নাজমুল হুদা খান
করোনার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের লড়াই এখনো চলছে। ২০২২ সালের মে মাসে আফ্রিকা অঞ্চলের বিরল মাঙ্কিপক্স হঠাৎই আফ্রিকার সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপ আমেরিকার বেশ কয়টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও ২০টি দেশে প্রায় ৩০০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছিল। ঝুঁকি থাকলেও সেবার বাংলাদেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি।
গত বছর আফ্রিকার দেশ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ রোগ মহাদেশটির মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি দেশ যথাÑ বুরুন্ডি, উগান্ডা, রুয়ান্ডায় ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে ২৭ হাজার মানুষের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১ হাজার ১০০ জনের বেশি। আক্রান্ত ও মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বড় অংশই শিশু। আফ্রিকার গ-ি পেরিয়ে সুইডেন, কেনিয়া ও পাকিস্তানেও এ সংক্রামক রোগটি পৌঁছে গেছে। তবে এসব দেশে কারও মৃত্যু ঘটেনি।
এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বাংলাদেশেও বিমানবন্দরগুলোকে বিশেষ সতর্কতা ও নির্দেশনা প্রদান করেছে।
মাঙ্কিপক্স এক ধরনের ভাইরাস সংক্রমিত রোগ। তবে রোগটির নাম মাঙ্কি ভাইরাস হলেও এ রোগের জীবাণুর আধার কিন্তু শুধু বানর নয়, ইঁদুর বা কাঠবিড়ালি জাতীয় প্রাণীর দেহেও এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে সর্বপ্রথম গবেষণায় ব্যবহৃত বানরের দেহে এ রোগ শনাক্ত হয় বলে এর নাম মাঙ্কিপক্স বলে ধারণা করা হয়।
মূলত সংক্রমিত ইঁদুর বা কাঠবিড়ালি জাতীয় প্রাণীকে খাবার হিসেবে ব্যবহারই প্রাথমিকভাবে এ রোগের কারণ হিসেবে জানা যায়। ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের এক গবেষণাগারে ব্যবহৃত বানরের শরীরে এ রোগ শনাক্ত হয়। তবে মানুষের শরীরে এ রোগের অস্তিত্ব পাওয়া যায় মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে ১৯৭০ সালে। ১৯৭০-৮০ সাল পর্যন্ত অর্ধশত মানুষ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়। তৎপরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে ১৯৮০-৯০ সময়কালে একই দেশে প্রায় তিন শতাধিক রোগীর সন্ধান মিলে যাদের ৩৩ জনের মৃত্যু ঘটে। এ সময় প্রতিবেশী দেশ লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্ট, সিয়েরালিওন ও নাইজেরিয়াতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯১-১৯৯৯ সালে কঙ্গোতে দ্বিতীয়বারের মতো এ রোগের সন্ধান মিলে। এ সময় প্রায় ৫০০ জনের দেহে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭০ জনের দেহে মাঙ্কিপক্স রোগ দেখা দেয়।
জরিপে দেখা যায় যে, ঘানা থেকে আমদানিকৃত একটি ইঁদুরের খামারে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে মূলত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। কঙ্গোতে পুনরায় ২০১১-১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে প্রায় ২০০০ জনের মধ্য এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। ২০১৭-১৯ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৩০০০ জন আক্রান্ত হয় নাইজেরিয়ায়। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে এবং ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে সর্বপ্রথম একজন করে ব্যক্তি মাঙ্কিপক্স রোগে সংক্রমিত হয়, যারা সমসাময়িক কালে নাইজেরিয়া ভ্রমণ করেছিল। ২০২১ সালে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই ব্যক্তির দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করা হয়, তারা দুজনই নাইজেরিয়া ফেরত ছিল। তবে ২০২২ সালের মে মাসেই প্রথম কমিউনিটিতে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ে; এমনকি তাদের আফ্রিকার কোন দেশে সফরের প্রমাণও মেলেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে মাথাব্যথা, পেশিব্যথা, জ্বর ও অবসাদ লাগা প্রভৃতি। উপসর্গগুলো জলবসন্ত, হাম এবং গুটি বসন্তের ন্যায়। তবে গলায়, কানে, থুঁতনি ও উরুর কুচকিতে লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থান; বিশেষ করে মুখ, হাত ও পায়ের তালু, যৌনাঙ্গ এবং চোখে পানিসহ ফুস্কুরি দেখা যায়। এসব উপসর্গের স্থায়িত্ব প্রায় ২ থেকে ৪ সপ্তাহ হয়ে থাকে। যদিও মাঙ্কিপক্সের সুপ্তাবস্থা বলা হয়ে থাকে ১০-১৪ দিন, তবে ৬-১৩ দিনের মধ্যেও উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
মৃত্যুহারের দিকে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যায় যে, কঙ্গোতে ধরনটির মৃত্যু হার অপেক্ষাকৃত বেশি (১০%) এবং পশ্চিম আফ্রিকার ধরনে মৃত্যুহার কম। মাঙ্কিপক্স প্রধানত সংক্রমিত প্রাণীর সংস্পর্শ, আঁচড়, কামড়, মাংস ভক্ষণ, নিঃসৃত বিভিন্ন তরলের সংস্রবের মাধ্যমে এ রোগ মানুষের দেহে ছড়ায়। মানুষের দেহে সংক্রমণের পর তার সংস্পর্শে আসা, একই বিছানা ও কাপড় চোপড় ব্যবহার বা শরীরের যে কোন ধরনের নিঃসরণের মাধ্যমেও অন্যের দেহে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ভাইরাস শরীরের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্ষত, নাক, মুখ ও চোখের ঝিল্লির মাধ্যমেও ছড়ায়। ২০২২ সালের সংক্রমণের পর সিডিসি বলেছে, রোগীর সংগ্রব বা যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণের হার বেশি। তবে আক্রান্তের একান্ত সান্নিধ্যে না আসাদের মধ্যে সংক্রমণের হার কম। মাঙ্কিপক্স যৌনবাহিত রোগ কিনা, তা নিয়ে মতপার্থক্য ও গবেষণা চলছে। কারণ ইউরোপ ও আমেরিকায় নতুনভাবে যাদের দেহে সংক্রমিত হয়েছে, তাদের কারো আফ্রিকার কোন সংক্রমিত দেশ ভ্রমণের তথ্য মেলেনি। এ ভাইরাসের ধরন বা বিস্তার কৌশল পরিবর্তনের ওপরও গবেষণা চলছে।
এ রোগে আক্রান্তের শরীরের ক্ষত থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে এ ভাইরাস শনাক্ত নিশ্চিত করা যায়। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সিডিসি বলেছে, এ রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই; কিন্তু এফডিএর মতে, প্রচলিত গুটি বসন্তের ভ্যাকসিন এ রোগের বিরুদ্ধে শতকরা ৮৫ ভাগ সফল। কতক এন্টিভাইরাল ওষুধেরও অনুমোদন দিয়েছে এ রোগের চিকিৎসায়। পাশাপাশি উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। চিকিৎসা বা সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী বা স্বজনদের এ রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে গাউন, মাস্ক, গ্লোভস ও গগলস প্রভৃতি পিপিই ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মাঙ্কিপক্স রোগ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য হয়তো অচিরেই আসবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কর্তৃক বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর বাংলাদেশ এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বিমান, স্থল ও নৌবন্দরসমূহকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আক্রান্ত দেশসমূহ থেকে আগত যাত্রীদের প্রতি বিশেষভাবে নজরদারির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উপসর্গযুক্ত যাত্রীদের কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গনিরোধে থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। হাসপাতালসমূহকে লক্ষণযুক্ত রোগীকে আইসোলেশনে রাখার পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে প্রেরণের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। আতঙ্ক নয়, মাঙ্কিপক্স রোগ বিষয়ে আমাদের সতর্ক ও সচেতন হওয়াই জরুরি।
[লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্রেষণে কুয়েতে নিযুক্ত]
নাজমুল হুদা খান
মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪
করোনার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের লড়াই এখনো চলছে। ২০২২ সালের মে মাসে আফ্রিকা অঞ্চলের বিরল মাঙ্কিপক্স হঠাৎই আফ্রিকার সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপ আমেরিকার বেশ কয়টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও ২০টি দেশে প্রায় ৩০০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছিল। ঝুঁকি থাকলেও সেবার বাংলাদেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি।
গত বছর আফ্রিকার দেশ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ রোগ মহাদেশটির মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি দেশ যথাÑ বুরুন্ডি, উগান্ডা, রুয়ান্ডায় ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে ২৭ হাজার মানুষের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১ হাজার ১০০ জনের বেশি। আক্রান্ত ও মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বড় অংশই শিশু। আফ্রিকার গ-ি পেরিয়ে সুইডেন, কেনিয়া ও পাকিস্তানেও এ সংক্রামক রোগটি পৌঁছে গেছে। তবে এসব দেশে কারও মৃত্যু ঘটেনি।
এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বাংলাদেশেও বিমানবন্দরগুলোকে বিশেষ সতর্কতা ও নির্দেশনা প্রদান করেছে।
মাঙ্কিপক্স এক ধরনের ভাইরাস সংক্রমিত রোগ। তবে রোগটির নাম মাঙ্কি ভাইরাস হলেও এ রোগের জীবাণুর আধার কিন্তু শুধু বানর নয়, ইঁদুর বা কাঠবিড়ালি জাতীয় প্রাণীর দেহেও এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে সর্বপ্রথম গবেষণায় ব্যবহৃত বানরের দেহে এ রোগ শনাক্ত হয় বলে এর নাম মাঙ্কিপক্স বলে ধারণা করা হয়।
মূলত সংক্রমিত ইঁদুর বা কাঠবিড়ালি জাতীয় প্রাণীকে খাবার হিসেবে ব্যবহারই প্রাথমিকভাবে এ রোগের কারণ হিসেবে জানা যায়। ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের এক গবেষণাগারে ব্যবহৃত বানরের শরীরে এ রোগ শনাক্ত হয়। তবে মানুষের শরীরে এ রোগের অস্তিত্ব পাওয়া যায় মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে ১৯৭০ সালে। ১৯৭০-৮০ সাল পর্যন্ত অর্ধশত মানুষ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়। তৎপরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে ১৯৮০-৯০ সময়কালে একই দেশে প্রায় তিন শতাধিক রোগীর সন্ধান মিলে যাদের ৩৩ জনের মৃত্যু ঘটে। এ সময় প্রতিবেশী দেশ লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্ট, সিয়েরালিওন ও নাইজেরিয়াতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯১-১৯৯৯ সালে কঙ্গোতে দ্বিতীয়বারের মতো এ রোগের সন্ধান মিলে। এ সময় প্রায় ৫০০ জনের দেহে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭০ জনের দেহে মাঙ্কিপক্স রোগ দেখা দেয়।
জরিপে দেখা যায় যে, ঘানা থেকে আমদানিকৃত একটি ইঁদুরের খামারে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে মূলত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। কঙ্গোতে পুনরায় ২০১১-১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে প্রায় ২০০০ জনের মধ্য এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। ২০১৭-১৯ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৩০০০ জন আক্রান্ত হয় নাইজেরিয়ায়। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে এবং ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে সর্বপ্রথম একজন করে ব্যক্তি মাঙ্কিপক্স রোগে সংক্রমিত হয়, যারা সমসাময়িক কালে নাইজেরিয়া ভ্রমণ করেছিল। ২০২১ সালে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই ব্যক্তির দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করা হয়, তারা দুজনই নাইজেরিয়া ফেরত ছিল। তবে ২০২২ সালের মে মাসেই প্রথম কমিউনিটিতে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ে; এমনকি তাদের আফ্রিকার কোন দেশে সফরের প্রমাণও মেলেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে মাথাব্যথা, পেশিব্যথা, জ্বর ও অবসাদ লাগা প্রভৃতি। উপসর্গগুলো জলবসন্ত, হাম এবং গুটি বসন্তের ন্যায়। তবে গলায়, কানে, থুঁতনি ও উরুর কুচকিতে লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থান; বিশেষ করে মুখ, হাত ও পায়ের তালু, যৌনাঙ্গ এবং চোখে পানিসহ ফুস্কুরি দেখা যায়। এসব উপসর্গের স্থায়িত্ব প্রায় ২ থেকে ৪ সপ্তাহ হয়ে থাকে। যদিও মাঙ্কিপক্সের সুপ্তাবস্থা বলা হয়ে থাকে ১০-১৪ দিন, তবে ৬-১৩ দিনের মধ্যেও উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
মৃত্যুহারের দিকে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যায় যে, কঙ্গোতে ধরনটির মৃত্যু হার অপেক্ষাকৃত বেশি (১০%) এবং পশ্চিম আফ্রিকার ধরনে মৃত্যুহার কম। মাঙ্কিপক্স প্রধানত সংক্রমিত প্রাণীর সংস্পর্শ, আঁচড়, কামড়, মাংস ভক্ষণ, নিঃসৃত বিভিন্ন তরলের সংস্রবের মাধ্যমে এ রোগ মানুষের দেহে ছড়ায়। মানুষের দেহে সংক্রমণের পর তার সংস্পর্শে আসা, একই বিছানা ও কাপড় চোপড় ব্যবহার বা শরীরের যে কোন ধরনের নিঃসরণের মাধ্যমেও অন্যের দেহে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ভাইরাস শরীরের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্ষত, নাক, মুখ ও চোখের ঝিল্লির মাধ্যমেও ছড়ায়। ২০২২ সালের সংক্রমণের পর সিডিসি বলেছে, রোগীর সংগ্রব বা যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণের হার বেশি। তবে আক্রান্তের একান্ত সান্নিধ্যে না আসাদের মধ্যে সংক্রমণের হার কম। মাঙ্কিপক্স যৌনবাহিত রোগ কিনা, তা নিয়ে মতপার্থক্য ও গবেষণা চলছে। কারণ ইউরোপ ও আমেরিকায় নতুনভাবে যাদের দেহে সংক্রমিত হয়েছে, তাদের কারো আফ্রিকার কোন সংক্রমিত দেশ ভ্রমণের তথ্য মেলেনি। এ ভাইরাসের ধরন বা বিস্তার কৌশল পরিবর্তনের ওপরও গবেষণা চলছে।
এ রোগে আক্রান্তের শরীরের ক্ষত থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে এ ভাইরাস শনাক্ত নিশ্চিত করা যায়। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সিডিসি বলেছে, এ রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই; কিন্তু এফডিএর মতে, প্রচলিত গুটি বসন্তের ভ্যাকসিন এ রোগের বিরুদ্ধে শতকরা ৮৫ ভাগ সফল। কতক এন্টিভাইরাল ওষুধেরও অনুমোদন দিয়েছে এ রোগের চিকিৎসায়। পাশাপাশি উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। চিকিৎসা বা সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী বা স্বজনদের এ রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে গাউন, মাস্ক, গ্লোভস ও গগলস প্রভৃতি পিপিই ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মাঙ্কিপক্স রোগ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য হয়তো অচিরেই আসবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কর্তৃক বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর বাংলাদেশ এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বিমান, স্থল ও নৌবন্দরসমূহকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আক্রান্ত দেশসমূহ থেকে আগত যাত্রীদের প্রতি বিশেষভাবে নজরদারির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উপসর্গযুক্ত যাত্রীদের কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গনিরোধে থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। হাসপাতালসমূহকে লক্ষণযুক্ত রোগীকে আইসোলেশনে রাখার পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে প্রেরণের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। আতঙ্ক নয়, মাঙ্কিপক্স রোগ বিষয়ে আমাদের সতর্ক ও সচেতন হওয়াই জরুরি।
[লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্রেষণে কুয়েতে নিযুক্ত]