alt

opinion » post-editorial

কীটনাশক: জনস্বাস্থ্যের হুমকি

বাবুল রবিদাস

: সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কীটনাশক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও কৃষক, শ্রমিক, দলিত-বঞ্চিত ও মজদুরদের নিঃস্ব করে তুলছে। কীটনাশকের ব্যবহারজনিত কারণে নানা রোগ দেখা দিচ্ছে, এমনকি মৃত্যুও ঘটছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

২০২৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন পত্রিকার শিরোনাম ছিলÑ “ডোমারে কীটনাশক স্প্রে করার সময় কৃষকের মৃত্যু।” জানা যায়, কৃষক কারিমুল ইসলাম (৫২), পিতা মৃত মোকিম উদ্দিন, নিজ আবাদি জমিতে ধানে কীটনাশক স্প্রে করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়িতে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। একইভাবে নাটোরের লালপুরে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করতে গিয়ে রাজন (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়।

এমনকি অবুঝ শিশুরাও এ মৃত্যুঝুঁকির শিকার হচ্ছে। ২০২৫ সালের ৯ মার্চ এক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর ছিলÑ “বিষ মাখা কলা খেয়ে হাসপাতালে দুই শিশু।” জানা যায়, শিবগঞ্জে ভুট্টাখেতে পাখি মারার জন্য রাখা বিষমাখা কলা খেয়ে জুনাইদ হোসেন (৫) ও ইজা খাতুন (৯) নামের দুই শিশু হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল।

উপরের ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে দেয়Ñ এ বিপদের প্রধান ভুক্তভোগী হচ্ছে দলিত, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, মজদুর, শ্রমিক ও কৃষক সমাজ। এক জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৬২ শতাংশ কৃষক জমিতে রাসায়নিক সার এবং ২৯ শতাংশ কীটনাশক ব্যবহার করেন।

কৃষকেরা খালি পায়ে কীটনাশক ছিটান, শরীর সুরক্ষার জন্য পোশাক-সামগ্রী কেনার সামর্থ্য নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা স্থানীয়ভাবে তৈরি বাঁশের পিচকারি বা ডাঁটার সাহায্যে স্প্রে করে। আধুনিক স্প্রে মেশিন ব্যবহার করেন মাত্র ৭ শতাংশ কৃষক। সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া ১৮ শতাংশ কৃষক জানিয়েছেন, কীটনাশক ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে। এতে বছরে গড়ে ৬২ দিনের বেশি তারা কাজে অক্ষম থাকেন। সাধারণত হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা ও নানা চর্মরোগে তারা আক্রান্ত হন। প্রকৃত ক্ষতির সংখ্যা অবশ্য আরও অনেক বেশি, যা অজ্ঞতা ও তথ্যগোপনের কারণে প্রকাশ পায় না।

কীটনাশক কীভাবে নিরাপদে ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র থাকলেও কৃষকেরা বেশিরভাগই নিরক্ষর হওয়ায় তা কার্যত কোনো কাজে আসে না। বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক “এট্রোপিন” সচরাচর হাতের কাছে পাওয়া যায় না। কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ করছে উদ্ভিদ সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কিন্তু সেখানে পরিদর্শকের সংখ্যা অপ্রতুল, ডাক্তারও সীমিত।

দেশের চা-বাগানে সবচেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার হয়। সেখানে ৯৮ শতাংশ শ্রমিক কীটনাশক ব্যবহার করেন। ৫০ জন শ্রমিকের সাক্ষাৎকারে জানা গেছেÑ কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অসুস্থতার হার বেড়েছে। তাদের কেউ আগে থেকে কোনো প্রশিক্ষণ বা প্রচারপত্র পান না; কেবল হাতে-কলমে একবার দেখানো হয় কিভাবে স্প্রে করতে হবে।

রাসায়নিক সার থেকেও নানা বিষক্রিয়া হতে পারে, অথচ বাংলাদেশে সার ব্যবহারের কোনো আইন নেই। ফলে এর ব্যবহার ও বিষাক্ততা নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যত অক্ষম। এর ভয়াবহ উদাহরণ ১৯৮১ সালের জুলাই মাসে আশুগঞ্জ সারকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ঘটে। বর্ষায় বদ্ধ জলাশয় উপচে পড়লে আশেপাশের এলাকা দূষিত হয়ে মৎস্যসম্পদ ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশে কীটনাশক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যে ল্যাবরেটরি রয়েছে তা অত্যন্ত সীমিত। ফলে কৃষকের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর এর প্রকৃত ক্ষতিকর প্রভাব নিরূপণ সম্ভব হয় না। এ কারণেই বলা যায়, ব্যবহৃত কীটনাশক কৃষক-শ্রমিকদের জীবনের জন্য সরাসরি হুমকি।

বর্তমানে এশিয়ায় কীটনাশক ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। অথচ ফসল রক্ষার চেয়ে কৃষকের ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। এর ফলে চোখ জ্বালা, অ্যালার্জি, চুলকানি, দীর্ঘমেয়াদে কিডনি, হার্ট ও ফুসফুসের ক্ষতি দেখা দিচ্ছে।

সেন্টার ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়ো সায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল-এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীদের মধ্যে কীটনাশক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কীটনাশক ব্যবহারে ক্রোমোজোম ক্ষতি, জন্মগত ত্রুটি, প্রজনন সমস্যা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি ও বিকাশজনিত নানা সমস্যার শিকার হচ্ছেন কৃষকেরা। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে।

কীটনাশকের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে শ্রমজীবী, মজদুর, দলিত-বঞ্চিত, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কীটনাশক ব্যবহারে কৃষি কর্মকর্তার অনুমতি বাধ্যতামূলক করতে হবে। কৃষকদের মাঝে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করতে হবে।

কীটনাশক ডিলারদের নিয়মিত তদারকি করতে হবে এবং তাদের ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। কৃষকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিটি কীটনাশক বিক্রয় কেন্দ্রে এট্রোপিন রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ভেজাল বা ক্ষতিকর কীটনাশক পাওয়া গেলে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে সমন্বিত পদক্ষেপ নিলেই কৃষক-শ্রমিকদের জীবন রক্ষা করা এবং পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে।

[লেখক: আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনগণের ভূমিকা উপেক্ষিত

শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বাস্তবতা

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের শেষ সুযোগ?

পাহাড় থেকে সমতল: আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা

সোশ্যাল মিডিয়ার ‘লাইক’ সংস্কৃতি: আসক্তি নাকি নতুন যোগাযোগ?

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু

মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পরিবর্তন: আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি

রম্যগদ্য: “কেশ ফ্যালায় ভাই, কেশ ফ্যালায়...”

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীর অধিকার: বিসিএস ও শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য

ন্যাশনাল গ্যালারি : রঙতুলির মহাসমুদ্রে একদিন

যুব শক্তি বনাম বেকারত্ব

প্রযুক্তি, আর্থিক পরিকল্পনা ও গণিতের ব্যবহার

ফরাসি বিপ্লব: বৈষম্য নিরসনে সামগ্রিক মুক্তির প্রেরণা

অন্তর্বর্তী সরকারের নিউইয়র্ক সফর

প্রবীণদের যত্ন: নৈতিক দায়িত্ব থেকে সামাজিক শক্তি নির্মাণ

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অপরিহার্যতা

জনমিতিক সুবিধা: স্বপ্নের দশক ও নীতিগত সংস্কারের অপরিহার্যতা

বিদ্যালয় ও মাঠ দখলের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সংগ্রাম

শিক্ষাসংস্কারে চাই সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

ভারতে এসআইআর বিতর্ক

কীটনাশক: জনস্বাস্থ্যের হুমকি

ব্যাংক একীভূতকরণ: আর্থিক খাতের সামনে নতুন বাস্তবতা

দায়িত্বশীল আচরণে গড়ে উঠুক দেশের পর্যটন খাত

এশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সমীকরণ

বাংলাদেশের গিগ অর্থনীতি: উন্নয়নের হাতিয়ার নাকি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ?

জলাতঙ্ক: প্রতিরোধযোগ্য তবু প্রাণঘাতী

বেড়ে চলা বৈষম্যের দেওয়াল

নৃশংসতার ভিডিও, নীরব দর্শক আর হারিয়ে যাওয়া মানবতা

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও জনস্বাস্থ্যের সংকট

জেন জি’র অস্থির অভিযাত্রা

রম্যগদ্য: রবার্ট ব্রুস ও মাকড়শা

জাতিসংঘের নিউইয়র্ক সম্মেলন

বিশ্ব ফুসফুস দিবস: সুস্থ শ্বাসের অঙ্গীকার

সংখ্যার আড়ালে অর্থনীতির অদেখা বাস্তবতা

tab

opinion » post-editorial

কীটনাশক: জনস্বাস্থ্যের হুমকি

বাবুল রবিদাস

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কীটনাশক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও কৃষক, শ্রমিক, দলিত-বঞ্চিত ও মজদুরদের নিঃস্ব করে তুলছে। কীটনাশকের ব্যবহারজনিত কারণে নানা রোগ দেখা দিচ্ছে, এমনকি মৃত্যুও ঘটছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

২০২৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন পত্রিকার শিরোনাম ছিলÑ “ডোমারে কীটনাশক স্প্রে করার সময় কৃষকের মৃত্যু।” জানা যায়, কৃষক কারিমুল ইসলাম (৫২), পিতা মৃত মোকিম উদ্দিন, নিজ আবাদি জমিতে ধানে কীটনাশক স্প্রে করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়িতে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। একইভাবে নাটোরের লালপুরে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করতে গিয়ে রাজন (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়।

এমনকি অবুঝ শিশুরাও এ মৃত্যুঝুঁকির শিকার হচ্ছে। ২০২৫ সালের ৯ মার্চ এক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর ছিলÑ “বিষ মাখা কলা খেয়ে হাসপাতালে দুই শিশু।” জানা যায়, শিবগঞ্জে ভুট্টাখেতে পাখি মারার জন্য রাখা বিষমাখা কলা খেয়ে জুনাইদ হোসেন (৫) ও ইজা খাতুন (৯) নামের দুই শিশু হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল।

উপরের ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে দেয়Ñ এ বিপদের প্রধান ভুক্তভোগী হচ্ছে দলিত, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, মজদুর, শ্রমিক ও কৃষক সমাজ। এক জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৬২ শতাংশ কৃষক জমিতে রাসায়নিক সার এবং ২৯ শতাংশ কীটনাশক ব্যবহার করেন।

কৃষকেরা খালি পায়ে কীটনাশক ছিটান, শরীর সুরক্ষার জন্য পোশাক-সামগ্রী কেনার সামর্থ্য নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা স্থানীয়ভাবে তৈরি বাঁশের পিচকারি বা ডাঁটার সাহায্যে স্প্রে করে। আধুনিক স্প্রে মেশিন ব্যবহার করেন মাত্র ৭ শতাংশ কৃষক। সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া ১৮ শতাংশ কৃষক জানিয়েছেন, কীটনাশক ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে। এতে বছরে গড়ে ৬২ দিনের বেশি তারা কাজে অক্ষম থাকেন। সাধারণত হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা ও নানা চর্মরোগে তারা আক্রান্ত হন। প্রকৃত ক্ষতির সংখ্যা অবশ্য আরও অনেক বেশি, যা অজ্ঞতা ও তথ্যগোপনের কারণে প্রকাশ পায় না।

কীটনাশক কীভাবে নিরাপদে ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র থাকলেও কৃষকেরা বেশিরভাগই নিরক্ষর হওয়ায় তা কার্যত কোনো কাজে আসে না। বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক “এট্রোপিন” সচরাচর হাতের কাছে পাওয়া যায় না। কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ করছে উদ্ভিদ সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কিন্তু সেখানে পরিদর্শকের সংখ্যা অপ্রতুল, ডাক্তারও সীমিত।

দেশের চা-বাগানে সবচেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার হয়। সেখানে ৯৮ শতাংশ শ্রমিক কীটনাশক ব্যবহার করেন। ৫০ জন শ্রমিকের সাক্ষাৎকারে জানা গেছেÑ কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অসুস্থতার হার বেড়েছে। তাদের কেউ আগে থেকে কোনো প্রশিক্ষণ বা প্রচারপত্র পান না; কেবল হাতে-কলমে একবার দেখানো হয় কিভাবে স্প্রে করতে হবে।

রাসায়নিক সার থেকেও নানা বিষক্রিয়া হতে পারে, অথচ বাংলাদেশে সার ব্যবহারের কোনো আইন নেই। ফলে এর ব্যবহার ও বিষাক্ততা নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যত অক্ষম। এর ভয়াবহ উদাহরণ ১৯৮১ সালের জুলাই মাসে আশুগঞ্জ সারকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ঘটে। বর্ষায় বদ্ধ জলাশয় উপচে পড়লে আশেপাশের এলাকা দূষিত হয়ে মৎস্যসম্পদ ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশে কীটনাশক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যে ল্যাবরেটরি রয়েছে তা অত্যন্ত সীমিত। ফলে কৃষকের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর এর প্রকৃত ক্ষতিকর প্রভাব নিরূপণ সম্ভব হয় না। এ কারণেই বলা যায়, ব্যবহৃত কীটনাশক কৃষক-শ্রমিকদের জীবনের জন্য সরাসরি হুমকি।

বর্তমানে এশিয়ায় কীটনাশক ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। অথচ ফসল রক্ষার চেয়ে কৃষকের ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। এর ফলে চোখ জ্বালা, অ্যালার্জি, চুলকানি, দীর্ঘমেয়াদে কিডনি, হার্ট ও ফুসফুসের ক্ষতি দেখা দিচ্ছে।

সেন্টার ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়ো সায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল-এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীদের মধ্যে কীটনাশক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কীটনাশক ব্যবহারে ক্রোমোজোম ক্ষতি, জন্মগত ত্রুটি, প্রজনন সমস্যা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি ও বিকাশজনিত নানা সমস্যার শিকার হচ্ছেন কৃষকেরা। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে।

কীটনাশকের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে শ্রমজীবী, মজদুর, দলিত-বঞ্চিত, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কীটনাশক ব্যবহারে কৃষি কর্মকর্তার অনুমতি বাধ্যতামূলক করতে হবে। কৃষকদের মাঝে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করতে হবে।

কীটনাশক ডিলারদের নিয়মিত তদারকি করতে হবে এবং তাদের ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। কৃষকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিটি কীটনাশক বিক্রয় কেন্দ্রে এট্রোপিন রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ভেজাল বা ক্ষতিকর কীটনাশক পাওয়া গেলে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে সমন্বিত পদক্ষেপ নিলেই কৃষক-শ্রমিকদের জীবন রক্ষা করা এবং পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে।

[লেখক: আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]

back to top