alt

উপ-সম্পাদকীয়

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন

: শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

কোটাবিরোধী আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনটি এখন বেগবান হচ্ছে প্রতিটি জেলায়। কোটাবিরোধী আন্দোলনটি মূ০লত মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে কেন্দ্র করে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩০% কোটা রাখা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র, নাতি এবং পরবর্তী বংশধরদের জন্য। এ বিষয়টি দেশের ছাত্রসমাজ মানতে নারাজ, তাই তারা আন্দোলনে নেমেছে। মুক্তিযোদ্ধা মানে দেশের সূর্য সন্তান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও আত্মত্যাগ করেছিল বলেই, বাংলাদেশ পরাধীনতার শেকল ছিড়ে স্বাধীনতা লাভ করতে পেরেছে। ছাত্ররাও মহান মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে স্বীকার করে। তারাও সম্মান জানায় জাতির সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। তারাও চায় মুক্তিযোদ্ধাদের আরো রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হোক। তবে সব চাকরির ক্ষেত্রে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য সংরক্ষিত থাকুক এ বিষয়টা মানতে চাচ্ছে না ছাত্রসমাজ।

কোটাভিত্তিক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই চলছে আদালতে। বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে। তাই সরকার এ বিষয়ে কোন কিছু বলছেন না। আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় দেয় আর্ন্তজাতিক যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল। ওই রায় বাতিলের দাবিতে ছাত্রসহ দেশের সর্ব শ্রেণীর মানুষ আন্দোলনে নামে, গড়ে উঠে গণজাগরণ মঞ্চ। সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন। মহান মুক্তিযুদ্ধের আর্দশ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী ও ত্রিশ লাখ শহিদকে হত্যা করা এদেশীয় দোসরদের বিচার সংক্রান্ত আইনটি সংশোধিত করা ছিল গণজাহরণ মঞ্চের দাবি। জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংসদে আইনটি সংশোধিত হয়।

কোটা সংক্রান্ত আইন ও রাজাকার, আলবদর, আল সামসের বিচার সংক্রান্ত আইনটিকে এক করে ফেলাটা ঠিক হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমের ওপর হামলাকারীদের বিচার সংক্রান্ত আইনি বিষয়। আর বর্তমানে যে কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছে, তা হচ্ছে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যে মুক্তিযোদ্ধারা এনেছে তাদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত করার লক্ষ্যে আইনি সংশোধন। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্পষ্ট কিছু বক্তব্য আসা দরকার। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ মাতৃকা মুক্ত করার লক্ষ্যেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের প্রাপ্তির লক্ষ্যটা ছিল বাঙালিদের স্বাধীনতা। জীবন সায়াহ্নে দেশের সবাই মুক্তিযোদ্ধা তাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা বিষয়ে বক্তব্যটা কি তা জানা দরকার দেশবাসীর।

দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত? গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রস্তত করা মুক্তিযোদ্বার তালিকার মুক্তিযোদ্বার সংখ্যাগত পার্থক্য রয়েছে। ১৯৮৪ সালের প্রস্তত করা মুক্তিযোদ্বার তালিকায় মুক্তিযোদ্বার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৮ জন। এই তালিকা প্রস্তত করতে সাহায্য নেয়া হয়েছিল , বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে গঠিত মুক্তিযোদ্বা কল্যাণ ট্রাস্টের, চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের তালিকা এবং ভারত থেকে প্রাপ্ত তালিকার সমন্বয়ে। ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্বা কমান্ড কাউন্সিলের প্রস্ততকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সংখ্যা ছিল ৬৯৮৩৩ জন, ১৯৯৪ সালের এর সংখ্যা হয় ৮৬০০০, ২০০১ দুইটি সংখ্যা পাওয়া যায় তা হলো ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৯০ জন আরেকটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫২ জনের ২০০৬ সালে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯ জনের, ২০১৬ সালে গণমাধ্যম থেকে পাওয়া যে সংখ্যাটি উল্লেখ করা হলো তা ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার।

মুক্তিযোদ্বার এই সংখ্যাগত তারতম্য নিয়ে নানা অভিযোগ এবং রাজনৈতিক দোষে দুষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও বিষয়টি নিয়ে আইন আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমান সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্বাদের মর্যাদাসহ সম্মানী ও নানা সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। বর্থমানে যে দলটি দেশ পরিচালনা করছেন এই দলটিই মুক্তিযুদ্ধটা পরিচালনা করেন। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য রোধ কল্পে আইনও তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের মোট পরিবারের সংখ্যা ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার অর্থাৎ প্রায় চার কোটি । এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ বা তার কিছু বেশি। মোট পরিবারের মধ্যে দশমিক ৬২৫ শতাংশ হলো মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। হিসাবে দেখা যায়, সারা দেশের মোট পরিবারের এক শতাংশেরও কম। তাই ৩০ শতাংশ কোটার বিষয়টি অনেক বেশি হয়ে যায়।

মুক্তিযোদ্ধাদের এই কোটা দেয়ার বিষয়টি অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনায় নেয়াটা ঠিক হবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যে বীরত্বপূর্ণ কাজটি করেছেন সেই বীরের সম্মানসুচক পুরস্কার হলো মুক্তিযোদ্ধা কোটা। দেশের মোট জনসংখ্যা অনুপাতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখতে পারলে বিষয়টি সবার জন্য মনে হয় ভালো হতো। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক চাকরির বেলায় দেখা যায় ৩০ শতাংশ কোটার বিপরীতে ওই পরিমাণ আবেদন পড়ে না। সুতরাং এ জায়গাটা বিবেচনায় নিলে মনে হয় বীর মুক্তিযোদ্ধারাও সংক্ষুব্ধ হবেন না।

দেশের চলমান আন্দোলনটা বিএনপির ইন্ধনে হচ্ছে এমন কথা বলা ঠিক না। আন্দোলনকারীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে যথাযথ সম্মানপূর্বক আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছেন। এখানে আরেকটি বিষয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পেনশন স্কিম বিরোধী আন্দোলন করছেন। এই দুই আন্দোলনকেও একভাবে দেখা উচিত না। শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছেন তা একটি মৌলিক বিষয় নিয়ে। যে বিষয়টিতে নির্ধারিত হবে আগামীর রাষ্ট্রীয় কর্মচারীর মেধা। কারণ বর্তমানে দেশে দক্ষ সৎ ও মেধাবী সরকারি কর্মীর অভাব। সারাদেশ ছেয়ে গেছে দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্রীয় কর্মচারীতে। মেধা যাচাই করে নিয়োগ দিতে হলে কোটা প্রথাটা বিবেচনায় না নেয়াটাই শ্রেয় কাজ হবে। কারণ জেলা কোটা, পোষ্য কোটা, তফশিলি জনগোষ্ঠী কোটা থাকলে মেধাবী প্রার্থীরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়। মেধাবী কর্মীর অভাবে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়।

দেশের আমলাদের অদক্ষতার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকারখানাগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের লাভের জন্য ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সব শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ৭২-৭৫ রাষ্ট্রীয় শিল্প-কলকারখানাগুলো লাভজনক ছিল। অথচ ওই সময়টা ছিল বাংলাদেশ একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র। এত প্রতিকূল অবস্থায় জাতির পিতা সরকারি শিল্পকারখানাগুলো লাভজনকভাবে পরিচালনা করেছেন। ১৯৭৫ সালের পটপরির্বতনের পর অদক্ষ ও অযোগ্য সরকারি কর্মীর তত্ত্বাবধানের এ শিল্প কারখানাগুলো পরিচালিত হয়। তাই এ কারখানাগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে থাকে। এখন এই শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই মেধাবী ও অদক্ষ জনবল নিয়োগের জন্য কোটার বিষয়টি একটু ভাবা দরকার। কারণ যে হারে দুর্নীতি বাড়ছে তা নিরোধ করতে না পারলে দেশের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেবে।

[লেখক : উন্নয়নকর্মী]

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

প্রশিক্ষণ থেকে কেন বাদ নারী কৃষকরা?

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

tab

উপ-সম্পাদকীয়

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

কোটাবিরোধী আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনটি এখন বেগবান হচ্ছে প্রতিটি জেলায়। কোটাবিরোধী আন্দোলনটি মূ০লত মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে কেন্দ্র করে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩০% কোটা রাখা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র, নাতি এবং পরবর্তী বংশধরদের জন্য। এ বিষয়টি দেশের ছাত্রসমাজ মানতে নারাজ, তাই তারা আন্দোলনে নেমেছে। মুক্তিযোদ্ধা মানে দেশের সূর্য সন্তান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও আত্মত্যাগ করেছিল বলেই, বাংলাদেশ পরাধীনতার শেকল ছিড়ে স্বাধীনতা লাভ করতে পেরেছে। ছাত্ররাও মহান মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে স্বীকার করে। তারাও সম্মান জানায় জাতির সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। তারাও চায় মুক্তিযোদ্ধাদের আরো রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হোক। তবে সব চাকরির ক্ষেত্রে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য সংরক্ষিত থাকুক এ বিষয়টা মানতে চাচ্ছে না ছাত্রসমাজ।

কোটাভিত্তিক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই চলছে আদালতে। বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে। তাই সরকার এ বিষয়ে কোন কিছু বলছেন না। আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় দেয় আর্ন্তজাতিক যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল। ওই রায় বাতিলের দাবিতে ছাত্রসহ দেশের সর্ব শ্রেণীর মানুষ আন্দোলনে নামে, গড়ে উঠে গণজাগরণ মঞ্চ। সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন। মহান মুক্তিযুদ্ধের আর্দশ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী ও ত্রিশ লাখ শহিদকে হত্যা করা এদেশীয় দোসরদের বিচার সংক্রান্ত আইনটি সংশোধিত করা ছিল গণজাহরণ মঞ্চের দাবি। জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংসদে আইনটি সংশোধিত হয়।

কোটা সংক্রান্ত আইন ও রাজাকার, আলবদর, আল সামসের বিচার সংক্রান্ত আইনটিকে এক করে ফেলাটা ঠিক হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমের ওপর হামলাকারীদের বিচার সংক্রান্ত আইনি বিষয়। আর বর্তমানে যে কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছে, তা হচ্ছে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যে মুক্তিযোদ্ধারা এনেছে তাদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত করার লক্ষ্যে আইনি সংশোধন। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্পষ্ট কিছু বক্তব্য আসা দরকার। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ মাতৃকা মুক্ত করার লক্ষ্যেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের প্রাপ্তির লক্ষ্যটা ছিল বাঙালিদের স্বাধীনতা। জীবন সায়াহ্নে দেশের সবাই মুক্তিযোদ্ধা তাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা বিষয়ে বক্তব্যটা কি তা জানা দরকার দেশবাসীর।

দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত? গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রস্তত করা মুক্তিযোদ্বার তালিকার মুক্তিযোদ্বার সংখ্যাগত পার্থক্য রয়েছে। ১৯৮৪ সালের প্রস্তত করা মুক্তিযোদ্বার তালিকায় মুক্তিযোদ্বার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৮ জন। এই তালিকা প্রস্তত করতে সাহায্য নেয়া হয়েছিল , বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে গঠিত মুক্তিযোদ্বা কল্যাণ ট্রাস্টের, চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের তালিকা এবং ভারত থেকে প্রাপ্ত তালিকার সমন্বয়ে। ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্বা কমান্ড কাউন্সিলের প্রস্ততকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সংখ্যা ছিল ৬৯৮৩৩ জন, ১৯৯৪ সালের এর সংখ্যা হয় ৮৬০০০, ২০০১ দুইটি সংখ্যা পাওয়া যায় তা হলো ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৯০ জন আরেকটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫২ জনের ২০০৬ সালে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯ জনের, ২০১৬ সালে গণমাধ্যম থেকে পাওয়া যে সংখ্যাটি উল্লেখ করা হলো তা ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার।

মুক্তিযোদ্বার এই সংখ্যাগত তারতম্য নিয়ে নানা অভিযোগ এবং রাজনৈতিক দোষে দুষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও বিষয়টি নিয়ে আইন আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমান সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্বাদের মর্যাদাসহ সম্মানী ও নানা সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। বর্থমানে যে দলটি দেশ পরিচালনা করছেন এই দলটিই মুক্তিযুদ্ধটা পরিচালনা করেন। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য রোধ কল্পে আইনও তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের মোট পরিবারের সংখ্যা ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার অর্থাৎ প্রায় চার কোটি । এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ বা তার কিছু বেশি। মোট পরিবারের মধ্যে দশমিক ৬২৫ শতাংশ হলো মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। হিসাবে দেখা যায়, সারা দেশের মোট পরিবারের এক শতাংশেরও কম। তাই ৩০ শতাংশ কোটার বিষয়টি অনেক বেশি হয়ে যায়।

মুক্তিযোদ্ধাদের এই কোটা দেয়ার বিষয়টি অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনায় নেয়াটা ঠিক হবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যে বীরত্বপূর্ণ কাজটি করেছেন সেই বীরের সম্মানসুচক পুরস্কার হলো মুক্তিযোদ্ধা কোটা। দেশের মোট জনসংখ্যা অনুপাতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখতে পারলে বিষয়টি সবার জন্য মনে হয় ভালো হতো। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক চাকরির বেলায় দেখা যায় ৩০ শতাংশ কোটার বিপরীতে ওই পরিমাণ আবেদন পড়ে না। সুতরাং এ জায়গাটা বিবেচনায় নিলে মনে হয় বীর মুক্তিযোদ্ধারাও সংক্ষুব্ধ হবেন না।

দেশের চলমান আন্দোলনটা বিএনপির ইন্ধনে হচ্ছে এমন কথা বলা ঠিক না। আন্দোলনকারীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে যথাযথ সম্মানপূর্বক আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছেন। এখানে আরেকটি বিষয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পেনশন স্কিম বিরোধী আন্দোলন করছেন। এই দুই আন্দোলনকেও একভাবে দেখা উচিত না। শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছেন তা একটি মৌলিক বিষয় নিয়ে। যে বিষয়টিতে নির্ধারিত হবে আগামীর রাষ্ট্রীয় কর্মচারীর মেধা। কারণ বর্তমানে দেশে দক্ষ সৎ ও মেধাবী সরকারি কর্মীর অভাব। সারাদেশ ছেয়ে গেছে দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্রীয় কর্মচারীতে। মেধা যাচাই করে নিয়োগ দিতে হলে কোটা প্রথাটা বিবেচনায় না নেয়াটাই শ্রেয় কাজ হবে। কারণ জেলা কোটা, পোষ্য কোটা, তফশিলি জনগোষ্ঠী কোটা থাকলে মেধাবী প্রার্থীরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়। মেধাবী কর্মীর অভাবে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়।

দেশের আমলাদের অদক্ষতার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকারখানাগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের লাভের জন্য ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সব শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ৭২-৭৫ রাষ্ট্রীয় শিল্প-কলকারখানাগুলো লাভজনক ছিল। অথচ ওই সময়টা ছিল বাংলাদেশ একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র। এত প্রতিকূল অবস্থায় জাতির পিতা সরকারি শিল্পকারখানাগুলো লাভজনকভাবে পরিচালনা করেছেন। ১৯৭৫ সালের পটপরির্বতনের পর অদক্ষ ও অযোগ্য সরকারি কর্মীর তত্ত্বাবধানের এ শিল্প কারখানাগুলো পরিচালিত হয়। তাই এ কারখানাগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে থাকে। এখন এই শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই মেধাবী ও অদক্ষ জনবল নিয়োগের জন্য কোটার বিষয়টি একটু ভাবা দরকার। কারণ যে হারে দুর্নীতি বাড়ছে তা নিরোধ করতে না পারলে দেশের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেবে।

[লেখক : উন্নয়নকর্মী]

back to top