alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

সিরাজ প্রামাণিক

: রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

অনেকেই জানতে চান তার জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে। দলিল মূলে নাকি উত্তরাধিকার মূলে? এই উত্তর লুকিয়ে আছে জমির ড্রাফট বা খসড়া খতিয়ানে।

আমাদের দেশে জমির মালিকানা নিয়ে সবার একই জিজ্ঞাসা হলো “এই জমি আমার নামে রেকর্ড হলো, কিন্তু আসলে কী মূলে রেকর্ড হলো?” কারণ রেকর্ড হওয়া মানেই মালিকানা নয়। রেকর্ড ভুলবশত অন্যের নামে হতে পারে। আইনানুযায়ী জমির রেকর্ড শুধু একটা প্রমাণপত্র। যা সরকারি কাগজে লিপিবদ্ধ থাকে জমিটা আসলে কার নামে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এই রেকর্ডটা কী মূলে হয়েছে তার আসল ভিত্তি কী? দলিল নাকি উত্তরাধিকার? এই দুইভাবে সাধারণত জমি রেকর্ড হয়ে থাকে।

১। দলিল মূলে রেকর্ড অর্থাৎ যদি আপনার পূর্বপুরুষ বা আপনি নিজে জমি কিনে থাকেন, তবে সেই ক্রয় দলিলের ভিত্তিতেই জমি রেকর্ড হয়। ড্রাফট খতিয়ানে তখন স্পষ্টভাবে লেখা থাকে কোন দলিল নম্বর, কোন তারিখ, কোন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ড্রাফট খতিয়ানে লেখা থাকে “দলিল মূলে রেকর্ড নং ১৫৪৩/১৯৭৫, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: কুষ্টিয়া সদর।” ইত্যাদি। এই লেখাই প্রমাণ করে যে আপনার জমির রেকর্ড একটি বৈধ ক্রয় দলিলের ভিত্তিতে হয়েছে।

২। উত্তরাধিকার মূলে রেকর্ড অর্থাৎ আপনার দাদা বা বাবার নামে জমি রেকর্ড হলো, অথচ তারা কখনো কোনো দলিল করে জমি কেনেন নাই। এর মানে জমি এসেছে পৈতৃক সূত্রে বা উত্তরাধিকার সূত্রে। ড্রাফট খতিয়ানেই তখন লেখা থাকবে “উত্তরাধিকার মূলে রেকর্ড।”এক্ষেত্রে জমি বণ্টন না করা পর্যন্ত সব উত্তরাধিকারীর অংশীদারিত্ব থাকে। অনেকেই ড্রাফট খতিয়ান না দেখে শুধু বর্তমান খতিয়ান হাতে পেলেই খুশি হয়ে যান। কিন্তু পরে বড় বিপদে পড়েন। কারণ আজ আপনার নামে রেকর্ড আছে, কিন্তু কালকে আরেকজন এসে দাবি করতে পারে “এই জমি আমার দাদার দলিল মূলে রেকর্ড।” কাজেই আপনি যদি ড্রাফট খতিয়ান আগে দেখে রাখতেন, তাহলে শুরুতেই বুঝতে পারতেন আসল ইতিহাস কী। ইউনিয়ন ভূমি অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা রেকর্ড রুম থেকে ড্রাফট খতিয়ান দেখে নিতে পারেন।

সেখানে “দলিল মূলে” লেখা আছে নাকি “উত্তরাধিকার মূলে।” যদি দলিল মূলে হয়, দলিলের কপি সংগ্রহ করে রাখুন। যদি উত্তরাধিকার মূলে হয়, তবে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে (বণ্টননামা দলিল করে) রেকর্ড সংশোধন করুন। যদি কোনো ভুল পান, ভূমি অফিসে আবেদন করুন অথবা প্রয়োজনে আদালতে মামলা করুন। কাজেই ড্রাফট খতিয়ান ছাড়া কখনোই বোঝা যাবে না আপনার জমির রেকর্ড দলিল মূলে হলো নাকি উত্তরাধিকার মূলে। মনে রাখবেন ড্রাফট খতিয়ানই হচ্ছে জমির আসল ইতিহাস জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নথি।

মনে রাখবেন বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী জমির দলিল, দখল আর রেকর্ড এই তিনটির সমন্বয়ে মালিকানা প্রমাণ হয়। যেমন রেকর্ড থাকলেও দলিল না থাকলে মালিকানা দুর্বল হয়। শুধু দলিল থাকলেও রেকর্ড অন্য কারো নামে হলে বিরোধ দেখা দিতে পারে।

[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি ভোটের পরে এবার নাকি গণভোট!

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

সিরাজ প্রামাণিক

রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

অনেকেই জানতে চান তার জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে। দলিল মূলে নাকি উত্তরাধিকার মূলে? এই উত্তর লুকিয়ে আছে জমির ড্রাফট বা খসড়া খতিয়ানে।

আমাদের দেশে জমির মালিকানা নিয়ে সবার একই জিজ্ঞাসা হলো “এই জমি আমার নামে রেকর্ড হলো, কিন্তু আসলে কী মূলে রেকর্ড হলো?” কারণ রেকর্ড হওয়া মানেই মালিকানা নয়। রেকর্ড ভুলবশত অন্যের নামে হতে পারে। আইনানুযায়ী জমির রেকর্ড শুধু একটা প্রমাণপত্র। যা সরকারি কাগজে লিপিবদ্ধ থাকে জমিটা আসলে কার নামে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এই রেকর্ডটা কী মূলে হয়েছে তার আসল ভিত্তি কী? দলিল নাকি উত্তরাধিকার? এই দুইভাবে সাধারণত জমি রেকর্ড হয়ে থাকে।

১। দলিল মূলে রেকর্ড অর্থাৎ যদি আপনার পূর্বপুরুষ বা আপনি নিজে জমি কিনে থাকেন, তবে সেই ক্রয় দলিলের ভিত্তিতেই জমি রেকর্ড হয়। ড্রাফট খতিয়ানে তখন স্পষ্টভাবে লেখা থাকে কোন দলিল নম্বর, কোন তারিখ, কোন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ড্রাফট খতিয়ানে লেখা থাকে “দলিল মূলে রেকর্ড নং ১৫৪৩/১৯৭৫, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: কুষ্টিয়া সদর।” ইত্যাদি। এই লেখাই প্রমাণ করে যে আপনার জমির রেকর্ড একটি বৈধ ক্রয় দলিলের ভিত্তিতে হয়েছে।

২। উত্তরাধিকার মূলে রেকর্ড অর্থাৎ আপনার দাদা বা বাবার নামে জমি রেকর্ড হলো, অথচ তারা কখনো কোনো দলিল করে জমি কেনেন নাই। এর মানে জমি এসেছে পৈতৃক সূত্রে বা উত্তরাধিকার সূত্রে। ড্রাফট খতিয়ানেই তখন লেখা থাকবে “উত্তরাধিকার মূলে রেকর্ড।”এক্ষেত্রে জমি বণ্টন না করা পর্যন্ত সব উত্তরাধিকারীর অংশীদারিত্ব থাকে। অনেকেই ড্রাফট খতিয়ান না দেখে শুধু বর্তমান খতিয়ান হাতে পেলেই খুশি হয়ে যান। কিন্তু পরে বড় বিপদে পড়েন। কারণ আজ আপনার নামে রেকর্ড আছে, কিন্তু কালকে আরেকজন এসে দাবি করতে পারে “এই জমি আমার দাদার দলিল মূলে রেকর্ড।” কাজেই আপনি যদি ড্রাফট খতিয়ান আগে দেখে রাখতেন, তাহলে শুরুতেই বুঝতে পারতেন আসল ইতিহাস কী। ইউনিয়ন ভূমি অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা রেকর্ড রুম থেকে ড্রাফট খতিয়ান দেখে নিতে পারেন।

সেখানে “দলিল মূলে” লেখা আছে নাকি “উত্তরাধিকার মূলে।” যদি দলিল মূলে হয়, দলিলের কপি সংগ্রহ করে রাখুন। যদি উত্তরাধিকার মূলে হয়, তবে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে (বণ্টননামা দলিল করে) রেকর্ড সংশোধন করুন। যদি কোনো ভুল পান, ভূমি অফিসে আবেদন করুন অথবা প্রয়োজনে আদালতে মামলা করুন। কাজেই ড্রাফট খতিয়ান ছাড়া কখনোই বোঝা যাবে না আপনার জমির রেকর্ড দলিল মূলে হলো নাকি উত্তরাধিকার মূলে। মনে রাখবেন ড্রাফট খতিয়ানই হচ্ছে জমির আসল ইতিহাস জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নথি।

মনে রাখবেন বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী জমির দলিল, দখল আর রেকর্ড এই তিনটির সমন্বয়ে মালিকানা প্রমাণ হয়। যেমন রেকর্ড থাকলেও দলিল না থাকলে মালিকানা দুর্বল হয়। শুধু দলিল থাকলেও রেকর্ড অন্য কারো নামে হলে বিরোধ দেখা দিতে পারে।

[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top