জিয়াউদ্দীন আহমেদ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতে অনেক ক্ষত তৈরি হয়েছে।অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক কাজ,- আমদানি-রপ্তানির স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বাজারে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা, ঘুষ-দুর্নীতির লাগামহীন রাশ টেনে ধরা, খেলাপি ঋণ হ্রাস করা, ব্যাংকিং জগতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি।অন্তর্বর্তী সরকারের স্বল্প মেয়াদে সীমাহীন প্রত্যাশার পূরণ সম্ভব না হলেও তারা শুরুটা করে যেতে পারবে।আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে বিষয়টি মানুষকে বেশি আহত করেছে তা হলো অর্থ পাচার।এই কলামে শুধু অর্থ পাচার এবং তা ফেরত আনা নিয়ে কথা বলব।বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন, দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ও সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে গেছেন, তাই তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যথাসময়ে যথাবিহিত ব্যবস্থা গৃহীত হবে-এই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।
বাংলাদেশের আইনে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যতীত অন্য যে কোন পথে অর্থ পাচার দণ্ডনীয় অপরাধ।কয়েকটি দেশ দায়মুক্তি দিয়ে কিছু টাকা ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু উপমহাদেশের দেশগুলোতে বারবার দায়মুক্তি দিলেও কেউ পাচার করা অর্থ ফেরত আনেনি।বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয় তার মূল গন্তব্যস্থল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশীয়া, কেম্যান আইল্যাণ্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যাণ্ড।এই দেশগুলো প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পাচারকৃত অর্থকে স্বাগত জানায়।মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেণ্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ।ইউরোপ, কানাডা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি উন্নত দেশও অবৈধ পন্থায় অর্থের আগমনকে স্বাগত জানায়।এই দেশগুলোতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় এবং এই দেশগুলো অর্থ পাচারের কোন তথ্য প্রকাশ করে না।তাই পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয় না।
বেপরোয়া দুর্নীতিই অর্থ পাচারের মূল কারণ।দুর্নীতির অর্থ দেশে বিনিয়োগ করে বেনজির আহমেদ বিপদে পড়েছেন, যারা বেনজিরের মতো বোকা নয় তারা দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচার করে দেয়।অর্থ পাচারের আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে মাদক।মাদক চোরাকারবার থেকে প্রাপ্ত অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।মাদক বিক্রি করে বেশি আয় করছে আফগানিস্তান এবং মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীরা।মাদকের ব্যবসা বৈধ নয় বলে তা থেকে প্রাপ্ত অর্থও বৈধ নয়, তাই এই অর্থ পাচার হয়ে যায়।দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ অনুকূল না থাকলেও অর্থ পাচার বাড়তে থাকে।রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দেশে অস্থিরতা সৃষ্ট হলেও অর্থ পাচার হয়। বৈধ পথে বিদেশে অর্থ নেওয়ার সুযোগ সীমিত বিধায় অনেকে জরুরী প্রয়োজনে অবৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা নিতে বাধ্য হয়। তবে বাংলাদেশেও কিছু টাকা বিদেশ থেকে অবৈধ পথে আসে, ২০১৫ সনে এসেছিল ২৮০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে এস আলমের সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ করার কাহিনী কিছুদিন আগে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।নিজের দেশ থেকে অর্থ নিয়ে বিদেশে এই ধরনের বিনিয়োগ আমাদের দেশের আইনে অপরাধ, কিন্তু ধনী দেশে অপরাধ নয়।আমাদের দেশে বিদেশিরা প্রচুর বিনিয়োগ করে, কিন্তু আমরা দেশ থেকে অর্থ নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারি না।উগাণ্ডাসহ কয়েকটি আফ্রিকান দেশে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা জমি লিজ নিয়ে কৃষিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও অনুরূপ চেষ্টা করেছিল, কিন্তু অনুমতি দেওয়া হয়নি।অনুমতি না দেওয়ার প্রধান কারণ আমাদের সীমিত রিজার্ভ থেকে অন্যদেশে বিনিয়োগে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।দ্বিতীয়ত, বৈধ বিনিয়োগের কথা বলে অর্থের অবৈধ পাচার ঠেকানো সম্ভব হতো না।
বাংলাদেশ থেকে পাচার করা সব অর্থের উৎস কিন্তু অবৈধ নয়। ব্যবসায়ী এবং বিদেশি কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিদের অনেকে তাদের বৈধ আয়ের অর্থ দেশে আনেন না।কেন তারা তাদের বৈধ আয় আনেন না তার কয়েকটি কারণের মধ্যে - এক, -কর ফাঁকি দেওয়া, দেশে অর্থ আনলে কর দিতে হয়; দুই,- দেশে অর্থ না এনে বিদেশের একাউন্টে রেখে দিলে বিদেশে গিয়ে বিনোদনে দুই হাতে খরচ করা যায়; তিন, -ঘুষের অর্থ বিদেশে পরিশোধ করা সহজ হয়; ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজেরা এখন আর বাংলাদেশি টাকায় ঘুষ নেয় না, ঘুষ তাদের বিদেশে পরিচালিত ব্যাংক একাউন্টে ডলারে জমা দিতে হয়; চার, -বিদেশে অর্থ থাকলে নিজের বা সন্তানদের জন্য বিদেশে বসবাসের সুযোগ তৈরি হয়।
বিদেশে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা আণ্ডার ইনভয়েসিং বা ওভার ইনভয়েসিং-এর সহজ পথ অবলম্বন করে থাকে।বেশীরভাগ রপ্তানিকারক আণ্ডার ইনভয়েস বা রপ্তানি পণ্যের দর প্রকৃত দরের চেয়ে কম দেখিয়ে বিদেশে রপ্তানি করেন; এর ফলে ইনভয়েসে উল্লেখিত কম দরের অর্থই শুধু দেশে আসে, বাকি অর্থ বিদেশে থেকে যায়, আমদানিকারক বাকি অর্থ রপ্তানিকারকের বিদেশি একাউন্টে জমা করে দেয়।বিদেশি একাউন্টে জমা করা এই অর্থ কিন্তু বৈধ, কম দরে বিক্রির ঘোষণা দিয়ে দেশে টাকা না আনাটা অবৈধ এবং অপরাধ।তাদের এই বৈধ আয়ের অবৈধ অর্থ দিয়েই বিদেশে দেশী আমলা-মন্ত্রীদের ঘুষ দেয়, বাড়ি কিনে।আমদানিকারকও শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য আণ্ডার ইনভয়েস করে থাকে, অর্থাৎ পণ্যের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্য প্রদর্শন করে শুল্ক ফাঁকি দেয়, বাকি অর্থ বিদেশি রপ্তানিকারকের নিকট প্রেরণ করে হুণ্ডির মাধ্যমে।অবশ্য যে সকল পণ্যের আমদানি-শুল্ক নেই বা একেবারেই নগণ্য সেই সকল পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানিকারক ওভার ইনভয়েস বা পণ্যের দর বেশী প্রদর্শন করে অর্থ পাচার করে।অর্থ পাচারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আর্থিকসহ সব ধরনের অপরাধ লুকানো, কর ফাঁকি দেওয়া ইত্যাদি।
তপশীলি ব্যাংক, এনবিআর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সততা, নজরদারি, জ্ঞান-গরিমা থাকলে আণ্ডার ইনভয়েস বা ওভার ইনভয়েস হ্রাস করা যায়, কিন্তু বন্ধ করা সম্ভব নয়।আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য মূল্য সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জোগাড় করা থাকলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে পণ্য মূল্যে ফাঁকি দেওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।তবে একই পণ্যের মানের ভিন্নতা অনুযায়ী দর নিরূপন করা কঠিন, তা করতে গেলে ব্যবসায়ীরা প্রকৃত দর উদ্ধৃত করেও কাস্টম কর্মীদের হাতে নাজেহাল হতে পারে।তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সৎ হলে ঘোষিত মূল্যবান পণ্যের স্থলে ছাই বা পানির আমদানি সহজ হয় না।কাস্টমস কর্মকর্তাদের ঘুষ আর দুর্নীতির জ্বালায় ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ, চেষ্টা করেও ব্যবসায়ীরা সৎ থাকতে পারে না।আমদানি পণ্য নিয়ে সততা দেখাতে চেষ্টা করা হলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পণ্য খালাস বিলম্বিত করে ডোমারেজ চার্জ আরোপ করিয়ে ছাড়ে।
ব্যবসায়ী, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ছাড়াও অনেক সাধারণ নাগরিকও বিদেশে অর্থ পাচার করে থাকে এবং এরাই আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার।যারা নাগরিকত্ব নিয়ে অন্য দেশে চলে গেছে, বা যারা পড়তে গিয়ে নাগরিকত্ব পেয়ে গেছে, অথবা যাদের দেশে ফেরত আসার আর কোন সম্ভাবনা নেই তারা মাঝে মাঝে দেশে এসে স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে সব অর্থ বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে হুণ্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করছে।এই অর্থ বৈধ হলেও বিদেশে নেওয়া বা পাচার করা অবৈধ।চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার লোক ভারত, থাইল্যাণ্ড, সিঙ্গাপুর যাচ্ছে; চিকিৎসার নামে অন্য দেশে যাওয়া সহজ নয় বলে অধিকাংশ রোগী ভিজিট ভিসায় গিয়ে চিকিৎসা করায়।কিন্তু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ উপায়ে নেওয়া কঠিন বিধায় অবৈধ হুণ্ডির মাধ্যমে অর্থ নিতে হয়।চিকিৎসার জন্য এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ পথে পাচার হচ্ছে।দুঃখজনক হচ্ছে, যারা এভাবে অর্থ পাচার করছে তারাই আবার বিদেশে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
দেশ থেকে টাকা পাচার ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা এখনো তৈরি হয়নি; হয়নি বলেই সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে পাচারকারীকে প্রলুব্ধ করে থাকে।গত অর্থবছরে আয়কর অধ্যাদেশে যে নতুন বিধান সংযোজন করা হয়েছিল তা হলো, বিদেশে অবস্থিত যে কোন সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যে কোন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করবে না।এই বিধানে নগদ টাকা ফেরত আনার কথা বলা হয়নি, বিদেশে থাকা স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির উপর নির্ধারিত হারে কর দিলেও তা বৈধ বলে গণ্য হবে। এই পর্যন্ত ১৬ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।এছাড়াও নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা ও কর দিয়ে পুঁজি বাজার ও আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগও বহুবার দেয়া হয়েছে।এমনকি পুরনো একাধিক বছরের কালো টাকা সাদা করার সুযোগও ছিলো।কিন্তু উল্লেখযোগ্য সাড়া কখনোই পাওয়া যায়নি।একমাত্র ড. ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা সাদা করতে অনেককে সচেষ্ট হতে দেখা গিয়েছিল।সেই সময়ে অনেকে তাদের উচ্চ মূল্যের গাড়িগুলো নিজস্ব গ্যারেজে রাখতেও ভয় পেতেন।তাই বাঙ্গালীরা শুধু অন্যের অপরাধ দেখে, নিজের নয়। তবে দুর্নীতি বন্ধ হলে অবৈধ অর্থ কমবে, অবৈধ অর্থ কমলে অর্থের পাচারও কমবে।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে নাগরিকদের অর্জিত বৈধ অর্থের ওপর তাদের অধিকার থাকলেও সেই অর্থ দেশের বাইরে নেওয়ার অধিকার তাদের নেই।বাংলাদেশের নাগরিকদের অন্য দেশে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার থাকলেও বাংলাদেশ থেকে তাদের নিজস্ব অর্থ বা সম্পত্তি বিক্রি করে তাদের বসতির দেশে নিতে পারবে না।কারণ ‘দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭ দ্বারা বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ এবং লেনদেনের একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।আমদানির ক্ষেত্রে টাকাকে বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করার ক্ষমতা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হলেও গ্রাহকের সম্পত্তি বিক্রির টাকা বিদেশে পাঠানোর নীতি এখনো গ্রহণ করা হয়নি।কিন্তু ধনী দেশগুলোতে এত কড়াকড়ি নেই, তাই তাদের কাছে অর্থ পাচার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।নিজস্ব অর্থ কে কোথায় রাখবে, কিভাবে ব্যয় করবে তা সম্পূর্ণ তার এক্তিয়ার।আমাদের কড়াকড়ির কারণে অনেক বৈধ অর্থ অবৈধ পথে পাচার হচ্ছে।তবে এটা ঠিক, আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণ শিথিল হচ্ছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও শিথিল হবে, এক সময় আর কোন নিয়ন্ত্রণই থাকবে না।আইন যত কঠিনই হোক না কেন, নজরদারি যত কঠোরই হোক না কেন, অবৈধ পথে অর্থ পাচার রোধ করা সম্ভব হবে না এবং অর্থের গন্তব্য দেশ সহযোগিতা না করলে পাচার করা অর্থ ফেরতও আনা যাবে না।
[লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও টাকশালের সাবেক এমডি]
জিয়াউদ্দীন আহমেদ
শনিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৪
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতে অনেক ক্ষত তৈরি হয়েছে।অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক কাজ,- আমদানি-রপ্তানির স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বাজারে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা, ঘুষ-দুর্নীতির লাগামহীন রাশ টেনে ধরা, খেলাপি ঋণ হ্রাস করা, ব্যাংকিং জগতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি।অন্তর্বর্তী সরকারের স্বল্প মেয়াদে সীমাহীন প্রত্যাশার পূরণ সম্ভব না হলেও তারা শুরুটা করে যেতে পারবে।আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে বিষয়টি মানুষকে বেশি আহত করেছে তা হলো অর্থ পাচার।এই কলামে শুধু অর্থ পাচার এবং তা ফেরত আনা নিয়ে কথা বলব।বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন, দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ও সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে গেছেন, তাই তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যথাসময়ে যথাবিহিত ব্যবস্থা গৃহীত হবে-এই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।
বাংলাদেশের আইনে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যতীত অন্য যে কোন পথে অর্থ পাচার দণ্ডনীয় অপরাধ।কয়েকটি দেশ দায়মুক্তি দিয়ে কিছু টাকা ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু উপমহাদেশের দেশগুলোতে বারবার দায়মুক্তি দিলেও কেউ পাচার করা অর্থ ফেরত আনেনি।বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয় তার মূল গন্তব্যস্থল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশীয়া, কেম্যান আইল্যাণ্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যাণ্ড।এই দেশগুলো প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পাচারকৃত অর্থকে স্বাগত জানায়।মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেণ্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ।ইউরোপ, কানাডা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি উন্নত দেশও অবৈধ পন্থায় অর্থের আগমনকে স্বাগত জানায়।এই দেশগুলোতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় এবং এই দেশগুলো অর্থ পাচারের কোন তথ্য প্রকাশ করে না।তাই পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয় না।
বেপরোয়া দুর্নীতিই অর্থ পাচারের মূল কারণ।দুর্নীতির অর্থ দেশে বিনিয়োগ করে বেনজির আহমেদ বিপদে পড়েছেন, যারা বেনজিরের মতো বোকা নয় তারা দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচার করে দেয়।অর্থ পাচারের আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে মাদক।মাদক চোরাকারবার থেকে প্রাপ্ত অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।মাদক বিক্রি করে বেশি আয় করছে আফগানিস্তান এবং মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীরা।মাদকের ব্যবসা বৈধ নয় বলে তা থেকে প্রাপ্ত অর্থও বৈধ নয়, তাই এই অর্থ পাচার হয়ে যায়।দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ অনুকূল না থাকলেও অর্থ পাচার বাড়তে থাকে।রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দেশে অস্থিরতা সৃষ্ট হলেও অর্থ পাচার হয়। বৈধ পথে বিদেশে অর্থ নেওয়ার সুযোগ সীমিত বিধায় অনেকে জরুরী প্রয়োজনে অবৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা নিতে বাধ্য হয়। তবে বাংলাদেশেও কিছু টাকা বিদেশ থেকে অবৈধ পথে আসে, ২০১৫ সনে এসেছিল ২৮০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে এস আলমের সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ করার কাহিনী কিছুদিন আগে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।নিজের দেশ থেকে অর্থ নিয়ে বিদেশে এই ধরনের বিনিয়োগ আমাদের দেশের আইনে অপরাধ, কিন্তু ধনী দেশে অপরাধ নয়।আমাদের দেশে বিদেশিরা প্রচুর বিনিয়োগ করে, কিন্তু আমরা দেশ থেকে অর্থ নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারি না।উগাণ্ডাসহ কয়েকটি আফ্রিকান দেশে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা জমি লিজ নিয়ে কৃষিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও অনুরূপ চেষ্টা করেছিল, কিন্তু অনুমতি দেওয়া হয়নি।অনুমতি না দেওয়ার প্রধান কারণ আমাদের সীমিত রিজার্ভ থেকে অন্যদেশে বিনিয়োগে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।দ্বিতীয়ত, বৈধ বিনিয়োগের কথা বলে অর্থের অবৈধ পাচার ঠেকানো সম্ভব হতো না।
বাংলাদেশ থেকে পাচার করা সব অর্থের উৎস কিন্তু অবৈধ নয়। ব্যবসায়ী এবং বিদেশি কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিদের অনেকে তাদের বৈধ আয়ের অর্থ দেশে আনেন না।কেন তারা তাদের বৈধ আয় আনেন না তার কয়েকটি কারণের মধ্যে - এক, -কর ফাঁকি দেওয়া, দেশে অর্থ আনলে কর দিতে হয়; দুই,- দেশে অর্থ না এনে বিদেশের একাউন্টে রেখে দিলে বিদেশে গিয়ে বিনোদনে দুই হাতে খরচ করা যায়; তিন, -ঘুষের অর্থ বিদেশে পরিশোধ করা সহজ হয়; ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজেরা এখন আর বাংলাদেশি টাকায় ঘুষ নেয় না, ঘুষ তাদের বিদেশে পরিচালিত ব্যাংক একাউন্টে ডলারে জমা দিতে হয়; চার, -বিদেশে অর্থ থাকলে নিজের বা সন্তানদের জন্য বিদেশে বসবাসের সুযোগ তৈরি হয়।
বিদেশে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা আণ্ডার ইনভয়েসিং বা ওভার ইনভয়েসিং-এর সহজ পথ অবলম্বন করে থাকে।বেশীরভাগ রপ্তানিকারক আণ্ডার ইনভয়েস বা রপ্তানি পণ্যের দর প্রকৃত দরের চেয়ে কম দেখিয়ে বিদেশে রপ্তানি করেন; এর ফলে ইনভয়েসে উল্লেখিত কম দরের অর্থই শুধু দেশে আসে, বাকি অর্থ বিদেশে থেকে যায়, আমদানিকারক বাকি অর্থ রপ্তানিকারকের বিদেশি একাউন্টে জমা করে দেয়।বিদেশি একাউন্টে জমা করা এই অর্থ কিন্তু বৈধ, কম দরে বিক্রির ঘোষণা দিয়ে দেশে টাকা না আনাটা অবৈধ এবং অপরাধ।তাদের এই বৈধ আয়ের অবৈধ অর্থ দিয়েই বিদেশে দেশী আমলা-মন্ত্রীদের ঘুষ দেয়, বাড়ি কিনে।আমদানিকারকও শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য আণ্ডার ইনভয়েস করে থাকে, অর্থাৎ পণ্যের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্য প্রদর্শন করে শুল্ক ফাঁকি দেয়, বাকি অর্থ বিদেশি রপ্তানিকারকের নিকট প্রেরণ করে হুণ্ডির মাধ্যমে।অবশ্য যে সকল পণ্যের আমদানি-শুল্ক নেই বা একেবারেই নগণ্য সেই সকল পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানিকারক ওভার ইনভয়েস বা পণ্যের দর বেশী প্রদর্শন করে অর্থ পাচার করে।অর্থ পাচারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আর্থিকসহ সব ধরনের অপরাধ লুকানো, কর ফাঁকি দেওয়া ইত্যাদি।
তপশীলি ব্যাংক, এনবিআর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সততা, নজরদারি, জ্ঞান-গরিমা থাকলে আণ্ডার ইনভয়েস বা ওভার ইনভয়েস হ্রাস করা যায়, কিন্তু বন্ধ করা সম্ভব নয়।আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য মূল্য সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জোগাড় করা থাকলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে পণ্য মূল্যে ফাঁকি দেওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।তবে একই পণ্যের মানের ভিন্নতা অনুযায়ী দর নিরূপন করা কঠিন, তা করতে গেলে ব্যবসায়ীরা প্রকৃত দর উদ্ধৃত করেও কাস্টম কর্মীদের হাতে নাজেহাল হতে পারে।তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সৎ হলে ঘোষিত মূল্যবান পণ্যের স্থলে ছাই বা পানির আমদানি সহজ হয় না।কাস্টমস কর্মকর্তাদের ঘুষ আর দুর্নীতির জ্বালায় ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ, চেষ্টা করেও ব্যবসায়ীরা সৎ থাকতে পারে না।আমদানি পণ্য নিয়ে সততা দেখাতে চেষ্টা করা হলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পণ্য খালাস বিলম্বিত করে ডোমারেজ চার্জ আরোপ করিয়ে ছাড়ে।
ব্যবসায়ী, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ছাড়াও অনেক সাধারণ নাগরিকও বিদেশে অর্থ পাচার করে থাকে এবং এরাই আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার।যারা নাগরিকত্ব নিয়ে অন্য দেশে চলে গেছে, বা যারা পড়তে গিয়ে নাগরিকত্ব পেয়ে গেছে, অথবা যাদের দেশে ফেরত আসার আর কোন সম্ভাবনা নেই তারা মাঝে মাঝে দেশে এসে স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে সব অর্থ বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে হুণ্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করছে।এই অর্থ বৈধ হলেও বিদেশে নেওয়া বা পাচার করা অবৈধ।চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার লোক ভারত, থাইল্যাণ্ড, সিঙ্গাপুর যাচ্ছে; চিকিৎসার নামে অন্য দেশে যাওয়া সহজ নয় বলে অধিকাংশ রোগী ভিজিট ভিসায় গিয়ে চিকিৎসা করায়।কিন্তু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ উপায়ে নেওয়া কঠিন বিধায় অবৈধ হুণ্ডির মাধ্যমে অর্থ নিতে হয়।চিকিৎসার জন্য এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ পথে পাচার হচ্ছে।দুঃখজনক হচ্ছে, যারা এভাবে অর্থ পাচার করছে তারাই আবার বিদেশে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
দেশ থেকে টাকা পাচার ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা এখনো তৈরি হয়নি; হয়নি বলেই সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে পাচারকারীকে প্রলুব্ধ করে থাকে।গত অর্থবছরে আয়কর অধ্যাদেশে যে নতুন বিধান সংযোজন করা হয়েছিল তা হলো, বিদেশে অবস্থিত যে কোন সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যে কোন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করবে না।এই বিধানে নগদ টাকা ফেরত আনার কথা বলা হয়নি, বিদেশে থাকা স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির উপর নির্ধারিত হারে কর দিলেও তা বৈধ বলে গণ্য হবে। এই পর্যন্ত ১৬ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।এছাড়াও নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা ও কর দিয়ে পুঁজি বাজার ও আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগও বহুবার দেয়া হয়েছে।এমনকি পুরনো একাধিক বছরের কালো টাকা সাদা করার সুযোগও ছিলো।কিন্তু উল্লেখযোগ্য সাড়া কখনোই পাওয়া যায়নি।একমাত্র ড. ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা সাদা করতে অনেককে সচেষ্ট হতে দেখা গিয়েছিল।সেই সময়ে অনেকে তাদের উচ্চ মূল্যের গাড়িগুলো নিজস্ব গ্যারেজে রাখতেও ভয় পেতেন।তাই বাঙ্গালীরা শুধু অন্যের অপরাধ দেখে, নিজের নয়। তবে দুর্নীতি বন্ধ হলে অবৈধ অর্থ কমবে, অবৈধ অর্থ কমলে অর্থের পাচারও কমবে।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে নাগরিকদের অর্জিত বৈধ অর্থের ওপর তাদের অধিকার থাকলেও সেই অর্থ দেশের বাইরে নেওয়ার অধিকার তাদের নেই।বাংলাদেশের নাগরিকদের অন্য দেশে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার থাকলেও বাংলাদেশ থেকে তাদের নিজস্ব অর্থ বা সম্পত্তি বিক্রি করে তাদের বসতির দেশে নিতে পারবে না।কারণ ‘দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭ দ্বারা বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ এবং লেনদেনের একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।আমদানির ক্ষেত্রে টাকাকে বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করার ক্ষমতা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হলেও গ্রাহকের সম্পত্তি বিক্রির টাকা বিদেশে পাঠানোর নীতি এখনো গ্রহণ করা হয়নি।কিন্তু ধনী দেশগুলোতে এত কড়াকড়ি নেই, তাই তাদের কাছে অর্থ পাচার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।নিজস্ব অর্থ কে কোথায় রাখবে, কিভাবে ব্যয় করবে তা সম্পূর্ণ তার এক্তিয়ার।আমাদের কড়াকড়ির কারণে অনেক বৈধ অর্থ অবৈধ পথে পাচার হচ্ছে।তবে এটা ঠিক, আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণ শিথিল হচ্ছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও শিথিল হবে, এক সময় আর কোন নিয়ন্ত্রণই থাকবে না।আইন যত কঠিনই হোক না কেন, নজরদারি যত কঠোরই হোক না কেন, অবৈধ পথে অর্থ পাচার রোধ করা সম্ভব হবে না এবং অর্থের গন্তব্য দেশ সহযোগিতা না করলে পাচার করা অর্থ ফেরতও আনা যাবে না।
[লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও টাকশালের সাবেক এমডি]