alt

উপ-সম্পাদকীয়

নাসা : বিজ্ঞানের পীঠস্থান

শঙ্কর প্রসাদ দে

: শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

মোটামুটি গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশ গবেষণা এগিয়ে নিচ্ছিল। আমেরিকান সমাজে কানাঘুষা চলছিল, রাশিয়ানরা কিছু একটা করতে যাচ্ছে; ৪ অক্টোবর ১৯৫৭, কোল্ড ওয়ার সময়কাল বলে কথা। সাপ-নেউলের শত্রুতাকে হার মানিয়েছিল রুশ-মার্কিন বৈরিতা। ভোরের হালকা আলো ভেদ করে দৌড় লাগাল মানুষের তৈরি প্রথম রুশ কৃত্রিম উপগ্রহ। অস্থির হয়ে পড়ল মার্কিন আপামর জনতা। প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার নির্দেশ দিলেন রাখো তোমাদের সুপারসনিক রকেট গবেষণা। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত NACA অর্থাৎ ন্যাশনাল এডভাইজারি কমিটি ফর এরোনটিকস বাতিল করে ১ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় NASA অর্থাৎ ন্যাশনাল এরোনটিকস অ্যান্ড স্পেস এডমিনিট্রেশন।

এটি এমন একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান, সরকার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করলেও সংস্থার কাজকর্মে সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান খবরদারি করে না। ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টা। পৌঁছে গেলাম ওয়াশিংটনের নাসার সদর দপ্তরে। ছিমছাম সিম্পল ৫-৬ তলা একটি বিল্ডিং। জৌলুশ নেই, বাহার নেই, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীও চোখে পড়ল না। আসলে সদর দপ্তরে উৎক্ষেপণ ও গবেষণা কেন্দ্রের দাপ্তরিক সমন্বয়, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, নানাবিধ ব্যয় অনুমোদন বিষয়েই দেখভাল করা হয়। উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলো হলো (১) জন এফ কেনেডী স্পেস সেন্টার (২) কেইপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন (৩) ভ্যান্ডেনবার্গ এয়ার ফোর্স বেইজ। সবচে বেশি উৎক্ষেপণ হয় কেনেডী স্পেস সেন্টার থেকে। আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম চৌকস, জনপ্রিয় ও সুদর্শন প্রেসিডেন্ট কেনেডীর প্রবল উৎসাহের স্বীকৃতিস্বরূপ তার জীবদ্দশাতেই ১ জুলাই ১৯৬২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আটলান্টিকের কোলঘেঁষে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মেরিট এলাকাটি একাধারে আদর্শিক, প্রকৃতিক নৈসর্গম-িত ও যুতসই। প্রায় বসতিহীন দ্বীপটি হয়ে উঠেছে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। ১৬ জুলাই ১৯৬৯ তারিখে এই স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটার্ন ফাইভ উৎক্ষেপণ যান থেকে অ্যাপোলো ১১ চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। স্পেস ফোর্স স্টেশন মূলত বিমান বাহিনীর একটি সামরিক ইউনিট। কেনেডী সেন্টারের পাশর্^বর্তী দ্বীপ ক্যাপ ক্যানভেরাল।

এই উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে প্রতি বছর উৎক্ষেপিত হয় কোন না কেন উপগ্রহ। পরবর্তীতে শনি, বুধ, শুক্র, মঙ্গল গ্রহকে ফ্লাইবাই করা মহাকাশ নভোযানগুলো উৎক্ষেপণের আদর্শ স্থান। ১৯৭৭ সালে আন্তনাক্ষত্রিক নভোযান ভয়েজার-২ ও ভয়েজার-১ উৎক্ষেপিত হয়েছে এই স্টেশন থেকে। তৃতীয় উৎক্ষেপণ স্টেশনটির নাম ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স স্টেশন। ১৯৪১ সালে ভ্যান্ডেনবার্গ বিমান ঘাঁটিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে নাসা এটিকে ব্যবহার করে মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে। মহাকাশে মানব উপস্থিতির সম্ভাব্য শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা ও অন্যান্য টেকনিক্যাল বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। এখনো সচল অথবা আয়ুষ্কালের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছা মহাকাশ স্টেশনটি নির্মিত হয়েছিল এই উৎক্ষেপণ স্টেশনকে ব্যবহার করে। নভোচারীরা হরহামেশাই এই স্টেশন থেকে পাড়ি দিচ্ছেন মহাকাশ স্টেশনে। নাসার সবচে গৌরবজনক দিক হলো, বর্তমানে এটি অন্য দেশের স্পেস এজেন্সিগুলোর জন্য নিজেদের উন্মুক্ত করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেলেমেয়েরা আমেরিকা এসে মহাকাশের ওপর প্রয়োজনীয় কোর্স সম্পন্নের পর নাসার বিভিন্ন প্রজেক্টে ঢোকার সুযোগ পায়। এই তো গত ডিসেম্বরে নাসার পরিচালক বিল নেলসন ভারত সফরে এসে ইসরো পরিদর্শন করেন এবং ইসরোর সঙ্গে যৌথভাবে উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, মহাকাশ স্টেশন ও চন্দ্রাভিযানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। খুশির বন্যা বয়ে গেছে ভারতীয় বিজ্ঞানমনষ্কদের মাঝে।

ইসরোপ্রধান সোমনাথ ২ জন ভারতীয় নভোচারীকে মহাকাশ স্টেশনে প্রেরণের আগ্রহ প্রকাশ করলে নেলসন তা সাদরে গ্রহণ করেন। নাসার সঙ্গে ইউরোপীয়, জাপান, চীন, ইসরায়েল, ফ্রান্সের যৌথ প্রকল্প এই শতাব্দীর শুরু থেকে প্রবল, এখন যোগ হয়েছে ভারত। ভারতীয় ছেলেমেয়েরা এখন মঙ্গল আর চাঁদে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। এতক্ষণ পৃথিবীব্যাপী সরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলোর কথা বললাম। সর্বশেষ বিষ্ময়ের জন্মদাতা হলেন ‘স্পেস এক্সের’ এলোন মাক্স। এই ভদ্রলোক গলা ফাটিয়ে বললেন, একবার ব্যবহার করে রকেট গারভেজে ফেলে দেয়ার রীতি তিনি ভাঙবেন। হাতে নিলেন পূর্ণব্যবহারযোগ্য (রি ইউজেবল) রকেট প্রযুক্তি। যেই কথা সেই কাজ। বারবার ব্যবহার যোগ্য রকেট প্রস্তাব লুফে নিল নাসা। ‘স্পেস এক্স’ সত্যি সত্যি অমন রকেট বানিয়েই ছাড়ল এখন রিউজেবল রকেটের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্ব চলছে। মহাকাশ ছোঁয়ার উচ্চাভিলাষী মহাকাশ প্রকল্প। চাঁদ ও মঙ্গলে খাবার পরিবহনের জন্য পরিবহন নভোযান বানানোর ঘোষণা দিয়ে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্পেস এক্স’। মজার ব্যাপার হলো নাসাসহ পৃথিবীর রাষ্ট্রীয় মহাকাশ সংস্থাগুলো পরিচালিত হয় সম্পূর্ণ সরকারি টাকায়। অথচ গোটা পৃথিবীকে চমকে দিয়ে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এলোন মাক্স বাস্তবায়ন করে চলেছেন একের পর এক প্রকল্প। একটি উদাহরণ দেয়াই যথেষ্ট। কয়েক বছর আগে তিনি নাসাকে অনেক কম দামে জ¦ালানি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাবটি শুধু নাসার মনোপূত হয়েছে তাই-ই নয়; ইউরোপীয়, ফ্রান্স, ইসরায়েল মহাকাশ সংস্থা ‘স্পেস এক্সের’ জ¦ালানি কিনছে কম দামে। মহাকাশ চর্চা মানব জাতির সর্বশেষ জ্ঞান অন্বেষণের জগৎ। এর আয়ু বড়জোর আশি বছর। এই আশি বছরে মানুষ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ মাইল উপরে শূন্যে ঘরবাড়ি অর্থাৎ মহাকাশ স্টেশন বানিয়েছে। ডজন ডজন ক্যামেরা অর্থাৎ উপগ্রহ ঘুরছে কক্ষপথে। বিল নেলসন সেদিন বলেছেন অতি শ্রীঘ্রই নাসা মহাকাশে ক্যান্সার চিকিৎসার ওপর গবেষণাগার স্থাপন করতে চলেছেন। বিজ্ঞানীদের অভিমত ‘কিট্রুস’ নামের ক্যান্সারের ওষুধটি বর্তমানে শিরার মধ্যে পুশ করতে হয়। এটি তরল ডোজে রূপান্তর করার প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মহাশূন্যের ভরশূন্য পরিবেশই হলো উত্তম বিকল্প। চাঁদে স্থায়ী মহাকাশ স্টেশন আর মঙ্গলে মনুষ্য বসতি স্থাপনের স্বপ্ন বাদই দিলুম। অনাগত দিন হোক বিজ্ঞানের, জয় হোক নাসার।

[লেখক : আইনজীবী]

ধর্মীয় স্বাধীনতা ও কঠিন চীবরদান

ছবি

দুর্গাপূজার মর্মবাণী

মানুষ মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা পাবে কীভাবে

গুজব ও মিথ্যা তথ্য : সমাজের এক ভয়াবহ ব্যাধি

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন

পুরাতত্ত্বের ধারায় সনাতনী সমাজের দুর্গাপূজা

জীবন-মৃত্যু কী?

শিক্ষা সংস্কারে প্রথাগত চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

সাংঘাতিক ভাই, সাংঘাতিক...

প্রযুক্তির মায়াজালে বন্দি মানুষ

ছবি

এসএম সুলতান : সংস্কৃতি সত্তার সত্যপাঠ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

তরুণ সমাজ ও প্রযুক্তি নির্ভরতা : সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তন ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

বগুড়ার তাঁতপল্লী

অটিজম কোনো রোগ নয়

জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কি আইনসম্মত

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে কতদিন সহায়তা দেয়া হবে?

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য বয়সবৈষম্য দূর করুন

আসন্ন বোরো উৎপাদন ও কিছু শঙ্কা

ছবি

আইন পেশার জানা-অজানা কথা

ছবি

ব্যাংক খাতের সংকট

একাকিত্ব ও মানসিক অশান্তি

বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষক সমাজ

ব্রি: কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর

ক্রেতা ঠকে গেলে তার আইনগত প্রতিকার

ঢাকার যানজট : কিছু প্রস্তাব

রম্যগদ্য : দারিদ্র্য যাবে জাদুঘরে

গার্মেন্টস খাতে সংকট

সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থাপনায় করুণ দশা

ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কী

শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার বাড়াতে

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির দুর্বলতা

ইরানের কেন কৌশলগত পরিবর্তন

শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক

রামু ট্র্যাজেডির এক যুগ

প্রত্যাশিত শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবিত রূপরেখা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নাসা : বিজ্ঞানের পীঠস্থান

শঙ্কর প্রসাদ দে

শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

মোটামুটি গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশ গবেষণা এগিয়ে নিচ্ছিল। আমেরিকান সমাজে কানাঘুষা চলছিল, রাশিয়ানরা কিছু একটা করতে যাচ্ছে; ৪ অক্টোবর ১৯৫৭, কোল্ড ওয়ার সময়কাল বলে কথা। সাপ-নেউলের শত্রুতাকে হার মানিয়েছিল রুশ-মার্কিন বৈরিতা। ভোরের হালকা আলো ভেদ করে দৌড় লাগাল মানুষের তৈরি প্রথম রুশ কৃত্রিম উপগ্রহ। অস্থির হয়ে পড়ল মার্কিন আপামর জনতা। প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার নির্দেশ দিলেন রাখো তোমাদের সুপারসনিক রকেট গবেষণা। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত NACA অর্থাৎ ন্যাশনাল এডভাইজারি কমিটি ফর এরোনটিকস বাতিল করে ১ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় NASA অর্থাৎ ন্যাশনাল এরোনটিকস অ্যান্ড স্পেস এডমিনিট্রেশন।

এটি এমন একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান, সরকার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করলেও সংস্থার কাজকর্মে সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান খবরদারি করে না। ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টা। পৌঁছে গেলাম ওয়াশিংটনের নাসার সদর দপ্তরে। ছিমছাম সিম্পল ৫-৬ তলা একটি বিল্ডিং। জৌলুশ নেই, বাহার নেই, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীও চোখে পড়ল না। আসলে সদর দপ্তরে উৎক্ষেপণ ও গবেষণা কেন্দ্রের দাপ্তরিক সমন্বয়, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, নানাবিধ ব্যয় অনুমোদন বিষয়েই দেখভাল করা হয়। উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলো হলো (১) জন এফ কেনেডী স্পেস সেন্টার (২) কেইপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন (৩) ভ্যান্ডেনবার্গ এয়ার ফোর্স বেইজ। সবচে বেশি উৎক্ষেপণ হয় কেনেডী স্পেস সেন্টার থেকে। আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম চৌকস, জনপ্রিয় ও সুদর্শন প্রেসিডেন্ট কেনেডীর প্রবল উৎসাহের স্বীকৃতিস্বরূপ তার জীবদ্দশাতেই ১ জুলাই ১৯৬২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আটলান্টিকের কোলঘেঁষে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মেরিট এলাকাটি একাধারে আদর্শিক, প্রকৃতিক নৈসর্গম-িত ও যুতসই। প্রায় বসতিহীন দ্বীপটি হয়ে উঠেছে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। ১৬ জুলাই ১৯৬৯ তারিখে এই স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটার্ন ফাইভ উৎক্ষেপণ যান থেকে অ্যাপোলো ১১ চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। স্পেস ফোর্স স্টেশন মূলত বিমান বাহিনীর একটি সামরিক ইউনিট। কেনেডী সেন্টারের পাশর্^বর্তী দ্বীপ ক্যাপ ক্যানভেরাল।

এই উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে প্রতি বছর উৎক্ষেপিত হয় কোন না কেন উপগ্রহ। পরবর্তীতে শনি, বুধ, শুক্র, মঙ্গল গ্রহকে ফ্লাইবাই করা মহাকাশ নভোযানগুলো উৎক্ষেপণের আদর্শ স্থান। ১৯৭৭ সালে আন্তনাক্ষত্রিক নভোযান ভয়েজার-২ ও ভয়েজার-১ উৎক্ষেপিত হয়েছে এই স্টেশন থেকে। তৃতীয় উৎক্ষেপণ স্টেশনটির নাম ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স স্টেশন। ১৯৪১ সালে ভ্যান্ডেনবার্গ বিমান ঘাঁটিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে নাসা এটিকে ব্যবহার করে মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে। মহাকাশে মানব উপস্থিতির সম্ভাব্য শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা ও অন্যান্য টেকনিক্যাল বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। এখনো সচল অথবা আয়ুষ্কালের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছা মহাকাশ স্টেশনটি নির্মিত হয়েছিল এই উৎক্ষেপণ স্টেশনকে ব্যবহার করে। নভোচারীরা হরহামেশাই এই স্টেশন থেকে পাড়ি দিচ্ছেন মহাকাশ স্টেশনে। নাসার সবচে গৌরবজনক দিক হলো, বর্তমানে এটি অন্য দেশের স্পেস এজেন্সিগুলোর জন্য নিজেদের উন্মুক্ত করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেলেমেয়েরা আমেরিকা এসে মহাকাশের ওপর প্রয়োজনীয় কোর্স সম্পন্নের পর নাসার বিভিন্ন প্রজেক্টে ঢোকার সুযোগ পায়। এই তো গত ডিসেম্বরে নাসার পরিচালক বিল নেলসন ভারত সফরে এসে ইসরো পরিদর্শন করেন এবং ইসরোর সঙ্গে যৌথভাবে উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, মহাকাশ স্টেশন ও চন্দ্রাভিযানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। খুশির বন্যা বয়ে গেছে ভারতীয় বিজ্ঞানমনষ্কদের মাঝে।

ইসরোপ্রধান সোমনাথ ২ জন ভারতীয় নভোচারীকে মহাকাশ স্টেশনে প্রেরণের আগ্রহ প্রকাশ করলে নেলসন তা সাদরে গ্রহণ করেন। নাসার সঙ্গে ইউরোপীয়, জাপান, চীন, ইসরায়েল, ফ্রান্সের যৌথ প্রকল্প এই শতাব্দীর শুরু থেকে প্রবল, এখন যোগ হয়েছে ভারত। ভারতীয় ছেলেমেয়েরা এখন মঙ্গল আর চাঁদে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। এতক্ষণ পৃথিবীব্যাপী সরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলোর কথা বললাম। সর্বশেষ বিষ্ময়ের জন্মদাতা হলেন ‘স্পেস এক্সের’ এলোন মাক্স। এই ভদ্রলোক গলা ফাটিয়ে বললেন, একবার ব্যবহার করে রকেট গারভেজে ফেলে দেয়ার রীতি তিনি ভাঙবেন। হাতে নিলেন পূর্ণব্যবহারযোগ্য (রি ইউজেবল) রকেট প্রযুক্তি। যেই কথা সেই কাজ। বারবার ব্যবহার যোগ্য রকেট প্রস্তাব লুফে নিল নাসা। ‘স্পেস এক্স’ সত্যি সত্যি অমন রকেট বানিয়েই ছাড়ল এখন রিউজেবল রকেটের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্ব চলছে। মহাকাশ ছোঁয়ার উচ্চাভিলাষী মহাকাশ প্রকল্প। চাঁদ ও মঙ্গলে খাবার পরিবহনের জন্য পরিবহন নভোযান বানানোর ঘোষণা দিয়ে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্পেস এক্স’। মজার ব্যাপার হলো নাসাসহ পৃথিবীর রাষ্ট্রীয় মহাকাশ সংস্থাগুলো পরিচালিত হয় সম্পূর্ণ সরকারি টাকায়। অথচ গোটা পৃথিবীকে চমকে দিয়ে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এলোন মাক্স বাস্তবায়ন করে চলেছেন একের পর এক প্রকল্প। একটি উদাহরণ দেয়াই যথেষ্ট। কয়েক বছর আগে তিনি নাসাকে অনেক কম দামে জ¦ালানি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাবটি শুধু নাসার মনোপূত হয়েছে তাই-ই নয়; ইউরোপীয়, ফ্রান্স, ইসরায়েল মহাকাশ সংস্থা ‘স্পেস এক্সের’ জ¦ালানি কিনছে কম দামে। মহাকাশ চর্চা মানব জাতির সর্বশেষ জ্ঞান অন্বেষণের জগৎ। এর আয়ু বড়জোর আশি বছর। এই আশি বছরে মানুষ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ মাইল উপরে শূন্যে ঘরবাড়ি অর্থাৎ মহাকাশ স্টেশন বানিয়েছে। ডজন ডজন ক্যামেরা অর্থাৎ উপগ্রহ ঘুরছে কক্ষপথে। বিল নেলসন সেদিন বলেছেন অতি শ্রীঘ্রই নাসা মহাকাশে ক্যান্সার চিকিৎসার ওপর গবেষণাগার স্থাপন করতে চলেছেন। বিজ্ঞানীদের অভিমত ‘কিট্রুস’ নামের ক্যান্সারের ওষুধটি বর্তমানে শিরার মধ্যে পুশ করতে হয়। এটি তরল ডোজে রূপান্তর করার প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মহাশূন্যের ভরশূন্য পরিবেশই হলো উত্তম বিকল্প। চাঁদে স্থায়ী মহাকাশ স্টেশন আর মঙ্গলে মনুষ্য বসতি স্থাপনের স্বপ্ন বাদই দিলুম। অনাগত দিন হোক বিজ্ঞানের, জয় হোক নাসার।

[লেখক : আইনজীবী]

back to top