alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

সিরাজ প্রামাণিক

: শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

চেক ডিজঅনার মামলায় আসামী তিনটি ডিফেন্স নিয়ে রীতিমতো খালাস পেতে পারেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ গত ১৪/১২/২০১৩ খ্রী. তারিখে দুটি রিট পিটিশন যথাক্রমে ৩৬৮৯/২০১২ এবং ১২৪০১/২০১২ মামলায় অভিমত প্রকাশ করেছে যে, আসামী চেক ডিজঅনারের মামলায় তিন ধরণের ডিফেন্স নিতে পারবেন।

১। রিয়েল অর এ্যাবসলুইট ডিফেন্স অথাৎ যুক্তিসঙ্গত ডিফেন্স, ২। সমান্তরাল ডিফেন্স, ৩। লিগ্যাল ডিফেন্স।

এর মধ্যে ১ নং রিয়েল বা যুক্তিসংগত ডিফেন্স হচ্ছে চেক ইস্যু করার সময় আসামী শারীরিকভাবে সুস্থ ছিল না, যেমন-তখন সে পাগল, উম্মাদ বা বিচারবুদ্ধিহীনতায় ভুগছিল এমন বিষয় প্রমাণ করতে পারলে তা যুক্তিসংগত ডিফেন্স হিসেবে বিবেচিত হবে। আমাদের দন্ডবিধির ৮৪ ধারায় অনুরুপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেয়া যায়।

আবার চেক ইস্যু করার সময় আসামী মাতাল বা মানসিকভাবে সুস্থ ছিল না এটাও তার আত্মপক্ষ সমর্থনের উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। চেকে শুধু স্বাক্ষর দিলেই চলে না, তা যে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কোনো দায়/দেনা পরিশোধের জন্য চেক দিয়েছিল তা বাদীকেই প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু আসামী পক্ষে যদি উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমানাদি, যেমন মেডিক্যাল সনদ, রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন ইত্যাদি দিয়ে দেখাতে পারেন যে, চেক ইস্যু করার সময় তাকে মাতাল করা হয়েছিল, তাহলে সেটি উপযুক্ত ডিফেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

আবার চেক ব্যাংকে উপস্থাপনের আগেই যদি চেকদাতা এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কর্তৃক ঘোষিত হয়, সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল, সেটিও আসামীর আত্মপক্ষ সমর্থনের ভাল ডিফেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

আবার নাবালক কর্তৃক চেক ইস্যু করা হলে বা নাবালকের পক্ষে কোন চেক ইস্যু করা হলে এবং ওই চেক ডিজঅনার হলে তার বিরুদ্ধে ১৩৮ ধারার মামলা করা যায় না।

আর চেক ইস্যু করার ক্ষেত্রে যদি কোনোরুপ ফ্রড, তঞ্চকতা বা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে আসামী খালাস পাওয়ার অধিকারী হয়।

আবার এন.আই এ্যাক্টের ৮৭ ধারার বিধান অনুযায়ী চেকের বিষয়বস্তুর কোনো পরিবর্তন দেখা গেলে আসামী সে সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। শুধু তাই নয়, আসামী যদি প্রমাণ করতে পারে যে, চেকটি বাদী জালিয়াতি করে সৃষ্টি করেছে বা চেকে দেয়া স্বাক্ষরটি জাল করা হয়েছে বা চেকে উল্লেখিত টাকার পরিমাণ কাটাকাটি করে লেখা হয়েছে, তবে অনুরুপ ক্ষেত্রে আসামী খালাস পাওয়ার যোগ্য হয়।

আসামী যদি আরও দেখাতে পারে যে, তাকে অবৈধভাবে ভয় দেখিয়ে বা জোর জবরদস্তি করে চেকে সই করতে বাদীপক্ষ বাধ্য করেছিল তাহলে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্স হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। উপরোক্ত বিষয়গুলোর যে কোন একটি প্রমাণ করতে পারলেই আসামী চেক ডিজঅনারের মামলায় খালাস পেতে পারে।

প্রতিদান ছাড়া যেমন চুক্তি হয় না, তেমনি প্রতিদান ছাড়া কোন হস্তান্তরযোগ্য দলিল কার্যকর করা যাবে না। কাজেই স্বাক্ষর সহ চেক কারও নিকট হস্তগত হলেই কিংবা ব্যাংক ডিজঅনার করলেই চেকের মামলায় আসামীকে শায়েস্তা করা যাবে না। প্রতিদান বা দেনা পাওনা বা লেনদেন প্রমাণ করতে না পারলে মামলায় আসামী খালাস পাবে-এমনটিই বলেছেন উচ্চ আদালত। (লোকমান বনাম আয়ুব আলী এবং রাষ্ট্র মামলা, যা ৩৮ বিএলডি, পৃষ্ঠা ৬১৬, ৬১৭-৬২০)।

আবার আসামীর স্বাক্ষর, টাকার অংক এবং পেয়ীর নাম ভিন্ন হাতের লেখা হলে এন.আই এ্যাক্টের ৩ (ই) ধারার বিধান অনুসারে এটাকে ইস্যুয়েন্স অব চেক বলা যাবে না। সেই চেক আইনানুগভাবে বৈধ হবে না। এ বিষয়ে ৫৬ ডিএলআর ৬৩৬ পৃষ্ঠায় একটি দারুন সিদ্ধান্ত আছে। উপরোক্ত কারণসমূহের যে কোন একটি পালিত না হলে চেক ডিজঅনারের মামলায় আসামী খালাস পেতে পারেন।

[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

ছবি

কৃষি ডেটা ব্যবস্থাপনা

যুক্তরাজ্যে ভর্তি স্থগিতের কুয়াশা: তালা লাগলেও চাবি আমাদের হাতে

শিক্ষকদের কর্মবিরতি: পেশাগত নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ

জাতীয় রক্তগ্রুপ নির্ণয় দিবস

জাল সনদপত্রে শিক্ষকতা

সাধারণ চুক্তিগুলোও গোপনীয় কেন

ছবি

শিশুখাদ্যের নিরাপত্তা: জাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রথম শর্ত

ছবি

ফিনল্যান্ড কেন সুখী দেশ

ছবি

কৃষকের সংকট ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

ই-বর্জ্য: নীরব বিষে দগ্ধ আমাদের ভবিষ্যৎ

ঢাকার জনপরিসর: আর্ভিং গফম্যানের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

কলি ফুটিতে চাহে ফোটে না!

কৃষিতে স্মার্ট প্রযুক্তি

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে লোকালাইজেশন অপরিহার্য

আইসিইউ থেকে বাড়ি ফেরা ও খাদের কিনারায় থাকা দেশ

বিচারবহির্ভূত হত্যার দায় কার?

ছবি

ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলা কৌশল

অযৌক্তিক দাবি: পেশাগত নৈতিকতার সংকট ও জনপ্রশাসন

সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতীয় সংকট

কেন বাড়ছে দারিদ্র্য?

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্জন্ম

লবণাক্ততায় ডুবছে উপকূল

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও বাস্তবতা

সড়ক দুর্ঘটনার সমাজতত্ত্ব: আইন প্রয়োগের ব্যর্থতা ও কাঠামোর চক্রাকার পুনরুৎপাদন

ছবি

অস্থির সময় ও অস্থির সমাজের পাঁচালি

ভারতে বামপন্থার পুনর্জাগরণ: ব্যাধি ও প্রতিকার

চিপনির্ভরতা কাটিয়ে চীনের উত্থান

একতার বাতাসে উড়ুক দক্ষিণ এশিয়ার পতাকা

ছবি

স্মরণ: শহীদ ডা. মিলন ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থার সংগ্রাম

মনে পুরানো দিনের কথা আসে, মনে আসে, ফিরে আসে...

রাসায়নিক দূষণ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি

আছদগঞ্জের শুটকি : অতীতের গৌরব, বর্তমানের দুঃসময়

নবান্নের আনন্দ ও আমনের ফলন

‘প্রশ্ন কোরো না, প্রশ্ন সর্বনাশী’

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

সিরাজ প্রামাণিক

শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

চেক ডিজঅনার মামলায় আসামী তিনটি ডিফেন্স নিয়ে রীতিমতো খালাস পেতে পারেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ গত ১৪/১২/২০১৩ খ্রী. তারিখে দুটি রিট পিটিশন যথাক্রমে ৩৬৮৯/২০১২ এবং ১২৪০১/২০১২ মামলায় অভিমত প্রকাশ করেছে যে, আসামী চেক ডিজঅনারের মামলায় তিন ধরণের ডিফেন্স নিতে পারবেন।

১। রিয়েল অর এ্যাবসলুইট ডিফেন্স অথাৎ যুক্তিসঙ্গত ডিফেন্স, ২। সমান্তরাল ডিফেন্স, ৩। লিগ্যাল ডিফেন্স।

এর মধ্যে ১ নং রিয়েল বা যুক্তিসংগত ডিফেন্স হচ্ছে চেক ইস্যু করার সময় আসামী শারীরিকভাবে সুস্থ ছিল না, যেমন-তখন সে পাগল, উম্মাদ বা বিচারবুদ্ধিহীনতায় ভুগছিল এমন বিষয় প্রমাণ করতে পারলে তা যুক্তিসংগত ডিফেন্স হিসেবে বিবেচিত হবে। আমাদের দন্ডবিধির ৮৪ ধারায় অনুরুপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেয়া যায়।

আবার চেক ইস্যু করার সময় আসামী মাতাল বা মানসিকভাবে সুস্থ ছিল না এটাও তার আত্মপক্ষ সমর্থনের উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। চেকে শুধু স্বাক্ষর দিলেই চলে না, তা যে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কোনো দায়/দেনা পরিশোধের জন্য চেক দিয়েছিল তা বাদীকেই প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু আসামী পক্ষে যদি উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমানাদি, যেমন মেডিক্যাল সনদ, রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন ইত্যাদি দিয়ে দেখাতে পারেন যে, চেক ইস্যু করার সময় তাকে মাতাল করা হয়েছিল, তাহলে সেটি উপযুক্ত ডিফেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

আবার চেক ব্যাংকে উপস্থাপনের আগেই যদি চেকদাতা এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কর্তৃক ঘোষিত হয়, সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল, সেটিও আসামীর আত্মপক্ষ সমর্থনের ভাল ডিফেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

আবার নাবালক কর্তৃক চেক ইস্যু করা হলে বা নাবালকের পক্ষে কোন চেক ইস্যু করা হলে এবং ওই চেক ডিজঅনার হলে তার বিরুদ্ধে ১৩৮ ধারার মামলা করা যায় না।

আর চেক ইস্যু করার ক্ষেত্রে যদি কোনোরুপ ফ্রড, তঞ্চকতা বা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে আসামী খালাস পাওয়ার অধিকারী হয়।

আবার এন.আই এ্যাক্টের ৮৭ ধারার বিধান অনুযায়ী চেকের বিষয়বস্তুর কোনো পরিবর্তন দেখা গেলে আসামী সে সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। শুধু তাই নয়, আসামী যদি প্রমাণ করতে পারে যে, চেকটি বাদী জালিয়াতি করে সৃষ্টি করেছে বা চেকে দেয়া স্বাক্ষরটি জাল করা হয়েছে বা চেকে উল্লেখিত টাকার পরিমাণ কাটাকাটি করে লেখা হয়েছে, তবে অনুরুপ ক্ষেত্রে আসামী খালাস পাওয়ার যোগ্য হয়।

আসামী যদি আরও দেখাতে পারে যে, তাকে অবৈধভাবে ভয় দেখিয়ে বা জোর জবরদস্তি করে চেকে সই করতে বাদীপক্ষ বাধ্য করেছিল তাহলে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্স হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। উপরোক্ত বিষয়গুলোর যে কোন একটি প্রমাণ করতে পারলেই আসামী চেক ডিজঅনারের মামলায় খালাস পেতে পারে।

প্রতিদান ছাড়া যেমন চুক্তি হয় না, তেমনি প্রতিদান ছাড়া কোন হস্তান্তরযোগ্য দলিল কার্যকর করা যাবে না। কাজেই স্বাক্ষর সহ চেক কারও নিকট হস্তগত হলেই কিংবা ব্যাংক ডিজঅনার করলেই চেকের মামলায় আসামীকে শায়েস্তা করা যাবে না। প্রতিদান বা দেনা পাওনা বা লেনদেন প্রমাণ করতে না পারলে মামলায় আসামী খালাস পাবে-এমনটিই বলেছেন উচ্চ আদালত। (লোকমান বনাম আয়ুব আলী এবং রাষ্ট্র মামলা, যা ৩৮ বিএলডি, পৃষ্ঠা ৬১৬, ৬১৭-৬২০)।

আবার আসামীর স্বাক্ষর, টাকার অংক এবং পেয়ীর নাম ভিন্ন হাতের লেখা হলে এন.আই এ্যাক্টের ৩ (ই) ধারার বিধান অনুসারে এটাকে ইস্যুয়েন্স অব চেক বলা যাবে না। সেই চেক আইনানুগভাবে বৈধ হবে না। এ বিষয়ে ৫৬ ডিএলআর ৬৩৬ পৃষ্ঠায় একটি দারুন সিদ্ধান্ত আছে। উপরোক্ত কারণসমূহের যে কোন একটি পালিত না হলে চেক ডিজঅনারের মামলায় আসামী খালাস পেতে পারেন।

[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top