সিরাজ প্রামাণিক
কুষ্টিয়া শহরের অদূরে একটি ছায়াঘেরা নিবিড় গ্রাম ছেঁউড়িয়া। এক পাশে শান্ত নদী গড়াই, অন্য পাশে কালিগঙ্গা। এখানেই বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের সমাধি। ১৭ অক্টোবর তার ১৩৪তম তিরোধান দিবস। একদিন ভোর বেলায় ষোল-সতেরো বছর বয়সের অচেতন অবস্থায় কিশোর লালন ভাসতে ভাসতে কালিগঙ্গা নদীর তীরে আসেন। ওই দিন ভোরবেলা মাওলানা মলম শাহ ফজরের নামাজ পড়ে কালিগঙ্গা নদীর দিকে সকালের মৃদু বাতাসে শরীর জুড়ানোর জন্য গিয়েছিলেন। হঠাৎই দেখতে পেলেন এক অচেনা সংজ্ঞাহীন কিশোর অর্ধজলমগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে, ছেলেটির মুখে ও শরীরে বসন্ত রোগের দাগ। তিনি কাছে গিয়ে দেখলেন ছেলেটি বেঁচে আছে,
খুব ধীরলয়ে চলছে শ্বাস-প্রশ্বাস।
নিঃসন্তান হাফেজ মলমের বুকের ভেতর হু হু করে উঠল, এ কোনো অচেনা যুবক নয়; খোদা যেন তার সন্তানকেই ভাসিয়ে এনেছেন তার কাছে। মলম শাহ তখনই বাড়ি ফিরলেন এবং তার অপর তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে এলেন। এবার চার ভাইয়ে ধরাধরি করে অচেনা যুবককে নিজের বাড়িতে আনলেন। মলম শাহ ও মতিজান দিন-রাত সেবাযতœ করতে লাগলেন। দিন দিন অচেনা যুবকটির মুখে জীবনের আলো ফিরে এলো।
মতিজান জিজ্ঞাসা করল, বাবা তোমার নাম কী? ফকির লালন। আমৃত্যু ফকির লালন ছেঁউড়িয়াতেই ছিলেন, মৃত্যুর পর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতেই তার সমাধি নির্মিত হয়। ছেঁউড়িয়াভিত্তিক লালনের জীবন-বৃত্তান্ত বিস্তারিতভাবে খুঁজে পাওয়া যায় ফকির আনোয়ার হোসেন মন্টু শাহ সম্পাদিত ‘লালন সংগীত’ নামক গ্রন্থে। লালন কোথায় ছিল, কীভাবে কালিগঙ্গা দিয়ে ভেসে এলো সব বিষয়ে যেসব তথ্য পাওয়া যায় তা সর্বজনগ্রাহ্য নয়। কথিত আছে, গঙ্গাস্নান সেরে
ফেরার পথে লালন বসন্ত রোগে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। রোগের প্রকোপে অচেতন হয়ে পড়লে সঙ্গী-সাথীরা তাকে মৃত মনে করে রোগ সংক্রমণের ভয়ে তাড়াতাড়ি নদীতে ফেলে দেন।
লালনের জন্মস্থান সম্পর্কে লালন গবেষক ড. আনোয়ারুল করিমের ধারণাটি ছিল অনবদ্য, ‘আমি দীর্ঘ ১০ বছর লালন ফকিরের জীবনী সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করে বেড়িয়েছি। কিন্তু তার জাতিত্ব পরিচয় রহস্যাবৃত।’ আসলে লালন নিজেও তার জন্ম পরিচয় দিতে উৎসাহবোধ করেননি, তা তার গানেই স্পষ্ট ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/ লালন কয় জাতের কি রূপ/ দেখলাম না এই নজরে।’
সত্যিই তাই, জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে লালন নিজেকে শুধুই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে গেছেন। লালন হিন্দু কী মুসলমান, এ নিয়েও বিস্তর মতামত পাওয়া যায়। কারও মতে, লালন কায়স্ত পরিবারের সন্তান যার পিতা মাধব এবং মাতা পদ্মাবতী; পরে লালন ধর্মান্তরিত হন। গবেষকদের মতে, বেশিরভাগই মনে করেন লালন মুসলিম তন্তুবায়ী পরিবারের সন্তান। লালন ফকির নিজের
জাত-পরিচয় দিয়ে গিয়ে বলেছেন ‘সব লোকে কয় লালন ফকির কোন জাতের ছেলে/কারে বা কী বলি আমি/দিশে না মেলে।’
রোগমুক্তির কিছুদিন পর লালন ফকির বিদায় চাইলেন, বললেন ‘আমি সংসারত্যাগী মানুষ; এই ভবসংসারে আমার ঠাঁই নেই।’ কথিত আছে, লালন অলৌকিকভাবে হেঁটে ওই সময়কার প্রমত্তা কালিগঙ্গা পার হয়ে যান। পরে অবশ্য মলম ডিঙি নৌকা নিয়ে পার হয়ে প্রায় দৌড়ে গিয়ে লালনকে ধরে ফেলেন এবং ছেঁউড়িয়া ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যথিত হৃদয়ে অনুরোধ করেন। লালন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলেন, ‘যেতে পারি তবে আমার জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।’ নিঃসন্তান মলম তার প্রিয় সন্তানের কথা রাখলেন। কালিগঙ্গা নদীর তীরে শ্যামল বৃক্ষম-িত মলমের বাগানে তৈরি হলো চৌচালা ঘর আর আখড়াবাড়ি। চৌচালা ঘরটি লালন সাধনকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করতেন। কালের নিয়মে ছনের ঘরটি বিলীন হয়ে গেলেও মহান সাধক লালনের পরশমাখা সাধনকক্ষের কপাটজোড়া এবং জলচৌকি এখনও লালন একাডেমির জাদুঘরে রাখা আছে।
এই আখড়াবাড়িটিই ক্রমে লালন সাধনার পুণ্যধামে পরিণত হয়। ফজরের নামাজের পর মাওলানা মলম কোরআন তেলাওয়াত করতেন, ফকির লালন মনোযোগ দিয়ে তেলাওয়াত শুনতেন, মানে জিজ্ঞাসা করতেন। লালন কোরআনের কিছু কিছু আয়াতের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করতেন।
লালন মুখে মুখেই গানের পদ রচনা করতেন। তার মনে নতুন গান উদয় হলে তিনি শিষ্যদের ডেকে বলতেন, ‘পোনা মাছের ঝাঁক এসেছে।’ লালন গেয়ে শোনাতেন, ফকির মানিক ও মনিরুদ্দিন শাহ সেই বাঁধা গান লিখে নিতেন। লালনের জীবদ্দশাতেই তার গান বহুল
জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ফকির মানিক শাহ সেই সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ গায়ক ছিলেন। লালনের শিষ্যদের ধারণা, তার গানের সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এত বিপুলসংখ্যক গান পাওয়া যায় না। শোনা যায়, লালনের কোনো কোনো শিষ্যের মৃত্যুর পর গানের খাতা তাদের কবরে পুঁতে দেয়া হয়। এছাড়াও অনেক ভক্ত গানের খাতা নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেননি।
ছেঁউড়িয়ায় কয়েক বছর থাকার পর লালন তার শিষ্যদের ডেকে বললেন, আমি কয়েক দিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি, তোমরা আমার সাধনকক্ষটার দেখাশোনা করো। সপ্তাহ তিনেক পর তিনি একটি অল্পবয়স্কা সুশ্রী যুবতীকে নিয়ে ফিরলেন। মতিজান ফকিরানী জিজ্ঞাসা
করলেন, মেয়েটা কে বাবা? জানান, তোমাদের গুরুমা। একথা শোনার পর আখড়াবাড়ির সবাই গুরুমাকে ভক্তি করলেন। বিশখা নামের এই মেয়েটি সারা জীবন লালনের সঙ্গে ছিলেন।
লালনের মৃত্যুর ৩ মাস পর তিনি মারা যান। বিশখা ফকিরানী প্রায় একশ বছর ধরে ছেঁউড়িয়ায় ছিলেন, কিন্তু তার প্রকৃত নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এমনকি মৃত্যুর পরও তার কোনো আত্মীয় বা পরিচিত জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অচিন মানুষ ফকির লালনের মতোই বিশখা ফকিরানী আজও এক অচিন নারী।
ফকির লালনের জন্ম সাল জানা যায়নি, তিনি ১ কার্তিক ১২৯৭ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে মারা যান এবং তিনি বেঁচে ছিলেন ১১৬ বছর। সে হিসাবে তিনি জন্মেছিলেন ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে। ছেঁউড়িয়াতে ফকির লালনের সঙ্গে তার পালিত মা মতিজান ফকিরানী, পালিত বাবা মলম শাহ, ফকির ম-িত মানিক শাহ, শীতল শাহ, ভোলাই শাহ, বিশখা ফকিরানী এবং ফকির মনিরুদ্দিন শাহসহ অন্য আরও অনেক ভাবশিষ্যের সমাধি আছে।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট ]
সিরাজ প্রামাণিক
বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
কুষ্টিয়া শহরের অদূরে একটি ছায়াঘেরা নিবিড় গ্রাম ছেঁউড়িয়া। এক পাশে শান্ত নদী গড়াই, অন্য পাশে কালিগঙ্গা। এখানেই বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের সমাধি। ১৭ অক্টোবর তার ১৩৪তম তিরোধান দিবস। একদিন ভোর বেলায় ষোল-সতেরো বছর বয়সের অচেতন অবস্থায় কিশোর লালন ভাসতে ভাসতে কালিগঙ্গা নদীর তীরে আসেন। ওই দিন ভোরবেলা মাওলানা মলম শাহ ফজরের নামাজ পড়ে কালিগঙ্গা নদীর দিকে সকালের মৃদু বাতাসে শরীর জুড়ানোর জন্য গিয়েছিলেন। হঠাৎই দেখতে পেলেন এক অচেনা সংজ্ঞাহীন কিশোর অর্ধজলমগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে, ছেলেটির মুখে ও শরীরে বসন্ত রোগের দাগ। তিনি কাছে গিয়ে দেখলেন ছেলেটি বেঁচে আছে,
খুব ধীরলয়ে চলছে শ্বাস-প্রশ্বাস।
নিঃসন্তান হাফেজ মলমের বুকের ভেতর হু হু করে উঠল, এ কোনো অচেনা যুবক নয়; খোদা যেন তার সন্তানকেই ভাসিয়ে এনেছেন তার কাছে। মলম শাহ তখনই বাড়ি ফিরলেন এবং তার অপর তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে এলেন। এবার চার ভাইয়ে ধরাধরি করে অচেনা যুবককে নিজের বাড়িতে আনলেন। মলম শাহ ও মতিজান দিন-রাত সেবাযতœ করতে লাগলেন। দিন দিন অচেনা যুবকটির মুখে জীবনের আলো ফিরে এলো।
মতিজান জিজ্ঞাসা করল, বাবা তোমার নাম কী? ফকির লালন। আমৃত্যু ফকির লালন ছেঁউড়িয়াতেই ছিলেন, মৃত্যুর পর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতেই তার সমাধি নির্মিত হয়। ছেঁউড়িয়াভিত্তিক লালনের জীবন-বৃত্তান্ত বিস্তারিতভাবে খুঁজে পাওয়া যায় ফকির আনোয়ার হোসেন মন্টু শাহ সম্পাদিত ‘লালন সংগীত’ নামক গ্রন্থে। লালন কোথায় ছিল, কীভাবে কালিগঙ্গা দিয়ে ভেসে এলো সব বিষয়ে যেসব তথ্য পাওয়া যায় তা সর্বজনগ্রাহ্য নয়। কথিত আছে, গঙ্গাস্নান সেরে
ফেরার পথে লালন বসন্ত রোগে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। রোগের প্রকোপে অচেতন হয়ে পড়লে সঙ্গী-সাথীরা তাকে মৃত মনে করে রোগ সংক্রমণের ভয়ে তাড়াতাড়ি নদীতে ফেলে দেন।
লালনের জন্মস্থান সম্পর্কে লালন গবেষক ড. আনোয়ারুল করিমের ধারণাটি ছিল অনবদ্য, ‘আমি দীর্ঘ ১০ বছর লালন ফকিরের জীবনী সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করে বেড়িয়েছি। কিন্তু তার জাতিত্ব পরিচয় রহস্যাবৃত।’ আসলে লালন নিজেও তার জন্ম পরিচয় দিতে উৎসাহবোধ করেননি, তা তার গানেই স্পষ্ট ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/ লালন কয় জাতের কি রূপ/ দেখলাম না এই নজরে।’
সত্যিই তাই, জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে লালন নিজেকে শুধুই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে গেছেন। লালন হিন্দু কী মুসলমান, এ নিয়েও বিস্তর মতামত পাওয়া যায়। কারও মতে, লালন কায়স্ত পরিবারের সন্তান যার পিতা মাধব এবং মাতা পদ্মাবতী; পরে লালন ধর্মান্তরিত হন। গবেষকদের মতে, বেশিরভাগই মনে করেন লালন মুসলিম তন্তুবায়ী পরিবারের সন্তান। লালন ফকির নিজের
জাত-পরিচয় দিয়ে গিয়ে বলেছেন ‘সব লোকে কয় লালন ফকির কোন জাতের ছেলে/কারে বা কী বলি আমি/দিশে না মেলে।’
রোগমুক্তির কিছুদিন পর লালন ফকির বিদায় চাইলেন, বললেন ‘আমি সংসারত্যাগী মানুষ; এই ভবসংসারে আমার ঠাঁই নেই।’ কথিত আছে, লালন অলৌকিকভাবে হেঁটে ওই সময়কার প্রমত্তা কালিগঙ্গা পার হয়ে যান। পরে অবশ্য মলম ডিঙি নৌকা নিয়ে পার হয়ে প্রায় দৌড়ে গিয়ে লালনকে ধরে ফেলেন এবং ছেঁউড়িয়া ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যথিত হৃদয়ে অনুরোধ করেন। লালন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলেন, ‘যেতে পারি তবে আমার জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।’ নিঃসন্তান মলম তার প্রিয় সন্তানের কথা রাখলেন। কালিগঙ্গা নদীর তীরে শ্যামল বৃক্ষম-িত মলমের বাগানে তৈরি হলো চৌচালা ঘর আর আখড়াবাড়ি। চৌচালা ঘরটি লালন সাধনকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করতেন। কালের নিয়মে ছনের ঘরটি বিলীন হয়ে গেলেও মহান সাধক লালনের পরশমাখা সাধনকক্ষের কপাটজোড়া এবং জলচৌকি এখনও লালন একাডেমির জাদুঘরে রাখা আছে।
এই আখড়াবাড়িটিই ক্রমে লালন সাধনার পুণ্যধামে পরিণত হয়। ফজরের নামাজের পর মাওলানা মলম কোরআন তেলাওয়াত করতেন, ফকির লালন মনোযোগ দিয়ে তেলাওয়াত শুনতেন, মানে জিজ্ঞাসা করতেন। লালন কোরআনের কিছু কিছু আয়াতের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করতেন।
লালন মুখে মুখেই গানের পদ রচনা করতেন। তার মনে নতুন গান উদয় হলে তিনি শিষ্যদের ডেকে বলতেন, ‘পোনা মাছের ঝাঁক এসেছে।’ লালন গেয়ে শোনাতেন, ফকির মানিক ও মনিরুদ্দিন শাহ সেই বাঁধা গান লিখে নিতেন। লালনের জীবদ্দশাতেই তার গান বহুল
জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ফকির মানিক শাহ সেই সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ গায়ক ছিলেন। লালনের শিষ্যদের ধারণা, তার গানের সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এত বিপুলসংখ্যক গান পাওয়া যায় না। শোনা যায়, লালনের কোনো কোনো শিষ্যের মৃত্যুর পর গানের খাতা তাদের কবরে পুঁতে দেয়া হয়। এছাড়াও অনেক ভক্ত গানের খাতা নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেননি।
ছেঁউড়িয়ায় কয়েক বছর থাকার পর লালন তার শিষ্যদের ডেকে বললেন, আমি কয়েক দিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি, তোমরা আমার সাধনকক্ষটার দেখাশোনা করো। সপ্তাহ তিনেক পর তিনি একটি অল্পবয়স্কা সুশ্রী যুবতীকে নিয়ে ফিরলেন। মতিজান ফকিরানী জিজ্ঞাসা
করলেন, মেয়েটা কে বাবা? জানান, তোমাদের গুরুমা। একথা শোনার পর আখড়াবাড়ির সবাই গুরুমাকে ভক্তি করলেন। বিশখা নামের এই মেয়েটি সারা জীবন লালনের সঙ্গে ছিলেন।
লালনের মৃত্যুর ৩ মাস পর তিনি মারা যান। বিশখা ফকিরানী প্রায় একশ বছর ধরে ছেঁউড়িয়ায় ছিলেন, কিন্তু তার প্রকৃত নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এমনকি মৃত্যুর পরও তার কোনো আত্মীয় বা পরিচিত জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অচিন মানুষ ফকির লালনের মতোই বিশখা ফকিরানী আজও এক অচিন নারী।
ফকির লালনের জন্ম সাল জানা যায়নি, তিনি ১ কার্তিক ১২৯৭ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে মারা যান এবং তিনি বেঁচে ছিলেন ১১৬ বছর। সে হিসাবে তিনি জন্মেছিলেন ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে। ছেঁউড়িয়াতে ফকির লালনের সঙ্গে তার পালিত মা মতিজান ফকিরানী, পালিত বাবা মলম শাহ, ফকির ম-িত মানিক শাহ, শীতল শাহ, ভোলাই শাহ, বিশখা ফকিরানী এবং ফকির মনিরুদ্দিন শাহসহ অন্য আরও অনেক ভাবশিষ্যের সমাধি আছে।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট ]