alt

উপ-সম্পাদকীয়

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

নাফিস আহমেদ

: বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

পৃথিবীতে মানবসভ্যতার প্রাচীন শৈল্পিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মৃৎশিল্প। এটা আমাদের বাঙালিরও আবহমান গ্রামবাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করে। ‘মৃৎ’ বলতে মৃত্তিকা বা মাটিকে বোঝানো হয় এবং ‘শিল্প’ বলতে দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সমন্বয়ে তৈরি এমন জিনিসকে বোঝায় যা নান্দনিক সৌন্দর্য বহন করে। অর্থাৎ মৃৎশিল্প বলতে মাটি দিয়ে তৈরি অনিন্দ্যসুন্দর কারুকার্যপূর্ণ চমৎকার কোনো সৃষ্টিকর্মকে বোঝায়। মূলত এঁটেল মাটি ও কাদামাটির সাহায্যে শৈল্পিক রূপ দিয়ে তৈরি করে আগুনে পুড়িয়ে মৃৎশিল্প আকার লাভ করে।

বাঙালির কালজয়ী ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে আমাদের এই মৃৎশিল্প। বহুদিন ধরে হিন্দু পালরা (যাদের আমাদের দেশে কুমোর বলা হয়) এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে আবদান রেখে আসছে, তবে এখনকার সময়ে মুসলামানরাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে মৃৎশিল্প তৈরি হচ্ছে, যেমন কুমিল্লার বিজয়পুরে মৃৎশিল্প সমিতি আছে। সেখানে বহুমানুষ প্রতিনিয়ত কাজ করছে এবং অত্যন্ত চমৎকার ও বিচিত্র সব শিল্পকর্ম তৈরি করছে, যা দেশের গ-িও পেরিয়ে গেছে। সেখানকার শিল্পকর্ম দর্শককেও অত্যন্ত মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করে।

আবার শরীয়তপুর জেলার কার্তিকপুরের মৃৎশিল্প দেশের গ-ি পেরিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে, যা বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের ঐতিহ্যকেও বহন করছে আবার বৈদেশিক মুদ্রাও পাওয়া যাচ্ছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। অন্যদিকে পটুয়াখালী জেলার বাউফলের মৃৎশিল্পেরও সুনাম রয়েছে। তথ্যমতে, এক বছর আগে বিশ্বজুড়ে অর্ধশত কোটি টাকার বাজার গড়েছে বাউফলের মৃৎশিল্প। এই তিনজেলা ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় কমবেশি মৃৎশিল্প তৈরি হয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশে এই শিল্পের অস্তিত্ব যেন হারাতে বসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্পের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়াম। অতীতে আমাদের দেশে শুধু জেলাতেই নয়, প্রত্যেক উপজেলাতেও মৃৎশিল্প তৈরি ও বেচাকেনা হতো; কিন্তু গত এক দশকে এর ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক লোপ পেয়েছে। সাধারণ মানুষও এখন মৃৎশিল্প দেখতে পছন্দ করলেও ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসই কিনে। এর ফলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার যেমন দিনকে দিন বাড়ছে, তেমনি মৃৎশিল্পের ব্যবহার যেন হারাতে বসেছে।

বেচাকেনা কম হওয়ার ফলে এর কারিগরেরাও বানাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না, কারণ মৃৎশিল্পের দামও অনেক কমে গেছে, ফলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছে না। এজন্য অন্যপেশার দিকে ছুটছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আগামী এক দশকের মধ্যেই হয়তো সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে; কিন্তু এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখলে একদিকে আমাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও আসবে আবার প্লাস্টিকের ব্যবহারও কমবে। আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করতে চাই, কারণ এটি পরিবেশ দূষিত করে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্যও দায়ী; কিন্তু এর বিকল্পটা খুঁজে না পেলে হয়তো এটির ব্যবহার কমবে না। মৃৎশিল্পই হতে পারে প্লাস্টিকের সর্বোত্তম বিকল্প। আমাদের এই শিল্পের বহুবিধ গুণাগুণ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার ও প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও অবহিত হওয়া দরকার। তাহলে আমরা মাটির তৈরি জিনিস ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো। যেমন- মাটির তৈরি কলসে পানি রাখলে সেই পানি একদিকে যেমন ঠান্ডা থাকে, তেমনি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও এর উপকারিতা রয়েছে। আবার গ্যাসের চুলার থেকে মাটির চুলায় রান্না করলে সেই খাবার খেতে অধিক সুস্বাদু হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্যও অধিকতর উত্তম। আমরা গাছ লাগানোর জন্যও ইদানীং অনেকে প্লাস্টিকের টব কিনছি; কিন্তু এর বদলে যদি মাটির তৈরি টব ব্যবহার করি, তবে সেটি গাছের জন্যও বেশি উপকারী। মৃৎশিল্পের এমন বহু সুবিধাজনক ও চমৎকার দিক রয়েছে। আমাদের সেটি ভালোভাবে জানা উচিত এবং প্লাস্টিকের বদলে এগুলো ব্যবহারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

মৃৎশিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। এটাকে আমাদের একটা ব্রান্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং একই সঙ্গে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য তালিকাভুক্ত করা উচিত। মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা যাতে করা হয়, সেজন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক জেলায় মৃৎশিল্প উদ্যোক্তা ও কারিগরদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও দিকনির্দেশনা দিয়ে পাশে থাকা দরকার। একই সঙ্গে মৃৎশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের সামাজিকভাবে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেক উপকরণের ন্যায্য বাজারদর নির্ধারণের মাধ্যমে মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায় এর দাম একেবারে কম হলে কেউ এ পেশায় থাকবে না। আবার এখানে কোনো সিন্ডিকেট করে কারিগরদের বা শ্রমিকদের ঠকানো হচ্ছে কিনাÑ সেটাও দেখা গুরুত্বপূর্ণ।

মৃৎশিল্প আমাদের বাংলা ও বাঙালির আবহমান ঐতিহ্য ও আমাদের গর্ব। এটি আমাদের বাঙালির মাটি ও মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। আমরা সবাই যাতে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সচেতন হই ও গুরুত্ব প্রদান করিÑ এজন্য সরকার ও সাধারণ জনগণ উভয়ের পক্ষ থেকেই সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালানো আবশ্যক।

[লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়]

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

স্নায়ুরোগ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি

জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব ও করণীয়

শাসনব্যবস্থা : জনগণের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব

বয়নামা দলিল কখন স্বত্বের দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়?

বর্ষার আগেই নদীভাঙনের আতঙ্কে উপকূলবাসী

ছবি

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দেশ : মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রয়োজন

‘রিসেটের’ পরাকৌশল কী হওয়া প্রয়োজন

প্রসঙ্গ : জাতীয় বাজেট

ব্রুনোর শ্মশান মঞ্চ

দুর্নীতির অবিশ্বাস্য খতিয়ান

সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসন, বহুত্ববাদ : সবকা সাথ্ সবকা বিকাশ!

পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ সংকটে ধর্মনিরপেক্ষতা

পেশাগত দায় ও নৈতিকতা

বিনোদনের রূপান্তর : সংস্কৃতির সংকোচন ও নতুন পথ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

নাফিস আহমেদ

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

পৃথিবীতে মানবসভ্যতার প্রাচীন শৈল্পিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মৃৎশিল্প। এটা আমাদের বাঙালিরও আবহমান গ্রামবাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করে। ‘মৃৎ’ বলতে মৃত্তিকা বা মাটিকে বোঝানো হয় এবং ‘শিল্প’ বলতে দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সমন্বয়ে তৈরি এমন জিনিসকে বোঝায় যা নান্দনিক সৌন্দর্য বহন করে। অর্থাৎ মৃৎশিল্প বলতে মাটি দিয়ে তৈরি অনিন্দ্যসুন্দর কারুকার্যপূর্ণ চমৎকার কোনো সৃষ্টিকর্মকে বোঝায়। মূলত এঁটেল মাটি ও কাদামাটির সাহায্যে শৈল্পিক রূপ দিয়ে তৈরি করে আগুনে পুড়িয়ে মৃৎশিল্প আকার লাভ করে।

বাঙালির কালজয়ী ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে আমাদের এই মৃৎশিল্প। বহুদিন ধরে হিন্দু পালরা (যাদের আমাদের দেশে কুমোর বলা হয়) এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে আবদান রেখে আসছে, তবে এখনকার সময়ে মুসলামানরাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে মৃৎশিল্প তৈরি হচ্ছে, যেমন কুমিল্লার বিজয়পুরে মৃৎশিল্প সমিতি আছে। সেখানে বহুমানুষ প্রতিনিয়ত কাজ করছে এবং অত্যন্ত চমৎকার ও বিচিত্র সব শিল্পকর্ম তৈরি করছে, যা দেশের গ-িও পেরিয়ে গেছে। সেখানকার শিল্পকর্ম দর্শককেও অত্যন্ত মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করে।

আবার শরীয়তপুর জেলার কার্তিকপুরের মৃৎশিল্প দেশের গ-ি পেরিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে, যা বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের ঐতিহ্যকেও বহন করছে আবার বৈদেশিক মুদ্রাও পাওয়া যাচ্ছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। অন্যদিকে পটুয়াখালী জেলার বাউফলের মৃৎশিল্পেরও সুনাম রয়েছে। তথ্যমতে, এক বছর আগে বিশ্বজুড়ে অর্ধশত কোটি টাকার বাজার গড়েছে বাউফলের মৃৎশিল্প। এই তিনজেলা ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় কমবেশি মৃৎশিল্প তৈরি হয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশে এই শিল্পের অস্তিত্ব যেন হারাতে বসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্পের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়াম। অতীতে আমাদের দেশে শুধু জেলাতেই নয়, প্রত্যেক উপজেলাতেও মৃৎশিল্প তৈরি ও বেচাকেনা হতো; কিন্তু গত এক দশকে এর ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক লোপ পেয়েছে। সাধারণ মানুষও এখন মৃৎশিল্প দেখতে পছন্দ করলেও ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসই কিনে। এর ফলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার যেমন দিনকে দিন বাড়ছে, তেমনি মৃৎশিল্পের ব্যবহার যেন হারাতে বসেছে।

বেচাকেনা কম হওয়ার ফলে এর কারিগরেরাও বানাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না, কারণ মৃৎশিল্পের দামও অনেক কমে গেছে, ফলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছে না। এজন্য অন্যপেশার দিকে ছুটছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আগামী এক দশকের মধ্যেই হয়তো সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে; কিন্তু এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখলে একদিকে আমাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও আসবে আবার প্লাস্টিকের ব্যবহারও কমবে। আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করতে চাই, কারণ এটি পরিবেশ দূষিত করে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্যও দায়ী; কিন্তু এর বিকল্পটা খুঁজে না পেলে হয়তো এটির ব্যবহার কমবে না। মৃৎশিল্পই হতে পারে প্লাস্টিকের সর্বোত্তম বিকল্প। আমাদের এই শিল্পের বহুবিধ গুণাগুণ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার ও প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও অবহিত হওয়া দরকার। তাহলে আমরা মাটির তৈরি জিনিস ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো। যেমন- মাটির তৈরি কলসে পানি রাখলে সেই পানি একদিকে যেমন ঠান্ডা থাকে, তেমনি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও এর উপকারিতা রয়েছে। আবার গ্যাসের চুলার থেকে মাটির চুলায় রান্না করলে সেই খাবার খেতে অধিক সুস্বাদু হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্যও অধিকতর উত্তম। আমরা গাছ লাগানোর জন্যও ইদানীং অনেকে প্লাস্টিকের টব কিনছি; কিন্তু এর বদলে যদি মাটির তৈরি টব ব্যবহার করি, তবে সেটি গাছের জন্যও বেশি উপকারী। মৃৎশিল্পের এমন বহু সুবিধাজনক ও চমৎকার দিক রয়েছে। আমাদের সেটি ভালোভাবে জানা উচিত এবং প্লাস্টিকের বদলে এগুলো ব্যবহারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

মৃৎশিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। এটাকে আমাদের একটা ব্রান্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং একই সঙ্গে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য তালিকাভুক্ত করা উচিত। মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা যাতে করা হয়, সেজন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক জেলায় মৃৎশিল্প উদ্যোক্তা ও কারিগরদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও দিকনির্দেশনা দিয়ে পাশে থাকা দরকার। একই সঙ্গে মৃৎশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের সামাজিকভাবে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেক উপকরণের ন্যায্য বাজারদর নির্ধারণের মাধ্যমে মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায় এর দাম একেবারে কম হলে কেউ এ পেশায় থাকবে না। আবার এখানে কোনো সিন্ডিকেট করে কারিগরদের বা শ্রমিকদের ঠকানো হচ্ছে কিনাÑ সেটাও দেখা গুরুত্বপূর্ণ।

মৃৎশিল্প আমাদের বাংলা ও বাঙালির আবহমান ঐতিহ্য ও আমাদের গর্ব। এটি আমাদের বাঙালির মাটি ও মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। আমরা সবাই যাতে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সচেতন হই ও গুরুত্ব প্রদান করিÑ এজন্য সরকার ও সাধারণ জনগণ উভয়ের পক্ষ থেকেই সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালানো আবশ্যক।

[লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top