alt

উপ-সম্পাদকীয়

ডিমের জারিজুরি

গাজী তারেক আজিজ

: শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ডিম এখন আর ডিমের মধ্যে সীমিত নেই। ডিম এখন জাতীয় ইস্যু। যে ডিম মুরগির খামারি বিক্রয়ে হিমশিম খেতো সে ডিমই আজ সোনার মোহরে কিনতে হবে বোধকরি। একেক সময় একেক পণ্য অনেকটা গায়ের জোরে জবরদস্তিমূলক নিজের দাম বাড়িয়ে নেয়। এর আগে পেঁয়াজ ১৭ টাকা থেকে লাফিয়ে ৩শ ছুঁয়ে সেই পেঁয়াজ ১২০ টাকার আশপাশে থিতু হলো। ভোজ্যতেল ৮০-৮৫ টাকা থেকে প্রায় ২শ ছুঁয়ে এখন ১৬০-১৭০ পর্যন্ত। আলু ২০ টাকা থেকে ৬৫-৭০ টাকা বা তারও বেশি। কাঁচামরিচ যখন দাম বাড়ে ১৩শ টাকাও হয়। আর কমলে সেটা ১০-১৫ টাকাও হয়। তবে তখন প্রান্তিক কৃষক পেয়ে থাকে ক্ষেত্র বিশেষে ১-২ টাকা কেজি। মধ্যিখানে অদৃশ্য সিন্ডিকেটের ভেলকি! ভোক্তার নাভিশ্বাস।

রাজা যায় রাজা আসে। কখনো মৃত্যুজনিত, আবার কখনো হত্যা কিংবা উৎখাতের কারণে; তবে রাজার কোন মৃত্যু নেই। যদি রাজতন্ত্র হয়। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভিন্নতা রয়েছে। ক্ষমতার অধিকারী হন রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী। সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সর্বেসর্বা। নির্বাচিত সরকার হলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকে। আবার অনির্বাচিত সরকার হলে হন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা হন নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য এমন একজন ব্যক্তিত্ব। যিনি মনোনীত হয়ে থাকেন অনেকটুকু জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ। তারও প্রকারান্তরে জবাবদিহি থাকে। তবে কাজে স্বচ্ছতাই মূল।

কথায় আছে অশ্বডিম্ব বা ঘোড়ার ডিম; যা কাল্পনিক মাত্র। মানুষ যে কোন অবাস্তব বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বোঝাতে এই ঘোড়ার ডিম শব্দের ব্যবহার করে থাকেন। এই ঘোড়ার ডিম শব্দের প্রচলন ঠিক কবে থেকে তার ইতিহাস জানা যায়নি। মানুষের কথার কথা এক সময় মুদ্রাদোষে পরিণত হতে থাকে। আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ি তখন কলেজের লাইব্রেরিয়ান যে কোন কথায় বলতো ‘মান্ড’; যা ছিল তার মুদ্রাদোষ। ছাত্রদের কেউ কেউ তাকে মান্ড স্যার সম্বোধন করতো। আবার তার সাথে কথা বলার সময় ছাত্রদের অনেকেই ঠাট্টা বিদ্রƒপ করে কথায় কথায় মান্ড মান্ড করতো। এতে করে সে না বুঝলেও অন্য ছাত্ররা ঠিকই হাসাহাসি করতো।

বর্তমান সময়ে অশ্বডিম্ব বা ঘোড়ার ডিম নয় মুরগির ডিমে বাজার নাকাল। হুট করে বাজারদরের দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় ডিমও এই মুহূর্তে আলোচিত ইস্যু। কিছুতেই এর দর সাধারণের নাগালে আনা যাচ্ছে না। কার্যকর যে সব পদক্ষেপে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় সবই কার্যত ব্যর্থ। শেষমেশ ভারত থেকে আমদানি করা হয়। যার দর ৭ টাকার কম হলেও বাজারে ঠিকই ১৫ টাকা। আর এর থেকে মানুষ কটাক্ষ করতে শুরু করে ‘পানির দামে ডিম’ বলে। এই পানির দামে ডিম মানে হচ্ছে এক বোতল হাফ লিটার পানি ১৫ টাকা আর একটা ডিমও ১৫ টাকা। তাই সাধারণের কাছে কথাটি ব্যাপক কৌতূহল তৈরি করলেও ক্রয়ের নাগালে না থাকায় ডিম কিনছেন না অনেকেই। খাদ্য তালিকা থেকেও এই সহজ পুষ্টির আধার ডিম বাদ দিতেও বাধ্য হয়েছে। হয়তো ডিমের দাম কমবে; কিন্তু একবার বাড়লে যে কতটুকু কমবে সে-ও ভবিতব্য। যদিও সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

বাজারে কোন সবজি-ফল কিছুই নিম্নবিত্ত মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাওয়ায় মানুষ বেশ অসহায় বোধ করতে শুরু করেছে। গরু, মুরগি, অনেক প্রয়োজনীয় মাছ, নিত্যকার ভোগ্যপণ্য আগেই ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। অথচ কিছু মানুষ সাধারণ জনগণকে বুঝ প্রবোধ দিয়েছিল এই সরকার (সাবেক আওয়ামী লীগ) না থাকলে দ্রব্যের দাম কমবে। মানুষ ষোলো বছর ধরে অতিষ্ঠ। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে সরকার বদল চাই। যেই কথা সেই কাজ মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে। একদা বঙ্গবন্ধুর আমলেও দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিলে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলতে সুবিধা হয়। রাতারাতি খাদ্য পণ্যের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে এনে বেশ বাহবা কুড়িয়েছে। ভেবেছিল এবারো সরকার পতনের পর মানুষ সুফল পাবে। উল্টো মানুষের ভুল ভাঙতে সময় নেয় না। এখন বাজারে গেলে হাহাকার। নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করেছে। রিকশাচালক কিংবা ছোট কাজের আয় কমে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা।

যথারীতি ক্রয়মূল্য ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত বাজারে ডিমের মূল্য চড়া থাকায় এখন ডিম বিক্রি বন্ধ রাখতেও বাধ্য হয়েছেন আড়ৎদার। আবার গত সরকারের বিরোধী শক্তি সেই পুরনো সিন্ডিকেটকে দুষছেন! দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে উদর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দিয়েও দায় সারতে চাইছে। আদৌ কি সেটা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে? মানুষ কি তাদের কথায় বিশ্বাস রাখতে পারছে? আর এই প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখেই বলা যায়, রাজা যায় রাজা আসে কিন্তু মানুষের ভাগ্যের মৌলিক কোন পরিবর্তন ঘটে না। মানুষ নিস্তেজ হয়ে যায়। অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়। শরীরে পুষ্টির ঘাটতিতে আর তো শরীর চলে না।

পটপরিবর্তনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলেও। মানুষের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। আমরা যারা ক্ষুধিত মানুষজন তাদের কলবের ডাক আল্লাহ ছাড়া বোঝার কেউই নেই। সরকারের উপদেষ্টা মানুষের চাহিদার জোগান দিতে না পেরে অনেকটা শ্লাঘা মিশ্রিত কণ্ঠে বলে ওঠেনÑ আমার কাছে ডিম বানানোর মেশিন নেই। মানুষ যদি আপনার অক্ষমতা বুঝতো তবে সেই পদে আসীন করত না। আপনি উপদেষ্টা হয়ে পদ ধরে না রেখে যোগ্য লোককে ছেড়ে দিলে হয়তো মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হতেও পারে।

দিনে-দিনে মানুষের অস্থিরতার মাত্রাও যেন প্রকট হচ্ছে। মানুষ আর আগের মতো ধৈর্য ধারণ করতে পারছে না। আর ব্যবসায়ী মহলও মনে হচ্ছে রাতারাতি টাকা কামাইয়ে ব্যস্ত। মনে করছেন এই বুঝি শেষ সময়। তাদের জন্য আর সময় আসবে না। কখনো দোষারোপ করে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি। কখনো রাস্তার দোহাই। কখনো উৎপাদন খরচের দোহাই। কখনো সরবরাহের ঘাটতির দোহাই। কখনো আকস্মিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির দোহাই।

এত এত দোহাই কাটিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য ও সস্তা করতে সরকারকেও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। আসলে সবাই নিরুপায়। সবার পেট আছে। প্রতিনিয়ত জোগান দিতে হয়। তবে কেউই কার্যকর সমাধানের পথ বাতলে দিতে পারছে না। কোন পরিকল্পনাই কাজে আসছে না।

যতদিন মানুষ নিজে থেকে শুধরে না নেবে ততদিন সংকট বাড়বে। এর থেকে উত্তরণ এত সহজ হবে বলেও মনে হয় না। তবে আমরা ডিম খেতে ভালোবাসি। আমরা চাই ডিম হোক সহজলভ্য। সেই আশায় বুক বাঁধি।

[লেখক : অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফেনী]

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে করণীয়

শিক্ষা খাতে দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

কোন পথে জামায়াতের রাজনীতি?

শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা

যোগ্য নেতৃত্ব সমাজ-সংগঠনকে এগিয়ে নেয়

ব্যক্তি স্বাধীনতার সংকট

কিল মারার গোঁসাই

ছবি

শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামে

বৈষম্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত প্রকৌশল শিক্ষার আরেক জগৎ

প্রশাসনিক সংস্কারে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কতটা প্রতিষ্ঠা পাবে?

বাংলার মৃৎশিল্প

প্রবারণা পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি

কথার কথা যত কথা

দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত হোক শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সুইডেনের গণতন্ত্র

বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব : শহুরে জীবনধারার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

নতুন প্রেক্ষাপটে ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ : স্বাধীনতা না প্রতিরোধ?

ধর্মীয় স্বাধীনতা ও কঠিন চীবরদান

ছবি

দুর্গাপূজার মর্মবাণী

মানুষ মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা পাবে কীভাবে

গুজব ও মিথ্যা তথ্য : সমাজের এক ভয়াবহ ব্যাধি

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন

পুরাতত্ত্বের ধারায় সনাতনী সমাজের দুর্গাপূজা

জীবন-মৃত্যু কী?

নাসা : বিজ্ঞানের পীঠস্থান

শিক্ষা সংস্কারে প্রথাগত চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

সাংঘাতিক ভাই, সাংঘাতিক...

প্রযুক্তির মায়াজালে বন্দি মানুষ

ছবি

এসএম সুলতান : সংস্কৃতি সত্তার সত্যপাঠ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

তরুণ সমাজ ও প্রযুক্তি নির্ভরতা : সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তন ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

বগুড়ার তাঁতপল্লী

অটিজম কোনো রোগ নয়

জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কি আইনসম্মত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ডিমের জারিজুরি

গাজী তারেক আজিজ

শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ডিম এখন আর ডিমের মধ্যে সীমিত নেই। ডিম এখন জাতীয় ইস্যু। যে ডিম মুরগির খামারি বিক্রয়ে হিমশিম খেতো সে ডিমই আজ সোনার মোহরে কিনতে হবে বোধকরি। একেক সময় একেক পণ্য অনেকটা গায়ের জোরে জবরদস্তিমূলক নিজের দাম বাড়িয়ে নেয়। এর আগে পেঁয়াজ ১৭ টাকা থেকে লাফিয়ে ৩শ ছুঁয়ে সেই পেঁয়াজ ১২০ টাকার আশপাশে থিতু হলো। ভোজ্যতেল ৮০-৮৫ টাকা থেকে প্রায় ২শ ছুঁয়ে এখন ১৬০-১৭০ পর্যন্ত। আলু ২০ টাকা থেকে ৬৫-৭০ টাকা বা তারও বেশি। কাঁচামরিচ যখন দাম বাড়ে ১৩শ টাকাও হয়। আর কমলে সেটা ১০-১৫ টাকাও হয়। তবে তখন প্রান্তিক কৃষক পেয়ে থাকে ক্ষেত্র বিশেষে ১-২ টাকা কেজি। মধ্যিখানে অদৃশ্য সিন্ডিকেটের ভেলকি! ভোক্তার নাভিশ্বাস।

রাজা যায় রাজা আসে। কখনো মৃত্যুজনিত, আবার কখনো হত্যা কিংবা উৎখাতের কারণে; তবে রাজার কোন মৃত্যু নেই। যদি রাজতন্ত্র হয়। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভিন্নতা রয়েছে। ক্ষমতার অধিকারী হন রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী। সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সর্বেসর্বা। নির্বাচিত সরকার হলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকে। আবার অনির্বাচিত সরকার হলে হন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা হন নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য এমন একজন ব্যক্তিত্ব। যিনি মনোনীত হয়ে থাকেন অনেকটুকু জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ। তারও প্রকারান্তরে জবাবদিহি থাকে। তবে কাজে স্বচ্ছতাই মূল।

কথায় আছে অশ্বডিম্ব বা ঘোড়ার ডিম; যা কাল্পনিক মাত্র। মানুষ যে কোন অবাস্তব বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বোঝাতে এই ঘোড়ার ডিম শব্দের ব্যবহার করে থাকেন। এই ঘোড়ার ডিম শব্দের প্রচলন ঠিক কবে থেকে তার ইতিহাস জানা যায়নি। মানুষের কথার কথা এক সময় মুদ্রাদোষে পরিণত হতে থাকে। আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ি তখন কলেজের লাইব্রেরিয়ান যে কোন কথায় বলতো ‘মান্ড’; যা ছিল তার মুদ্রাদোষ। ছাত্রদের কেউ কেউ তাকে মান্ড স্যার সম্বোধন করতো। আবার তার সাথে কথা বলার সময় ছাত্রদের অনেকেই ঠাট্টা বিদ্রƒপ করে কথায় কথায় মান্ড মান্ড করতো। এতে করে সে না বুঝলেও অন্য ছাত্ররা ঠিকই হাসাহাসি করতো।

বর্তমান সময়ে অশ্বডিম্ব বা ঘোড়ার ডিম নয় মুরগির ডিমে বাজার নাকাল। হুট করে বাজারদরের দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় ডিমও এই মুহূর্তে আলোচিত ইস্যু। কিছুতেই এর দর সাধারণের নাগালে আনা যাচ্ছে না। কার্যকর যে সব পদক্ষেপে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় সবই কার্যত ব্যর্থ। শেষমেশ ভারত থেকে আমদানি করা হয়। যার দর ৭ টাকার কম হলেও বাজারে ঠিকই ১৫ টাকা। আর এর থেকে মানুষ কটাক্ষ করতে শুরু করে ‘পানির দামে ডিম’ বলে। এই পানির দামে ডিম মানে হচ্ছে এক বোতল হাফ লিটার পানি ১৫ টাকা আর একটা ডিমও ১৫ টাকা। তাই সাধারণের কাছে কথাটি ব্যাপক কৌতূহল তৈরি করলেও ক্রয়ের নাগালে না থাকায় ডিম কিনছেন না অনেকেই। খাদ্য তালিকা থেকেও এই সহজ পুষ্টির আধার ডিম বাদ দিতেও বাধ্য হয়েছে। হয়তো ডিমের দাম কমবে; কিন্তু একবার বাড়লে যে কতটুকু কমবে সে-ও ভবিতব্য। যদিও সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

বাজারে কোন সবজি-ফল কিছুই নিম্নবিত্ত মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাওয়ায় মানুষ বেশ অসহায় বোধ করতে শুরু করেছে। গরু, মুরগি, অনেক প্রয়োজনীয় মাছ, নিত্যকার ভোগ্যপণ্য আগেই ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। অথচ কিছু মানুষ সাধারণ জনগণকে বুঝ প্রবোধ দিয়েছিল এই সরকার (সাবেক আওয়ামী লীগ) না থাকলে দ্রব্যের দাম কমবে। মানুষ ষোলো বছর ধরে অতিষ্ঠ। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে সরকার বদল চাই। যেই কথা সেই কাজ মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে। একদা বঙ্গবন্ধুর আমলেও দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিলে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলতে সুবিধা হয়। রাতারাতি খাদ্য পণ্যের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে এনে বেশ বাহবা কুড়িয়েছে। ভেবেছিল এবারো সরকার পতনের পর মানুষ সুফল পাবে। উল্টো মানুষের ভুল ভাঙতে সময় নেয় না। এখন বাজারে গেলে হাহাকার। নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করেছে। রিকশাচালক কিংবা ছোট কাজের আয় কমে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা।

যথারীতি ক্রয়মূল্য ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত বাজারে ডিমের মূল্য চড়া থাকায় এখন ডিম বিক্রি বন্ধ রাখতেও বাধ্য হয়েছেন আড়ৎদার। আবার গত সরকারের বিরোধী শক্তি সেই পুরনো সিন্ডিকেটকে দুষছেন! দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে উদর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দিয়েও দায় সারতে চাইছে। আদৌ কি সেটা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে? মানুষ কি তাদের কথায় বিশ্বাস রাখতে পারছে? আর এই প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখেই বলা যায়, রাজা যায় রাজা আসে কিন্তু মানুষের ভাগ্যের মৌলিক কোন পরিবর্তন ঘটে না। মানুষ নিস্তেজ হয়ে যায়। অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়। শরীরে পুষ্টির ঘাটতিতে আর তো শরীর চলে না।

পটপরিবর্তনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলেও। মানুষের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। আমরা যারা ক্ষুধিত মানুষজন তাদের কলবের ডাক আল্লাহ ছাড়া বোঝার কেউই নেই। সরকারের উপদেষ্টা মানুষের চাহিদার জোগান দিতে না পেরে অনেকটা শ্লাঘা মিশ্রিত কণ্ঠে বলে ওঠেনÑ আমার কাছে ডিম বানানোর মেশিন নেই। মানুষ যদি আপনার অক্ষমতা বুঝতো তবে সেই পদে আসীন করত না। আপনি উপদেষ্টা হয়ে পদ ধরে না রেখে যোগ্য লোককে ছেড়ে দিলে হয়তো মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হতেও পারে।

দিনে-দিনে মানুষের অস্থিরতার মাত্রাও যেন প্রকট হচ্ছে। মানুষ আর আগের মতো ধৈর্য ধারণ করতে পারছে না। আর ব্যবসায়ী মহলও মনে হচ্ছে রাতারাতি টাকা কামাইয়ে ব্যস্ত। মনে করছেন এই বুঝি শেষ সময়। তাদের জন্য আর সময় আসবে না। কখনো দোষারোপ করে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি। কখনো রাস্তার দোহাই। কখনো উৎপাদন খরচের দোহাই। কখনো সরবরাহের ঘাটতির দোহাই। কখনো আকস্মিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির দোহাই।

এত এত দোহাই কাটিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য ও সস্তা করতে সরকারকেও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। আসলে সবাই নিরুপায়। সবার পেট আছে। প্রতিনিয়ত জোগান দিতে হয়। তবে কেউই কার্যকর সমাধানের পথ বাতলে দিতে পারছে না। কোন পরিকল্পনাই কাজে আসছে না।

যতদিন মানুষ নিজে থেকে শুধরে না নেবে ততদিন সংকট বাড়বে। এর থেকে উত্তরণ এত সহজ হবে বলেও মনে হয় না। তবে আমরা ডিম খেতে ভালোবাসি। আমরা চাই ডিম হোক সহজলভ্য। সেই আশায় বুক বাঁধি।

[লেখক : অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফেনী]

back to top