alt

উপ-সম্পাদকীয়

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

: বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

মহান মে দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন, যা শ্রমজীবী মানুষের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক গৌরবময় স্মারক। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন, বিশেষত দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি আদায়ের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের ফলেই আজকের এই দিবসটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রাণ বিসর্জন দিয়ে শ্রমিকরা যে অধিকার আদায় করেছিলেন, তা শুধু একটি দিন উদযাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়Ñ তা এক অনন্ত প্রেরণা, যা পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের চেতনায় অনবরত জ্বলে চলেছে।

আজকের এই দিনে পৃথিবীজুড়ে শ্রমিকদের সম্মানে কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই আনুষ্ঠানিকতার বাইরেও কি শ্রমিকদের প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? উন্নত দেশগুলোতে শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মানজনক জীবনযাপনের সুযোগ অনেকটাই নিশ্চিত হলেও অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশ, এখনও সে পথে অনেকটা পিছিয়ে।

বাংলাদেশের শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। পোশাক খাত, নির্মাণশিল্প, পরিবহন, কৃষি কিংবা প্রবাসে শ্রম দিয়ে তারা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন। অথচ তাদের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্মান এখনও কাক্সিক্ষত মাত্রায় প্রতিষ্ঠা পায়নি। রানা প্লাজা ট্র‍্যাজেডি, তাজরীন ফ্যাশনসহ একাধিক শিল্প-দুর্ঘটনা আমাদের সামনে শ্রমিক নিরাপত্তার ভয়াবহ চিত্র উন্মোচন করেছে। এসব ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া ও ক্ষতিপূরণ আজও ঝুলে আছে, যা শ্রমিকদের প্রতি রাষ্ট্র ও মালিকপক্ষের দায়িত্ববোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

সংবিধানের ১৩, ১৪ এবং ২০ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, দেশের জনগণই হবে উৎপাদনের মালিক এবং শ্রমজীবী মানুষকে শোষণমুক্ত করা হবে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাই, দেশের সম্পদ ও উৎপাদনব্যবস্থার কর্তৃত্ব এখন লুটেরা ও সুবিধাভোগী শ্রেণীর হাতে। একদিকে কিছু খাতে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হলেও তা এখনও সবক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়নি; অন্যদিকে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে চাপ, ভয়ভীতি ও দমন-পীড়ন এখনো বিদ্যমান।

শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শ্রমবান্ধব আইন এবং তার কার্যকর বাস্তবায়ন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শ্রম আইন শ্রমিকদের জন্য এক ধরনের ‘রক্ষাকবচ’। তাই এর যথাযথ প্রয়োগ না হলে শ্রমিকরা আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন। একই সঙ্গে মালিক পক্ষের মধ্যেও শ্রমিকদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শ্রদ্ধাশীল মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমেই গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা, নির্মিত হচ্ছে ভবন, সুষ্ঠু হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থাÑ তাই তাদের অবজ্ঞা করা কোনোভাবেই ন্যায্য নয়।

শ্রমিক মানেই শুধু পোশাক কারখানার কর্মচারী নয়Ñ গ্রামীণ খেটে খাওয়া কৃষিশ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর, স্বনিয়োজিত শ্রমজীবী কিংবা প্রবাসী শ্রমিকÑ সবাই এই শ্রেণিভুক্ত। কিন্তু তাদের অনেকেই শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পান না, ফলে তারা রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকেন। বিশেষ করে নারী ও শিশু শ্রমিকদের জীবন এখনো দারিদ্র‍্য, নিপীড়ন ও বৈষম্যে জর্জরিত। শিশু শ্রম অনেকটা কমলেও এখনও অনেক শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত। নারী শ্রমিকেরা পায়নি মাতৃত্বকালীন ছুটি কিংবা কর্মস্থলে যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা। প্রবাসে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকে প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসেন, কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো কাঠামোগত সহায়তা এখনও তৈরি হয়নি।

মে দিবসের যে মূল দর্শন, তা হলোÑ শ্রমের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে মে দিবসের উদযাপন অনেকটা প্রদর্শনবাদ, রাজনৈতিক শোডাউন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই’ স্লোগান দিয়ে শোষণের বাস্তবতাকে আড়াল করার প্রয়াসে দিবসটির প্রগতিশীল চেতনা ধীরে ধীরে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র, সরকার, মালিক ও শ্রমিক সবাইকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগী হতে হবে। শ্রম আইন সংস্কার করে তা যুগোপযোগী ও বাস্তবায়নযোগ্য করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিশুদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, শ্রমিকদের শুধু একটি দিনে স্মরণ না করে বছরজুড়ে তাদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।

সবশেষে বলতেই হয়, শ্রমিকের মুক্তিই অর্থনৈতিক মুক্তির পূর্বশর্ত। তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে না পারলে একটি সভ্য, ন্যায়ভিত্তিক, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব নয়। আসুন, আমরা সবাই শ্রমিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, শ্রম আইন বাস্তবায়ন এবং শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে আন্তরিক হই।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

স্নায়ুরোগ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি

জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব ও করণীয়

শাসনব্যবস্থা : জনগণের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব

বয়নামা দলিল কখন স্বত্বের দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়?

বর্ষার আগেই নদীভাঙনের আতঙ্কে উপকূলবাসী

ছবি

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দেশ : মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রয়োজন

‘রিসেটের’ পরাকৌশল কী হওয়া প্রয়োজন

প্রসঙ্গ : জাতীয় বাজেট

ব্রুনোর শ্মশান মঞ্চ

দুর্নীতির অবিশ্বাস্য খতিয়ান

সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসন, বহুত্ববাদ : সবকা সাথ্ সবকা বিকাশ!

পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ সংকটে ধর্মনিরপেক্ষতা

পেশাগত দায় ও নৈতিকতা

বিনোদনের রূপান্তর : সংস্কৃতির সংকোচন ও নতুন পথ

রম্যগদ্য : ‘চোর চাই, চোর...’

tab

উপ-সম্পাদকীয়

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

মহান মে দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন, যা শ্রমজীবী মানুষের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক গৌরবময় স্মারক। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন, বিশেষত দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি আদায়ের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের ফলেই আজকের এই দিবসটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রাণ বিসর্জন দিয়ে শ্রমিকরা যে অধিকার আদায় করেছিলেন, তা শুধু একটি দিন উদযাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়Ñ তা এক অনন্ত প্রেরণা, যা পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের চেতনায় অনবরত জ্বলে চলেছে।

আজকের এই দিনে পৃথিবীজুড়ে শ্রমিকদের সম্মানে কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই আনুষ্ঠানিকতার বাইরেও কি শ্রমিকদের প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? উন্নত দেশগুলোতে শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মানজনক জীবনযাপনের সুযোগ অনেকটাই নিশ্চিত হলেও অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশ, এখনও সে পথে অনেকটা পিছিয়ে।

বাংলাদেশের শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। পোশাক খাত, নির্মাণশিল্প, পরিবহন, কৃষি কিংবা প্রবাসে শ্রম দিয়ে তারা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন। অথচ তাদের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্মান এখনও কাক্সিক্ষত মাত্রায় প্রতিষ্ঠা পায়নি। রানা প্লাজা ট্র‍্যাজেডি, তাজরীন ফ্যাশনসহ একাধিক শিল্প-দুর্ঘটনা আমাদের সামনে শ্রমিক নিরাপত্তার ভয়াবহ চিত্র উন্মোচন করেছে। এসব ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া ও ক্ষতিপূরণ আজও ঝুলে আছে, যা শ্রমিকদের প্রতি রাষ্ট্র ও মালিকপক্ষের দায়িত্ববোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

সংবিধানের ১৩, ১৪ এবং ২০ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, দেশের জনগণই হবে উৎপাদনের মালিক এবং শ্রমজীবী মানুষকে শোষণমুক্ত করা হবে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাই, দেশের সম্পদ ও উৎপাদনব্যবস্থার কর্তৃত্ব এখন লুটেরা ও সুবিধাভোগী শ্রেণীর হাতে। একদিকে কিছু খাতে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হলেও তা এখনও সবক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়নি; অন্যদিকে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে চাপ, ভয়ভীতি ও দমন-পীড়ন এখনো বিদ্যমান।

শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শ্রমবান্ধব আইন এবং তার কার্যকর বাস্তবায়ন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শ্রম আইন শ্রমিকদের জন্য এক ধরনের ‘রক্ষাকবচ’। তাই এর যথাযথ প্রয়োগ না হলে শ্রমিকরা আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন। একই সঙ্গে মালিক পক্ষের মধ্যেও শ্রমিকদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শ্রদ্ধাশীল মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমেই গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা, নির্মিত হচ্ছে ভবন, সুষ্ঠু হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থাÑ তাই তাদের অবজ্ঞা করা কোনোভাবেই ন্যায্য নয়।

শ্রমিক মানেই শুধু পোশাক কারখানার কর্মচারী নয়Ñ গ্রামীণ খেটে খাওয়া কৃষিশ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর, স্বনিয়োজিত শ্রমজীবী কিংবা প্রবাসী শ্রমিকÑ সবাই এই শ্রেণিভুক্ত। কিন্তু তাদের অনেকেই শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পান না, ফলে তারা রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকেন। বিশেষ করে নারী ও শিশু শ্রমিকদের জীবন এখনো দারিদ্র‍্য, নিপীড়ন ও বৈষম্যে জর্জরিত। শিশু শ্রম অনেকটা কমলেও এখনও অনেক শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত। নারী শ্রমিকেরা পায়নি মাতৃত্বকালীন ছুটি কিংবা কর্মস্থলে যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা। প্রবাসে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকে প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসেন, কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো কাঠামোগত সহায়তা এখনও তৈরি হয়নি।

মে দিবসের যে মূল দর্শন, তা হলোÑ শ্রমের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে মে দিবসের উদযাপন অনেকটা প্রদর্শনবাদ, রাজনৈতিক শোডাউন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই’ স্লোগান দিয়ে শোষণের বাস্তবতাকে আড়াল করার প্রয়াসে দিবসটির প্রগতিশীল চেতনা ধীরে ধীরে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র, সরকার, মালিক ও শ্রমিক সবাইকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগী হতে হবে। শ্রম আইন সংস্কার করে তা যুগোপযোগী ও বাস্তবায়নযোগ্য করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিশুদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, শ্রমিকদের শুধু একটি দিনে স্মরণ না করে বছরজুড়ে তাদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।

সবশেষে বলতেই হয়, শ্রমিকের মুক্তিই অর্থনৈতিক মুক্তির পূর্বশর্ত। তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে না পারলে একটি সভ্য, ন্যায়ভিত্তিক, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব নয়। আসুন, আমরা সবাই শ্রমিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, শ্রম আইন বাস্তবায়ন এবং শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে আন্তরিক হই।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

back to top