ও শোষণ এবং প্রজাপালনের ব্যর্থতার কাহিনী গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকায় বহুবার প্রকাশ হলেও অজানা কারণে সেই সব ছাপানো পত্রিকা ওই সময়ই হারিয়ে যেত। তখনকার পায়ে হাঁটার যুগে তিনি সংবাদ সংগ্রহের জন্য গ্রমের পর গ্রাম ঘুরতেন, তাই তিনি গ্রামীণ সাংবাদিকতার জনক হিসেবে খ্যাত।

কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যায়Ñ তিনি অসংখ্য কাহিনী, উপন্যাস এবং ধর্মতত্ত্বসহ বহুবিধ বিষয়াদি নিয়ে লেখালেখি করেছেন। বাংলার প্রথম উপন্যাস বলে পরিচিত ‘আলালের ঘরের দুলাল’ যখন রচিত হয়, তার অনেক আগেই কাঙ্গাল হরিনাথের ‘বিজয় বসন্ত’ লেখা হয় সুদূর মফস্বল শহর থেকে; যার ফলে বাংলার প্রথম উপন্যাস নিয়ে সঠিক তথ্যটি আজও অসংখ্য মানুষের অজানা রয়ে গেছে। শিবনাথশাস্ত্রী (১৮৪৭-১৯১৯) মন্তব্য করেছেন, কুমারখালীর হরিনাথ মজুমদারের প্রণীত ‘বিজয় বসন্ত’ ও টেকচাঁদ ঠাকুরের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ বাংলার প্রথম উপন্যাস। এর মধ্যে ‘বিজয় বসন্ত’ তৎকালে প্রচলিত বিশুদ্ধ সংস্কৃতবহুল বাংলাতে লিখিত। কাঙ্গাল হরিনাথের ভাগ্য এমন হওয়া উচিত ছিল যে, বাংলার আরও অনেক সাহিত্যিক যেমনভাবে বাংলার সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খচিত হয়ে আছেন, তেমনিভাবে তার জীবনটা এমন প্রাপ্ততাই পরিপূর্ণ হওয়া।

কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার ১৩০৩ সনের ৫ বৈশাখ (১৮৯৬ সালের ১৮ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন।

[লেখক : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের পঞ্চম বংশধর, কাঙ্গাল কুটির, কুমারখালী, কুষ্টিয়া]

back to top