alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

শতদল বড়ুয়া

: সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

আজ শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য আজকের দিনটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি পূর্ণিমা তিথিই কোনো না কোনো কারণে বৌদ্ধ জাতির কাছে শুভময়; তবে আজকের পূর্ণিমা তিথি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

‘প্রবারণা’ শব্দের অর্থÑআশার তৃপ্তি, অভিলাষ পূরণ, ধ্যান বা শিক্ষার সমাপ্তি। অন্যদিকে এর আরেকটি অর্থ আত্মশুদ্ধি বা আত্মসমালোচনাও বটে। এ দিনে ভিক্ষুরা হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে চারিত্রিক শুদ্ধির জন্য একে অপরকে করজোড়ে বলেনÑ

“বন্ধু, আমার যদি কোনো দোষত্রুটি দেখে থাকো বা কারো মুখে শুনে থাকো, এবং সে কারণে যদি আমার প্রতি তোমার সন্দেহ হয়ে থাকে, তবে তা আমাকে বলো, আমি তার প্রতিকার করব।”

বিনয় পরিভাষায় এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় প্রবারণা।

এই শুভ তিথিতেই ভগবান বুদ্ধ দেবলোক থেকে সাংকশ্য নগরে অবতরণ করেছিলেন। আজকের দিনে ভিক্ষুদের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত সমাপ্ত হয়। তাই আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধদের পরম পবিত্র দিন।

উল্লেখযোগ্য যে, এই দিন থেকেই ভগবান বুদ্ধের আদেশে আদিষ্ট ভিক্ষুসঙ্ঘ বুদ্ধবাণী প্রচারের জন্য বেরিয়ে পড়েছিলেনÑ

“বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য।”

তখন বুদ্ধ এ-ও নির্দেশ দিয়েছিলেনÑএক স্থানে একজন ভিক্ষু যাবে।

কবির ভাষায়Ñ

“উদিল যেখানে বুদ্ধ আত্ম,/ মুক্ত করিতে মোক্ষদ্বার,/ আজিও জুড়িয়া অর্ধজগত,/ ভক্তি প্রণত চরণে তার।”

ফানুস : ঐতিহ্যের প্রতীক

আজকের দিনের কার্যসূচির সমাপ্তি ঘটে ‘ফানুস’ উড়ানোর মধ্য দিয়ে।

‘ফানুস’ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি পুণ্যময় ঐতিহ্যের প্রতীক।

মহামানব গৌতম বুদ্ধ ছিলেন রাজা শুদ্ধোধনের পুত্র। কপিলাবস্তুর পথে পরিভ্রমণকালে রাজপুত্র সিদ্ধার্থ দেখেছিলেন শবযাত্রা, রুগ্ন মানুষ, বৃদ্ধ ব্যক্তি ও সন্ন্যাসীÑমানবজীবনের দুঃখকষ্টের নানা দৃশ্য। তখন তার মনে হলো, মানবজীবন দুঃখময়; এর থেকে মুক্তির কোনো পথ নিশ্চয় আছে।

তিনি ভাবলেনÑ“আমি জীবের মুক্তির পথ খুঁজে বের করব, জীবের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করব।”

আড়াই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে, সংসারের সব মায়া ত্যাগ করে স্ত্রী-পুত্রের বন্ধন ছিন্ন করে রাজপুত্র সিদ্ধার্থ গভীর রাতে গৃহত্যাগ করেন। অনোমা নদীর তীরে পৌঁছে তিনি রাজকীয় পোশাক খুলে ফেললেন। পরিশেষে স্বীয় তরবারি দিয়ে মাথার চুল কেটে এক সত্যক্রিয়া স্থাপন করলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেনÑ

“যে উদ্দেশ্যে আমি রাজসুখ ত্যাগ করে সংসারমুক্ত হয়েছি, যদি তা সফল হয়, তবে এই কাটা চুলগুলো বাতাসে নিচে না পড়ে আকাশে উড়ে যাবে।”

তিনি চুলগুলো বাতাসে উড়িয়ে দিলেনÑএবং তা সত্যিই আকাশে মিলিয়ে গেল।

তথাগত বুদ্ধের সেই সত্যক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজও প্রবারণা পূর্ণিমার রাতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা ভক্তিভরে ফানুস উড়িয়ে বুদ্ধের চুলধাতুকে বন্দনা জানায়।

ফানুস তৈরির উপকরণ

ফানুস তৈরিতে ব্যবহৃত হয় পাতলা ম্যানিলা কাগজ, বাঁশের গোল চাকা, গুনা, মোম, মোটা সূতা, জুটের সলতে, অথবা পরিষ্কার সূতির কাপড় দিয়ে বানানো সলতে।

সলতে বলতে বোঝায় ক্ষুদ্র বস্ত্রখ- পাকিয়ে প্রদীপের জন্য প্রস্তুত করা পলিতাÑযাকে গ্রামীণ ভাষায় বাতি বলা হয়।

ফানুসের প্রকারভেদ

ফানুসের নানা ধরন দেখা যায়Ñমোটকা, পুলিশ, ডোল, হাতি, ড্রাম ইত্যাদি আকৃতিতে। এতে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই; যার যেভাবে ইচ্ছে, সেভাবেই তৈরি করতে পারে।

উৎসর্গ

ফানুস উড়ানোর আগে সলতে বা বাতি বিহারে নিয়ে গিয়ে ভিক্ষুকে দিতে হয়। তিনি ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তা উৎসর্গ করেন। এরপর তাতে তেল-মোম মেখে জ্বালানোর উপযোগী করা হয়।

ফানুস উড়ানোর প্রক্রিয়া

চূড়ান্তভাবে উড়ানোর সময় শুকনো ঘাস, বাঁশকাঠ, লাকড়ি জ্বালিয়ে হালকা আগুন তৈরি করতে হয়। এখানে আগুনের চেয়ে ধোঁয়ার প্রয়োজন বেশি।

ফানুসটিকে আগুনের ওপরে সতর্কভাবে কয়েকজন মিলে ধরে রাখতে হয়। ধোঁয়ায় ফানুস ভরে গেলে গোল চাকায় লাগানো সলতে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তখন ফানুসের ভেতরে ঊর্ধ্বচাপ সৃষ্টি হয় এবং সেটি আকাশের দিকে টান অনুভব করায়। সবাই মিলে ছেড়ে দিলে ফানুসটি বাতাসে ভেসে দূর আকাশে মিলিয়ে যায়।

সার্বজনীন উৎসবের রূপ

ফানুস উড়ানোর আনন্দ অনন্য। এ সময়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশ নেয়। বৌদ্ধ পল্লিগুলো সারাদিন সরগরম থাকে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

কোনো কাজ কারও জন্য থেমে থাকে না, সবকিছু নিজস্ব গতিতে চলে। পারলে শিকড়ের কথা ভাবুন; সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। মূল বাদ দিলে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আজকের প্রবারণা পূর্ণিমা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানি পরিহারের বিকল্প নেই। ফানুসের আলোয় আলোকিত হোক সকলের জীবন। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

ছবি

কৃষি ডেটা ব্যবস্থাপনা

যুক্তরাজ্যে ভর্তি স্থগিতের কুয়াশা: তালা লাগলেও চাবি আমাদের হাতে

শিক্ষকদের কর্মবিরতি: পেশাগত নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ

জাতীয় রক্তগ্রুপ নির্ণয় দিবস

জাল সনদপত্রে শিক্ষকতা

সাধারণ চুক্তিগুলোও গোপনীয় কেন

ছবি

শিশুখাদ্যের নিরাপত্তা: জাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রথম শর্ত

ছবি

ফিনল্যান্ড কেন সুখী দেশ

ছবি

কৃষকের সংকট ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

ই-বর্জ্য: নীরব বিষে দগ্ধ আমাদের ভবিষ্যৎ

ঢাকার জনপরিসর: আর্ভিং গফম্যানের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

কলি ফুটিতে চাহে ফোটে না!

কৃষিতে স্মার্ট প্রযুক্তি

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে লোকালাইজেশন অপরিহার্য

আইসিইউ থেকে বাড়ি ফেরা ও খাদের কিনারায় থাকা দেশ

বিচারবহির্ভূত হত্যার দায় কার?

ছবি

ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলা কৌশল

অযৌক্তিক দাবি: পেশাগত নৈতিকতার সংকট ও জনপ্রশাসন

সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতীয় সংকট

কেন বাড়ছে দারিদ্র্য?

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্জন্ম

লবণাক্ততায় ডুবছে উপকূল

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও বাস্তবতা

সড়ক দুর্ঘটনার সমাজতত্ত্ব: আইন প্রয়োগের ব্যর্থতা ও কাঠামোর চক্রাকার পুনরুৎপাদন

ছবি

অস্থির সময় ও অস্থির সমাজের পাঁচালি

ভারতে বামপন্থার পুনর্জাগরণ: ব্যাধি ও প্রতিকার

চিপনির্ভরতা কাটিয়ে চীনের উত্থান

একতার বাতাসে উড়ুক দক্ষিণ এশিয়ার পতাকা

ছবি

স্মরণ: শহীদ ডা. মিলন ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থার সংগ্রাম

মনে পুরানো দিনের কথা আসে, মনে আসে, ফিরে আসে...

রাসায়নিক দূষণ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি

আছদগঞ্জের শুটকি : অতীতের গৌরব, বর্তমানের দুঃসময়

নবান্নের আনন্দ ও আমনের ফলন

‘প্রশ্ন কোরো না, প্রশ্ন সর্বনাশী’

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

শতদল বড়ুয়া

সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

আজ শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য আজকের দিনটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি পূর্ণিমা তিথিই কোনো না কোনো কারণে বৌদ্ধ জাতির কাছে শুভময়; তবে আজকের পূর্ণিমা তিথি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

‘প্রবারণা’ শব্দের অর্থÑআশার তৃপ্তি, অভিলাষ পূরণ, ধ্যান বা শিক্ষার সমাপ্তি। অন্যদিকে এর আরেকটি অর্থ আত্মশুদ্ধি বা আত্মসমালোচনাও বটে। এ দিনে ভিক্ষুরা হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে চারিত্রিক শুদ্ধির জন্য একে অপরকে করজোড়ে বলেনÑ

“বন্ধু, আমার যদি কোনো দোষত্রুটি দেখে থাকো বা কারো মুখে শুনে থাকো, এবং সে কারণে যদি আমার প্রতি তোমার সন্দেহ হয়ে থাকে, তবে তা আমাকে বলো, আমি তার প্রতিকার করব।”

বিনয় পরিভাষায় এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় প্রবারণা।

এই শুভ তিথিতেই ভগবান বুদ্ধ দেবলোক থেকে সাংকশ্য নগরে অবতরণ করেছিলেন। আজকের দিনে ভিক্ষুদের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত সমাপ্ত হয়। তাই আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধদের পরম পবিত্র দিন।

উল্লেখযোগ্য যে, এই দিন থেকেই ভগবান বুদ্ধের আদেশে আদিষ্ট ভিক্ষুসঙ্ঘ বুদ্ধবাণী প্রচারের জন্য বেরিয়ে পড়েছিলেনÑ

“বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য।”

তখন বুদ্ধ এ-ও নির্দেশ দিয়েছিলেনÑএক স্থানে একজন ভিক্ষু যাবে।

কবির ভাষায়Ñ

“উদিল যেখানে বুদ্ধ আত্ম,/ মুক্ত করিতে মোক্ষদ্বার,/ আজিও জুড়িয়া অর্ধজগত,/ ভক্তি প্রণত চরণে তার।”

ফানুস : ঐতিহ্যের প্রতীক

আজকের দিনের কার্যসূচির সমাপ্তি ঘটে ‘ফানুস’ উড়ানোর মধ্য দিয়ে।

‘ফানুস’ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি পুণ্যময় ঐতিহ্যের প্রতীক।

মহামানব গৌতম বুদ্ধ ছিলেন রাজা শুদ্ধোধনের পুত্র। কপিলাবস্তুর পথে পরিভ্রমণকালে রাজপুত্র সিদ্ধার্থ দেখেছিলেন শবযাত্রা, রুগ্ন মানুষ, বৃদ্ধ ব্যক্তি ও সন্ন্যাসীÑমানবজীবনের দুঃখকষ্টের নানা দৃশ্য। তখন তার মনে হলো, মানবজীবন দুঃখময়; এর থেকে মুক্তির কোনো পথ নিশ্চয় আছে।

তিনি ভাবলেনÑ“আমি জীবের মুক্তির পথ খুঁজে বের করব, জীবের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করব।”

আড়াই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে, সংসারের সব মায়া ত্যাগ করে স্ত্রী-পুত্রের বন্ধন ছিন্ন করে রাজপুত্র সিদ্ধার্থ গভীর রাতে গৃহত্যাগ করেন। অনোমা নদীর তীরে পৌঁছে তিনি রাজকীয় পোশাক খুলে ফেললেন। পরিশেষে স্বীয় তরবারি দিয়ে মাথার চুল কেটে এক সত্যক্রিয়া স্থাপন করলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেনÑ

“যে উদ্দেশ্যে আমি রাজসুখ ত্যাগ করে সংসারমুক্ত হয়েছি, যদি তা সফল হয়, তবে এই কাটা চুলগুলো বাতাসে নিচে না পড়ে আকাশে উড়ে যাবে।”

তিনি চুলগুলো বাতাসে উড়িয়ে দিলেনÑএবং তা সত্যিই আকাশে মিলিয়ে গেল।

তথাগত বুদ্ধের সেই সত্যক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজও প্রবারণা পূর্ণিমার রাতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা ভক্তিভরে ফানুস উড়িয়ে বুদ্ধের চুলধাতুকে বন্দনা জানায়।

ফানুস তৈরির উপকরণ

ফানুস তৈরিতে ব্যবহৃত হয় পাতলা ম্যানিলা কাগজ, বাঁশের গোল চাকা, গুনা, মোম, মোটা সূতা, জুটের সলতে, অথবা পরিষ্কার সূতির কাপড় দিয়ে বানানো সলতে।

সলতে বলতে বোঝায় ক্ষুদ্র বস্ত্রখ- পাকিয়ে প্রদীপের জন্য প্রস্তুত করা পলিতাÑযাকে গ্রামীণ ভাষায় বাতি বলা হয়।

ফানুসের প্রকারভেদ

ফানুসের নানা ধরন দেখা যায়Ñমোটকা, পুলিশ, ডোল, হাতি, ড্রাম ইত্যাদি আকৃতিতে। এতে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই; যার যেভাবে ইচ্ছে, সেভাবেই তৈরি করতে পারে।

উৎসর্গ

ফানুস উড়ানোর আগে সলতে বা বাতি বিহারে নিয়ে গিয়ে ভিক্ষুকে দিতে হয়। তিনি ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তা উৎসর্গ করেন। এরপর তাতে তেল-মোম মেখে জ্বালানোর উপযোগী করা হয়।

ফানুস উড়ানোর প্রক্রিয়া

চূড়ান্তভাবে উড়ানোর সময় শুকনো ঘাস, বাঁশকাঠ, লাকড়ি জ্বালিয়ে হালকা আগুন তৈরি করতে হয়। এখানে আগুনের চেয়ে ধোঁয়ার প্রয়োজন বেশি।

ফানুসটিকে আগুনের ওপরে সতর্কভাবে কয়েকজন মিলে ধরে রাখতে হয়। ধোঁয়ায় ফানুস ভরে গেলে গোল চাকায় লাগানো সলতে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তখন ফানুসের ভেতরে ঊর্ধ্বচাপ সৃষ্টি হয় এবং সেটি আকাশের দিকে টান অনুভব করায়। সবাই মিলে ছেড়ে দিলে ফানুসটি বাতাসে ভেসে দূর আকাশে মিলিয়ে যায়।

সার্বজনীন উৎসবের রূপ

ফানুস উড়ানোর আনন্দ অনন্য। এ সময়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশ নেয়। বৌদ্ধ পল্লিগুলো সারাদিন সরগরম থাকে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

কোনো কাজ কারও জন্য থেমে থাকে না, সবকিছু নিজস্ব গতিতে চলে। পারলে শিকড়ের কথা ভাবুন; সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। মূল বাদ দিলে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আজকের প্রবারণা পূর্ণিমা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানি পরিহারের বিকল্প নেই। ফানুসের আলোয় আলোকিত হোক সকলের জীবন। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top