মাহতাব হোসাইন মাজেদ
৩৫তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য হলো: “একদিন তুমি পৃথিবী গড়েছো, আজ আমি স্বপ্ন গড়বো; সযতেœ তোমায় রাখবো, আগলে।” বিশ্বব্যাপী প্রবীণ জনগোষ্ঠী দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি ছয় জন মানুষের মধ্যে একজনের বয়স হবে ৬৫ বছরের বেশি। বাংলাদেশেও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ প্রবীণ রয়েছেন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আগামী তিন দশকে এ সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি হতে পারে।
প্রবীণরা আমাদের জীবনের দিকনির্দেশক। তারা অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও সামাজিক মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ ধারক। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। তাই শুধুমাত্র দিবস পালনই যথেষ্ট নয়; তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্মান নিশ্চিত করা প্রত্যেকের দায়িত্ব।
বয়স বৃদ্ধির প্রভাব
বয়সের সঙ্গে শরীর ও মানসিকতায় নানা পরিবর্তন আসে। শক্তি ও স্থায়িত্ব কমে যায়, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি দুর্বল হয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বাত বা হাড়ক্ষয়ের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ দেখা দেয়। মানসিকভাবে তারা একাকীত্ব, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও বিষণœতার শিকার হন। পরিবারের অবহেলা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সমস্যাকে আরও বাড়ায়।
প্রবীণদের স্বাস্থ্যঝুঁকি
প্রবীণদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বড় কারণগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বয়সজনিত কোষের কার্যক্ষমতা হ্রাস, দীর্ঘস্থায়ী রোগ, অপুষ্টি, হজম সমস্যা, অচল জীবনযাপন, মানসিক চাপ, দুর্ঘটনা, দৃষ্টি দুর্বলতা এবং অনিরাপদ পরিবেশ। এগুলো তাদের জীবনমানকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ
প্রবীণদের সুস্থতায় পরিবারের সহযোগিতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম, সামাজিক সম্পৃক্ততা ও মানসিক সহায়তা অপরিহার্য। বছরে অন্তত দুইবার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা উচিত। খাদ্যে শাকসবজি, ফল, মাছ, ডাল রাখা জরুরি এবং তেল, চিনি ও লবণের ব্যবহার কমানো দরকার। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম প্রবীণদের শরীর ও মনকে সক্রিয় রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক সংযোগ
শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রবীণরা যদি পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, তাহলে একাকীত্ব ও বিষণœতা তাদের গ্রাস করে। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ, পড়াশোনা, প্রার্থনা বা ধ্যান তাদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
সমাজ ও পরিবারের দায়িত্ব
প্রবীণদের যতœ কেবল চিকিৎসা নয়, এটি পরিবার ও সমাজের যৌথ দায়িত্ব। তাদের মতামত ও সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া, ভালোবাসা ও সম্মান দেখানো, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উৎসাহ দেওয়া অপরিহার্য।
আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রবীণদের যতœ নেওয়া কেবল নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সামাজিক শক্তির অন্যতম ভিত্তি। আজকের তরুণরাই একদিন প্রবীণ হবেÑ এই উপলব্ধি থেকেই প্রবীণদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণকে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রবীণদের প্রতি সম্মান, যতœ ও সেবা নিশ্চিত করা শুধু মানবিক দায় নয়, বরং একটি সুস্থ, মানবিক ও শক্তিশালী সমাজ গড়ার পূর্বশর্ত। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মানসিক সহায়তা ও সামাজিক সম্পৃক্ততা প্রবীণদের জীবনকে দীর্ঘায়িত ও সুন্দর করে তুলতে পারে।
[লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]
মাহতাব হোসাইন মাজেদ
বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫
৩৫তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য হলো: “একদিন তুমি পৃথিবী গড়েছো, আজ আমি স্বপ্ন গড়বো; সযতেœ তোমায় রাখবো, আগলে।” বিশ্বব্যাপী প্রবীণ জনগোষ্ঠী দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি ছয় জন মানুষের মধ্যে একজনের বয়স হবে ৬৫ বছরের বেশি। বাংলাদেশেও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ প্রবীণ রয়েছেন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আগামী তিন দশকে এ সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি হতে পারে।
প্রবীণরা আমাদের জীবনের দিকনির্দেশক। তারা অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও সামাজিক মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ ধারক। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। তাই শুধুমাত্র দিবস পালনই যথেষ্ট নয়; তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্মান নিশ্চিত করা প্রত্যেকের দায়িত্ব।
বয়স বৃদ্ধির প্রভাব
বয়সের সঙ্গে শরীর ও মানসিকতায় নানা পরিবর্তন আসে। শক্তি ও স্থায়িত্ব কমে যায়, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি দুর্বল হয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বাত বা হাড়ক্ষয়ের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ দেখা দেয়। মানসিকভাবে তারা একাকীত্ব, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও বিষণœতার শিকার হন। পরিবারের অবহেলা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সমস্যাকে আরও বাড়ায়।
প্রবীণদের স্বাস্থ্যঝুঁকি
প্রবীণদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বড় কারণগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বয়সজনিত কোষের কার্যক্ষমতা হ্রাস, দীর্ঘস্থায়ী রোগ, অপুষ্টি, হজম সমস্যা, অচল জীবনযাপন, মানসিক চাপ, দুর্ঘটনা, দৃষ্টি দুর্বলতা এবং অনিরাপদ পরিবেশ। এগুলো তাদের জীবনমানকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ
প্রবীণদের সুস্থতায় পরিবারের সহযোগিতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম, সামাজিক সম্পৃক্ততা ও মানসিক সহায়তা অপরিহার্য। বছরে অন্তত দুইবার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা উচিত। খাদ্যে শাকসবজি, ফল, মাছ, ডাল রাখা জরুরি এবং তেল, চিনি ও লবণের ব্যবহার কমানো দরকার। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম প্রবীণদের শরীর ও মনকে সক্রিয় রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক সংযোগ
শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রবীণরা যদি পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, তাহলে একাকীত্ব ও বিষণœতা তাদের গ্রাস করে। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ, পড়াশোনা, প্রার্থনা বা ধ্যান তাদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
সমাজ ও পরিবারের দায়িত্ব
প্রবীণদের যতœ কেবল চিকিৎসা নয়, এটি পরিবার ও সমাজের যৌথ দায়িত্ব। তাদের মতামত ও সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া, ভালোবাসা ও সম্মান দেখানো, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উৎসাহ দেওয়া অপরিহার্য।
আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রবীণদের যতœ নেওয়া কেবল নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সামাজিক শক্তির অন্যতম ভিত্তি। আজকের তরুণরাই একদিন প্রবীণ হবেÑ এই উপলব্ধি থেকেই প্রবীণদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণকে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রবীণদের প্রতি সম্মান, যতœ ও সেবা নিশ্চিত করা শুধু মানবিক দায় নয়, বরং একটি সুস্থ, মানবিক ও শক্তিশালী সমাজ গড়ার পূর্বশর্ত। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মানসিক সহায়তা ও সামাজিক সম্পৃক্ততা প্রবীণদের জীবনকে দীর্ঘায়িত ও সুন্দর করে তুলতে পারে।
[লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]