alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

নবজাগরণ : সত্যিই কি জাতি জেগেছে?

রহমান মৃধা

: বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

যে জাতি স্বপ্ন দেখতে জানে না, যে জাতি জেগে উঠতে জানে না, সেই জাতি কখনও উন্নতির পথে হাঁটতে পারে না। নবজাগরণ মানে শুধু নতুন সূচনা নয়, বরং নিজের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। এটি একটি পুনর্জন্ম, একটি জাতির আত্মা জাগ্রত হওয়ার মুহূর্ত। কিন্তু আজ আমাদের প্রশ্নÑএই মুহূর্তে, সত্যিই কি আমরা সেই নবজাগরণের পথে আছি?

তিন মাস আগেও আমাদের দেশ ছিল কর্তৃত্ববাদী শাসনের মুঠোবন্দী। মানুষের স্বপ্ন পদদলিত হচ্ছিল, বাকস্বাধীনতা ছিল রুদ্ধ। সেই শাসকের পতন ঘটিয়ে জাতি এক নতুন সূর্যের অপেক্ষায় ছিল। সবাই ভেবেছিল এবার হয়তো মুক্তির পালা শুরু হবে। কিন্তু আজ, আমরা দেখছি ভিন্ন এক চিত্র।

রাস্তায় এখনও রক্তের দাগ শুকায়নি। গুম হওয়া মানুষগুলো ফেরেনি। হাসপাতালের শয্যায় মুক্তিযোদ্ধারা চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছেন। সেই শাসকের জায়গায় আজ নতুন মুখ, কিন্তু শোষণের ছায়া রয়েই গেছে। শুধু নাম বদলেছে, কিন্তু বাস্তবতা বদলায়নি।

আমাদের রাজনীতির বাস্তবতা যেন সেই চিরন্ত ন প্রবাদের প্রতিচ্ছবি—“চোরে খেয়েছে দুধকলা এবং তাদেরই বড় গলা।” যারা একদিন শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তাদের অনেকেই আজ ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছেন।

দুর্নীতি এখন আরও কাঠামোবদ্ধ হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার আরও নির্লজ্জ। যারা একদিন সাধারণ মানুষের আশার প্রতীক ছিলেন, তারাই আজ শোষকের নতুন চেহারা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনগুলো ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। কেন? মানুষ কি পথভ্রষ্ট? নাকি তাদের সুকৌশলে বিভ্রান্ত করা হয়েছে? গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, শাসকের চাতুর্য আর ন্যায়বিচারের অভাবে মানুষ ক্রমে বিশ্বাস হারিয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে জাতির চেতনাও একদিন নিস্তেজ হয়ে যাবে।

একটি জাতিকে দুর্বল করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো বিভাজন। আমাদের সমাজেও ধর্ম, রাজনীতি এবং জাতিগত পার্থক্যের নামে মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে। এই বিভাজন শুধু জাতিকে দুর্বল করেনি, বরং তাদের স্বাধীন চিন্তার সামর্থ্যকেও গ্রাস করেছে।

অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষের আর্তনাদ আজও থামেনি। গ্রামে, শহরে অসহায় মানুষের চোখে এখনও হতাশার ছায়া। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু, ক্ষুধার যন্ত্রণা, কিংবা দারিদ্র্যের চাপে স্বপ্নহীন মানুষের আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছায় না।

আমাদের নবজাগরণ শুধু একটি সেøাগান হয়ে থাকবে না, যদি আমরা এর মর্মার্থ বুঝি। এটি তখনই সফল হবে, যখন আমরা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক স্তরে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেব।

গণচেতনায় জাগরণ আনতে হবে। মানুষকে তাদের অধিকার এবং দাড়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তিগত জীবনে নৈতিকতা ও মানবিকতার চর্চা বাড়াতে হবে। এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন, যা শুধু পেশাগত দক্ষতা নয়, বরং সৎ ও দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরি করবে।

নবজাগরণ মানে শুধু পুরনো শাসকের পতন নয়, এটি একটি জাতির আত্মশুদ্ধির আহ্বান। এটি আমাদের শেখায়, সত্যিকারের পরিবর্তন আসে তখনই, যখন আমরা নিজেদের ভেতরের অন্ধকারকে জয় করি।

আজ যারা শোষণের শিকার, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যারা ন্যায়বিচার চায়, তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলাতে হবে। একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে শোষণ আর প্রতারণার চক্র ভেঙে ফেলা যায়।

আমাদের সামনে হয়তো আরও অনেক বাধা আসবে। কিন্তু সেই বাধা অতিক্রম করার জন্য চাই সাহস, ঐক্য আর দৃঢ়তা। নবজাগরণ মানে একটি নতুন সূচনা। সেই সূচনা হোক আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে, আমাদের প্রতিদিনের কাজে।

টুমরো উইল নেভার ডাই, টুডে উইল নেভার কাম। মোমেন্ট ইজ হিয়ার, সো থিংক অ্যান্ড ডু ইট নাও।

জেগে উঠুন, এগিয়ে চলুন আজকেই হোক সেই নতুন দিনের সূচনা!

[ লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন ]

আছদগঞ্জের শুটকি : অতীতের গৌরব, বর্তমানের দুঃসময়

নবান্নের আনন্দ ও আমনের ফলন

‘প্রশ্ন কোরো না, প্রশ্ন সর্বনাশী’

ভূমিকম্প, অর্থনৈতিক চাপ এবং অনিশ্চয়তা: মানসিকতার নতুন অর্থনীতি

নবম পে স্কেল ও এর আর্থসামাজিক প্রভাব

মৃত্যুদণ্ড, তারপর...

জমির ভুয়া দলিল কীভাবে বাতিল করবেন?

জুলাই সনদ আদিবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি

ব্যাংকের দুরবস্থা থামানো যাচ্ছে না কেন

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

কাঁপছে ডলারের সিংহাসন

ত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন : প্রতীকী প্রদর্শনী, নাকি বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির বাঁক নেওয়ার মুহূর্ত?

অপরিণত নবজাতক : ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও যত্নের জরুরি বাস্তবতা

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

নবজাগরণ : সত্যিই কি জাতি জেগেছে?

রহমান মৃধা

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

যে জাতি স্বপ্ন দেখতে জানে না, যে জাতি জেগে উঠতে জানে না, সেই জাতি কখনও উন্নতির পথে হাঁটতে পারে না। নবজাগরণ মানে শুধু নতুন সূচনা নয়, বরং নিজের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। এটি একটি পুনর্জন্ম, একটি জাতির আত্মা জাগ্রত হওয়ার মুহূর্ত। কিন্তু আজ আমাদের প্রশ্নÑএই মুহূর্তে, সত্যিই কি আমরা সেই নবজাগরণের পথে আছি?

তিন মাস আগেও আমাদের দেশ ছিল কর্তৃত্ববাদী শাসনের মুঠোবন্দী। মানুষের স্বপ্ন পদদলিত হচ্ছিল, বাকস্বাধীনতা ছিল রুদ্ধ। সেই শাসকের পতন ঘটিয়ে জাতি এক নতুন সূর্যের অপেক্ষায় ছিল। সবাই ভেবেছিল এবার হয়তো মুক্তির পালা শুরু হবে। কিন্তু আজ, আমরা দেখছি ভিন্ন এক চিত্র।

রাস্তায় এখনও রক্তের দাগ শুকায়নি। গুম হওয়া মানুষগুলো ফেরেনি। হাসপাতালের শয্যায় মুক্তিযোদ্ধারা চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছেন। সেই শাসকের জায়গায় আজ নতুন মুখ, কিন্তু শোষণের ছায়া রয়েই গেছে। শুধু নাম বদলেছে, কিন্তু বাস্তবতা বদলায়নি।

আমাদের রাজনীতির বাস্তবতা যেন সেই চিরন্ত ন প্রবাদের প্রতিচ্ছবি—“চোরে খেয়েছে দুধকলা এবং তাদেরই বড় গলা।” যারা একদিন শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তাদের অনেকেই আজ ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছেন।

দুর্নীতি এখন আরও কাঠামোবদ্ধ হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার আরও নির্লজ্জ। যারা একদিন সাধারণ মানুষের আশার প্রতীক ছিলেন, তারাই আজ শোষকের নতুন চেহারা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনগুলো ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। কেন? মানুষ কি পথভ্রষ্ট? নাকি তাদের সুকৌশলে বিভ্রান্ত করা হয়েছে? গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, শাসকের চাতুর্য আর ন্যায়বিচারের অভাবে মানুষ ক্রমে বিশ্বাস হারিয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে জাতির চেতনাও একদিন নিস্তেজ হয়ে যাবে।

একটি জাতিকে দুর্বল করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো বিভাজন। আমাদের সমাজেও ধর্ম, রাজনীতি এবং জাতিগত পার্থক্যের নামে মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে। এই বিভাজন শুধু জাতিকে দুর্বল করেনি, বরং তাদের স্বাধীন চিন্তার সামর্থ্যকেও গ্রাস করেছে।

অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষের আর্তনাদ আজও থামেনি। গ্রামে, শহরে অসহায় মানুষের চোখে এখনও হতাশার ছায়া। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু, ক্ষুধার যন্ত্রণা, কিংবা দারিদ্র্যের চাপে স্বপ্নহীন মানুষের আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছায় না।

আমাদের নবজাগরণ শুধু একটি সেøাগান হয়ে থাকবে না, যদি আমরা এর মর্মার্থ বুঝি। এটি তখনই সফল হবে, যখন আমরা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক স্তরে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেব।

গণচেতনায় জাগরণ আনতে হবে। মানুষকে তাদের অধিকার এবং দাড়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তিগত জীবনে নৈতিকতা ও মানবিকতার চর্চা বাড়াতে হবে। এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন, যা শুধু পেশাগত দক্ষতা নয়, বরং সৎ ও দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরি করবে।

নবজাগরণ মানে শুধু পুরনো শাসকের পতন নয়, এটি একটি জাতির আত্মশুদ্ধির আহ্বান। এটি আমাদের শেখায়, সত্যিকারের পরিবর্তন আসে তখনই, যখন আমরা নিজেদের ভেতরের অন্ধকারকে জয় করি।

আজ যারা শোষণের শিকার, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যারা ন্যায়বিচার চায়, তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলাতে হবে। একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে শোষণ আর প্রতারণার চক্র ভেঙে ফেলা যায়।

আমাদের সামনে হয়তো আরও অনেক বাধা আসবে। কিন্তু সেই বাধা অতিক্রম করার জন্য চাই সাহস, ঐক্য আর দৃঢ়তা। নবজাগরণ মানে একটি নতুন সূচনা। সেই সূচনা হোক আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে, আমাদের প্রতিদিনের কাজে।

টুমরো উইল নেভার ডাই, টুডে উইল নেভার কাম। মোমেন্ট ইজ হিয়ার, সো থিংক অ্যান্ড ডু ইট নাও।

জেগে উঠুন, এগিয়ে চলুন আজকেই হোক সেই নতুন দিনের সূচনা!

[ লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন ]

back to top