কামরুজ্জামান
গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন, নিজেকে চেনো; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা অনেক কিছুই চাই, শুধু নিজেকে জানতে চাই না। আমরা অনেক কিছুর পরিবর্তন চাই, শুধু নিজেকে পরিবর্তন করতে চাই না।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ যার যার জায়গা থেকে অনেক কিছুই পরিবর্তন চাচ্ছে। কেই ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ চাচ্ছে। কেউ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছে। কেউ ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাচ্ছে। অনেকেই রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার চাচ্ছে। অনেকেই ন্যায্য অধিকার চাচ্ছে। অনেকে চাকরি জাতীয়করণ চাচ্ছে। কেউ কেউ যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়ন চাচ্ছে। বিচার প্রার্থী ন্যায়বিচার চাচ্ছে। একটা শ্রেণী অপরাধীর বিচার চাচ্ছে। সবাই সব কিছুর পরিবর্তন চাচ্ছে। শুধু নিজের পরিবর্তনের জন্য কেউ কিছু বলছে না।
মানুষ কেন এমনটা করে? অন্যকে জ্ঞান দেয় কিন্তু নিজে জ্ঞান নেয় না। অন্যকে পরামর্শ দেয় কিন্তু নিজে নেয় না। অন্যের ভালোমন্দ নিয়ে চিন্তা করে নিজের চিন্তা করে না। অন্যে কী করে, কিভাবে চলে, কী কী ভুল করলো, কী কী অপরাধ করলো, কার সঙ্গে মিশলো, কে তার বন্ধু হলো এসব নিয়ে বিস্তর ভাবনা মানুষের।
একজন জ্ঞানী মানুষ কখনো অন্যকে তুচ্ছ মনে করে না। বরং প্রকৃত জ্ঞানী নিজেকে ছোট ভেবে অন্য জ্ঞানীর প্রশংসা করে। কোনো একটি জরিপে দেখা যায়- একজন মানুষ অন্যের চলাফেরা, কাজকর্ম ও সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে যতটা ভাবে নিজের সম্পর্কে চারভাগের একভাগও ভাবে না। বর্তমান রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে এর প্রভাব আরও প্রকট হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই দেখা যায় পরিবর্তনের হাওয়া। আর যতসব ভাবনা অন্যকে নিয়ে। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তন নিয়ে।
অনেক মানুষ নিজে দিব্যি স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে, অপরাধ করছে, মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে অথচ স্যোসাল মিডিয়ায় এসে মানুষকে পরিবর্তন হওয়ার জ্ঞান দিচ্ছে। ধর্মীয় জ্ঞান দিচ্ছে। নিজের নীতিনৈতিকতা ঠিক না থাকলেও অন্যকে জ্ঞান দিচ্ছে নীতিবান হওয়ার জন্য।
জ্ঞানী মানুষ জ্ঞান দেবে এটাই স্বাভাবিক। জ্ঞানের আলোয় সমাজ গঠনও হতে হবে। জ্ঞান যিনি দিবেন তাকে জ্ঞান দেয়ার পাশাপাশি নীতিনৈতিকতাবোধ সম্পন্ন ভালো মানুষ হওয়া প্রয়োজন। সমাজে এমনও মানুষ আছে। ভালো ভালো কাজ করে; কিন্তু মানুষ হিসেবে সুবিধার নয়। ভালো কাজ যা করে তা লোক দেখানো। এই ভালো কাজ করে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য। এই ধরনের মানুষ সকল শ্রেণী-পেশার মধ্যেই দেখা যায়। তাই ভালো কাজ করার আগে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। ভালো মানুষ মানুষের ক্ষতি করে না। একজন মানুষের হাত এবং মুখ দ্বারা যখন অন্য একজন মানুষ সম্পূর্ণ নিরাপদ তখনই সে একজন ভালো মানুষ।
সমাজে ভালো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। আমাদের দেশে ‘পক্ষে বললে হিরো আর সত্য বললে জিরো।’ সত্য কথা বলে ভালো থাকা যায় না। সত্য বললে মানুষ ভুল বুঝে। সত্য বললে মানুষ পর হয়ে যায়। সত্যবাদী মানুষ একা হয়ে যায়। তবে সত্য বলার মাঝে শান্তি আছে। আত্মতৃপ্তি আছে। সত্য বলা মানুষের মনোবল শক্ত হয়। সত্য বলা মানুষ মাথা উঁচু করে চলতে পারে। এটাই সত্য বলা মানুষের সান্ত¡না।
আমরা সবাই পরিবর্তন চাই। পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া এবং সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে সে পরিবর্তন হতে হবে ইতিবাচক পরিবর্তন। প্রত্যেকটি মানুষ যদি নিজের জায়গা থেকে পরিবর্তন হয় তবেই পরিবর্তন সম্ভব।
নিজেকে যেভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। অহংকার থাকা যাবে না। অহংকার মানুষকে মানুষ থেকে আলাদা করে রাখে। অহংকারী মানুষ নিজেকে অনেক বড় মনে করে। নিজেকে অনেক জ্ঞানী ভাবে। মনে করে নিজেই সব বুঝে অন্য কেউ বুঝে না। এই সব মানসিকতা পরিবর্তন করে নিজেকে বদলাতে হবে। তবেই পরিবর্তন সম্ভব।
মিথ্যা বলা যাবে না। মিথ্যা সব অপরাধের বীজ। মিথ্যা বলা মহাপাপ। সকল ধর্মে মিথ্যা বলা নিষেধ করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষের নিজেকে পরিবর্তন করার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা। শুধু অন্যকে জ্ঞান দিলে হবে না। জ্ঞান নিজেও নিতে হবে।
সব কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। কথায় এবং কাজে মিল রাখতে হবে। তবেই আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হবে। প্রতিটি মানুষের এটা অর্জন করা প্রয়োজন। তবেই সার্বিক পরিবর্তন সম্ভব। শুধু পরিবর্তনের কথা বলে লাভ নাই; বরং যার যার জায়গা থেকে পরিবর্তন শুরু করাটা জরুরি।
অন্যের মতামতকে সম্মান করতে হবে। আমাদের মানসিকতা হচ্ছে নিজে যা বুঝি সেটা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেই। ভাবখানা এই রকম নিজেই সব বুঝি অন্য কেউ আর কিছু বুঝে না। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সবার মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে হবে। কিছু মানুষ আছে অন্যের কথা ও কাজ ভালো লাগে না। সবসময় নেতিবাচক আচরণ করে থাকে। নিজের সম্পর্কেও নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। নেতিবাচক ধারণা ত্যাগ করে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা প্রয়োজন।
আমরা অনেক কিছুরই পরিবর্তন চাই; কিন্তু নিজেকে পরিবর্তন করতে পারি না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে প্রতিটি মানুষের উচিত নিজেকে পরিবর্তন করা। বাহ্যিক পরিবর্তন নয়, এই পরিবর্তন হওয়া উচিত বিবেকের, মনুষ্যত্বের পরিবর্তন। এ ব্যাপারে সবারই চেষ্টা থাকা উচিত।
নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য আরও কিছু প্রয়োজনীয় কাজ যেমন- সামাজিক মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন। বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করা প্রয়োজন। শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। অজুহাত দেখানো বন্ধ করতে হবে । দায়িত্ব নিতে শিখতে হবে। নিজের ওপর কঠোর হওয়া যাবে না। নিজের ওপর সদয় আচরণ করতে হবে। হতাশ হওয়া যাবে না। আশাবাদী হতে হবে। নিজেকে অন্য কারও সাথে তুলনা করা যাবে না । আপনি গতকাল, এক সপ্তাহ বা এক মাস আগে যা ছিলেন তার সঙ্গে নিজেকে তুলনা করুন। সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। ক্ষোভ রাখা বন্ধ করুন। ক্ষমা করা শুরু করুন। অন্যের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা বন্ধ করুন। অন্যকে সাধ্যের মধ্যে সাহায্য করুন। অধিকার সচেতন হোন। সমাজে আপনার অবদান রাখুন।
সব কিছুতে হ্যাঁ বলা বন্ধ করুন। না বলা শিখুন। অতিরিক্ত গুরু গম্ভীর হওয়া বন্ধ করুন। ছোট্ট এই জীবন। আনন্দ খুঁজুন। জাংক ফুড খাওয়া বন্ধ করুন। স্বাস্থ্যকর খাবার, ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়া শুরু করুন। কার্বনেটেড পানীয় পান করা বন্ধ করুন। বেশি পানি পান করুন।
বিরক্তিকর জীবনযাপন করা বন্ধ করুন। সাধারণ জীবনযাপন করুন। ওভারথিংকিং বন্ধ করুন। আপনি আপনার চিন্তাভাবনার সাথে উন্নতি করতে পারেন এমন বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করুন। তাড়াহুড়া করা বন্ধ করুন, ধৈর্যশীল হতে শিখুন। অন্যের ওপর নির্ভরতা কমান। স্বাবলম্বী হতে শিখুন। বাস্তববাদী হোন। প্রতিদিন ছোট ছোট ভালো কাজ করুন এবং কথা কম বলুন, প্রয়োজনীয় কথা বলুন।
সবশেষে নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য অন্যের সমালোচনা করা বন্ধ করতে হবে। আত্মসমালোচনা করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। দক্ষতা অর্জন করতে হবে। অন্যকে প্রভাবিত করা বন্ধ করতে হবে। অতীত নিয়ে ভাবা যাবে না। ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। মিডিয়া যা বলছে তার সবটুকু বিশ্বাস করা যাবে না। নিজের গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে। সত্য অন্বেষণ করতে হবে। বস্তুবাদী হওয়া বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত মানবপ্রেমী হতে হবে। নিজেরা পরিবর্তন হলে সমাজ দেশ এমনিতেই পরিবর্তন হবে।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]
কামরুজ্জামান
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন, নিজেকে চেনো; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা অনেক কিছুই চাই, শুধু নিজেকে জানতে চাই না। আমরা অনেক কিছুর পরিবর্তন চাই, শুধু নিজেকে পরিবর্তন করতে চাই না।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ যার যার জায়গা থেকে অনেক কিছুই পরিবর্তন চাচ্ছে। কেই ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ চাচ্ছে। কেউ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছে। কেউ ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাচ্ছে। অনেকেই রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার চাচ্ছে। অনেকেই ন্যায্য অধিকার চাচ্ছে। অনেকে চাকরি জাতীয়করণ চাচ্ছে। কেউ কেউ যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়ন চাচ্ছে। বিচার প্রার্থী ন্যায়বিচার চাচ্ছে। একটা শ্রেণী অপরাধীর বিচার চাচ্ছে। সবাই সব কিছুর পরিবর্তন চাচ্ছে। শুধু নিজের পরিবর্তনের জন্য কেউ কিছু বলছে না।
মানুষ কেন এমনটা করে? অন্যকে জ্ঞান দেয় কিন্তু নিজে জ্ঞান নেয় না। অন্যকে পরামর্শ দেয় কিন্তু নিজে নেয় না। অন্যের ভালোমন্দ নিয়ে চিন্তা করে নিজের চিন্তা করে না। অন্যে কী করে, কিভাবে চলে, কী কী ভুল করলো, কী কী অপরাধ করলো, কার সঙ্গে মিশলো, কে তার বন্ধু হলো এসব নিয়ে বিস্তর ভাবনা মানুষের।
একজন জ্ঞানী মানুষ কখনো অন্যকে তুচ্ছ মনে করে না। বরং প্রকৃত জ্ঞানী নিজেকে ছোট ভেবে অন্য জ্ঞানীর প্রশংসা করে। কোনো একটি জরিপে দেখা যায়- একজন মানুষ অন্যের চলাফেরা, কাজকর্ম ও সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে যতটা ভাবে নিজের সম্পর্কে চারভাগের একভাগও ভাবে না। বর্তমান রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে এর প্রভাব আরও প্রকট হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই দেখা যায় পরিবর্তনের হাওয়া। আর যতসব ভাবনা অন্যকে নিয়ে। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তন নিয়ে।
অনেক মানুষ নিজে দিব্যি স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে, অপরাধ করছে, মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে অথচ স্যোসাল মিডিয়ায় এসে মানুষকে পরিবর্তন হওয়ার জ্ঞান দিচ্ছে। ধর্মীয় জ্ঞান দিচ্ছে। নিজের নীতিনৈতিকতা ঠিক না থাকলেও অন্যকে জ্ঞান দিচ্ছে নীতিবান হওয়ার জন্য।
জ্ঞানী মানুষ জ্ঞান দেবে এটাই স্বাভাবিক। জ্ঞানের আলোয় সমাজ গঠনও হতে হবে। জ্ঞান যিনি দিবেন তাকে জ্ঞান দেয়ার পাশাপাশি নীতিনৈতিকতাবোধ সম্পন্ন ভালো মানুষ হওয়া প্রয়োজন। সমাজে এমনও মানুষ আছে। ভালো ভালো কাজ করে; কিন্তু মানুষ হিসেবে সুবিধার নয়। ভালো কাজ যা করে তা লোক দেখানো। এই ভালো কাজ করে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য। এই ধরনের মানুষ সকল শ্রেণী-পেশার মধ্যেই দেখা যায়। তাই ভালো কাজ করার আগে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। ভালো মানুষ মানুষের ক্ষতি করে না। একজন মানুষের হাত এবং মুখ দ্বারা যখন অন্য একজন মানুষ সম্পূর্ণ নিরাপদ তখনই সে একজন ভালো মানুষ।
সমাজে ভালো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। আমাদের দেশে ‘পক্ষে বললে হিরো আর সত্য বললে জিরো।’ সত্য কথা বলে ভালো থাকা যায় না। সত্য বললে মানুষ ভুল বুঝে। সত্য বললে মানুষ পর হয়ে যায়। সত্যবাদী মানুষ একা হয়ে যায়। তবে সত্য বলার মাঝে শান্তি আছে। আত্মতৃপ্তি আছে। সত্য বলা মানুষের মনোবল শক্ত হয়। সত্য বলা মানুষ মাথা উঁচু করে চলতে পারে। এটাই সত্য বলা মানুষের সান্ত¡না।
আমরা সবাই পরিবর্তন চাই। পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া এবং সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে সে পরিবর্তন হতে হবে ইতিবাচক পরিবর্তন। প্রত্যেকটি মানুষ যদি নিজের জায়গা থেকে পরিবর্তন হয় তবেই পরিবর্তন সম্ভব।
নিজেকে যেভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। অহংকার থাকা যাবে না। অহংকার মানুষকে মানুষ থেকে আলাদা করে রাখে। অহংকারী মানুষ নিজেকে অনেক বড় মনে করে। নিজেকে অনেক জ্ঞানী ভাবে। মনে করে নিজেই সব বুঝে অন্য কেউ বুঝে না। এই সব মানসিকতা পরিবর্তন করে নিজেকে বদলাতে হবে। তবেই পরিবর্তন সম্ভব।
মিথ্যা বলা যাবে না। মিথ্যা সব অপরাধের বীজ। মিথ্যা বলা মহাপাপ। সকল ধর্মে মিথ্যা বলা নিষেধ করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষের নিজেকে পরিবর্তন করার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা। শুধু অন্যকে জ্ঞান দিলে হবে না। জ্ঞান নিজেও নিতে হবে।
সব কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। কথায় এবং কাজে মিল রাখতে হবে। তবেই আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হবে। প্রতিটি মানুষের এটা অর্জন করা প্রয়োজন। তবেই সার্বিক পরিবর্তন সম্ভব। শুধু পরিবর্তনের কথা বলে লাভ নাই; বরং যার যার জায়গা থেকে পরিবর্তন শুরু করাটা জরুরি।
অন্যের মতামতকে সম্মান করতে হবে। আমাদের মানসিকতা হচ্ছে নিজে যা বুঝি সেটা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেই। ভাবখানা এই রকম নিজেই সব বুঝি অন্য কেউ আর কিছু বুঝে না। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সবার মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে হবে। কিছু মানুষ আছে অন্যের কথা ও কাজ ভালো লাগে না। সবসময় নেতিবাচক আচরণ করে থাকে। নিজের সম্পর্কেও নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। নেতিবাচক ধারণা ত্যাগ করে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা প্রয়োজন।
আমরা অনেক কিছুরই পরিবর্তন চাই; কিন্তু নিজেকে পরিবর্তন করতে পারি না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে প্রতিটি মানুষের উচিত নিজেকে পরিবর্তন করা। বাহ্যিক পরিবর্তন নয়, এই পরিবর্তন হওয়া উচিত বিবেকের, মনুষ্যত্বের পরিবর্তন। এ ব্যাপারে সবারই চেষ্টা থাকা উচিত।
নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য আরও কিছু প্রয়োজনীয় কাজ যেমন- সামাজিক মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন। বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করা প্রয়োজন। শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। অজুহাত দেখানো বন্ধ করতে হবে । দায়িত্ব নিতে শিখতে হবে। নিজের ওপর কঠোর হওয়া যাবে না। নিজের ওপর সদয় আচরণ করতে হবে। হতাশ হওয়া যাবে না। আশাবাদী হতে হবে। নিজেকে অন্য কারও সাথে তুলনা করা যাবে না । আপনি গতকাল, এক সপ্তাহ বা এক মাস আগে যা ছিলেন তার সঙ্গে নিজেকে তুলনা করুন। সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। ক্ষোভ রাখা বন্ধ করুন। ক্ষমা করা শুরু করুন। অন্যের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা বন্ধ করুন। অন্যকে সাধ্যের মধ্যে সাহায্য করুন। অধিকার সচেতন হোন। সমাজে আপনার অবদান রাখুন।
সব কিছুতে হ্যাঁ বলা বন্ধ করুন। না বলা শিখুন। অতিরিক্ত গুরু গম্ভীর হওয়া বন্ধ করুন। ছোট্ট এই জীবন। আনন্দ খুঁজুন। জাংক ফুড খাওয়া বন্ধ করুন। স্বাস্থ্যকর খাবার, ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়া শুরু করুন। কার্বনেটেড পানীয় পান করা বন্ধ করুন। বেশি পানি পান করুন।
বিরক্তিকর জীবনযাপন করা বন্ধ করুন। সাধারণ জীবনযাপন করুন। ওভারথিংকিং বন্ধ করুন। আপনি আপনার চিন্তাভাবনার সাথে উন্নতি করতে পারেন এমন বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করুন। তাড়াহুড়া করা বন্ধ করুন, ধৈর্যশীল হতে শিখুন। অন্যের ওপর নির্ভরতা কমান। স্বাবলম্বী হতে শিখুন। বাস্তববাদী হোন। প্রতিদিন ছোট ছোট ভালো কাজ করুন এবং কথা কম বলুন, প্রয়োজনীয় কথা বলুন।
সবশেষে নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য অন্যের সমালোচনা করা বন্ধ করতে হবে। আত্মসমালোচনা করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। দক্ষতা অর্জন করতে হবে। অন্যকে প্রভাবিত করা বন্ধ করতে হবে। অতীত নিয়ে ভাবা যাবে না। ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। মিডিয়া যা বলছে তার সবটুকু বিশ্বাস করা যাবে না। নিজের গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে। সত্য অন্বেষণ করতে হবে। বস্তুবাদী হওয়া বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত মানবপ্রেমী হতে হবে। নিজেরা পরিবর্তন হলে সমাজ দেশ এমনিতেই পরিবর্তন হবে।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]