মিথুশিলাক মুরমু
সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস (এসআইএল) ক্রমে মহীরুহে পরিণত হয়েছে। এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এ পর্যন্ত দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ২৭টিরও বেশি ভাষায় প্রকল্প পরিচালনা করেছে। আর ভাষা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ২৯টি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমাজভাষাগত জরিপ পরিচালনা করছে। প্রকল্পিত ভাষাগুলো হলো- বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, কোল, কোডা, কোচ, হাজং, বম, চাকমা, গারো, খিয়াং, ত্রিপুরা/ককবরক, কুরুখ, লুসাই, মাহালী, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা। তথ্যানুযায়ী, দেশে ৪০টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত রয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয়- সরকারও এখনো সঠিক চিত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, ৩৬ থেকে ৪৪টির মধ্যে আদিবাসীদের মাতৃভাষা কোনো রকমে টিকে আছে; যে কোনো সময় বিলুপ্তির খাতায় নাম চলে যেতে পারে। নিম্নোক্ত ভাষাগুলো ব্যতীত অন্যান্য ভাষাগুলোও আগামীতে প্রকল্পের আওতায় আনা হবে বলে বিশ্বাস করি।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি: ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই ভাষাগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করছে এবং শিক্ষা উপকরণ ও বানান নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে।
কোল: ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ শুরু করে এবং বিলুপ্তপ্রায় জাতিগোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উপকরণ ও গল্পের বই তৈরি করেছে।
কোডা: ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই ভাষাভাষীদের সঙ্গে পথচলা শুরু হয় এবং হারিয়ে যেতে বসা ভাষায় ইতোমধ্যে অনেক গল্পের বই প্রণীত হয়েছে।
কোচ: ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ভাষাটির লিখনপদ্ধতি ও শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে সহায়তা করেছে।
হাজং: এই সম্প্রদায়ের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে সহায়তা করেছে।
বম: বম ভাষায় লিখনপদ্ধতি এবং অন্যান্য উপকরণ তৈরিতে কাজ করেছে।
মাহালী: ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে লিখনপদ্ধতি চূড়ান্ত করা হয় এবং শিক্ষা উপকরণ তৈরি করা হয়েছে।
গারো: সমাজভাষাগত জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলা: মূলধারার শিক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক উপকরণ তৈরি এবং অন্যান্য প্রকাশনায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
এছাড়াও চাকমা, খিয়াং, ত্রিপুরা/ককবরক, কুরুখ, লুসাই, মারমা, ম্রো এবং তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় কাজ করা হয়েছে। এসব কাজের মধ্যে সমাজভাষাগত জরিপ, লিখনপদ্ধতি উন্নয়ন, পাঠ্যপুস্তক তৈরি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এসআইএল একটি অলাভজনক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, যা অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত বা বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর অধ্যয়ন, পুনরুজ্জীবন এবং নথিভুক্তকরণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ভাষাভাষীদের মুখের ভাষাকে প্রচলিত করতে বিভিন্ন পন্থা ও কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহারে উৎসাহিত করে থাকে। এসআইএল দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা ক্ষুদ্র জাতিসত্তা তথা আদিবাসীদের খুঁজে বের করে বহুভাষিক শিক্ষা ও জীবনমানের উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয় ভাষা কমিটি, সরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় অন্যান্য এনজিওর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে কাজগুলোকে সাবলীল করেছে।
কেননা, এই কাজগুলো স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন ও প্রত্যাশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে সক্ষম হয়েছে। মূলত ভাষা উন্নয়নের বৈচিত্র্যময় কাজগুলো সম্পন্ন করাই এর প্রধান লক্ষ্য। যেমন-
ভাষাগত গবেষণা ও নথিবদ্ধকরণ
সমাজভাষাগত জরিপ: বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভাষার ব্যবহার, জীবনীশক্তি এবং শিক্ষার প্রতি মনোভাব বোঝার জন্য জরিপ পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় কোন ভাষাগুলো সংরক্ষণের জন্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হবে।
গবেষণা ও বিশ্লেষণ: ভাষাবিদেরা স্থানীয় ভাষাগুলোর ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরণ ও শব্দভান্ডার বিশ্লেষণ করেন।
নথিকরণ: যেসব ভাষা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে, সেগুলোর কথ্যরূপ, লোকগাথা ও গান নথিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করা হয়।
লিখনপদ্ধতি ও উপকরণ তৈরি
লিখনপদ্ধতি উদ্ভাবন: অনেক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ভাষার নিজস্ব কোনো লিপি বা লিখনপদ্ধতি ছিল না। এসব ক্ষেত্রে এসআইএল সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড় সংলাপ করে যৌথভাবে একটি কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য লিখনপদ্ধতি (প্রায়শই বাংলা বা রোমান লিপি ব্যবহার করে) তৈরি করেছে।
অভিধান ও শব্দকোষ প্রণয়ন: ভাষাভাষীদের জন্য ছোট বা মাঝারি আকারের অভিধান সংকলনে সহায়তা করেছে।
শিক্ষামূলক উপকরণ তৈরি: বর্ণমালা বই, গল্পের বই, ছড়া, স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বই এবং অন্যান্য পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছে, যা মূলত মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষায় ব্যবহৃত হয়।
শিক্ষা কার্যক্রম ও সক্ষমতা বৃদ্ধি
মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষা: এটি এসআইএল-এর অন্যতম কার্যক্রম। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে শিশুদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরি করে, যাতে তারা দ্রুত শিখতে পারে এবং মূলধারার শিক্ষায় যুক্ত হতে পারে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ: স্থানীয় শিক্ষকদের মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি ও উপকরণ ব্যবহারে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
সাক্ষরতা কর্মসূচি: শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাক্ষরতা ক্লাস পরিচালনা ও উপকরণ সরবরাহ করা হয়।
প্রযুক্তিগত সহায়তা
সফটওয়্যার ও ফন্ট: ভাষাগত কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কম্পিউটার ফন্ট এবং সফটওয়্যার ব্যবহারে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হয়, যাতে স্থানীয় ভাষাভিত্তিক কাজ করা সহজ হয়।
অ্যাডভোকেসি
ভাষার অধিকার সচেতনতা: এসআইএল স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা এবং ভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এসআইএল ২২টি ভাষায় (বম, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, চাকমা, গারো, হাজং, খাসিয়া, খিয়াং, কোচ, কোল, লুসাই, মাহালী, মেইতেই মণিপুরি, ম্রো, মুণ্ডা, উরাঁও-কুড়–খ, ওরাঁও সাদ্রি, পাহাড়ি, পাংখোয়া, সাঁওতাল, তঞ্চঙ্গ্যা, উসুই ত্রিপুরা, কোডা, বাংলা এবং ইংরেজি) ৭ মার্চের ভাষণ সংকলন করেছিল। এর ফলে প্রত্যেকটি ভাষার জাতিগোষ্ঠী নিজস্ব মাতৃভাষায় স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে পেরেছে।
এক কথায়- এসআইএল বাংলাদেশের আদিবাসীদের মাতৃভাষাগুলোকে কেবল গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি; বরং সেগুলোকে জীবন্ত রাখতে এবং শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য সামগ্রিক উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে। এসআইএল-এর পথচলা মসৃণ ও কণ্টকাকীর্ণ হোক- এটাই আমাদের প্রার্থনা।
[লেখক: কলামিস্ট]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মিথুশিলাক মুরমু
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস (এসআইএল) ক্রমে মহীরুহে পরিণত হয়েছে। এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এ পর্যন্ত দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ২৭টিরও বেশি ভাষায় প্রকল্প পরিচালনা করেছে। আর ভাষা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ২৯টি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমাজভাষাগত জরিপ পরিচালনা করছে। প্রকল্পিত ভাষাগুলো হলো- বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, কোল, কোডা, কোচ, হাজং, বম, চাকমা, গারো, খিয়াং, ত্রিপুরা/ককবরক, কুরুখ, লুসাই, মাহালী, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা। তথ্যানুযায়ী, দেশে ৪০টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত রয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয়- সরকারও এখনো সঠিক চিত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, ৩৬ থেকে ৪৪টির মধ্যে আদিবাসীদের মাতৃভাষা কোনো রকমে টিকে আছে; যে কোনো সময় বিলুপ্তির খাতায় নাম চলে যেতে পারে। নিম্নোক্ত ভাষাগুলো ব্যতীত অন্যান্য ভাষাগুলোও আগামীতে প্রকল্পের আওতায় আনা হবে বলে বিশ্বাস করি।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি: ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই ভাষাগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করছে এবং শিক্ষা উপকরণ ও বানান নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে।
কোল: ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ শুরু করে এবং বিলুপ্তপ্রায় জাতিগোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উপকরণ ও গল্পের বই তৈরি করেছে।
কোডা: ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই ভাষাভাষীদের সঙ্গে পথচলা শুরু হয় এবং হারিয়ে যেতে বসা ভাষায় ইতোমধ্যে অনেক গল্পের বই প্রণীত হয়েছে।
কোচ: ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ভাষাটির লিখনপদ্ধতি ও শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে সহায়তা করেছে।
হাজং: এই সম্প্রদায়ের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে সহায়তা করেছে।
বম: বম ভাষায় লিখনপদ্ধতি এবং অন্যান্য উপকরণ তৈরিতে কাজ করেছে।
মাহালী: ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে লিখনপদ্ধতি চূড়ান্ত করা হয় এবং শিক্ষা উপকরণ তৈরি করা হয়েছে।
গারো: সমাজভাষাগত জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলা: মূলধারার শিক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক উপকরণ তৈরি এবং অন্যান্য প্রকাশনায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
এছাড়াও চাকমা, খিয়াং, ত্রিপুরা/ককবরক, কুরুখ, লুসাই, মারমা, ম্রো এবং তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় কাজ করা হয়েছে। এসব কাজের মধ্যে সমাজভাষাগত জরিপ, লিখনপদ্ধতি উন্নয়ন, পাঠ্যপুস্তক তৈরি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এসআইএল একটি অলাভজনক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, যা অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত বা বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর অধ্যয়ন, পুনরুজ্জীবন এবং নথিভুক্তকরণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ভাষাভাষীদের মুখের ভাষাকে প্রচলিত করতে বিভিন্ন পন্থা ও কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহারে উৎসাহিত করে থাকে। এসআইএল দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা ক্ষুদ্র জাতিসত্তা তথা আদিবাসীদের খুঁজে বের করে বহুভাষিক শিক্ষা ও জীবনমানের উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয় ভাষা কমিটি, সরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় অন্যান্য এনজিওর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে কাজগুলোকে সাবলীল করেছে।
কেননা, এই কাজগুলো স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন ও প্রত্যাশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে সক্ষম হয়েছে। মূলত ভাষা উন্নয়নের বৈচিত্র্যময় কাজগুলো সম্পন্ন করাই এর প্রধান লক্ষ্য। যেমন-
ভাষাগত গবেষণা ও নথিবদ্ধকরণ
সমাজভাষাগত জরিপ: বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভাষার ব্যবহার, জীবনীশক্তি এবং শিক্ষার প্রতি মনোভাব বোঝার জন্য জরিপ পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় কোন ভাষাগুলো সংরক্ষণের জন্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হবে।
গবেষণা ও বিশ্লেষণ: ভাষাবিদেরা স্থানীয় ভাষাগুলোর ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরণ ও শব্দভান্ডার বিশ্লেষণ করেন।
নথিকরণ: যেসব ভাষা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে, সেগুলোর কথ্যরূপ, লোকগাথা ও গান নথিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করা হয়।
লিখনপদ্ধতি ও উপকরণ তৈরি
লিখনপদ্ধতি উদ্ভাবন: অনেক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ভাষার নিজস্ব কোনো লিপি বা লিখনপদ্ধতি ছিল না। এসব ক্ষেত্রে এসআইএল সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড় সংলাপ করে যৌথভাবে একটি কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য লিখনপদ্ধতি (প্রায়শই বাংলা বা রোমান লিপি ব্যবহার করে) তৈরি করেছে।
অভিধান ও শব্দকোষ প্রণয়ন: ভাষাভাষীদের জন্য ছোট বা মাঝারি আকারের অভিধান সংকলনে সহায়তা করেছে।
শিক্ষামূলক উপকরণ তৈরি: বর্ণমালা বই, গল্পের বই, ছড়া, স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বই এবং অন্যান্য পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছে, যা মূলত মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষায় ব্যবহৃত হয়।
শিক্ষা কার্যক্রম ও সক্ষমতা বৃদ্ধি
মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষা: এটি এসআইএল-এর অন্যতম কার্যক্রম। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে শিশুদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরি করে, যাতে তারা দ্রুত শিখতে পারে এবং মূলধারার শিক্ষায় যুক্ত হতে পারে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ: স্থানীয় শিক্ষকদের মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি ও উপকরণ ব্যবহারে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
সাক্ষরতা কর্মসূচি: শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাক্ষরতা ক্লাস পরিচালনা ও উপকরণ সরবরাহ করা হয়।
প্রযুক্তিগত সহায়তা
সফটওয়্যার ও ফন্ট: ভাষাগত কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কম্পিউটার ফন্ট এবং সফটওয়্যার ব্যবহারে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হয়, যাতে স্থানীয় ভাষাভিত্তিক কাজ করা সহজ হয়।
অ্যাডভোকেসি
ভাষার অধিকার সচেতনতা: এসআইএল স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা এবং ভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এসআইএল ২২টি ভাষায় (বম, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, চাকমা, গারো, হাজং, খাসিয়া, খিয়াং, কোচ, কোল, লুসাই, মাহালী, মেইতেই মণিপুরি, ম্রো, মুণ্ডা, উরাঁও-কুড়–খ, ওরাঁও সাদ্রি, পাহাড়ি, পাংখোয়া, সাঁওতাল, তঞ্চঙ্গ্যা, উসুই ত্রিপুরা, কোডা, বাংলা এবং ইংরেজি) ৭ মার্চের ভাষণ সংকলন করেছিল। এর ফলে প্রত্যেকটি ভাষার জাতিগোষ্ঠী নিজস্ব মাতৃভাষায় স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে পেরেছে।
এক কথায়- এসআইএল বাংলাদেশের আদিবাসীদের মাতৃভাষাগুলোকে কেবল গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি; বরং সেগুলোকে জীবন্ত রাখতে এবং শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য সামগ্রিক উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে। এসআইএল-এর পথচলা মসৃণ ও কণ্টকাকীর্ণ হোক- এটাই আমাদের প্রার্থনা।
[লেখক: কলামিস্ট]