alt

উপ-সম্পাদকীয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

বাবুল রবিদাস

: মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪

বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। বর্ষার সময় সাপ গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। এ সময় সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে- বিশ্বে প্রতি বছর সাপের কামড়ে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে।

সাপের কামড়ের শিকার বেশি হয় গ্রামের সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশে প্রতি বছরে সাপের কামড়ের শিকার হয় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন মানুষ। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বছরে মারা যায় ৬ হাজার ৪১ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সাপের ছোবলে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক।

সাপ বিষাক্ত হলেও তার দ্বারা অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন- জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ লাখ বেদে বসবাস করে, যাদের কাজই হলো সাপ ধরা ও সাপ দিয়ে খেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করা। সরকারি উদ্যোগ ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যদি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। তবে এই বেদে সম্প্রদায়ের ভাগ্য পরিবর্তনসহ তাদের জীবন ও জীবিকার স্থায়ী বন্দোবস্ত করা সম্ভব। বাংলাদেশে প্রায় ৭৯ প্রজাতির সাপ পাওয়ায় যায়, তার মধ্যে অবিষধর সাপের প্রজাতি ৫২, বিষধর প্রজাতি ২৭। বিষধর প্রজাতির মধ্যে ১২ প্রজাতি থাকে সমুদ্রে আর বাকি ১৫ প্রজাতি দেশের প্রতিটি স্থানে কম বেশি দেখা যায়।

অবিষাক্ত যে কোন প্রজাতির সাপকে দেখে মানুষ প্রচ- ভয় পায় এবং মানুষ উত্তেজিত হয়ে সাপকে মেরে ফেলে; যা মোটেই কাম্য নয়। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে সাপ নিধন দ-নীয় অপরাধ। কারণ সাপের বিষের সাহায্যে বাংলাদেশে হাতেগোনা দুই-একটি বড় ওষুধ কোম্পানি নিজস্ব উদ্যোগ সাপের বিষ সংগ্রহ করে তাদের রসায়ানাগারে প্রসেস করে ‘জীবন রক্ষাকারী’ ওষুধ তৈরি করছে। আবার দেশের সাপের বিষ বিদেশে গিয়ে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়ে বাংলাদেশ আমদানি করে আসছে।

সাপের প্রতি রুষ্ট না হয়ে তাদের প্রতিপালন, তাদের সংরক্ষণ, তাদের বংশ বৃদ্ধির জন্য ভালো গবেষণাগার তৈরি করে যতœশীল হওয়া আবশ্যক। যে সাপের বিষ হতে আমরা প্রতি বছর মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি, সেই ব্যবস্থা সরকারিভাবে নেয়া উচিত। সাপের বিষের প্রতিষেধক ওষুধ ‘অ্যন্টিভেনাম’ আমাদের বাংলাদেশের প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষণ রাখা আবশ্যক। যাতে গ্রামের লোকেরা সহজে পেতে পারে, বলে আশা করছি। তবে হতাশার বিষয় হলো সাপের বিষক্ষয়ের ওষুধ উপজেলা পর্যায়ে নেই।

সম্প্রতি পদ্মা পারের এলাকাগুলোতে রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ সাপ দেখে আতঙ্ক নয় সচেনতা প্রয়োজন। বর্ষাকালে সাপের আতঙ্ক বেড়ে যায় সত্যি কিন্তু দলিত বঞ্চিত, অসহায় দরিদ্র দিনমজুর শ্রমিক কৃষকরা সাপের কামড়ে বেশি শিকার হন। তারা আর্থিকভাবে ও সামাজিকভাবে খুবই দুর্বল। সাপের কামড়ে শিকার হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য।

বাঘ, হাতি, কুমির ও ভাল্লুকের আক্রমণে শিকার হলে বা কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা আছে কিন্তু সাপের কামড়ে হতাহত বা মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের কোন ব্যবস্থা নেই। অথচ বাংলাদেশে প্রতি বছর ৭,০০০ মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। আর সরীসৃপ এই প্রাণীর আক্রমণে শিকার হন ৪ লাখের বেশি মানুষ। তাই কৃষক-শ্রমিক, দিনমজুর ও দলিত ব্যক্তিদের পাশে শুভাকাক্সক্ষী, শুভানুধ্যায়ী, সমাজসেবক তথা আপামর জনগণ ও সরকার অ্যান্টিভেনাম ওষুধ তৃণমূল পর্যায়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।

[লেখক : আইনজীবী, জজকোর্ট, জয়পুরহাট]

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

প্রশিক্ষণ থেকে কেন বাদ নারী কৃষকরা?

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

বাবুল রবিদাস

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪

বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। বর্ষার সময় সাপ গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। এ সময় সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে- বিশ্বে প্রতি বছর সাপের কামড়ে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে।

সাপের কামড়ের শিকার বেশি হয় গ্রামের সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশে প্রতি বছরে সাপের কামড়ের শিকার হয় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন মানুষ। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বছরে মারা যায় ৬ হাজার ৪১ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সাপের ছোবলে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক।

সাপ বিষাক্ত হলেও তার দ্বারা অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন- জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ লাখ বেদে বসবাস করে, যাদের কাজই হলো সাপ ধরা ও সাপ দিয়ে খেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করা। সরকারি উদ্যোগ ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যদি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। তবে এই বেদে সম্প্রদায়ের ভাগ্য পরিবর্তনসহ তাদের জীবন ও জীবিকার স্থায়ী বন্দোবস্ত করা সম্ভব। বাংলাদেশে প্রায় ৭৯ প্রজাতির সাপ পাওয়ায় যায়, তার মধ্যে অবিষধর সাপের প্রজাতি ৫২, বিষধর প্রজাতি ২৭। বিষধর প্রজাতির মধ্যে ১২ প্রজাতি থাকে সমুদ্রে আর বাকি ১৫ প্রজাতি দেশের প্রতিটি স্থানে কম বেশি দেখা যায়।

অবিষাক্ত যে কোন প্রজাতির সাপকে দেখে মানুষ প্রচ- ভয় পায় এবং মানুষ উত্তেজিত হয়ে সাপকে মেরে ফেলে; যা মোটেই কাম্য নয়। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে সাপ নিধন দ-নীয় অপরাধ। কারণ সাপের বিষের সাহায্যে বাংলাদেশে হাতেগোনা দুই-একটি বড় ওষুধ কোম্পানি নিজস্ব উদ্যোগ সাপের বিষ সংগ্রহ করে তাদের রসায়ানাগারে প্রসেস করে ‘জীবন রক্ষাকারী’ ওষুধ তৈরি করছে। আবার দেশের সাপের বিষ বিদেশে গিয়ে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়ে বাংলাদেশ আমদানি করে আসছে।

সাপের প্রতি রুষ্ট না হয়ে তাদের প্রতিপালন, তাদের সংরক্ষণ, তাদের বংশ বৃদ্ধির জন্য ভালো গবেষণাগার তৈরি করে যতœশীল হওয়া আবশ্যক। যে সাপের বিষ হতে আমরা প্রতি বছর মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি, সেই ব্যবস্থা সরকারিভাবে নেয়া উচিত। সাপের বিষের প্রতিষেধক ওষুধ ‘অ্যন্টিভেনাম’ আমাদের বাংলাদেশের প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষণ রাখা আবশ্যক। যাতে গ্রামের লোকেরা সহজে পেতে পারে, বলে আশা করছি। তবে হতাশার বিষয় হলো সাপের বিষক্ষয়ের ওষুধ উপজেলা পর্যায়ে নেই।

সম্প্রতি পদ্মা পারের এলাকাগুলোতে রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ সাপ দেখে আতঙ্ক নয় সচেনতা প্রয়োজন। বর্ষাকালে সাপের আতঙ্ক বেড়ে যায় সত্যি কিন্তু দলিত বঞ্চিত, অসহায় দরিদ্র দিনমজুর শ্রমিক কৃষকরা সাপের কামড়ে বেশি শিকার হন। তারা আর্থিকভাবে ও সামাজিকভাবে খুবই দুর্বল। সাপের কামড়ে শিকার হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য।

বাঘ, হাতি, কুমির ও ভাল্লুকের আক্রমণে শিকার হলে বা কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা আছে কিন্তু সাপের কামড়ে হতাহত বা মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের কোন ব্যবস্থা নেই। অথচ বাংলাদেশে প্রতি বছর ৭,০০০ মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। আর সরীসৃপ এই প্রাণীর আক্রমণে শিকার হন ৪ লাখের বেশি মানুষ। তাই কৃষক-শ্রমিক, দিনমজুর ও দলিত ব্যক্তিদের পাশে শুভাকাক্সক্ষী, শুভানুধ্যায়ী, সমাজসেবক তথা আপামর জনগণ ও সরকার অ্যান্টিভেনাম ওষুধ তৃণমূল পর্যায়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।

[লেখক : আইনজীবী, জজকোর্ট, জয়পুরহাট]

back to top