alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

সিরাজ প্রামাণিক

: বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

কেউ যদি দ্বিতীয় বিবাহ বা একাধিক বিয়ে করতে চান, তবে তার জন্যও আইনি বিধান রয়েছে। আবার স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া পরবর্তী বিয়ে কিংবা আইনি বিধান না মানলে তার জন্য আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে। আমরা সবাই জানি এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিবাহ করাকে বহু বিবাহ বলে; কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ধারা ৬ মতেÑ দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের নিকট হতে অনুমতি নিতে হয়। নতুবা পরবর্তী বিয়ে আইনগতভাবে রেজিস্ট্রি হবে না।

পরবর্তী বিয়ের অনুমতি নিতে হলে স্বামীর পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা স্থানটি পৌরসভা হলে পৌর মেয়রের কাছে, সিটি কর্পোরেশন হলে সিটি মেয়রের কাছে ২৫ টাকা কোর্ট ফি দিয়ে সাদা কাগজে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত প্রতিষ্ঠান একটি বোর্ড গঠন করবে এবং স্ত্রীর উপস্থিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যে সবাই বিষয়ের প্রতি বোর্ড বিবেচনা করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো- ১. বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব, ২. দৈহিক দুর্বলতা, ৩. দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা এবং ৪. মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি। এগুলো প্রমাণ হলে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি হতে পারে।

কোনো পুরুষ যদি সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে তিনি অবিলম্বে ১ম স্ত্রীর দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাবা আইনত বাধ্য হবে। ভরণপোষণের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করবেন। মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে আইনগতভাবে আদায়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়া সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৬(৫)বি ধারার অভিযোগে ১ম স্ত্রী মামলা করতে পারবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে স্বামীর এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- কিংবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। তবে এ মামলা করতে হলে পরবর্তী বিয়ের কাবিননামা অর্থাৎ ডকুমেন্টস লাগবে। আবার স্ত্রী ইচ্ছা করলে দন্ডবিধির ৪৯৪ ধারায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারবেন। কারণ এ ধারায় বলা হয়েছে স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও যদি স্বামী ২য় বিয়ে করেন, তাহলে স্বামী দ-নীয় অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হইবেন।

পাশাপাশি স্বামী যদি ১ম স্ত্রী আছে এরকম তথ্য গোপন করে পরবর্তী স্ত্রীর কাছে যদি বলে আমিই প্রথম। এরপর ২য় স্ত্রী ১ম স্ত্রীর কথা জানতে পেরে প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪৯৫ ধারায় মামলা করে ১০ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারবেন। কারণ এ ধারা বলছে দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় ১ম বিয়ের তথ্য গোপন রাখলে এ অপরাধ হবে।

আবার স্ত্রীও যদি স্বামী বহাল থাকা অবস্থায় আইনগতভাবে বিচ্ছেদ না করেই আরেকটি বিয়ে করে থাকেন, তাহলে ১ম স্বামী কিন্তু ওই স্ত্রীর বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে মামলা করে ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারেন। তবে এ জাতীয় মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

রামনবমী ঘিরে সাম্প্রদায়িক কৌশল

ঈদে মিলবে না নতুন নোট

প্রসঙ্গ : পুরুষ ধর্ষণ

শাহবাগ শাপলা বিভাজন : দায় যাদের তাদেরই করতে হবে নিরসন

বিশ্ব বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস

নতুন রাজনৈতিক দল কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে?

ছবি

ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘ছাভা’ : ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ

রম্যগদ্য : বোধ যখন ক্রোধ

গাছে পেরেক ঠোকা

মানুষ ও বন্য হাতি

আলুর চাষ, বীজ উৎপাদন ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

অখণ্ড বাংলা তত্ত্ব : বাইনারিজম থেকে মুক্তির পথ

রূপকথার মতো মনে হলেও তিনি ছিলেন বাস্তবেরই নায়ক

গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইন প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্ত মত প্রকাশের গুরুত্ব

নিরাপদ অভিবাসন ও রেমিট্যান্স প্রবাহ

ভারতব্যাপী সংঘ : বিজেপির নয়া কৌশল

আর্থিক খাত নিয়ে অবিমৃষ্যকারী বক্তব্য

ভূমিকম্পের আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে

মনে কী দ্বিধা রেখে নতুন প্রত্যাশায় নতুন দল!

ছবি

উন্নত বিশ্বের নাগরিকত্ব ও দুর্নীতি

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় : শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির নিচে ছাত্র

নারীর অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন

আদালতের ভেতরে ভিডিও ধারণের আইনি দিক

আইনের শাসন না গণপিটুনি?

নারীর ভূমি ও কৃষি অধিকার : ন্যায়বিচারের পথে কতদূর?

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের হালচাল

জনতুষ্টিবাদীরা এগিয়ে আছে যেদিক থেকে

ভিক্ষাবৃত্তি : প্রয়োজন নাকি পেশা?

ছবি

বিনিময় কৌশল নাকি বাণিজ্য যুদ্ধ?

শিশু আদালতের বিচার-প্রক্রিয়ার আইনি ও বাস্তবিক দিক

জনদুর্ভোগের অপসংস্কৃতি ও জনশিক্ষা : আগামীর দিকনির্দেশনা

প্রসঙ্গ : নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি

হরিজনদের পদবি : ঐক্যের পথে বাধা

এল নিনো : দেশের কৃষির চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

আর কীভাবে আর্জি জানালে নিরাপত্তা পাওয়া যায়?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

সিরাজ প্রামাণিক

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

কেউ যদি দ্বিতীয় বিবাহ বা একাধিক বিয়ে করতে চান, তবে তার জন্যও আইনি বিধান রয়েছে। আবার স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া পরবর্তী বিয়ে কিংবা আইনি বিধান না মানলে তার জন্য আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে। আমরা সবাই জানি এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিবাহ করাকে বহু বিবাহ বলে; কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ধারা ৬ মতেÑ দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের নিকট হতে অনুমতি নিতে হয়। নতুবা পরবর্তী বিয়ে আইনগতভাবে রেজিস্ট্রি হবে না।

পরবর্তী বিয়ের অনুমতি নিতে হলে স্বামীর পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা স্থানটি পৌরসভা হলে পৌর মেয়রের কাছে, সিটি কর্পোরেশন হলে সিটি মেয়রের কাছে ২৫ টাকা কোর্ট ফি দিয়ে সাদা কাগজে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত প্রতিষ্ঠান একটি বোর্ড গঠন করবে এবং স্ত্রীর উপস্থিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যে সবাই বিষয়ের প্রতি বোর্ড বিবেচনা করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো- ১. বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব, ২. দৈহিক দুর্বলতা, ৩. দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা এবং ৪. মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি। এগুলো প্রমাণ হলে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি হতে পারে।

কোনো পুরুষ যদি সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে তিনি অবিলম্বে ১ম স্ত্রীর দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাবা আইনত বাধ্য হবে। ভরণপোষণের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করবেন। মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে আইনগতভাবে আদায়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়া সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৬(৫)বি ধারার অভিযোগে ১ম স্ত্রী মামলা করতে পারবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে স্বামীর এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- কিংবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। তবে এ মামলা করতে হলে পরবর্তী বিয়ের কাবিননামা অর্থাৎ ডকুমেন্টস লাগবে। আবার স্ত্রী ইচ্ছা করলে দন্ডবিধির ৪৯৪ ধারায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারবেন। কারণ এ ধারায় বলা হয়েছে স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও যদি স্বামী ২য় বিয়ে করেন, তাহলে স্বামী দ-নীয় অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হইবেন।

পাশাপাশি স্বামী যদি ১ম স্ত্রী আছে এরকম তথ্য গোপন করে পরবর্তী স্ত্রীর কাছে যদি বলে আমিই প্রথম। এরপর ২য় স্ত্রী ১ম স্ত্রীর কথা জানতে পেরে প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪৯৫ ধারায় মামলা করে ১০ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারবেন। কারণ এ ধারা বলছে দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় ১ম বিয়ের তথ্য গোপন রাখলে এ অপরাধ হবে।

আবার স্ত্রীও যদি স্বামী বহাল থাকা অবস্থায় আইনগতভাবে বিচ্ছেদ না করেই আরেকটি বিয়ে করে থাকেন, তাহলে ১ম স্বামী কিন্তু ওই স্ত্রীর বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে মামলা করে ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারেন। তবে এ জাতীয় মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top