মিথুশিলাক মুরমু
আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী ও উচ্চশিক্ষার্থে উদ্বুদ্ধকরণে সরকার নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শহর থেকে মফস্বল সর্বত্র ছেলেমেয়েকে সম্পৃক্ত করতে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনের তৎপরতা সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণের কর্মউদ্যোগ বেশ চোখে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ‘সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনমান উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি’ আওতায় ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সূচিত হয় সমতলের আদিবাসীদের বাসস্থান, শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ, ছাত্রীদের জন্য সাইকেল বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের আয়বর্ধক কর্মসূচির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ রয়েছে, সেক্ষেত্রে সমতলের আদিবাসীদের সামগ্রিক উন্নয়নের দায়িত্বভার কাঁধে নিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। দেশে আদিবাসীদের শিক্ষার হার অপেক্ষাকৃত কম। পিছিয়েপড়া ও প্রান্তিক আদিবাসীদের উন্নয়নের মহাসড়কে সামিল করতে সরকারের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। মাগুরা, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নাটোর, সাতক্ষীরা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, শেরপুরসহ সব জেলাতেই আদিবাসীদের কমবেশি উপস্থিতি রয়েছে। শিক্ষার প্রতি ঝোঁক, আগ্রহ এবং জীবনকে সুন্দর ও আকৃষ্ট করতে সরকার আদিবাসী শিক্ষার্থীদের প্রতি মনোযোগী হয়েছে। আদিবাসী শিশুরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে, দেশের আদর্শ নাগরিক ও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে। দারিদ্র্যতার কঠিন চ্যালেঞ্জকে জয় করার মানসে সরকার শিক্ষার আলোকে প্রজ্বালিত এবং শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করতেই বিশেষ সহায়তা প্রদান চলমান রয়েছে। বরাবরই মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে, আদিবাসী মেয়েরা সেক্ষেত্রে যোজন যোজন দূরত্বে। প্রধানমন্ত্রী মেয়েদের জন্য যাতায়াত সহজকরণ ও শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলতে বৃত্তির পাশাপাশি সাইকেল তুলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের আওতা থেকে বাইসাইকেল, শিক্ষা উপকরণ (বই, খাতা, কলম, স্কুলব্যাগ, ছাতা, সংস্কৃতিক, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া উপকরণসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ) বিতরণ করা হয়। এছাড়াও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রত্যেককে বাৎসরিক ২৪০০ টাকা, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ৬০০০ টাকা এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৯ হাজার পাঁচশত টাকা প্রদান করা হয়।
আবার প্রতিবছর উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ঢাকাস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসে এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাবৃত্তি অর্থ/ চেক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে থাকেন। সরকার প্রধানের সান্নিধ্য পেয়ে গ্রাম-গঞ্জের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মনোবল ফিরে পান, নতুন করে শিক্ষা গ্রহণে উদ্যোমী হয়ে ওঠেন। এটি শুধু শিক্ষাবৃত্তি নয়, এটি একটি মনোজগত
পরিবর্তনের মাধ্যমও।
প্রধানমন্ত্রী চান যে, কেউ যেন কোনো বৈষম্যের শিকার না হয়। বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশে সকল ধর্ম ও বর্ণের সকল মানুষরা সমান অধিকার ও সুযোগ-সবিধা পাবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে তারই বাণী, ‘যখন আমরা উন্নয়নের কথা বলি তখন আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথাই বলি।’ দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি, আদিবাসীদের উন্নয়নে আগামীতেও এই মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই।
আমরা কাছ থেকে দেখেছি, শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ, সাইকেল ইত্যাদি প্রদানকালে স্থানীয় সাংসদ, মাননীয় মন্ত্রী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আদিবাসী নেতৃবন্দকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে। একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে সরকার প্রধানের দেওয়া উপহার পেয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে উচ্ছ্বলতা স্বাভাবিক। শিশু মনে একজন সাংসদ, মন্ত্রী কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সান্নিধ্যতা পেয়ে সত্যিই চমৎকৃত হয়ে থাকে। এখান থেকে স্বপ্নের বীজ রোপিত হয়ে থাকে, তাইতো কখনো কখনো আদিবাসী ছেলেমেয়েদের সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করতে দেখেছি।
সরকারের সহৃদয়তায় আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি প্রবল জোয়ার লক্ষ্যণীয় হচ্ছে কিন্তু সেটি একটি সুনির্দিষ্ট গ-ি পর্যন্তই। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সীমানা অতিক্রম করার পরই আদিবাসী শিক্ষার্থীরা খেই হারিয়ে ফেলে, অনেক সময় মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ প্রাপ্তিতে বিঘœ হলে বিপত্তির শুরু হয়। আদিবাসীদের শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা সুবিধাদি থাকলেও সেটি করায়ত্ব করে থাকে প্রভাবশালী কিংবা দলীয় শিক্ষার্থীরা।
গত বছরের মতো এবারো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। আদিবাসী কোটায় সাদিয়া আক্তার রাইসা, তাহুরা তানজিনা নিশাত, সিদরাতুল মুনতাহা, বৈশাখী দে নদী, তাসনুবা আসমিতা কাহন, আফরা জান্নাত সামিয়া, শাহারিয়ার হাসান শেখ, সামিয়া আলম বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ভর্তির তালিকায় নাম পাওয়া যায়। এই তালিকা নিয়ে হৈ চৈ শুরু হলে কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে উঠেছেন কিন্তু কর্ণকুম্ভের ঘুম ভাঙেনি। তারপরও উত্তরবঙ্গের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
একই চিত্র বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়ে থাকে। বিশ^বিদ্যালয় এখন আদিবাসীদের কাছাকাছিতেই রয়েছে, সুযোগ থাকলেও তারা কোনো এক হাতের ইশারায় বঞ্চিতের তালিকায় তালিকাভুক্ত হচ্ছে। আর এখানেই উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা; সুযোগ বঞ্চিত আদিবাসী ছেলেমেয়েরা কোটি মানুষের ভীড়ে এক সময় হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যশা হচ্ছে, সরকার ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে বৃত্তি প্রদান করে পর্যায়ক্রমে উঠে আসার পথকে সুগম করেছে; তাহলে কেন মেডিকেল, বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সুবিধাদি প্রদান করবে না! আদিবাসী ছেলেমেয়েদের একটি বৃহদাংশই প্রথম প্রজন্ম মেডিকেল কিংবা বিশ^বিদ্যালয়গুলোর দ্বারে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা করে; দারিদ্র্যতাকে পেছনে ফেলে এগুনোর পথে প্রভাবশালীদের, দলীয় নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গির দৈন্যতা আমাদেরকে হতাশ করে তোলে। কাউকে পেছনে ফেলে উন্নয়ন নয়, প্রয়োজন সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে সমানতালে এগিয়ে যাওয়া। আদিবাসীদের উচ্চশিক্ষা কিংবা প্রফেশনাল শিক্ষার ক্ষেত্রে উপস্থিতির হার হাতে গোনা, এদিকগুলোতে সরকারের সুজনর দেওয়া আবশ্যিক। গণতান্ত্রিক সরকার আদিবাসীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার যে জাগরণ সৃষ্টি করতে সামর্থ্য হয়েছে, উচ্চশিক্ষা কিংবা প্রফেসনাল শিক্ষাতেও বিপ্লব ঘটানো দরকার। আর তা না হলে গোড়ায় পানি ঢেলে আগা ছেঁটে দেওয়ার মতোই হচ্ছে বৈকি!
[লেখক : কলামিস্ট]
 
                                         
                                         ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            মিথুশিলাক মুরমু
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী ও উচ্চশিক্ষার্থে উদ্বুদ্ধকরণে সরকার নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শহর থেকে মফস্বল সর্বত্র ছেলেমেয়েকে সম্পৃক্ত করতে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনের তৎপরতা সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণের কর্মউদ্যোগ বেশ চোখে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ‘সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনমান উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি’ আওতায় ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সূচিত হয় সমতলের আদিবাসীদের বাসস্থান, শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ, ছাত্রীদের জন্য সাইকেল বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের আয়বর্ধক কর্মসূচির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ রয়েছে, সেক্ষেত্রে সমতলের আদিবাসীদের সামগ্রিক উন্নয়নের দায়িত্বভার কাঁধে নিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। দেশে আদিবাসীদের শিক্ষার হার অপেক্ষাকৃত কম। পিছিয়েপড়া ও প্রান্তিক আদিবাসীদের উন্নয়নের মহাসড়কে সামিল করতে সরকারের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। মাগুরা, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নাটোর, সাতক্ষীরা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, শেরপুরসহ সব জেলাতেই আদিবাসীদের কমবেশি উপস্থিতি রয়েছে। শিক্ষার প্রতি ঝোঁক, আগ্রহ এবং জীবনকে সুন্দর ও আকৃষ্ট করতে সরকার আদিবাসী শিক্ষার্থীদের প্রতি মনোযোগী হয়েছে। আদিবাসী শিশুরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে, দেশের আদর্শ নাগরিক ও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে। দারিদ্র্যতার কঠিন চ্যালেঞ্জকে জয় করার মানসে সরকার শিক্ষার আলোকে প্রজ্বালিত এবং শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করতেই বিশেষ সহায়তা প্রদান চলমান রয়েছে। বরাবরই মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে, আদিবাসী মেয়েরা সেক্ষেত্রে যোজন যোজন দূরত্বে। প্রধানমন্ত্রী মেয়েদের জন্য যাতায়াত সহজকরণ ও শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলতে বৃত্তির পাশাপাশি সাইকেল তুলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের আওতা থেকে বাইসাইকেল, শিক্ষা উপকরণ (বই, খাতা, কলম, স্কুলব্যাগ, ছাতা, সংস্কৃতিক, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া উপকরণসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ) বিতরণ করা হয়। এছাড়াও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রত্যেককে বাৎসরিক ২৪০০ টাকা, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ৬০০০ টাকা এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৯ হাজার পাঁচশত টাকা প্রদান করা হয়।
আবার প্রতিবছর উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ঢাকাস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসে এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাবৃত্তি অর্থ/ চেক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে থাকেন। সরকার প্রধানের সান্নিধ্য পেয়ে গ্রাম-গঞ্জের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মনোবল ফিরে পান, নতুন করে শিক্ষা গ্রহণে উদ্যোমী হয়ে ওঠেন। এটি শুধু শিক্ষাবৃত্তি নয়, এটি একটি মনোজগত
পরিবর্তনের মাধ্যমও।
প্রধানমন্ত্রী চান যে, কেউ যেন কোনো বৈষম্যের শিকার না হয়। বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশে সকল ধর্ম ও বর্ণের সকল মানুষরা সমান অধিকার ও সুযোগ-সবিধা পাবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে তারই বাণী, ‘যখন আমরা উন্নয়নের কথা বলি তখন আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথাই বলি।’ দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি, আদিবাসীদের উন্নয়নে আগামীতেও এই মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই।
আমরা কাছ থেকে দেখেছি, শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ, সাইকেল ইত্যাদি প্রদানকালে স্থানীয় সাংসদ, মাননীয় মন্ত্রী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আদিবাসী নেতৃবন্দকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে। একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে সরকার প্রধানের দেওয়া উপহার পেয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে উচ্ছ্বলতা স্বাভাবিক। শিশু মনে একজন সাংসদ, মন্ত্রী কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সান্নিধ্যতা পেয়ে সত্যিই চমৎকৃত হয়ে থাকে। এখান থেকে স্বপ্নের বীজ রোপিত হয়ে থাকে, তাইতো কখনো কখনো আদিবাসী ছেলেমেয়েদের সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করতে দেখেছি।
সরকারের সহৃদয়তায় আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি প্রবল জোয়ার লক্ষ্যণীয় হচ্ছে কিন্তু সেটি একটি সুনির্দিষ্ট গ-ি পর্যন্তই। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সীমানা অতিক্রম করার পরই আদিবাসী শিক্ষার্থীরা খেই হারিয়ে ফেলে, অনেক সময় মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ প্রাপ্তিতে বিঘœ হলে বিপত্তির শুরু হয়। আদিবাসীদের শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা সুবিধাদি থাকলেও সেটি করায়ত্ব করে থাকে প্রভাবশালী কিংবা দলীয় শিক্ষার্থীরা।
গত বছরের মতো এবারো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। আদিবাসী কোটায় সাদিয়া আক্তার রাইসা, তাহুরা তানজিনা নিশাত, সিদরাতুল মুনতাহা, বৈশাখী দে নদী, তাসনুবা আসমিতা কাহন, আফরা জান্নাত সামিয়া, শাহারিয়ার হাসান শেখ, সামিয়া আলম বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ভর্তির তালিকায় নাম পাওয়া যায়। এই তালিকা নিয়ে হৈ চৈ শুরু হলে কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে উঠেছেন কিন্তু কর্ণকুম্ভের ঘুম ভাঙেনি। তারপরও উত্তরবঙ্গের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
একই চিত্র বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়ে থাকে। বিশ^বিদ্যালয় এখন আদিবাসীদের কাছাকাছিতেই রয়েছে, সুযোগ থাকলেও তারা কোনো এক হাতের ইশারায় বঞ্চিতের তালিকায় তালিকাভুক্ত হচ্ছে। আর এখানেই উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা; সুযোগ বঞ্চিত আদিবাসী ছেলেমেয়েরা কোটি মানুষের ভীড়ে এক সময় হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যশা হচ্ছে, সরকার ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে বৃত্তি প্রদান করে পর্যায়ক্রমে উঠে আসার পথকে সুগম করেছে; তাহলে কেন মেডিকেল, বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সুবিধাদি প্রদান করবে না! আদিবাসী ছেলেমেয়েদের একটি বৃহদাংশই প্রথম প্রজন্ম মেডিকেল কিংবা বিশ^বিদ্যালয়গুলোর দ্বারে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা করে; দারিদ্র্যতাকে পেছনে ফেলে এগুনোর পথে প্রভাবশালীদের, দলীয় নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গির দৈন্যতা আমাদেরকে হতাশ করে তোলে। কাউকে পেছনে ফেলে উন্নয়ন নয়, প্রয়োজন সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে সমানতালে এগিয়ে যাওয়া। আদিবাসীদের উচ্চশিক্ষা কিংবা প্রফেশনাল শিক্ষার ক্ষেত্রে উপস্থিতির হার হাতে গোনা, এদিকগুলোতে সরকারের সুজনর দেওয়া আবশ্যিক। গণতান্ত্রিক সরকার আদিবাসীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার যে জাগরণ সৃষ্টি করতে সামর্থ্য হয়েছে, উচ্চশিক্ষা কিংবা প্রফেসনাল শিক্ষাতেও বিপ্লব ঘটানো দরকার। আর তা না হলে গোড়ায় পানি ঢেলে আগা ছেঁটে দেওয়ার মতোই হচ্ছে বৈকি!
[লেখক : কলামিস্ট]
