alt

উপ-সম্পাদকীয়

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

এম এ হোসাইন

: শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সপ্তাহব্যাপী চলমান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে, মধ্যপ্রাচ্য আবারও এমন এক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে যা প্রয়োজনের চেয়ে ঔদ্ধত্য দ্বারাই বেশি চালিত। ইসরায়েলের পূর্বপরিকল্পিত হামলা, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ কৌশলগত নির্ভুলতার এক অনবদ্য উদাহরণ ছিল। তবে এটি ভয় ও বিস্ময় সৃষ্টিতে যতটা না অর্জন করেছে, দীর্ঘমেয়াদি দূরদর্শিতার ক্ষেত্রে ততটাই অভাব রয়েছে। বস্তুত এটি কৌশলগত অতিপ্রসারতা কীভাবে দ্রুত ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে তার এক ঐতিহাসিক উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সুনির্দিষ্ট আঘাতÑতেহরান ও কারাজে অবস্থিত পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজ সাইট, আইআরজিসির কমান্ড সেন্টার এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করেÑসাইবার, বিমান ও গোয়েন্দা ইউনিটের মধ্যে অনবদ্য সমন্বয় প্রদর্শন করেছে। ইরানের অতি মূল্যবান লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আঘাত হানা হয়েছিল, এবং ইসরায়েলি মাপকাঠিতে, সাফল্য ছিল দ্রুত ও সন্তোষজনক। জ্যেষ্ঠ ইরানি ব্যক্তিত্বদের মৃত্যু এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ধ্বংস প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বিজয়ের একটি মুহূর্ত এনে দিয়েছিল; কিন্তু একটি সফল অভিযানকে একটি সফল কৌশলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।

আমরা আগে এমনটা দেখেছি, একটি শক্তিশালী দেশ তার সামরিক ক্ষমতা ব্যবহার করে একটি সম্ভাব্য হুমকিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়, এই আশায় যে এতে করে কৌশলগত ভারসাম্যে পুনর্বিন্যাস ঘটবে; কিন্তু ইসরায়েল যেটি শুরু করেছে, তা ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে কোনো ‘চূড়ান্ত আঘাত’ না-ও হতে পারে; বরং এটি এমন এক বেপরোয়া উচ্চ আকাক্সক্ষা, যা গোটা অঞ্চলকেই এমনকি গোটা বিশ্বকেও আরও বিকৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

নেতানিয়াহুর এই কৌশলগত হিসাব-নিকাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক ও লিবিয়ায় ব্যর্থ অভিযানেরই প্রতিধ্বনি করে। যেমন- হুমকি নির্মূল করো, শাসনব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি করো, তারপর ‘গণতন্ত্র’ বা ‘সহনশীলতা’ আপনাতেই উঠে আসবে। সমস্যা হলোÑএই যুক্তি প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। সংস্কারের বদলে এসেছে বিশৃঙ্খলা। গণতন্ত্রের বদলে মাথাচাড়া দিয়েছে চরমপন্থা।

ইসরায়েলের হামলা সাময়িকভাবে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতায় আঘাত হানতে পারে, কিন্তু তেহরান এর জবাব দিয়েছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে নয়, পাল্টা আক্রমণে। যেমন- ইসরায়েলি শহরগুলোর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, সাধারণ ইহুদিদের বাস্তুচ্যুতি, এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুনরায় শুরু করার ঘোষণার মাধ্যমে। বর্তমানে ১৩০০-এর বেশি ইসরায়েলি বাস্তুচ্যুত হয়েছে, আর ইরানে ৬৩৯ জন নিহত এবং ১৩০০-এর বেশি আহত। এটি কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নয়; বরং একটি বৃহত্তর যুদ্ধের সূচনালগ্ন।

ইসরায়েলের সামরিক নীতি বহুদিন ধরেই আগাম প্রতিরোধের ধারণার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছেÑ যার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ। তখন ইসরায়েল একাধিক আরব রাষ্ট্রের দ্বারা অস্তিত্বগত হুমকির মুখে ছিল; কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইরান অবশ্যই হুমকি, বিশেষ করে তার বিভিন্ন ছায়াশক্তির (প্রক্সি) মাধ্যমে। তবে এটিও সত্য, ইরান বরাবরই কূটনৈতিক চাপের মুখে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী মনোভাব দেখিয়েছে।

কিন্তু এবার, ইসরায়েল কোনো আসন্ন হুমকির জন্য অপেক্ষা করেনি। বরং তারা আগে থেকেই হামলা চালিয়েছে এই যুক্তিতে যে অপেক্ষা করার সামর্থ্য তাদের নেই। এই ভাষা যা আশ্চর্যজনকভাবে বুশ ডকট্রিনের সঙ্গে মিলে যায়Ñযা অবশ্যই আতঙ্কের বিষয়। ন্যায়সঙ্গত আত্মরক্ষা ও বেপরোয়া আগ্রাসনের মধ্যে পার্থক্য কেবল সময়ের নয়, বরং উদ্দেশ্যের। প্রকৃতপক্ষে নেতানিয়াহু কোনো তাৎক্ষণিক হুমকি দূর করতে চাননি; তিনি তার ডুবতে থাকা রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে জোরপূর্বক পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছেন। এর চেয়েও বিপজ্জনক হলো, আন্তর্জাতিক অনুমোদন ছাড়া ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ইসরায়েল একটি বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যদি আগাম হামলাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়, তাহলে কোনো রাষ্ট্রই নিরাপদ নয়Ñইসরায়েলও না।

এই সংকট নিয়ে কোনো পরিপূর্ণ বিশ্লেষণই সম্ভব নয় যদি আমেরিকার ভূমিকা বা এর অনুপস্থিতি পর্যালোচনা না করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ব্রিফিং রুমে সামরিক বিকল্প নিয়ে পর্যালোচনার সময় তার চিরাচরিত অস্পষ্টতা বজায় রাখেন; ‘আমি হয়তো করব, হয়তো করব না’ বলে। এর অর্থ হলো, তিনি দায়িত্ব ছাড়াই প্রভাব বজায় রাখতে চান।

তবুও জানা গেছে ইসরায়েল পূর্বেই যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের হামলার বিষয়ে অবহিত করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র কী করেছে? তাদের দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে এবং পরিস্থিতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। এটাকে নেতৃত্ব বলা যায় না, এটি দায়িত্বকে এড়ানো। এর মাধ্যমে এক বিপজ্জনক বার্তা দেয়: যদি আপনি আমাদের মিত্র হন, তাহলে দায়মুক্তির নিশ্চয়তা নিয়ে আঞ্চলিক আগ্রাসনে লিপ্ত হতে পারেন। কিন্তু যখন সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তখন ওয়াশিংটনের নৈতিক অবস্থান কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এখন নিজেকেই প্রশ্ন করা: এমন দ্বিমুখী নীতিতে আসলে তার কী লাভ? যদি লক্ষ্য হয় ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা, তবে টেকসই পথ হলো কূটনীতি, ড্রোন হামলা নয়। আর যদি আঞ্চলিক যুদ্ধ প্রতিরোধ করাই হয়, তাহলে শুধু ইরান নয়, ইসরায়েলকেও সংযত করতে হবে।

সত্য স্বীকার করেই শুরু করা যাক, ইরান কোনো নির্দোষী পক্ষ নয়। হিজবুল্লাহ, হামাস ও হুতিদের প্রতি তাদের সমর্থন একাধিক ফ্রন্টে অস্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক উচ্চাকাক্সক্ষা সৃষ্টি করেছে। শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের দাবি সত্ত্বেও তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা আঞ্চলিক পরিম-লে গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

তবুও ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধে ইরানের ব্যর্থতা কিছু গভীর দুর্বলতা উন্মোচিত করেছে। তাদের বহুল প্রচারিত বাবর-৩৭৩ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত অকার্যকর প্রমাডুত হয়েছে। সাইবার আক্রমণে অন্ধ হয়ে যায় রাডার ব্যবস্থাপনা। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো অনায়াসে ইরানের আকাশসীমায় ঢুকে আবার বেরিয়ে যায়, প্রায় কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই।

তবে ইতোমধ্যেই ইরান পাল্টা ড্রোন হামলা শুরু করেছে। তাদের সশস্ত্র ছায়া শক্তিগুলো যারা অপেক্ষায় আছে যেকোনো সময় ইসরায়েলের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তকে স্থায়ী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে পারে। পরিস্থিতি যে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, তা এখন স্পষ্টÑযদি কূটনীতি হস্তক্ষেপ না করে।

একটি বিস্ময়কর পরিস্থিতিতে, আরব রাজধানীগুলোর প্রতিক্রিয়া এসেছে মিশ্রভাবেÑনির্বিকার নিন্দা এবং মৌন সমর্থনের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণে। তুরস্ক এই হামলাকে আখ্যা দিয়েছে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে, অথচ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিসর শুধু ‘সংযম’ অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে কিছু অস্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছে। এমনকি ঐতিহাসিকভাবে সোচ্চার পাকিস্তানও এবার অত্যন্ত সতর্ক ও পরিমিত অবস্থান নিয়েছে।

এই নীরবতাই অনেক কিছু বলে দেয়। বহু সুন্নি আরব শাসকÑযারা ইরানের আঞ্চলিক উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে শঙ্কিতÑগোপনে ইসরায়েলের এই হামলাকে স্বাগত জানিয়ে থাকতে পারেন। আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল ইতোমধ্যেই কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। এখন হয়তো ইরানবিরোধী কৌশলগত ঐক্যই পুরনো শত্রুতা ও বিভাজনকে প্রতিস্থাপন করছে।

তবুও নীরবতা মানে সম্মতি নয়। আরব নেতারা উদ্বিগ্ন যে, যদি ইসরায়েল দায়মুক্তি নিয়ে একের পর এক আগাম হামলা চালাতে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণাটাই দুর্বল হয়ে পড়বে। আজ যদি ইরান হয় লক্ষ্যবস্তু, কাল হয়তো একই যুক্তিতে হামলা চালানো হতে পারে দামেস্ক, বাগদাদ বা এমনকি রিয়াদের ওপরও।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যে কোনো ধরনের শাসন পরিবর্তনের চেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন এবং অবিলম্বে সব ধরনের বিমান হামলা বন্ধ করার দাবি তুলেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব, ব্রিটেনের কেয়ার স্টারমার এবং জার্মানির জোহান ভাডেফুলÑসবাই সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে বাস্তবতা হলো, কার্যকর কূটনীতি এখন জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল অবস্থায় আছে। ইসরায়েল প্রাথমিক সাফল্যে আত্মবিশ্বাসী এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বতো সমর্থনে আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে, সংলাপের কোনো আগ্রহণ দেখাচ্ছে না। অন্যদিকে সামরিকভাবে অপমানিত ইরান আপসের অবস্থানে নেই। এ এক বিপজ্জনক অচলাবস্থা।

সম্ভবত ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিণতি হলো দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের গতি রুদ্ধ হয়ে যাওয়া। জাতিসংঘ, ফ্রান্স এবং সৌদি আরবের যৌথ পৃষ্ঠপোষকতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি সম্মেলন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে। গাজা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তেহরানের দিকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ঘুরিয়ে দিয়ে নেতানিয়াহু কার্যত চতুরতার সঙ্গে পশ্চিম তীরের ঘটনাবলি নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলা বৈশ্বিক সমালোচনাকে স্তব্ধ করে দিয়েছেন।

কিন্তু এটি এক স্বল্পমেয়াদি কৌশল, যার দীর্ঘমেয়াদি মূল্য অনেক বেশি। ফিলিস্তিনিদের আবারও বিশ্ব কূটনীতির প্রান্তে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আরব-ইসরায়েল পুনর্মিলনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা এখন ইসরায়েলের সামরিক দুঃসাহসিকতার হাতে বন্দি।

যুদ্ধজয় অর্থহীন হয়ে পড়ে, যদি তা আরও বৃহৎ যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। নেতৃত্বের আসল মানদ- হলো, কেউ যুদ্ধ কতটা দক্ষতায় চালাতে পারে তা নয়, বরং শান্তি কায়েমে কতটা আন্তরিক সে চেষ্টা করে। যদি ইসরায়েল মনে করে নিরাপত্তাকে বোমার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ইতিহাস একটি নির্মম সতর্কবার্তা দেয়Ñ ইতিহাসের সব আগাম যুদ্ধে খুব কম ক্ষেত্রেই কাক্সিক্ষত ফল মিলেছে। গাজার পর মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি মানবিক বিপর্যয়ের জন্য বিশ্ব প্রস্তুত নয়। তাই এখন প্রয়োজন শুধু বিবৃতি নয়, কার্যকর কূটনীতি, সুনির্দিষ্ট চাপ এবং স্পষ্ট অবস্থান।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

প্রশিক্ষণ থেকে কেন বাদ নারী কৃষকরা?

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

লই গো বুক পেতে অনল-বাণ!

সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

রম্যগদ্য : ‘উহু উহু, তোরে মাফ করা যায় না...’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট : সংকোচন, সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিফলন

আম রপ্তানি : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

সামাজিকমাধ্যম গুরুত্বহীন নয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

বাংলাদেশ : “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”

নতুন নোট, নতুন বিতর্ক

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হতাশা ও উপজেলা পর্যায়ের অদক্ষতা : কে নেবে দায়িত্ব?

তরল সম্পর্কের গোলকধাঁধা

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

বাজেটে বৈষম্য কমানোর কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন আছে কি

চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে

রম্যগদ্য : ‘নির্বাচন, না নীর-বচন...’

প্লাস্টিক দূষণ নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়ান

কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা

নাম ও মর্যাদা : অর্থবহ নামকরণে বৈষম্য রোধের আহ্বান

ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুগে নগর বাংলাদেশের শ্রেণী কাঠামো

পারিবারিক শিক্ষা ও রাষ্ট্রসংস্কার : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথরেখা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

এম এ হোসাইন

শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সপ্তাহব্যাপী চলমান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে, মধ্যপ্রাচ্য আবারও এমন এক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে যা প্রয়োজনের চেয়ে ঔদ্ধত্য দ্বারাই বেশি চালিত। ইসরায়েলের পূর্বপরিকল্পিত হামলা, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ কৌশলগত নির্ভুলতার এক অনবদ্য উদাহরণ ছিল। তবে এটি ভয় ও বিস্ময় সৃষ্টিতে যতটা না অর্জন করেছে, দীর্ঘমেয়াদি দূরদর্শিতার ক্ষেত্রে ততটাই অভাব রয়েছে। বস্তুত এটি কৌশলগত অতিপ্রসারতা কীভাবে দ্রুত ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে তার এক ঐতিহাসিক উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সুনির্দিষ্ট আঘাতÑতেহরান ও কারাজে অবস্থিত পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজ সাইট, আইআরজিসির কমান্ড সেন্টার এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করেÑসাইবার, বিমান ও গোয়েন্দা ইউনিটের মধ্যে অনবদ্য সমন্বয় প্রদর্শন করেছে। ইরানের অতি মূল্যবান লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আঘাত হানা হয়েছিল, এবং ইসরায়েলি মাপকাঠিতে, সাফল্য ছিল দ্রুত ও সন্তোষজনক। জ্যেষ্ঠ ইরানি ব্যক্তিত্বদের মৃত্যু এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ধ্বংস প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বিজয়ের একটি মুহূর্ত এনে দিয়েছিল; কিন্তু একটি সফল অভিযানকে একটি সফল কৌশলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।

আমরা আগে এমনটা দেখেছি, একটি শক্তিশালী দেশ তার সামরিক ক্ষমতা ব্যবহার করে একটি সম্ভাব্য হুমকিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়, এই আশায় যে এতে করে কৌশলগত ভারসাম্যে পুনর্বিন্যাস ঘটবে; কিন্তু ইসরায়েল যেটি শুরু করেছে, তা ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে কোনো ‘চূড়ান্ত আঘাত’ না-ও হতে পারে; বরং এটি এমন এক বেপরোয়া উচ্চ আকাক্সক্ষা, যা গোটা অঞ্চলকেই এমনকি গোটা বিশ্বকেও আরও বিকৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

নেতানিয়াহুর এই কৌশলগত হিসাব-নিকাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক ও লিবিয়ায় ব্যর্থ অভিযানেরই প্রতিধ্বনি করে। যেমন- হুমকি নির্মূল করো, শাসনব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি করো, তারপর ‘গণতন্ত্র’ বা ‘সহনশীলতা’ আপনাতেই উঠে আসবে। সমস্যা হলোÑএই যুক্তি প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। সংস্কারের বদলে এসেছে বিশৃঙ্খলা। গণতন্ত্রের বদলে মাথাচাড়া দিয়েছে চরমপন্থা।

ইসরায়েলের হামলা সাময়িকভাবে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতায় আঘাত হানতে পারে, কিন্তু তেহরান এর জবাব দিয়েছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে নয়, পাল্টা আক্রমণে। যেমন- ইসরায়েলি শহরগুলোর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, সাধারণ ইহুদিদের বাস্তুচ্যুতি, এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুনরায় শুরু করার ঘোষণার মাধ্যমে। বর্তমানে ১৩০০-এর বেশি ইসরায়েলি বাস্তুচ্যুত হয়েছে, আর ইরানে ৬৩৯ জন নিহত এবং ১৩০০-এর বেশি আহত। এটি কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নয়; বরং একটি বৃহত্তর যুদ্ধের সূচনালগ্ন।

ইসরায়েলের সামরিক নীতি বহুদিন ধরেই আগাম প্রতিরোধের ধারণার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছেÑ যার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ। তখন ইসরায়েল একাধিক আরব রাষ্ট্রের দ্বারা অস্তিত্বগত হুমকির মুখে ছিল; কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইরান অবশ্যই হুমকি, বিশেষ করে তার বিভিন্ন ছায়াশক্তির (প্রক্সি) মাধ্যমে। তবে এটিও সত্য, ইরান বরাবরই কূটনৈতিক চাপের মুখে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী মনোভাব দেখিয়েছে।

কিন্তু এবার, ইসরায়েল কোনো আসন্ন হুমকির জন্য অপেক্ষা করেনি। বরং তারা আগে থেকেই হামলা চালিয়েছে এই যুক্তিতে যে অপেক্ষা করার সামর্থ্য তাদের নেই। এই ভাষা যা আশ্চর্যজনকভাবে বুশ ডকট্রিনের সঙ্গে মিলে যায়Ñযা অবশ্যই আতঙ্কের বিষয়। ন্যায়সঙ্গত আত্মরক্ষা ও বেপরোয়া আগ্রাসনের মধ্যে পার্থক্য কেবল সময়ের নয়, বরং উদ্দেশ্যের। প্রকৃতপক্ষে নেতানিয়াহু কোনো তাৎক্ষণিক হুমকি দূর করতে চাননি; তিনি তার ডুবতে থাকা রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে জোরপূর্বক পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছেন। এর চেয়েও বিপজ্জনক হলো, আন্তর্জাতিক অনুমোদন ছাড়া ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ইসরায়েল একটি বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যদি আগাম হামলাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়, তাহলে কোনো রাষ্ট্রই নিরাপদ নয়Ñইসরায়েলও না।

এই সংকট নিয়ে কোনো পরিপূর্ণ বিশ্লেষণই সম্ভব নয় যদি আমেরিকার ভূমিকা বা এর অনুপস্থিতি পর্যালোচনা না করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ব্রিফিং রুমে সামরিক বিকল্প নিয়ে পর্যালোচনার সময় তার চিরাচরিত অস্পষ্টতা বজায় রাখেন; ‘আমি হয়তো করব, হয়তো করব না’ বলে। এর অর্থ হলো, তিনি দায়িত্ব ছাড়াই প্রভাব বজায় রাখতে চান।

তবুও জানা গেছে ইসরায়েল পূর্বেই যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের হামলার বিষয়ে অবহিত করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র কী করেছে? তাদের দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে এবং পরিস্থিতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। এটাকে নেতৃত্ব বলা যায় না, এটি দায়িত্বকে এড়ানো। এর মাধ্যমে এক বিপজ্জনক বার্তা দেয়: যদি আপনি আমাদের মিত্র হন, তাহলে দায়মুক্তির নিশ্চয়তা নিয়ে আঞ্চলিক আগ্রাসনে লিপ্ত হতে পারেন। কিন্তু যখন সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তখন ওয়াশিংটনের নৈতিক অবস্থান কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এখন নিজেকেই প্রশ্ন করা: এমন দ্বিমুখী নীতিতে আসলে তার কী লাভ? যদি লক্ষ্য হয় ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা, তবে টেকসই পথ হলো কূটনীতি, ড্রোন হামলা নয়। আর যদি আঞ্চলিক যুদ্ধ প্রতিরোধ করাই হয়, তাহলে শুধু ইরান নয়, ইসরায়েলকেও সংযত করতে হবে।

সত্য স্বীকার করেই শুরু করা যাক, ইরান কোনো নির্দোষী পক্ষ নয়। হিজবুল্লাহ, হামাস ও হুতিদের প্রতি তাদের সমর্থন একাধিক ফ্রন্টে অস্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক উচ্চাকাক্সক্ষা সৃষ্টি করেছে। শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের দাবি সত্ত্বেও তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা আঞ্চলিক পরিম-লে গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

তবুও ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধে ইরানের ব্যর্থতা কিছু গভীর দুর্বলতা উন্মোচিত করেছে। তাদের বহুল প্রচারিত বাবর-৩৭৩ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত অকার্যকর প্রমাডুত হয়েছে। সাইবার আক্রমণে অন্ধ হয়ে যায় রাডার ব্যবস্থাপনা। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো অনায়াসে ইরানের আকাশসীমায় ঢুকে আবার বেরিয়ে যায়, প্রায় কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই।

তবে ইতোমধ্যেই ইরান পাল্টা ড্রোন হামলা শুরু করেছে। তাদের সশস্ত্র ছায়া শক্তিগুলো যারা অপেক্ষায় আছে যেকোনো সময় ইসরায়েলের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তকে স্থায়ী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে পারে। পরিস্থিতি যে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, তা এখন স্পষ্টÑযদি কূটনীতি হস্তক্ষেপ না করে।

একটি বিস্ময়কর পরিস্থিতিতে, আরব রাজধানীগুলোর প্রতিক্রিয়া এসেছে মিশ্রভাবেÑনির্বিকার নিন্দা এবং মৌন সমর্থনের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণে। তুরস্ক এই হামলাকে আখ্যা দিয়েছে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে, অথচ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিসর শুধু ‘সংযম’ অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে কিছু অস্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছে। এমনকি ঐতিহাসিকভাবে সোচ্চার পাকিস্তানও এবার অত্যন্ত সতর্ক ও পরিমিত অবস্থান নিয়েছে।

এই নীরবতাই অনেক কিছু বলে দেয়। বহু সুন্নি আরব শাসকÑযারা ইরানের আঞ্চলিক উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে শঙ্কিতÑগোপনে ইসরায়েলের এই হামলাকে স্বাগত জানিয়ে থাকতে পারেন। আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল ইতোমধ্যেই কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। এখন হয়তো ইরানবিরোধী কৌশলগত ঐক্যই পুরনো শত্রুতা ও বিভাজনকে প্রতিস্থাপন করছে।

তবুও নীরবতা মানে সম্মতি নয়। আরব নেতারা উদ্বিগ্ন যে, যদি ইসরায়েল দায়মুক্তি নিয়ে একের পর এক আগাম হামলা চালাতে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণাটাই দুর্বল হয়ে পড়বে। আজ যদি ইরান হয় লক্ষ্যবস্তু, কাল হয়তো একই যুক্তিতে হামলা চালানো হতে পারে দামেস্ক, বাগদাদ বা এমনকি রিয়াদের ওপরও।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যে কোনো ধরনের শাসন পরিবর্তনের চেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন এবং অবিলম্বে সব ধরনের বিমান হামলা বন্ধ করার দাবি তুলেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব, ব্রিটেনের কেয়ার স্টারমার এবং জার্মানির জোহান ভাডেফুলÑসবাই সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে বাস্তবতা হলো, কার্যকর কূটনীতি এখন জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল অবস্থায় আছে। ইসরায়েল প্রাথমিক সাফল্যে আত্মবিশ্বাসী এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বতো সমর্থনে আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে, সংলাপের কোনো আগ্রহণ দেখাচ্ছে না। অন্যদিকে সামরিকভাবে অপমানিত ইরান আপসের অবস্থানে নেই। এ এক বিপজ্জনক অচলাবস্থা।

সম্ভবত ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিণতি হলো দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের গতি রুদ্ধ হয়ে যাওয়া। জাতিসংঘ, ফ্রান্স এবং সৌদি আরবের যৌথ পৃষ্ঠপোষকতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি সম্মেলন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে। গাজা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তেহরানের দিকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ঘুরিয়ে দিয়ে নেতানিয়াহু কার্যত চতুরতার সঙ্গে পশ্চিম তীরের ঘটনাবলি নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলা বৈশ্বিক সমালোচনাকে স্তব্ধ করে দিয়েছেন।

কিন্তু এটি এক স্বল্পমেয়াদি কৌশল, যার দীর্ঘমেয়াদি মূল্য অনেক বেশি। ফিলিস্তিনিদের আবারও বিশ্ব কূটনীতির প্রান্তে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আরব-ইসরায়েল পুনর্মিলনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা এখন ইসরায়েলের সামরিক দুঃসাহসিকতার হাতে বন্দি।

যুদ্ধজয় অর্থহীন হয়ে পড়ে, যদি তা আরও বৃহৎ যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। নেতৃত্বের আসল মানদ- হলো, কেউ যুদ্ধ কতটা দক্ষতায় চালাতে পারে তা নয়, বরং শান্তি কায়েমে কতটা আন্তরিক সে চেষ্টা করে। যদি ইসরায়েল মনে করে নিরাপত্তাকে বোমার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ইতিহাস একটি নির্মম সতর্কবার্তা দেয়Ñ ইতিহাসের সব আগাম যুদ্ধে খুব কম ক্ষেত্রেই কাক্সিক্ষত ফল মিলেছে। গাজার পর মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি মানবিক বিপর্যয়ের জন্য বিশ্ব প্রস্তুত নয়। তাই এখন প্রয়োজন শুধু বিবৃতি নয়, কার্যকর কূটনীতি, সুনির্দিষ্ট চাপ এবং স্পষ্ট অবস্থান।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top