শতদল বড়ুয়া
আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা তথা বৈশাখী পূর্ণিমা। বিশ্বের সকল প্রাণীর সুখ-শান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনায় আজ ভোরে বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়ে একটানা প্রায় ১০টা পর্যন্ত চলবে কোনো কোনো বিহারে। স্মৃতিময় এ দিন পালনে বিশ্বসহ বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় ব্যস্ত সময় কাটাবে। আজ সরকারি ছুটি। আজকের দিনেট তাৎপর্য বিষয়ে নি¤েœ আলোকপাত করার চেষ্টা করলাম।
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভগবান বুদ্ধের আবির্ভাব বাস্তবিকই ভারতবর্ষ তথা সমগ্র এশিয়ার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অভ্যুদয়। যার পুণ্যমানসে তৎকালীন সময়ে মানব সমাজে বয়ে এনেছিল এক নতুন আশার আলো। কুলষিত মানবগোষ্ঠীকে দিয়েছিল সাম্য, মৈত্রী ও সংহতির এক অনুপম ললিতবাণী। ভগবান বুদ্ধের আবির্ভাব শুধু যে এক বিষ্ময়কর ঘটনা তা নয়, পৃথিবীতে যত মহৎ ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলেই ভগবান বুদ্ধকে আখ্যায়িত করা হয়।
লুম্বিনী বুদ্ধের জন্মস্থান। আড়াই হাজার বছরের আগের কথা। দক্ষিণ-মধ্য নেপালের অঞ্চলে সবুজ বনানী শোভিত এক উদ্যানের নাম লুম্বিনী। এখানেই মাতামহীর গৃহে যাওয়ার পথে শাক্য মহিষী মায়াদেবী ৬২৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে বিশ্বমাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাবী গৌতমবুদ্ধ সিদ্ধার্থ আজকের শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনী উদ্যানে মাতৃগর্ভ থেকে অভিনিষ্ক্রান্ত হয়েছিলেন।
হিমাদ্রীর হিমবাহ বিধৌত কপিলাবস্তু নগরীর শাক্য কুলরাজ রাজা শুদ্ধোধন নিশ্চয় ভাবতে পারেনি ত্রিজগৎপূজ্য তার পুত্ররূপে ধরায় আবির্ভূত হবেন। কিন্তু তাই হয়েছে। কী করলেন এই অবোধ শিশু? আপন পদযুগল এগিয়ে দিলেন গণক ঋষির শিরোপরি। কালবিলম্ব না করে ঋষিও নিজের দুইহাতে তুলে নিলেন রাতুল চরণযুগল। পদতলে মহাবক্রসহ দেহে বত্রিশ প্রকার দুর্লভ লক্ষণসমূহ দেখতে পেয়ে ঋষিবর মহানন্দে বলে উঠলেন, ত্রিলোকের আলো উদয় হলো কপিলাবস্তুর মহারাজ্যে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর হঠাৎ শিশুর ন্যায় কাঁদতে লাগলেন ঋষি অসিত। অতঃপর মহাঋষি সিদ্ধার্থকে অন্তরের বন্দনা জানিয়ে আপন গন্তব্যস্থানে চলে গেলেন।
রাজা শুদ্ধোধন কিছুই বুঝতে পারলেন না। সিদ্ধার্থ আর কুমার নয়। রাজা শুদ্ধোধন পুত্রের হাতে রাজ্যভার অর্পণে সংকল্পবদ্ধ। শুদ্ধোধনের গোপন মনের আশা-আকাক্সক্ষায় মূলোচ্ছেদ করে কুমার একদা গভীর নিশীথে ছুটে গেলেন অসীমের সন্ধানে। দীর্ঘ ছয় বছর পর কপিলাবস্তুর রাজপুরীতে সংবাদ এলো, সংসার ত্যাগী সিদ্ধার্থ নিজ সাধনাবলে জেনেছেন দুঃখমুক্তির পবিত্র মার্গ। সেদিন ছিলো শুভ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা।’
বুদ্ধাঙ্কুর সিদ্ধার্থ পঁয়ত্রিশ বছর বয়ঃক্রমকালে লাভ করলেন সর্বজ্ঞতা জ্ঞান। বোধিতরু সন্নিকটে সাত সপ্তাহ অতিক্রমের পর আষাঢ়ী পূর্ণিমায় ঋষিপতন মৃগদাবে পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুর নিকট প্রবর্তন করলেন ধর্মচক্র। প্রচারিত হলো জগতে প্রথম একমাত্র মুক্তির বাণী। ধর্মসমূহ তাঁর অশ্রুত পূর্ব দিব্য-চক্ষু, দিব্য-জ্ঞান, দিব্য-প্রজ্ঞা, দিব্য-বিদ্যা এবং দিব্য-আলোক উৎপন্ন হলো। তার আর জানতে কিছু বাকি রইল না। তিনি বিমুক্তি সুখ উপভোগ করলেন। চারদিক আলোময়। ব্রহ্মলোক, দেবালোক, নিরয় লোক হতে সাধুবাদ ভেসে আসতে লাগলো। মুহূর্মুহূ ভূকম্প অনুভূত হতে থাকল। ধরায় সিদ্ধার্থ, বোধিদ্রুমের গৌতম মুণি প্রকৃত সত্য বা জ্ঞান লাভ করে ‘সম্যক-সম্বুদ্ধ’ রূপে জগতে প্রতিভাত হলো।
এভাবে পরিসমাপ্তি ঘটাল বহুজন্মের বোধিসত্ত্ব জীবনের। শুরু হলো এক মহাজীবনের, এক মহামানবের জীবনগাথা। আনন্দে আত্মহারা হয়ে প্রথমে ছুটে এলেন মহাব্রহ্ম। করজোড়ে বন্দনা করলেন ‘নমো’ সম্বোধনে। তারপর পূর্ব দিক থেকে পাল দেবতা ধৃতরাষ্ট্র বন্দনা জানালেন ‘তসস’ বলে। দক্ষিণের দেবরাজ বিরূঢ়ক এসে জোড়হাতে বন্দনা করে অভিনন্দন করলেন ‘ভগবতো’ বলে। মহারাজ বিরুপক্ষ পশ্চিম দিক থেকে এসে ‘অরহতো’ বলে বন্দনা করলেন। উত্তর দিকের কুবেরনামক লোকপাল দেবরাজ বজ্রাসনে উপবিষ্ট সত্যদ্রষ্টাকে ‘সমম-সম্বুদ্ধসস’ অখ্যাত করে প্রণিপাত জানানোর মুহূর্ত থেকে তার বন্দনা-গীতি শুরু হয়ে গেলো লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে সমতালে, সমস্বরে ‘নমো তসস ভগবতো অরহতো সমম-সম্বুদ্ধসস’ মন্ত্রোচ্চারণে।
পৃথিবীর ইতিহাসে ভগবান বুদ্ধের শান্তির বাণী অপরিসীম ও অতুলনীয়। শুধু মানবজাতি নয়, পশুপাখিও তার অপরিমেয় মৈত্রী ও করুণা হতে বঞ্চিত হয়নি। নিরঙ্কুশ জ্ঞান, অপরিমেয় সহৃয়তা এবং অভ্রান্ত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সহায়তায় ভগবান বুদ্ধই সর্বপ্রথম শিক্ষা দেনÑ সমগ্র প্রাণী সমাজ অখ-। পৃথিবীর সকল মানুষ এমন কী সকল জীব এক অবিচ্ছেদ্য ও আত্মীয়তার সূত্রে গ্রথিত এবং একের সুখ-দুঃখ অপরের সুখ-দুঃখের হেতু।
বিশ্বমানবকে জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত করে অহিংসা, সাম্য ও করুণার বিশ্বগণতন্ত্র, বিশ্বপ্রেম ও বিশ্বশান্তির পবিত্রবাণী শোনাতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ। যিনি শুদ্ধোধন রাজার ছেলে সিদ্ধার্থ নামে গৃহী জীবনযাপন করেছিলেন।
প্রত্যেক বৌদ্ধকে অবশ্যই বোধিসত্ত্বের আদর্শ গ্রহণ করতে হবে। বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকার অর্থ হলে বুদ্ধ আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়া অর্থাৎ মুক্তির সাধন করা নয় কি! মুক্তির সাক্ষাৎ পেতে হলে যে শর্ত রয়েছে সেই শর্তপূরণ করতেই হবে। বোধিসত্ত্বের জীবন আদর্শের মাধ্যমে সেই শর্ত পূরণ করা সম্ভব। লক্ষণীয় যে, বোধিসত্ত্ব সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও আপন মুক্তির কামনা করেননি। মুক্তিপথ অধিগত হয়ে দেব মনুষ্য সমভিব্যবহারে নির্বাণ লাভ করতে চেয়েছিলেন। বর্তমান বিশ্বে বৌদ্ধ মাত্রেরই এই আদর্শ গ্রহণীয়। প্রথমে আধ্যাত্মিক শক্তি, পুণ্য অর্জন করতে হবে। এই বিশুদ্ধ পৃথিবীতে আত্মজ্ঞানের নিরিখে পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন করে ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে সেই পরিস্থিতিতে আপন মহত্ত্বের অস্তিত্বের বিজয় সূচিত করা প্রত্যেক বৌদ্ধেরই কর্তব্য।
বিশ্বের সকল মানুষের অনাগত দিন সুখে-শান্তিতে কাটুক এই কামনায় আজকের শুভ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে সকলকে জানাই লালগোলাপ শুভেচ্ছা। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। বাংলাদেশ সমৃদ্ধি লাভ করুক।
[লেখক : প্রাবন্ধিক]
শতদল বড়ুয়া
রোববার, ১১ মে ২০২৫
আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা তথা বৈশাখী পূর্ণিমা। বিশ্বের সকল প্রাণীর সুখ-শান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনায় আজ ভোরে বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়ে একটানা প্রায় ১০টা পর্যন্ত চলবে কোনো কোনো বিহারে। স্মৃতিময় এ দিন পালনে বিশ্বসহ বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় ব্যস্ত সময় কাটাবে। আজ সরকারি ছুটি। আজকের দিনেট তাৎপর্য বিষয়ে নি¤েœ আলোকপাত করার চেষ্টা করলাম।
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভগবান বুদ্ধের আবির্ভাব বাস্তবিকই ভারতবর্ষ তথা সমগ্র এশিয়ার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অভ্যুদয়। যার পুণ্যমানসে তৎকালীন সময়ে মানব সমাজে বয়ে এনেছিল এক নতুন আশার আলো। কুলষিত মানবগোষ্ঠীকে দিয়েছিল সাম্য, মৈত্রী ও সংহতির এক অনুপম ললিতবাণী। ভগবান বুদ্ধের আবির্ভাব শুধু যে এক বিষ্ময়কর ঘটনা তা নয়, পৃথিবীতে যত মহৎ ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলেই ভগবান বুদ্ধকে আখ্যায়িত করা হয়।
লুম্বিনী বুদ্ধের জন্মস্থান। আড়াই হাজার বছরের আগের কথা। দক্ষিণ-মধ্য নেপালের অঞ্চলে সবুজ বনানী শোভিত এক উদ্যানের নাম লুম্বিনী। এখানেই মাতামহীর গৃহে যাওয়ার পথে শাক্য মহিষী মায়াদেবী ৬২৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে বিশ্বমাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাবী গৌতমবুদ্ধ সিদ্ধার্থ আজকের শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনী উদ্যানে মাতৃগর্ভ থেকে অভিনিষ্ক্রান্ত হয়েছিলেন।
হিমাদ্রীর হিমবাহ বিধৌত কপিলাবস্তু নগরীর শাক্য কুলরাজ রাজা শুদ্ধোধন নিশ্চয় ভাবতে পারেনি ত্রিজগৎপূজ্য তার পুত্ররূপে ধরায় আবির্ভূত হবেন। কিন্তু তাই হয়েছে। কী করলেন এই অবোধ শিশু? আপন পদযুগল এগিয়ে দিলেন গণক ঋষির শিরোপরি। কালবিলম্ব না করে ঋষিও নিজের দুইহাতে তুলে নিলেন রাতুল চরণযুগল। পদতলে মহাবক্রসহ দেহে বত্রিশ প্রকার দুর্লভ লক্ষণসমূহ দেখতে পেয়ে ঋষিবর মহানন্দে বলে উঠলেন, ত্রিলোকের আলো উদয় হলো কপিলাবস্তুর মহারাজ্যে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর হঠাৎ শিশুর ন্যায় কাঁদতে লাগলেন ঋষি অসিত। অতঃপর মহাঋষি সিদ্ধার্থকে অন্তরের বন্দনা জানিয়ে আপন গন্তব্যস্থানে চলে গেলেন।
রাজা শুদ্ধোধন কিছুই বুঝতে পারলেন না। সিদ্ধার্থ আর কুমার নয়। রাজা শুদ্ধোধন পুত্রের হাতে রাজ্যভার অর্পণে সংকল্পবদ্ধ। শুদ্ধোধনের গোপন মনের আশা-আকাক্সক্ষায় মূলোচ্ছেদ করে কুমার একদা গভীর নিশীথে ছুটে গেলেন অসীমের সন্ধানে। দীর্ঘ ছয় বছর পর কপিলাবস্তুর রাজপুরীতে সংবাদ এলো, সংসার ত্যাগী সিদ্ধার্থ নিজ সাধনাবলে জেনেছেন দুঃখমুক্তির পবিত্র মার্গ। সেদিন ছিলো শুভ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা।’
বুদ্ধাঙ্কুর সিদ্ধার্থ পঁয়ত্রিশ বছর বয়ঃক্রমকালে লাভ করলেন সর্বজ্ঞতা জ্ঞান। বোধিতরু সন্নিকটে সাত সপ্তাহ অতিক্রমের পর আষাঢ়ী পূর্ণিমায় ঋষিপতন মৃগদাবে পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুর নিকট প্রবর্তন করলেন ধর্মচক্র। প্রচারিত হলো জগতে প্রথম একমাত্র মুক্তির বাণী। ধর্মসমূহ তাঁর অশ্রুত পূর্ব দিব্য-চক্ষু, দিব্য-জ্ঞান, দিব্য-প্রজ্ঞা, দিব্য-বিদ্যা এবং দিব্য-আলোক উৎপন্ন হলো। তার আর জানতে কিছু বাকি রইল না। তিনি বিমুক্তি সুখ উপভোগ করলেন। চারদিক আলোময়। ব্রহ্মলোক, দেবালোক, নিরয় লোক হতে সাধুবাদ ভেসে আসতে লাগলো। মুহূর্মুহূ ভূকম্প অনুভূত হতে থাকল। ধরায় সিদ্ধার্থ, বোধিদ্রুমের গৌতম মুণি প্রকৃত সত্য বা জ্ঞান লাভ করে ‘সম্যক-সম্বুদ্ধ’ রূপে জগতে প্রতিভাত হলো।
এভাবে পরিসমাপ্তি ঘটাল বহুজন্মের বোধিসত্ত্ব জীবনের। শুরু হলো এক মহাজীবনের, এক মহামানবের জীবনগাথা। আনন্দে আত্মহারা হয়ে প্রথমে ছুটে এলেন মহাব্রহ্ম। করজোড়ে বন্দনা করলেন ‘নমো’ সম্বোধনে। তারপর পূর্ব দিক থেকে পাল দেবতা ধৃতরাষ্ট্র বন্দনা জানালেন ‘তসস’ বলে। দক্ষিণের দেবরাজ বিরূঢ়ক এসে জোড়হাতে বন্দনা করে অভিনন্দন করলেন ‘ভগবতো’ বলে। মহারাজ বিরুপক্ষ পশ্চিম দিক থেকে এসে ‘অরহতো’ বলে বন্দনা করলেন। উত্তর দিকের কুবেরনামক লোকপাল দেবরাজ বজ্রাসনে উপবিষ্ট সত্যদ্রষ্টাকে ‘সমম-সম্বুদ্ধসস’ অখ্যাত করে প্রণিপাত জানানোর মুহূর্ত থেকে তার বন্দনা-গীতি শুরু হয়ে গেলো লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে সমতালে, সমস্বরে ‘নমো তসস ভগবতো অরহতো সমম-সম্বুদ্ধসস’ মন্ত্রোচ্চারণে।
পৃথিবীর ইতিহাসে ভগবান বুদ্ধের শান্তির বাণী অপরিসীম ও অতুলনীয়। শুধু মানবজাতি নয়, পশুপাখিও তার অপরিমেয় মৈত্রী ও করুণা হতে বঞ্চিত হয়নি। নিরঙ্কুশ জ্ঞান, অপরিমেয় সহৃয়তা এবং অভ্রান্ত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সহায়তায় ভগবান বুদ্ধই সর্বপ্রথম শিক্ষা দেনÑ সমগ্র প্রাণী সমাজ অখ-। পৃথিবীর সকল মানুষ এমন কী সকল জীব এক অবিচ্ছেদ্য ও আত্মীয়তার সূত্রে গ্রথিত এবং একের সুখ-দুঃখ অপরের সুখ-দুঃখের হেতু।
বিশ্বমানবকে জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত করে অহিংসা, সাম্য ও করুণার বিশ্বগণতন্ত্র, বিশ্বপ্রেম ও বিশ্বশান্তির পবিত্রবাণী শোনাতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ। যিনি শুদ্ধোধন রাজার ছেলে সিদ্ধার্থ নামে গৃহী জীবনযাপন করেছিলেন।
প্রত্যেক বৌদ্ধকে অবশ্যই বোধিসত্ত্বের আদর্শ গ্রহণ করতে হবে। বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকার অর্থ হলে বুদ্ধ আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়া অর্থাৎ মুক্তির সাধন করা নয় কি! মুক্তির সাক্ষাৎ পেতে হলে যে শর্ত রয়েছে সেই শর্তপূরণ করতেই হবে। বোধিসত্ত্বের জীবন আদর্শের মাধ্যমে সেই শর্ত পূরণ করা সম্ভব। লক্ষণীয় যে, বোধিসত্ত্ব সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও আপন মুক্তির কামনা করেননি। মুক্তিপথ অধিগত হয়ে দেব মনুষ্য সমভিব্যবহারে নির্বাণ লাভ করতে চেয়েছিলেন। বর্তমান বিশ্বে বৌদ্ধ মাত্রেরই এই আদর্শ গ্রহণীয়। প্রথমে আধ্যাত্মিক শক্তি, পুণ্য অর্জন করতে হবে। এই বিশুদ্ধ পৃথিবীতে আত্মজ্ঞানের নিরিখে পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন করে ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে সেই পরিস্থিতিতে আপন মহত্ত্বের অস্তিত্বের বিজয় সূচিত করা প্রত্যেক বৌদ্ধেরই কর্তব্য।
বিশ্বের সকল মানুষের অনাগত দিন সুখে-শান্তিতে কাটুক এই কামনায় আজকের শুভ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে সকলকে জানাই লালগোলাপ শুভেচ্ছা। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। বাংলাদেশ সমৃদ্ধি লাভ করুক।
[লেখক : প্রাবন্ধিক]