মোস্তফা কামাল যাত্রা
বাংলাদেশে নারী নির্যাতন আজ কেবল একটি সামাজিক অপরাধ নয়, বরং জাতির মানসিক ও নৈতিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। প্রতিদিনের সংবাদে আমরা দেখি ধর্ষণ, গার্হস্থ্য সহিংসতা, শিশু নির্যাতন বা অনলাইন হয়রানির খবর। এই ঘটনাগুলো কেবল ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং সমাজের ক্ষমতার ভারসাম্য ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত। উন্নয়ন ও আধুনিকতার বাহুল্যে আমরা যতই অগ্রগতি দাবি করি না কেন, নারীর নিরাপত্তা ও মানসিক সুস্থতার প্রশ্নে এখনো পিছিয়ে আছি। এই পরিস্থিতি বোঝা যায় তখনই, যখন আমরা নারী নির্যাতনকে শুধু অপরাধ নয়, একটি মানসিক ও কাঠামোগত সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখি।
নারী নির্যাতন বা যৌন শোষণ কেবল অপরাধ নয় এটি এক গভীর সামাজিক সংকট। যখন একজন নারী নির্যাতনের শিকার হন তখন আঘাত লাগে তার শরীরে কিন্তু ভেঙে পড়ে তার আত্মসম্মান নিরাপত্তাবোধ এবং মানসিক ভারসাম্য। এই ভাঙন শুধু ব্যক্তির নয় পুরো সমাজের মানবিক ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়।
মানসিক আঘাত ও নীরবতার যন্ত্রণা : যৌন শোষণ বা শারীরিক নির্যাতনের পর অধিকাংশ নারী লজ্জা ভয় বা সামাজিক চাপের কারণে চুপ করে থাকেন। কিন্তু এই নীরবতা জমে ওঠে এক দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ক্ষতে। উদ্বেগ আত্মগ্লানি নিদ্রাহীনতা আত্মহত্যার চিন্তা-সব কিছুই এই অঘোষিত যন্ত্রণার রূপ। সমাজ যখন এই কষ্টকে অস্বীকার করে তখন তা এক সম্মিলিত অসাড়তা তৈরি করে যা ধীরে ধীরে সামাজিক মানসিকতাকে বিকৃত করে ফেলে।
সমাজের প্রতিক্রিয়া ও দৃষ্টিভঙ্গি : আমাদের সমাজে নির্যাতিত নারীকে প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তার পোশাক চলাফেরা কিংবা ব্যক্তিত্বের উপর আঙুল তোলা হয়। ফলে অপরাধীর বদলে দোষ চাপানো হয় ভুক্তভোগীর উপর। এই মানসিকতা নারীকে আরও একা করে দেয় আর অপরাধী পায় সামাজিক প্রশ্রয়। পরিবারও অনেক সময় সম্মান রক্ষার নামে মেয়েকে চুপ থাকতে বলে। এই চুপ থাকার মধ্যে জমে থাকে ভয় ক্ষোভ ও হতাশা যা ধীরে ধীরে মানসিক ভাঙনের দিকে ঠেলে দেয়।
পরিবার অর্থনীতি ও মানসিক ক্ষয় : অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও পারিবারিক সহিংসতা নারীর মানসিক স্থিতি নষ্ট করে দেয়। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বা ঘরে নির্যাতন-দুই ক্ষেত্রেই নারী হারায় আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তাবোধ। অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল নারীরা নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য হন কারণ তাদের যাওয়ার পথ নেই। এই বাধ্যতা একপ্রকার মানসিক বন্দিত্বে পরিণত হয় যা আত্মসম্মানকে ধ্বংস করে দেয়।
আইন বিচার ও রাষ্ট্রীয় দায় : বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ গার্হস্থ্য সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০ এবং অনলাইন নির্যাতন রোধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-এসব আইন কাগজে শক্তিশালী হলেও বাস্তবে কার্যকর নয়। অধিকাংশ নারী থানায় গিয়ে অপমানিত হন আদালতে হয়রানির শিকার হন সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে মামলা ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। অপরাধীরা প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায় আর নারী হারায় ন্যায়বিচারের আশাও।
এই বিচারহীনতা মানসিকভাবে আরও গভীর ক্ষতের জন্ম দেয়। কারণ যে রাষ্ট্রের কাছে সে সুরক্ষা চায় সেই রাষ্ট্রের ব্যবস্থাই তার আঘাতকে অস্বীকার করে। এটি শুধু আইনি ব্যর্থতা নয় বরং সমাজের নৈতিক পতনের প্রতিফলন। একে সমাজতাত্ত্বিকভাবে বলা যায় প্রাতিষ্ঠানিক অবিচার ব্যক্তিগত মানসিক ভাঙনকে স্থায়ী করে তোলে।
সংস্কৃতি ধর্ম ও মানসিক কাঠামো : আমাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বয়ানে নারীর অবস্থান প্রায়ই পুরুষকেন্দ্রিক মানদ-ে পরিমাপ করা হয়। বিজ্ঞাপন নাটক বা সিনেমায় নারীকে প্রায়ই সাজসজ্জা বা ভোগের উপকরণ হিসেবে দেখানো হয় কিন্তু তার চিন্তা বেদনা বা স্বাধীনতাকে অবহেলা করা হয়। আবার ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা ব্যবহার করে নারীর স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা হয়। অথচ প্রকৃত ধর্ম ও সংস্কৃতি মানুষকে সম্মান শেখায় লিঙ্গ নয়।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও সহায়তা কাঠামো : বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এখনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুর্বল। সরকারি হাসপাতালে সেবার সুযোগ সীমিত এবং সমাজে মনোবিদ বা পরামর্শ গ্রহণ এখনো লজ্জার বিষয় হিসেবে বিবেচিত। নারী নির্যাতনের পর এই সেবাগুলো না পাওয়ায় তারা মানসিক পুনর্বাসনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। প্রয়োজন নারীবান্ধব পরামর্শকেন্দ্র আইনি সহায়তা ও মনস্তাত্ত্বিক সেবা যেখানে ভুক্তভোগী নারী নির্ভয়ে কথা বলতে পারেন।
সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ : নারীর মানসিক স্বাস্থ্য কেবল ব্যক্তিগত সমস্যা নয় এটি সমাজের কাঠামোগত বৈষম্য অর্থনৈতিক নির্ভরতা এবং রাষ্ট্রীয় অবিচারের সম্মিলিত ফল। সমাজতাত্ত্বিকভাবে দেখতে গেলে নারীর উপর সহিংসতা হচ্ছে ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের প্রকাশ যা পরিবার ধর্ম আইন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভেতর দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। পরিবর্তনের জন্য দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন-যেখানে নারীকে দয়া বা করুণা নয় সমান মানবিক মর্যাদার অংশ হিসেবে দেখা হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা মানে কেবল একজন মানুষের ক্ষতি নয় এটি পুরো সমাজের নৈতিক ক্ষয়। আইন সমাজ পরিবার ও শিক্ষা-সব জায়গায় যদি সহানুভূতি ও ন্যায়বোধ না জন্মে তবে কোনো উন্নয়নই টেকসই নয়। নারীর মুক্তিই মানুষের মুক্তি। নারীর মানসিক সুস্থতা ও মর্যাদা রক্ষাই আমাদের সভ্যতার প্রকৃত মাপকাঠি।
[লেখক: সাধারণ সম্পাদক, মেন্টাল হেলথ অ্যাডভোকেসি অ্যাসোসিয়েশন]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মোস্তফা কামাল যাত্রা
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশে নারী নির্যাতন আজ কেবল একটি সামাজিক অপরাধ নয়, বরং জাতির মানসিক ও নৈতিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। প্রতিদিনের সংবাদে আমরা দেখি ধর্ষণ, গার্হস্থ্য সহিংসতা, শিশু নির্যাতন বা অনলাইন হয়রানির খবর। এই ঘটনাগুলো কেবল ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং সমাজের ক্ষমতার ভারসাম্য ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত। উন্নয়ন ও আধুনিকতার বাহুল্যে আমরা যতই অগ্রগতি দাবি করি না কেন, নারীর নিরাপত্তা ও মানসিক সুস্থতার প্রশ্নে এখনো পিছিয়ে আছি। এই পরিস্থিতি বোঝা যায় তখনই, যখন আমরা নারী নির্যাতনকে শুধু অপরাধ নয়, একটি মানসিক ও কাঠামোগত সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখি।
নারী নির্যাতন বা যৌন শোষণ কেবল অপরাধ নয় এটি এক গভীর সামাজিক সংকট। যখন একজন নারী নির্যাতনের শিকার হন তখন আঘাত লাগে তার শরীরে কিন্তু ভেঙে পড়ে তার আত্মসম্মান নিরাপত্তাবোধ এবং মানসিক ভারসাম্য। এই ভাঙন শুধু ব্যক্তির নয় পুরো সমাজের মানবিক ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়।
মানসিক আঘাত ও নীরবতার যন্ত্রণা : যৌন শোষণ বা শারীরিক নির্যাতনের পর অধিকাংশ নারী লজ্জা ভয় বা সামাজিক চাপের কারণে চুপ করে থাকেন। কিন্তু এই নীরবতা জমে ওঠে এক দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ক্ষতে। উদ্বেগ আত্মগ্লানি নিদ্রাহীনতা আত্মহত্যার চিন্তা-সব কিছুই এই অঘোষিত যন্ত্রণার রূপ। সমাজ যখন এই কষ্টকে অস্বীকার করে তখন তা এক সম্মিলিত অসাড়তা তৈরি করে যা ধীরে ধীরে সামাজিক মানসিকতাকে বিকৃত করে ফেলে।
সমাজের প্রতিক্রিয়া ও দৃষ্টিভঙ্গি : আমাদের সমাজে নির্যাতিত নারীকে প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তার পোশাক চলাফেরা কিংবা ব্যক্তিত্বের উপর আঙুল তোলা হয়। ফলে অপরাধীর বদলে দোষ চাপানো হয় ভুক্তভোগীর উপর। এই মানসিকতা নারীকে আরও একা করে দেয় আর অপরাধী পায় সামাজিক প্রশ্রয়। পরিবারও অনেক সময় সম্মান রক্ষার নামে মেয়েকে চুপ থাকতে বলে। এই চুপ থাকার মধ্যে জমে থাকে ভয় ক্ষোভ ও হতাশা যা ধীরে ধীরে মানসিক ভাঙনের দিকে ঠেলে দেয়।
পরিবার অর্থনীতি ও মানসিক ক্ষয় : অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও পারিবারিক সহিংসতা নারীর মানসিক স্থিতি নষ্ট করে দেয়। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বা ঘরে নির্যাতন-দুই ক্ষেত্রেই নারী হারায় আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তাবোধ। অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল নারীরা নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য হন কারণ তাদের যাওয়ার পথ নেই। এই বাধ্যতা একপ্রকার মানসিক বন্দিত্বে পরিণত হয় যা আত্মসম্মানকে ধ্বংস করে দেয়।
আইন বিচার ও রাষ্ট্রীয় দায় : বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ গার্হস্থ্য সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০ এবং অনলাইন নির্যাতন রোধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-এসব আইন কাগজে শক্তিশালী হলেও বাস্তবে কার্যকর নয়। অধিকাংশ নারী থানায় গিয়ে অপমানিত হন আদালতে হয়রানির শিকার হন সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে মামলা ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। অপরাধীরা প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায় আর নারী হারায় ন্যায়বিচারের আশাও।
এই বিচারহীনতা মানসিকভাবে আরও গভীর ক্ষতের জন্ম দেয়। কারণ যে রাষ্ট্রের কাছে সে সুরক্ষা চায় সেই রাষ্ট্রের ব্যবস্থাই তার আঘাতকে অস্বীকার করে। এটি শুধু আইনি ব্যর্থতা নয় বরং সমাজের নৈতিক পতনের প্রতিফলন। একে সমাজতাত্ত্বিকভাবে বলা যায় প্রাতিষ্ঠানিক অবিচার ব্যক্তিগত মানসিক ভাঙনকে স্থায়ী করে তোলে।
সংস্কৃতি ধর্ম ও মানসিক কাঠামো : আমাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বয়ানে নারীর অবস্থান প্রায়ই পুরুষকেন্দ্রিক মানদ-ে পরিমাপ করা হয়। বিজ্ঞাপন নাটক বা সিনেমায় নারীকে প্রায়ই সাজসজ্জা বা ভোগের উপকরণ হিসেবে দেখানো হয় কিন্তু তার চিন্তা বেদনা বা স্বাধীনতাকে অবহেলা করা হয়। আবার ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা ব্যবহার করে নারীর স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা হয়। অথচ প্রকৃত ধর্ম ও সংস্কৃতি মানুষকে সম্মান শেখায় লিঙ্গ নয়।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও সহায়তা কাঠামো : বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এখনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুর্বল। সরকারি হাসপাতালে সেবার সুযোগ সীমিত এবং সমাজে মনোবিদ বা পরামর্শ গ্রহণ এখনো লজ্জার বিষয় হিসেবে বিবেচিত। নারী নির্যাতনের পর এই সেবাগুলো না পাওয়ায় তারা মানসিক পুনর্বাসনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। প্রয়োজন নারীবান্ধব পরামর্শকেন্দ্র আইনি সহায়তা ও মনস্তাত্ত্বিক সেবা যেখানে ভুক্তভোগী নারী নির্ভয়ে কথা বলতে পারেন।
সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ : নারীর মানসিক স্বাস্থ্য কেবল ব্যক্তিগত সমস্যা নয় এটি সমাজের কাঠামোগত বৈষম্য অর্থনৈতিক নির্ভরতা এবং রাষ্ট্রীয় অবিচারের সম্মিলিত ফল। সমাজতাত্ত্বিকভাবে দেখতে গেলে নারীর উপর সহিংসতা হচ্ছে ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের প্রকাশ যা পরিবার ধর্ম আইন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভেতর দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। পরিবর্তনের জন্য দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন-যেখানে নারীকে দয়া বা করুণা নয় সমান মানবিক মর্যাদার অংশ হিসেবে দেখা হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা মানে কেবল একজন মানুষের ক্ষতি নয় এটি পুরো সমাজের নৈতিক ক্ষয়। আইন সমাজ পরিবার ও শিক্ষা-সব জায়গায় যদি সহানুভূতি ও ন্যায়বোধ না জন্মে তবে কোনো উন্নয়নই টেকসই নয়। নারীর মুক্তিই মানুষের মুক্তি। নারীর মানসিক সুস্থতা ও মর্যাদা রক্ষাই আমাদের সভ্যতার প্রকৃত মাপকাঠি।
[লেখক: সাধারণ সম্পাদক, মেন্টাল হেলথ অ্যাডভোকেসি অ্যাসোসিয়েশন]